পরিচালক অরিন্দমের সঙ্গে পরমব্রত-রজতাভ
পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে উঠছে গাড়ি। থামল একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির সামনে। সেখানে ইতিউতি ছড়িয়ে প্রোডাকশন ইউনিটের লোকজন। এক দিকে লাইট সেট হচ্ছে। অন্য দিকে চলছে বিকেলের জলপান বিতরণ। প্রায় অন্ধকার সেটের এক দিকে নেমে গিয়েছে সিঁড়ি। কৌতূহলবশত সেই পথে নামতেই চোখে পড়ল সিঁড়ির নীচে সাজানো-গোছানো একটা অফিস। চেয়ারে বসে খোদ পরিচালক!
কাট টু। কসৌলীর ম্যালের রাস্তায় শট দিচ্ছেন রজতাভ দত্ত। ফোনে কাউকে কিছু একটা বললেন। শট শেষ হতেই অভিনেতার হাঁকডাক, ‘‘কেউ আমার জ্যাকেটটা দে রে! শীতে জমে গেলাম।’’ তিনি এ ছবিতে এক এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট পুলিশের ভূমিকায়।
অরিন্দম ভট্টাচার্যের নতুন থ্রিলার ‘অন্তর্ধান’-এর আউটডোর শুটিংয়ে শিল্পী থেকে টেকনিশিয়ান, সকলের মুখে একটাই কথা, ‘‘উফ! কী ঠান্ডা।’’ আসলে আগের ছবি ‘ফ্ল্যাট নাম্বার ৬০৯’-এর শুটিং করতে গিয়ে কলকাতায় গলদঘর্ম হওয়ায় এ বার হিমাচল প্রদেশ বেছে নিয়েছেন পরিচালক। আর রহস্য-রোমাঞ্চের জন্য পাহাড় তো আদর্শ প্রেক্ষাপট। পরিচালকের প্রথম ছবি ‘অন্তর্লীন’-এর শুটিং অবশ্য পাহাড়েই। ‘‘আমি শার্লক হোমস আর আগাথা ক্রিস্টির বড় ভক্ত। আমার মতে, ব্যোমকেশ-ফেলুদার মতো সাহিত্যধর্মী চরিত্র বাদ দিলে বাংলায় ভাল থ্রিলার খুব কম হয়েছে। বাঙালি দর্শকও এই ধরনের ছবি দেখতে পছন্দ করেন। এক কফি শপে শিশুদের অন্তর্ধান সম্পর্কিত একটা পরিসংখ্যান দেখেছিলাম। সেখান থেকেই এই ছবির ভাবনা,’’ বলছিলেন পরিচালক।
মুখ্য চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও তনুশ্রী। ছবিতে তাঁরা দম্পতি। তাঁদের হারিয়ে যাওয়া মেয়েরই খোঁজ চলছে ছবি জুড়ে। পরমব্রতর কথায়, ‘‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে মূলত পাঁচ-ছ’জন পরিচালকের মধ্যেই কাজ ঘোরাফেরা করে। নতুনদের মধ্য থেকে খুব কম পরিচালকই দর্শকের মনে ছাপ ফেলতে পারেন। অরিন্দমের আগের দু’টি ছবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অভিনেতা হিসেবে এমন পরিচালকদের সঙ্গে কাজের ইচ্ছে থাকেই।’’ তনুশ্রী এর আগেও পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্ক্রিপ্ট খুবই ভাল। আর আমার অভিনয় দেখানোর সুযোগও রয়েছে।’’
কসৌলী এসে প্রথম কয়েক দিন শুটিংয়ের পরে দু’তিন দিনের ছুটি পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। ছুটি ছিল মমতাশঙ্করেরও, ছবিতে যিনি পরম-তনুশ্রীর প্রতিবেশীর চরিত্রে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন তনুশ্রী। ‘‘মা-বাবা-বোন, মাসি সকলের জন্যই শপিং করলাম। আসলে বছরের শেষে বিয়ে রয়েছে পরিবারে। তাই এখানেই শপিং শুরু করে ফেললাম,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন তিনি। মমতাশঙ্করও কেনাকাটা করতে ভীষণ ভালবাসেন। ‘‘যতক্ষণ শুটিং শেষ না হচ্ছে, আমার টেনশন থাকে। তনুশ্রী আর আমার বোনের জোরাজুরিতেই সে দিন শপিংয়ে গিয়েছিলাম,’’ বলছিলেন সকলের প্রিয় ‘মমদি’।
আর এক প্রতিবেশীর চরিত্রে রয়েছেন সুজন মুখোপাধ্যায়। ‘‘পরমকে বলছিলাম, এর আগে ‘চলো লেটস গো’-এর শুটিংয়ে আমরা টানা আঠেরো দিন দার্জিলিং-কালিম্পঙে থেকেছিলাম। পাহাড়ের এই মনোরম পরিবেশে আমার নাটকের লেখালিখিও করছি,’’ বললেন তিনি।
পরিচালকের ইচ্ছে, পুরো ছবিটায় যেন একটা ব্রিটিশ আর্কিটেকচারের আমেজ থাকে। তাই কসৌলী শহরের পাশাপাশি শুটিং হয়েছে চেল প্যালেস, সিমলা এয়ারপোর্ট ও ধরমপুর স্টেশনেও। ছবির ক্লাইম্যাক্স শুট হয়েছে পাহাড়ে ঘেরা সিমলা এয়ারপোর্টে। কয়েকটা দৃশ্যে কাজ করেছেন স্থানীয়রাও। ম্যালের রাস্তায় যখন শুটিং চলছিল, অবাঙালি পথচারীরা ভাষা না বুঝলেও শুটিং পর্ব ভালই উপভোগ করছিলেন।
ছবিতে একটি অবাঙালি চরিত্রে দেখা যাবে হর্ষ ছায়াকে। সিঁড়ির নীচের অফিসটি তাঁরই। সিন শুরুর আগে একটু থেমে থেমে বাংলা হরফে লেখা স্ক্রিপ্টও পড়ে ফেললেন তিনি। জিজ্ঞেস করায় বললেন, একটি বাংলা ছবির লিড চরিত্রের জন্যই বাংলা পড়তে শিখেছিলেন।
তবে যে কিশোরীর অন্তর্ধান হয়েছে, সেই চরিত্রের শিল্পী বছর তেরোর মোহর চৌধুরীর রহস্য উদ্ঘাটন হবে ছবি-মুক্তির পরেই। থ্রিলারে সাসপেন্সও তো রাখা চাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy