Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রাজনীতির ভূত

এ রকম শুরু তো সাধারণত দেখা যায় না। যেখানে গোড়াতেই পরিচালক জানিয়ে দিচ্ছেন, বহু বাধা সহ্য করে এই ছবি বানাতে হয়েছে তাঁদের। আদ্যন্ত রাজনৈতিক স্যাটায়ার তৈরিই বা হয় কোথায় কুরঙ্গে ভরা মূলধারার বাংলা ছবিতে?

সোমেশ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

ছবিটা তৈরি করতে বেজায় সাহস লেগেছে, সন্দেহ নেই।

এ রকম শুরু তো সাধারণত দেখা যায় না। যেখানে গোড়াতেই পরিচালক জানিয়ে দিচ্ছেন, বহু বাধা সহ্য করে এই ছবি বানাতে হয়েছে তাঁদের। আদ্যন্ত রাজনৈতিক স্যাটায়ার তৈরিই বা হয় কোথায় কুরঙ্গে ভরা মূলধারার বাংলা ছবিতে?

চিত্রনাট্যকার তথা পরিচালক অনীক দত্তের কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জটা ছিল নিজের ভূতের সঙ্গে পাঞ্জা কষা। তাঁর ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ বাংলা ছবির মহাফেজখানায় ঢুকে পড়ার পরে এই ছবি যে প্রতিতুলনা টানবেই, দর্শক যে অ্যাকশন রিপ্লে দেখার মন নিয়ে হলমুখী হবেন, তা তিনি জানেন। আর জানেন বলেই আগাম ঘোষণা করতে হয়েছে, এই ভূত সেই ভূতের সিকুয়েল নয়। তবে তা অর্ধসত্য। নয়ও বটে, আবার হয়ও বটে।

সেই ভূতের অস্তিত্বের সঙ্কট, সেই পোড়ো আস্তানায় তাদের ঠাঁই নেওয়া, সেই বিচিত্রানুষ্ঠান, সেই একজোট হয়ে লড়াই দেওয়া— সব আছে। সিকুয়েল নয় বলি কী করে? কিন্তু যেখানে এই ছবি আগেরটির থেকে বেরিয়ে এল, তা হল বাম জমানা থেকে শুরু করে হালফিলের সামাজিক-রাজনৈতিক অনর্গল কমেন্টারি।

ভবিষ্যতের ভূত পরিচালনা: অনীক দত্ত অভিনয়: সব্যসাচী , খরাজ, পরান, চান্দ্রেয়ী, বরুণ, সুমন্ত, কৌশিক ৬/১০

কাদের ভূত হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অনীক? ক্যাবারে ডান্সার, খাস বিলিতি অ্যাকসেন্টে ইংরেজি বলা কেতাদুরস্ত বাঙালি ম্যানেজার (সত্যজিৎ রায়ের ‘সীমাবদ্ধ’ ছবিতে বরুণ চন্দ, এখানেও তিনিই), যাত্রার নট, টাইপিস্ট, বাঙালি বাম নেতা, বড় হাঁ করে গান গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, সৎ সাংবাদিক... তারা যেখানে আস্তানা গাড়ে, সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়া সিঙ্গল স্ক্রিন থিয়েটার। তাদের লাইভ শোেয় ভ্যাঁপো-ভ্যাঁপো করে টুবা-ট্রম্বোন ফোঁকে ইংলিশ ব্যান্ড, কলেজ স্ট্রিট ঘেঁষে যাদের টিমটিমে টিকে থাকা। তারস্বরে গান হয় ‘আমরা সবাই বাতিল আমাদের এই...’।

ভাবনাটা চমৎকার। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে গল্পটা অন্য খাতে বইত। অনীক বরং অনুপ্রাণিত হলেন রাস্তার পাশের নীল-সাদা দেওয়াল দেখে। তাঁর ভিলেনের মাথায় অক্সিজেন কম যেতে শুরু করল, ঢাক বাজতে লাগল চড়াম চড়াম। সিনেমা সিটির জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে যাদবপুরের কিছু ছেলেমেয়ের নেতৃত্বে যখন রুখে দাঁড়ালেন ভাঙাগড়ের মানুষ, শাসক দলের নেতা অম্বুবাচী গুন্ডা পাঠালেন। মঞ্চে নেচে গেল নেতা-পরিত্যক্ত খাকি চাড্ডি। পরস্পরের প্রতি বিরক্তি সত্ত্বেও গোমাংসের মহিমা নিয়ে গলা মিলিয়ে হইহই করে উঠলেন সাহেবসুবো অফিসার আর বাম নেতা। বাদ গেল না ‘হোক কলরব’ও।

দেখতে-দেখতে অবাকই লাগছিল। গুপি গাইনের তুলনায় হীরক রাজার দেশে যেমন অনেক প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনৈতিক, আগের ভূতের তুলনায় এই ভূতও যেন তা-ই! সংলাপের ছত্রে ছত্রে অনীকোচিত পরিহাস আর পানিং। যেমন, বামফ্রন্ট কথাটাই অক্সিমোরোন কেননা বাম (bum) কী করে ফ্রন্টে থাকে? বা লেলিন নয়, লেনিন।

আগের ভূতের মতো এই ভূতেও গানে অঢেল মজা। অনীকের কথায়, দেবজ্যোতি মিশ্রের সুরেও। মুগ্ধ করে অভীক মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরা। তবে সম্পাদক অর্ঘ্যকমল মিত্র একটু কাটছাঁট করলে পারতেন।

কিন্তু এত সত্ত্বেও গল্পের টান অটুট রাখতে পারলেন না অনীক। বরং বহু কথা, চরিত্র আর ঘটনার চাপে খানিক ভারাক্রান্তই হয়ে পড়ল কখনও কখনও। ঘেঁটে গেল শেষটাও। ঠাসবুনোটের মজায় এই ভূত আগের ভূতকে টপকাতে পারল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cinema Review Bhobishyoter Bhoot Anik Datta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE