Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শেষ পাতের মাংসটা ভাল

যিশু ভাল। প্রিয়াঙ্কাও। বাকিটা? লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তীঅচেনা উইকেটে ব্যাট করার নিয়ম হল প্রথমে দেখে খেলো। রান না উঠলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রথমেই উইকেটটা দিয়ে এসো না। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ও সেটাই করেছেন। ‘বাই বাই ব্যাঙ্কক’, ‘গোড়ায় গণ্ডগোল’‌য়ের মতো জনপ্রিয় কমেডি ছবির পরিচালকের এটাই প্রথম থ্রিলার। তাই তিনি ধরেই খেলেছেন। স্টেপ আউট করে ছয় মারার ঝুঁকি নেননি। তাই সেঞ্চুরি হয়নি বটে, তবে দরকারি ষাট-পঁয়ষট্টি রানের ইনিংস দিব্যি খেলে দিয়েছেন ‘রুম নম্বর ১০৩’ ছবিতে।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০০:০৪
Share: Save:

অচেনা উইকেটে ব্যাট করার নিয়ম হল প্রথমে দেখে খেলো। রান না উঠলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রথমেই উইকেটটা দিয়ে এসো না।

পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ও সেটাই করেছেন। ‘বাই বাই ব্যাঙ্কক’, ‘গোড়ায় গণ্ডগোল’‌য়ের মতো জনপ্রিয় কমেডি ছবির পরিচালকের এটাই প্রথম থ্রিলার। তাই তিনি ধরেই খেলেছেন। স্টেপ আউট করে ছয় মারার ঝুঁকি নেননি।

তাই সেঞ্চুরি হয়নি বটে, তবে দরকারি ষাট-পঁয়ষট্টি রানের ইনিংস দিব্যি খেলে দিয়েছেন ‘রুম নম্বর ১০৩’ ছবিতে।

নামের মতোই ছবির প্রধান চরিত্র শহরের এক প্রান্তে মাঝারি মাপের হোটেল ‘রাতদিন’‌য়ের ১০৩ নম্বর রুম। এই রুমে রাত কাটালে অলৌকিকভাবে বদলে যায় বোর্ডারদের জীবন। এই রকম চারটে গল্প সূত্রধরের মতো সাজিয়েছেন হোটেলের ম্যানেজার রুদ্র চট্টোপাধ্যায় (সৌমিত্র)।

থ্রিলার হলেই যে তাতে ভিলেন বা ক্রিমিনাল থাকতে হবে— এমন কথা কোনও কপিবুকে লেখা নেই। পরিচালকও সেটাই করেছেন। বরং ‘ম্যাচ পয়েন্ট’ সিনেমার সেই সংলাপটার মতো ‘‘মানুষের জীবনে ভাগ্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটা সাধারণ লোকে মানতে ভয় পায়’’ এ ছবির থ্রিলের উৎসেও পরিচালক ভাগ্যকেই বসিয়েছেন। আর সেটা মন্দ হয়নি।

প্রথম গল্পে যেমন, দ্যোতনা আর ইমদাদুলের প্রেম পরিণতি লাভ করে না দু’জনের ধর্মের কারণে। কিন্তু গল্পের আসল টুইস্টটা আসে বহু বছর পরে সেই রুম নম্বর ১০৩-তে দ্যোতনার একরাত কাটানোর পর। দ্বিতীয় গল্পে কন্ট্রাক্ট কিলারের অবসর পরিকল্পনা বদলে যায় হোটেলের সেই ঘরে একরাত কাটানোর পরে।

যদিও এই দু’টো গল্পই যে খুব সুন্দর ভাবে বলা হয়েছে তা বলা যাবে না। দ্যোতনার চরিত্রে অঞ্জনা বসু ও দ্বিতীয় গল্পের কনট্রাক্ট কিলার তীর্থের চরিত্রে রাজেশ শর্মার অভিনয় ভাল। কিন্তু দু’টো গল্পের শেষ আগাম বোঝা যায়। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে ময়ূখ ভৌমিকের কাজ মনে রাখার মতো। আর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে ছবির চিত্রগ্রাহক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকির নাম। চারটে গল্পের বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন তিনি। তবে চিত্রনাট্যের ততটা সাহায্য পেলেন কই!

চিত্রনাট্যে গতি আসে দ্বিতীয় অর্ধে। এটা অবশ্যই পরিচালকের কৃতিত্ব। বিয়েবাড়ির ভোজে প্রথমদিকের ডাল বা বেগুনিতে লবণ একটু কম হলেও, সামলে নেওয়া যায় মাছ-মাংসটা ভাল হলে। সেটাই হয়েছে ‘রুম নম্বর ১০৩’‌য়ের ক্ষেত্রে।

ফিল্ম সমালোচনা

রুম নম্বর ১০৩

সৌমিত্র, যিশু, প্রিয়াঙ্কা, অঞ্জনা

তৃতীয় গল্পে যে ভাবে স্বচ্ছন্দে আনপ্রোটেক্টেড সেক্স এবং আনওয়ান্টেড প্রেগনেন্সির মতো সমসাময়িক বিষয় উঠে আসে, সেটা প্রশংসনীয়। যদিও ‘অসহায় মেয়েদের ভরসা কন্ডোম’ বা ‘নিজেদের সময়ে লড়াইটা নিজেদের মতো করে লড়তে হয়’‌য়ের মতো সংলাপের বারবার ব্যবহার কিছুটা একঘেয়েমি নিয়ে আসে। যেমনটা ম্যানেজার রুদ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রত্যেকবার ঘরের চাবি দেওয়ার সময় ‘রুম নম্বর ওয়ান ও থ্রি’র মতো সংলাপ। এই মেদগুলো সহজেই ঝরানো যেত।

তবে শেষ গল্পটা আক্ষরিক ভাবেই গোটা ছবির ক্লাইম্যাক্স। পরিচালক কৌশিক রে-র চরিত্রে যিশু সেনগুপ্ত আর নায়িকা হতে আসা তৃণার চরিত্রে প্রিয়াঙ্কার অভিনয় খুব ভাল। সফল পরিচালক কৌশিকের সিনেমায় সুযোগ পাওয়ার জন্য শয্যাসঙ্গিনী হতে হয় উঠতি অভিনেত্রীদের। তৃণাও সে ভাবেই আসে কৌশিকের জীবনে। কিন্তু এই ‘কাস্টিং কাউচ’‌য়েই আছে টুইস্ট। মোচড়টা কী, সেটা বলা যাবে না। বাকি তিনটে গল্পের শেষেও একটা করে টুইস্ট ছিল। তবে এই গল্পে সেটা অন্যগুলোর মতো আগে থেকে একেবারে বোঝা যায় না।

তাই সব মিলিয়ে সংলাপ আর চিত্রনাট্যের ছোটখাটো অসংগতিকে বাদ দিলে ছবিটা খারাপ লাগবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE