Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধূসর কিন্তু মলিন নয়

কিয়া এক অটিস্টিক কিশোরী। তার চিন্তার জগৎ, দৃষ্টিভঙ্গি আর পাঁচ জনের চেয়ে আলাদা। অটিস্টিক বাচ্চা বড় করতে মা-বাবাদের জীবন কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, এ ছবির গল্প কিন্তু তা নয়।

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০০:৫৯
Share: Save:

ঘর গুছোতে গুছোতে বা স্নানঘরে গুনগুন করে যে গান গাওয়া যায়, এ ছবি অনেকটা সে রকমই। যার সুর, তাল সরে যেতে পারে, কিন্তু সে গানের কথাগুলো মনের মধ্যে ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখা যায়।

কিয়া এক অটিস্টিক কিশোরী। তার চিন্তার জগৎ, দৃষ্টিভঙ্গি আর পাঁচ জনের চেয়ে আলাদা। অটিস্টিক বাচ্চা বড় করতে মা-বাবাদের জীবন কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, এ ছবির গল্প কিন্তু তা নয়। বরং এ ছবি এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকের সামনের ঝাপসা আয়না পরিষ্কার হয়ে ওঠে। মনে হয়, কিয়া কত সহজ সরল। আর পাঁচ জন তথাকথিত স্বাভাবিক মানুষই বরং কত অস্বাভাবিক রকমের জটিল!

কিয়া ও কসমসকে নিয়েই গল্প বুনেছেন পরিচালক। কসমস এক পাড়াতুতো বেড়াল, যাকে কিয়া ভীষণ ভালবাসে। কিন্তু কসমস খুন হওয়ার পর থেকেই কিয়া হন্যে হয়ে তার খুনিকে খুঁজতে থাকে। তাতে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে তার মা দিয়া রেগে যায়। মেয়েকে এই তদন্ত থেকে বারেবারে সরে আসতে বলে। দিয়া তাকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে, সামান্য বেড়াল মারা যাওয়াকে খুন বলে না, সে তো মানুষ নয়। সরল কিয়া তার মায়ের কথা বুঝতে পারে না। তার মনে প্রশ্ন দেখা দেয়, কসমস প্রাণী, তার উপরে সে গর্ভবতী ছিল। সেই অবস্থায় তাকে খুন করাটা অপরাধ নয় কেন? কসমস খুনের তদন্ত করতে করতেই কিয়া এক অন্য রহস্যও সমাধান করে ফেলে। যে রহস্যের আড়ালে রয়েছে তার নিজের পরিবার।

কিয়া অ্যান্ড কসমস পরিচালনা: সুদীপ্ত রায় অভিনয়: ঋতিকা, স্বস্তিকা, জয় ৫.৫/১০

গল্পের প্রত্যেক দৃশ্যে রয়েছে একাধিক স্তর। সংলাপেও জাল বুনেছেন পরিচালক। এক জায়গায় কিয়ার বাবা মেয়েকে বলে, ‘হাঙ্গার অফ পাওয়ার ডিফিটিং দ্য পাওয়ার অফ লাভ’। রোজকার ইঁদুরদৌড়ের ট্র্যাকে লক্ষ্যের দিকে ছুটতে গিয়ে ভালবাসার মানুষদের কতটা পিছনে ফেলে আসি, তা কি ভেবে দেখি আমরা? এ ছবি প্রশ্ন তোলে রোজের যাপন নিয়েও।

অভিনয়ের প্রসঙ্গে এলে সকলের আগে আসে ঋতিকা পালের নাম। কিয়ার চরিত্রে সে এতটাই বাস্তব যে, অভিনয় বলা যায় না। শরীরী ভাষায়, চোখের চাহনিতে, আড়ষ্টতায় ঋতিকা বুঝিয়ে দিয়েছে সে কিয়াই। দিয়ার চরিত্রে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও সাবলীল। তবে জয় সেনগুপ্তর অভিনয়ে তার চরিত্রের প্রতিফলন পাওয়া গেল না। পরিচালক সুদীপ্ত রায় ও ডিওপি আদিত্য বর্মা আলাদা করে প্রশংসার দাবি রাখেন। ধূসর হলেও সে রংও যে সুন্দর, তা বুঝিয়ে দিয়েছে এ ছবি।

তবে খামতিও আছে। ছবিতে বেশ কয়েক বছরের ব্যবধান দেখানো হয়েছে। সেই ব্যবধান বোঝাতে আগের দৃশ্যে স্বস্তিকার চুল বড়, পরে ছোট। কিয়ারও লুক বদলানো হয়েছে। কিন্তু সেই বছরের ব্যবধান মোছেনি স্বস্তিকার নখ থেকে। আগাগোড়া একই নেল জেলিং ভীষণ ভাবে চোখে লাগে। ছবির দৈর্ঘ্য অহেতুক বেশি। প্রশ্ন ওঠে চিত্রনাট্যের আরও কিছু দুর্বলতা নিয়েও। মাঝরাতে টালিগঞ্জ থেকে রিকশা করে প্রিন্সেপ ঘাটে কি আসা যায়? কিয়ার মা তার কিছুই টের পেল না! এক জন অটিস্টিক টিনএজারের পক্ষে একা কলকাতা থেকে দার্জিলিং ট্র্যাভেল করা সম্ভব?

তবে সব প্রশ্নের শেষেও এ ছবি কিন্তু জিতে গিয়েছে কিয়ার জন্যই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Review Kia and Cosmos Autism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE