ছবির দৃশ্য।
‘সীতা অউর গীতা’র দেশে এ বার বড়কি আর ছুটকি!
দুই বোনের চুলোচুলিতে কাক-চিল বসতে পারে না বাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই তাদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। দু’জনই দু’জনকে, যাকে বলে ‘বোন টু বোন’ চেনে। বয়স যত বাড়ে বৈরিতার ঝাঁঝও ততই কড়া হতে থাকে। কথায় কথায় একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। বকুনি, হুমকি থেকে চড়চাপড়— মা-মরা দুই বিচ্ছু মেয়েকে বাগে আনতে কিছুই বাদ রাখেনি তাদের বাবা (বিজয় রাজ)। কিন্তু নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি সম্ভব হয়নি।
বারুদের স্তূপে আগুন দেওয়ার কাজটা করে গ্রামেরই চালচুলোহীন বাউন্ডুলে ডিপ্পর (সুনীল গ্রোভার)। বারবারই সে নারদের ভূমিকায় হাজির হয়ে লড়িয়ে দেয় দুই বোনকে। দূরে দাঁড়িয়ে তালি বাজায়, মজা দেখে।
রাজস্থানের কোনও এক ধুলোবালি মাখা অখ্যাত গ্রামে এ ভাবেই শুরু হয় আদ্যন্ত খ্যাপামির ক্যাপসুলে ভরা, অথচ মন ভাল করে দেওয়া এই সৃষ্টিছাড়া গল্প। বিশাল ভরদ্বাজের ‘মকবুল’, ‘ওমকারা’, ‘কমিনে’ বা ‘হায়দর’-এর পাশাপাশি যাঁরা তাঁর ‘মকড়ি’ অথবা ‘মটরু কি বিজলি কা মন্ডোলা’ দেখেছেন, তাঁরা জানেন, এই ভদ্রলোক একই রকম দক্ষতায় সব ধরনের গল্প বলতে পারেন। ‘মকবুল’ তৈরি করা পরিচালক যখন ‘মটরু...’র মতো ছবি বানিয়ে ফেলেন, তখন সেই বিশ্বাস পোক্ত হয়। এই গল্প ভরদ্বাজ গোত্রজাত হলেও সেই মটরু ঘরানার, যেখানে পদে পদে মণিমুক্তোর মতো ছড়িয়ে থাকে পরিচালকের তীব্র রসবোধ আর খেয়ালখোলা, আপনভোলা এক নির্ভেজাল পাগলামি।
পটাখা পরিচালনা: বিশাল ভরদ্বাজ অভিনয়: সানিয়া, রাধিকা, বিজয়, সুনীল ৬.৫/১০
বিশাল তাঁর এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন চরণসিংহ পথিকের ‘দো বহনে’ গল্প অবলম্বনে। সেই দুই বোন, বড়কি (রাধিকা মদন) আর ছুটকি (সানিয়া মলহোত্র) চুলোচুলি করতে করতেই এক দিন বড় হয়ে যায় এবং দু’জনেই বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে। এবং কিমাশ্চর্যম! দু’জনেই বিয়ের পরে আবিষ্কার করে, তাদের বরেরাও সহোদর। বসবাসও একই ছাদের নীচে। বাবাকে ‘বচন’ দেওয়ায় দুই বোনের ঝগড়া বন্ধ হয় বটে, কিন্তু জীবন পানসে হয়ে যায়। মনে হয় যেন ‘সকলি গরল ভেল’। অতএব মৃতসঞ্জীবনীর মতো শত্রুতার শুকিয়ে যাওয়া বিষবৃক্ষটিকেই আবার চাঙ্গা করার চেষ্টা করে তারা। তবে ঝগড়ার আড়ালে ভালবাসাও যে মুচকি হাসে, দুই বোন তা বুঝতে পারে কাহিনির শেষ প্রান্তে পৌঁছে।
চিত্রনাট্য থেকে পরিচালনা— বিশালের মুন্সিয়ানার ছাপ দেখা যায় পরতে পরতে। তবে ছবির দৈর্ঘ্য নিঃসন্দেহে কিছুটা কম হতে পারত। ‘দঙ্গল’-এর পরে সানিয়া মলহোত্রের বড় ব্রেক। রাধিকা ও সানিয়া, দু’জনেই যে ভাবে দুই বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তাতে তাঁদের কুর্নিশ। বাবার চরিত্রে বিজয় রাজ এবং ডিপ্পরের ভূমিকায় সুনীল গ্রোভারও চমৎকার।
কিন্তু দুই বোনের এই কলহপ্রীতির কারণ কী? বিশাল পাল্টা প্রশ্ন করছেন, তা হলে স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও ভারত-পাকিস্তান আস্তিন গোটায় কেন? উত্তর কোরিয়া বনাম দক্ষিণ কোরিয়া অথবা ইজ়রায়েল বনাম প্যালেস্তাইনের বৈরিতাই বা যুগের পর যুগ ধরে চলে কেন? অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে, দুই বোনের ঝগড়ার কারণটা ঠিক কী? তখনই বিশালের মনে হয় ভারত-পাকিস্তানের কথা। কারণ ছাড়াই যে শত্রুতা চলতে থাকে।
বড়কি আর ছুটকি তাদের বৈরিতা ভুলতে পারে। কিন্তু কাঁটাতারের দু’পারের দুই সহোদরা রাষ্ট্র তা আর পেরে ওঠে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy