‘আমি আসবো ফিরে’
কয়েক বছর ধরেই টলিউডের প্রাইম সিজন দুর্গাপুজো। ছবি রিলিজ নিয়ে লেগে থাকে জোর লড়াই। গত বছর পুজোতেও মুক্তি পেয়েছিল ছ’টা ছবি। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বাংলা নববর্ষও। উৎসবের মরসুমে ছবি রিলিজ করতে বদ্ধপরিকর প্রযোজক-পরিচালকরা। এত দিন বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটিতে দুটো বা তিনটি ছবি মুক্তি পেলেও এ বার সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। হাল আমলে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ক্রমশ কমছে বলে হা-হুতাশ করতে শোনা যায় অনেককে। কিন্তু এক দিনের উৎসবেও জমি ছাড়তে নারাজ কোনও পক্ষই। প্রশ্ন উঠছে, একই দিনে এত ছবির মুক্তি কি ব্যবসায়িক দিক থেকে সমৃদ্ধ করে ইন্ডাস্ট্রিকে?
এত দিন একই দিনে এক জন তারকার একাধিক ছবি মুক্তি পেয়েছে। এ বার যেন নতুন নজির তৈরির পালা। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘কবীর’ ছাড়াও ‘শঙ্কর মুদি’ও মুক্তি পেতে পারে একই দিনে। যদিও প্রযোজক কৌস্তুভ রায়ের জেলযাত্রার কারণে ‘শঙ্কর মুদি’র মুক্তি সংশয়ে। আসছে হরনাথ চক্রবর্তীর ‘কাঁটায় কাঁটা’, অঞ্জন দত্তর ‘আমি আসবো ফিরে’। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘চালবাজ’ও আর এক আকর্ষণ।
ইন্ডাস্ট্রির এক ছাদের তলায় আসতে সময় লাগবে
‘কবীর’-এর প্রযোজক ও নায়ক দেব জানালেন, ‘‘আটটা ছবির সঙ্গে লড়েছি, আর ভয় নেই। গত বছর পুজোর সময়েই জানিয়েছিলাম, ‘কবীর’ মুক্তি পাবে নববর্ষে। পরে শুনলাম, ওই দিন মুক্তি পাচ্ছে এত ছবি। এক ছাদের তলায় ইন্ডাস্ট্রির আসতে সময় লাগবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি। বুম্বাদার ‘দৃষ্টিকোণ’ তো পিছিয়ে গিয়েছে।’’
‘কাঁটায় কাঁটা’
দুটো ছবি আলাদা দিনে মুক্তি পেলে ভাল হতো
পরিচালক অনিকেতের দু’টি ছবি একই দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা উঠলেও একে সৌভাগ্য হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি। ‘‘দুটো ছবি আলাদা দিনে মুক্তি পেলে সেই উত্তেজনার শরিক থাকতে পারতাম।’’ তবে নিজের ছবির কনটেন্ট নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী অনিকেত। ‘‘মূল বিষয় হিসেবে ‘কবীর’-এ উঠে এসেছে সন্ত্রাসবাদ। অন্য দিকে ‘শঙ্কর মুদি’ আদ্যন্ত রাজনৈতিক ছবি।’’ তাই একে অপরের জনপ্রিয়তায় ভাগ বসবে না বলেই মনে করেন পরিচালক।
‘কবীর’
এক দিনের উৎসবে এটুকু মানিয়ে নেওয়াই যায়
নববর্ষে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দৃষ্টিকোণ’-এর মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও ছবির প্রযোজক নিসপাল সিংহ পিছিয়ে দিয়েছেন ছবির মুক্তি। বললেন, ‘‘পুজোয় কয়েকটা দিন ছুটি থাকে বলে, পিছিয়ে যেতে চায় না কেউই। কিন্তু এক দিনের উৎসবে এটুকু মানিয়ে নেওয়াই যায়।’’ কৌশিকও সাধুবাদ জানাচ্ছেন এই সিদ্ধান্তকে। তবে এত ছবিমুক্তির প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘নম্বরে কিছু এসে যায় না। দেখতে হবে ক’টা ছবি তাৎপর্যপূর্ণ।’’ পরিচালক হিসেবে ভিড় এড়ালেও ‘শঙ্কর মুদি’ মুক্তি পেলে অভিনেতা কৌশিকও সামিল হবেন প্রতিযোগিতায়।
‘চালবাজ’
মিউজিক্যালই ইউএসপি
অনেক দিন ধরেই বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনে নিজেদের ছবি নিয়ে হাজির থাকে এসভিএফ। ব্যতিক্রম হচ্ছে না এ বছরও। অঞ্জন দত্তর ‘আমি আসবো ফিরে’ও মুক্তি পাবে নববর্ষের প্রাক্কালেই। ছবির অন্যতম প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি জানালেন, ‘‘এ বারও আমরা ভাল ছবি নিয়ে আসছি। আশা করি দর্শকের ভালই লাগবে।’’ অ়ঞ্জনও বলছেন, ‘‘আমি যে ধরনের ছবি তৈরি করতে এসেছিলাম, সেটাই আবার তুলে ধরেছি এই ছবিতে। ‘বং কানেকশন’, ‘ম্যাডলি বাঙালি’র মতো এটাও মিউজিক্যাল।’’
বাংলা নতুন বছরে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে থাকছে শাকিব খানের ‘চালবাজ’। ছবির প্রযোজক অশোক ধানুকা অবশ্য বলছেন, ‘‘এখানে দু’ধরনের ছবি হয়। একটা মাল্টিপ্লেক্সের, অন্যটা সিঙ্গল স্ক্রিনের। ‘চালবাজ’ বাদে সব ছবিই মাল্টিপ্লেক্স মুভি। সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোরও তো নতুন ছবির প্রয়োজন। সেই চাহিদা থেকেই ‘চালবাজ’ নিয়ে আসছি।’’
সাহিত্যপ্রেমী বাঙালির জন্য এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছেন নবাগত প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ রায়ও। তাঁর প্রযোজনায় ‘কাঁটায় কাঁটা’ মুক্তি পাবে নববর্ষে। জানালেন, ‘‘বাকিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজেদের মান যাচাই করতেই এই সিদ্ধান্ত।’’ আর পরিচালক হরনাথের বক্তব্য, ‘‘নারায়ণ সান্যালের কাহিনি অবলম্বনে ‘কাঁটায় কাঁটা’ সাহিত্যপ্রেমীদের মন জয় করবেই। সঙ্গে রঞ্জিতদাকেও (মল্লিক) দেখা যাবে নতুন ভাবে।’’
ধুন্ধুমার লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসবে কোন পক্ষ, তার উত্তর মিলবে ভবিষ্যতে। তবে এই যুদ্ধের ফলে বাংলা ছবি নিয়ে যদি দর্শকের আগ্রহ আরও বাড়ে, তা নিঃসন্দেহে অক্সিজেন জোগাবে বাংলা ছবির পালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy