Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সংসার রহস্যে বাজিমাত ব্যোমকেশের

সুকুমার সেন ব্যোমকেশ চরিত্রে লর্ড পিটার উইম্সির মতো ‘নিঃস্বার্থ জিজ্ঞাসাবৃত্তি’ দেখেছিলেন। এই সিনেমাতেও ব্যোমকেশ বুড়ো হয়েছে, কিন্তু জিজ্ঞাসাবৃত্তিটুকু হারায়নি।

বিদায় ব্যোমকেশ সিনেমার একটি দৃশ্য

বিদায় ব্যোমকেশ সিনেমার একটি দৃশ্য

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

আগে কে জানিত বলো কত কী লুকানো ছিল/ হৃদয়নিভৃতে’— রহস্যের জট ছাড়িয়ে নিভৃত সেই হৃদয়ের কারবারি এই সিনেমা। দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত ‘বিদায় ব্যোমকেশ’ সেই কারবারে প্রায় সফল। সেই সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে পরিচালক টোকা মারেন বৃদ্ধ ব্যোমকেশের, থু়ড়ি সত্যান্বেষীর একেবারে অন্দরমহলে।

অন্দরমহলে দাঁড়িয়ে ‘একেবারে বুড়ো’ ব্যোমকেশ। জীবনের ‘কালো গোলাপে’র খোঁজে সে দাঁড়ায় নিজের সামনাসামনি। বলা ভাল, তাকে দাঁড় করায় ছেলে ডাকসাইটে পুলিশ অফিসার অভিমন্যু বক্সী। প্রায় দু’বছর নিখোঁজ থাকার পরে খুনের দায় মাথায় নিয়ে অভিমন্যুর আত্মসমর্পণ, প্রশ্নের সামনে দাঁড়ানো ব্যোমকেশ ও শেষমেশ সত্যান্বেষণের জুতোয় সাত্যকির পা গলানো— এটাই সিনেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে, দুর্নীতির সঙ্গে পরিচিত পুলিশ অফিসার সুবিমলের জড়িত থাকা, ব্যোমকেশের বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখানোতে রহস্যের কিনারা, সিনেমার গল্প বলতে এই।

এ সব গল্পের মাঝেই দেবালয় বোনেন ব্যোমকেশ-সাত্যকি (দ্বৈত ভূমিকায় আবির)-অভিমন্যু (জয় সেনগুপ্ত) ও তার স্ত্রী অনসূয়ার (বিদীপ্তা চক্রবর্তী) সম্পর্কের টানাপড়েন। তাতে ইন্ধন দেয় সুবিমল-অনসূয়ার ‘আদিম রিপু’।

বিজনে নিজের সঙ্গে কথা বলে ব্যোমকেশ। কথা বলে বর্তমানে অনুপস্থিত থেকেও জোরদার ভাবে উপস্থিত সত্যবতী আর অজিতের সঙ্গে। অভিমন্যুর বা়ড়ি ছেড়ে যাওয়া, তার আত্মসমর্পণের সময়ে বাবা বনাম সত্যান্বেষী, এই দুই সত্তার দ্বন্দ্বে লুকিয়ে থাকে ব্যোমকেশের ব্যর্থতা, হেরে যাওয়ার উপলব্ধি। কিন্তু শেষমেশ সেই দ্বন্দ্বে জেতে সত্যান্বেষীই।

সুকুমার সেন ব্যোমকেশ চরিত্রে লর্ড পিটার উইম্‌সির মতো ‘নিঃস্বার্থ জিজ্ঞাসাবৃত্তি’ দেখেছিলেন। এই সিনেমাতেও ব্যোমকেশ বুড়ো হয়েছে, কিন্তু জিজ্ঞাসাবৃত্তিটুকু হারায়নি। সেই বৃত্তির খোঁজেই দেবালয়ের ‘নতুনত্ব’। নতুনত্ব এর ঝকঝকে সংলাপ, দৃশ্যগ্রহণ, উপমা, কাহিনি রচনা ও কাব্যিক ব্যবহারে। সেই ব্যবহার নিখুঁত করতেই হাজির হয় অবন্তিকা (সোহিনী), সাত্যকির প্রেমিকা।

অভিনয়ে আবির, সোহিনী, বিদীপ্তা, অরিন্দম শীল, রূপঙ্কর বাগচী প্রত্যেকেই সাবলীল। তবে সুজয়প্রসাদ ও জয়ের অভিনয়, কয়েকটি দৃশ্যে বিশেষ ভাবে দাগ কাটে। বিদীপ্তার বাংলা উচ্চারণ তাঁর মঞ্চাভিনয়ে দক্ষতার প্রমাণ দেয়। সফল শ্যাডোগ্রাফিতে চ্যাপলিনের ‘দ্য কিড’ সিনেমার দৃশ্যের সঙ্গে শৈশবের সুখ-দুঃখকে একরেখায় নিয়ে আসা ঘটেছে সিনেমার সঙ্গে সঙ্গত রেখেই।

তবে এই সিনেমায় চোনার মতো যা থাকে, তা হল, বুড়ো ব্যোমকেশের প্রস্থেটিক মেকআপ। অত্যন্ত খারাপ। রহস্যের বুনোট ছাড়ানোটা আরও একটু ধীরে হলে ভাল হতো। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে এ গল্প বিদায়ের নয়। বরং দর্শককে সিনেমা হল পর্যন্ত নিয়ে এসে বলে, ‘শেষ নাহি যে..’

বিদায় ব্যোমকেশ

পরিচালনা: দেবালয় ভট্টাচার্য

অভিনয়: আবীর, সোহিনী, জয়, বিদীপ্তা, অরিন্দম

৬.৫/১০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Review Biday Byomkesh Abir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE