Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভাগ্যিস ঘরে ফিরল

তবে দুষ্টও কালে কালে বাড়তে থাকে। টোনি স্টার্কের কাছে ব্যবসায় টিকে উঠতে না পেরে অস্ত্রের চোরাচালানে নামে অ্যাড্রিয়ান টোমেস (মাইকেল কিটন)। পাড়ার এক এটিএম ডাকাতির ঘটনার মাধ্যমে টোমেসের ভালচারের মুখোমুখি হয় পিটার।

স্পাইডার-ম্যান: হোমকামিং

স্পাইডার-ম্যান: হোমকামিং

অরিজিৎ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

স্পাইডার-ম্যান: হোমকামিং

পরিচালনা: জন ওয়াট্‌স

অভিনয়: টম হল্যান্ড,
মাইকেল কিটন, রবার্ট ডাউনি জুনিয়র

৭/১০

এমনটা প্রায় সব বাঙালি ছেলের সঙ্গেই ছোটবেলায় কমবেশি হয়েছে। দাদাদের ক্রিকেটে কিছুতেই প্রবেশাধিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বাউন্ডারি লাইনের পাশে বসে কেটে যাচ্ছে বিকেল। অনেক কাকুতি-মিনতির পর সুযোগ পেলেও, তা শুধুই ফিল্ডিংয়ের জন্য। ফলে জমতে থাকে রাগ। তাতে কার কী! ক্যাম্বিস বল লোফালুফি ছাড়া আর তো কিছুই করার নেই।

এই স্পাইডার-ম্যানের অবস্থাও অনেকটা ওই বাঙালি কিশোরের মতো। তবে ‘অনেকটা’, পুরোটা নয়। তার স্পাইডি-ক্ষমতা যে পুরোপুরি বহাল।

‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’ ফেরত স্পাইডার-ম্যান পিটার পার্কার (টম হল্যান্ড) দাদাদের (পড়ুন টিম অ্যাভে়ঞ্জার্স) সঙ্গে মাঠে নামতে চায়, কিন্তু চোদ্দো বছরের স্পাইডার-বালককে এখনই দলে নিতে নারাজ আয়রন ম্যান টোনি স্টার্ক (রবার্ট ডাউনি জুনিয়র)। ফলে সে ফেরত আসে নিউ ইয়র্কে কাকিমা মে-র (মেরিয়া টোমেই) কাছে। স্কুল থেকে বাড়ি আর বাড়ি থেকে স্কুলের মাঝে ছোটখাটো দুষ্টের দমন করেই শান্ত থাকতে হয় পিটারকে।

তবে দুষ্টও কালে কালে বাড়তে থাকে। টোনি স্টার্কের কাছে ব্যবসায় টিকে উঠতে না পেরে অস্ত্রের চোরাচালানে নামে অ্যাড্রিয়ান টোমেস (মাইকেল কিটন)। পাড়ার এক এটিএম ডাকাতির ঘটনার মাধ্যমে টোমেসের ভালচারের মুখোমুখি হয় পিটার। তবে ভালচারের উদ্দেশ্য, শুধু অস্ত্রের চোরাচালান বা ডাকাতি নয়। অ্যাভেঞ্জারদের শেষ করাই লক্ষ্য তার। পিটারের কথায় অবশ্য কান দেয় না টিম অ্যাভেঞ্জার্স। ফলে ভালচারের সঙ্গে যুদ্ধে স্পাইডি একা।

পরিণত ভিলেন ভালচারের সঙ্গে কী পেরে উঠবে বালক পিটার পার্কার? জানতে হলে সিনেমা হলে যেতে হবে। শুধু ক্লাইম্যাক্স নয়, ‘স্পাইডার-ম্যান’ ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় রিবুট হিসেবেও ‘...হোমকামিং’ বেশ পরিণত। কমিক্স জগতে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক মার্ভেল আর ডিসি কমিক্সের। মিল বলতে, দু’দলই এখন সুপারহিরোদের গোটা টিম নিয়ে সিনেমার পরদায় নামার পক্ষপাতী। কোনও একটি সুপারহিরো নিয়ে ছবি বাজারে প্রায় কাটছে না। ব্যতিক্রম বলতে খালি ডিসি কমিক্সের ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’। টেক্কা দিতে তুরুপের তাস ‘স্পাইডার-ম্যান’কে ভাল সময় রিলিজ করল মার্ভেল।

কৃতিত্ব অবশ্য পরিচালক জন ওয়াট্‌সেরও পাওনা। মাকড়সার কামড়ে পিটার পার্কার কী ভাবে স্পাইডার-ম্যান হল, সেই ঘ্যানঘানানি নেই। এমনকী কায়দা করে আগের ছবিটা না-দেখা দর্শকের জন্য ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’‌-এর কিছু কিছু দৃশ্য পিটারের স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেখিয়ে সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। প্রায় নতুন পরিচালক বলেই বোধহয় প্রযোজক সংস্থা ছ’জন চিত্রনাট্যকারকে জুড়েছিল ছবিটার সঙ্গে! অতি সন্ন্যাসীতে এ ক্ষেত্রে অনন্ত গাজন নষ্ট হয়নি।

একুশ বছর বয়সি টম হল্যান্ডকে স্পাইডার-ম্যানের ভূমিকায় নেওয়া নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। এত অল্প বয়সি সুপারহিরো তো আগে তেমন দেখা যায়নি! তবে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিতে পেরেছেন হল্যান্ড। টোবি ম্যাগুয়ের মতো না হলেও অ্যান্ড্রু গারফিল্ডের চেয়ে তাঁকে এগিয়ে রাখতেই হবে। চরিত্র অনুযায়ী একেবারে যথাযথ হল্যান্ড। স্কুলপড়ুয়া টিনএজারের কিমকর্তব্যবিমূঢ়তা দারুণ ফুটিয়ে তুলেছেন। অ্যাকশন তো বটেই, ভালনারেবল স্পাইডিও চমৎকার।

অতি সুপারহিরোতে সিনেমা নষ্ট মার্ভেল এর আগে অনেক করেছে।
‘...সিভিল ওয়ার’ই তার বড় প্রমাণ। এ ছবি অবশ্য সেই ট্র্যাডিশনের উল্টো পথেই হেঁটেছে। প্রয়োজন ছাড়া অ্যাভেঞ্জররা পরদায় আসেনি। ক্যাপ্টেন আমেরিকা কয়েকটা মাত্র দৃশ্যে। টোনি স্টার্ক অবশ্য আছে ডাউনি জুনিয়রের স্বভাবসিদ্ধ পাগলামি নিয়ে। সেটা মন্দ লাগবে না। অনেক দিন পর কোনও মার্ভেল সুপারহিরো খোলা মাঠ পেয়েছে। সেটাকে গুরুত্ব সহকারেই ব্যবহার করেছে হলান্ডের স্পাইডি।

আর একটা ক্ষেত্রেও এ ছবি আলাদা। ভিলেনের ব্যাপারে ডিসি বরাবর টেক্কা দিয়েছে মার্ভেলকে। মাইকেল কিটনের ভালচার এ বার পাল্লা খানিকটা ভারি করে দিল উল্টো দিকে। ভিলেন হওয়ার জন্যই ভিলেন নয় ভালচার। অভিজাত টোনি স্টার্কের বিপরীত মেরুর বাসিন্দা সে। স্টার্কের একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে আওয়াজের নামই যেন ভালচার। আর এমন চরিত্রের জন্য কিটনের থেকে ভাল আর কে-ই বা হতে পারতেন! শুধু একটাই খটকা। বার্ডম্যানের পর ভালচার, বড্ড চেনা ছক হয়ে গেল না!

তা বলে ‘স্পাইডার-ম্যান: হোমকামিং’কে নির্ভুল বলা যাবে না। চরিত্রদের বাদ দিলে গল্পটা সহজ সরল। ম্যাগুয়েরের ‘স্পাইডার-ম্যান’-এ অনেক পরত থাকত। শ্রেণিসংগ্রামের হাল্কা আভাস ছাড়া, এখানে পরত খুঁজে পাওয়া শক্ত। যুক্তির অভাবে আন্ট মে-র এত অল্প বয়স শুধু চমক হয়েই থেকে গেল।

তবে এমন ছোটখাটো ব্যাপারগুলো সরিয়ে রাখলে সুপারহিরো ছবির উপর নতুন করে ভরসা যোগায় ‘স্পাইডার-ম্যান: হোমকামিং’। হল্যান্ডের সঙ্গে তিনটে ছবির চুক্তি প্রযোজকদের। তার সিক্যুয়েল যে আরও ভাল হবে, তা নিয়ে বাজি ধরাই যায়। তবে একটাই অনুরোধ, সিনেমা হলে এন্ড ক্রেডিটের পরেও একটু অপেক্ষা করবেন। মোক্ষম টুইস্টটা ওখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE