Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শব্দে মাতুক ফেসবুক

দশ শব্দের গল্পে মেতে উঠেছে জেন ওয়াই। লিখছেন সোমঋতা ভট্টাচার্য।For sale: baby shoes, never worn. সালটা বোধ হয় ১৯২০। সহকর্মীদের সঙ্গে বাজি রেখে ৬ শব্দের এই গল্পটা মুহূর্তে লিখে ফেলেছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। অনুভূতির গোড়ায় গিয়ে সপাট চাবুক। অক্ষরের গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়া আবেগ। ব্যস! মাত্র ছ’টা শব্দেই বাজিমাত। একটা দিন, কয়েকটা দিন, একটা বছর, কয়েকটা জীবনকে কতগুলো শব্দে বা বাক্যে বাঁধা যায়? ব্যাকরণ আছে কি কোনও?

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

"For sale: baby shoes, never worn"
সালটা বোধ হয় ১৯২০। সহকর্মীদের সঙ্গে বাজি রেখে ৬ শব্দের এই গল্পটা মুহূর্তে লিখে ফেলেছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। অনুভূতির গোড়ায় গিয়ে সপাট চাবুক। অক্ষরের গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়া আবেগ। ব্যস! মাত্র ছ’টা শব্দেই বাজিমাত।
একটা দিন, কয়েকটা দিন, একটা বছর, কয়েকটা জীবনকে কতগুলো শব্দে বা বাক্যে বাঁধা যায়? ব্যাকরণ আছে কি কোনও? একটা শব্দেও তো জড়িয়ে থাকতে পারে কিছু আদর, দুঃখ, অভিমান, রাগ অথবা অসম্ভব কোনও ইচ্ছে। কেউ কেউ বলতে পারেন, ওগুলো খুব বেশি হলে কিছু ভাবনা। কনসেপ্ট বা আইডিয়া। বুদ্ধিদীপ্ত কিছু বিজ্ঞাপনে থাকে যেমন! তাই দুম করে সেটাকে গল্প আখ্যা দিয়ে দেওয়াটা খানিক বাড়াবাড়ি হয়তো, এমন মত কারও কারও। কিন্তু তাতে কী! দশ শব্দের জাদুতে আপাতত বেশ কিছু দিন হল মেতেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের লেখককুল। মানে বাঙালি তরুণ তুর্কিদেরই ধরা হচ্ছে মূলত। বাংলা ইংরেজি সবেতেই চলছে সমান ট্রেন্ড।
দশ শব্দের গল্প। টেন ওয়ার্ড স্টোরি। একটা এক শব্দের নাম সেই গল্পের। তার পরে পরপর দশটা শব্দের দুনিয়াদারি। মুখবইয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই ঘুরছে এমন সব অণুস্য অণু গল্পেরা। কেউ কেউ তো রীতিমতো নিজের গল্পসমগ্র না হলেও নিদেনপক্ষে গল্পসংগ্রহ বানিয়ে ফেলেছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে নিজ নিজ প্রোফাইলে। ‘আঁতেলেকচুয়াল’দের বহুবিধ ‘পেজ’ এবং ‘গ্রুপ’ও হুড়হুড়িয়ে ভরে উঠছে । সেই সব গল্পের নাম দেওয়া হচ্ছে হ্যাশট্যাগ দিয়ে।
কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবীবিদ্যা বিভাগের গবেষক অনিমেষ বৈদ্য যেমন। দশ শব্দের গল্পের ‘দশকর্মা ভাণ্ডার’ বানিয়েছেন তিনি। তারই কয়েকটা—

‘‘#সংশয়: - কোন ‘ক্লাসে পড়ো’? - গরিব নাকি এম.এ., কোনটা বলা ভাল!!!’’

‘‘#কান্না: চোখের উপর বাষ্প-মেঘ। বিশেষ টোকায় বৃষ্টি হয়ে নামে।’’

‘‘#একাকীত্ব: বৃদ্ধ প্রতিরাতে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে। জীবন্ত কথা শুনবে বলে।’’

কিছু দশ শব্দে আবার নির্দ্বিধায় ধরা দিচ্ছে নিপাট প্রেম। জৈবিক প্রেমই বলা চলে তাকে। পেশায় চিকিৎসক অনীক চক্রবর্তীর মুখবইয়ের দেওয়ালে ধরা রয়েছে এ রকমই একটা। যেমন-

‘‘#চ্যাট: - হাই – হ্যালো - তুমি কী করো? – ভালবাসি - কী?! - আমি তোকে ভালবাসি।’’

আর জীবন ও জীবনান্তের সূক্ষ্ম সুতোয় ভর দিয়েছে আর এক দশ-শব্দী - ‘‘#অ্যাক্সিডেন্ট: অন্ধকার... ‘হ্যালো... মা...’ ‘বাবু...তোর নামের সামনে চন্দ্রবিন্দু দেখাচ্ছে কেন?!’’

ফেসবুকের ‘বংপেন’ নামক ব্লগটিতেও রয়েছে কিছু প্রেম, কিছু চূড়ান্ত অপ্রেমের দশ।

‘‘- দশ শব্দের গল্প, বানাতে পারবি? - তোকে প্রোপোজ করলেই গল্প রেডি।’’ সেই সঙ্গেই আবার ‘‘- খুনের গল্প? দশ শব্দে? ইম্পসিবল! - এক শব্দেও হয়। - শুনি। - দ্রুম।’’

বংপেন-এরই আরও এক। ‘‘- হোয়াট্স দ্যাট ইন দি অ্যাড পা? – কাশ। - হোয়াট? – ফুলেদের ডাইনোসর।’’

দেদার চলছে অন্যের গল্প শেয়ার, নিজের প্রোফাইলে লেখা, বন্ধুকে সেই সঙ্গে ট্যাগ করা, অথবা আমন্ত্রণ জানানো দশ শব্দের ডুয়েলে। রসেবশে বা গুরুচণ্ডালীর মতো কিছু খানিক জনপ্রিয় গ্রুপেও চলছে গল্প চালাচালি।

মোদ্দা কথা হল, যা কিছু নতুন, যা কিছু অপ্রকাশিত, তাদের জন্য তো এই সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দরজা সব সময়েই হাট। নইলে আর জায়গা হবে কোথায় এই রাশি রাশি গ্রে ম্যাটারদের! ফি রোজ জন্ম নিচ্ছে কত্তো কবি-সাহিত্যিক কি-বোর্ড, কি-প্যাডে ভর করে! কলম না হয় রইল কলমদানিতে। মননকে সবুজ করাটা যে বড় জরুরি! আর সেটাই আসল। দশ হোক বা দশ হাজার— ‘কার তাতে কী আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE