Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘খোলসা করে বলি, আমি মনের মানুষ পেয়ে গিয়েছি’

গত দু’বছরে উল্কার গতিতে তাঁর উত্থান। ঠিক কী কারণে সকলের পছন্দের পাত্রী হয়ে উঠলেন নুসরত?গত দু’বছরে উল্কার গতিতে তাঁর উত্থান। ঠিক কী কারণে সকলের পছন্দের পাত্রী হয়ে উঠলেন নুসরত?

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০০:০১
Share: Save:

প্রথম ছবি ২০১১। তার পর আবার ২০১৩ সাল।

মাঝের সময়টা তাঁর কাছে ‘কালো দিন’। যদিও সেটাকে নিজের ‘ভবিতব্য’ বলে মনে করেন নুসরত জাহান। বিশ্বাস করেন, জীবনে ওঠা-পড়া থাকেই। তবে তাঁর কেরিয়ারে এখন শুধুই ওঠা।

সেই উত্থানও যেন রহস্যময়! পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে গিয়েছিল। প্রধান অভিযুক্ত কাদেরের বান্ধবী ছিলেন তিনি। যদিও তত দিনে রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘শত্রু’ করে নুসরত পরিচিত। সেই পরিচিতিকে ছাপিয়ে গেল পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা। পুলিশে ছুঁলে আঠেরো ঘা...অথচ নুসরত কিন্তু ‘সামলে’ নিয়েছিলেন।

কেরিয়ারের সিঁড়িগুলো টপকাতে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল? ‘‘কাজ ভাল না করলে কেউ পাত্তা দেয় না। হার্ড ওয়র্কের কোনও বিকল্প হয় না,’’ বললেন নুসরত। অনেকের মতে তাঁর প্লাস পয়েন্ট মিষ্টি ব্যবহার আর পিআর ক্ষমতা। ‘‘আরে, খামোকা কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবই বা কেন? এত ছোট একটা ইন্ডাস্ট্রি তো!’’

যাঁকে একটা সময় পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছিল সেই মেয়ে এখন ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম প্রথম। সরকারি মহলেও তিনি সমান স্বাগত। নির্বাচনী প্রচারেও তাঁকে দেখা যায়। ‘মেহনত’ আছে মানছেন নুসরত নিজেও। তবে খারাপ সময়ের কথাগুলো আর মনে করতে চান না। ‘‘দেখুন, ওঠার সময়টা মেনে নিতে পারলে পড়ার সময়টাও মানতে হবে,’’ আত্মবিশ্বাসী গলায় জবাব এল।

আরও পড়ুন: সন্তান দত্তক নিতে চান দিয়া মির্জা

আত্মবিশ্বাসের জোরেই হয়তো দু’বছর নিজের মতো করে লড়াই করে গিয়েছেন। প্রথমে তাঁকে কেউ কাজ দিতেও চায়নি। ২০১৩-য় এসকে মুভিজ তাঁকে দিয়ে ফের ছবি করায়। যাদের হাত ধরে নুসরত ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন। কিন্তু হাতে কাজ না থাকার সময়টায় ডিপ্রেসড হয়ে যাননি? ‘‘কাজ না থাকলে খারাপ তো লাগবেই। কিন্তু সেই সময় আমার কিছু করার ছিল না। এ রকম ফেজ তো আসতেই পারে জীবনে,’’ প্রত্যয়ী জবাব।

সেই খারাপ ফেজ কাটতে সময় লেগেছিল। টলিউ়ডে পায়ের তলার মাটি শক্ত হতে আরও দু’বছর লেগে গিয়েছিল। ঠিকঠাক হিসেব করলে নুসরতের প্রত্যাবর্তন ২০১৫ সালে। বড় প্রযোজনার ‘ছত্রছায়া’য় এসে। সেটাই কি তাঁর জীবনে টার্নিং পয়েন্ট? ‘‘আমার কাছে সে ভাবে কোনও টার্নিং পয়েন্ট কিন্তু নেই। যে রকম পরিস্থিতি এসেছে সেই মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

অঁসম্বল কাস্টের ছবি থেকে সোলো লিড, অন্য ধারার ছবিও করেছেন। ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর আসনের অন্যতম দাবিদার অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি রেটিংয়ে মোটেও বিশ্বাস করি না। ভাল কাজ করলে লোকে ঠিক নজর করবে। আমি দু’রকমের ছবিতেই অভিনয় করেছি। এই বিভাজনটা আপনাদের কাছে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব ছবিতে একই এফর্ট দিয়ে থাকি।’’

তাঁর এফর্ট নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু ওই বড় প্রযোজক সংস্থার ‘স্নেহধন্য’ না হলে কি এতটা দূর এগোতে পারতেন? ‘‘একটাই তো বড় সংস্থা আছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সকলেই এখানে কাজ করার জন্য মুখিয়ে থাকে। আমি আলাদা কিছু নই,’’ সাফ জবাব।

ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর কোনও গডফাদার নেই? হেসে বললেন, ‘‘আমি ডেস্টিনি চাইল্ড। কোনও গডফাদার নেই। জীবন যে দিকে নিয়ে যাবে সে দিকে যাব। নিজের সাফল্যের জন্য কাউকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না।’’ তা হলে শুধুই কি ভাগ্য? সাফল্যের পিছনে আর কোনও গল্প নেই বলছেন? ‘‘না, শুধু ভাগ্যের দোহাই দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। পরিশ্রমও করতে হবে। ২৭ বছরের মধ্যে নিজের টাকায় ফ্ল্যাট, গাড়ি কিনতে পেরেছি। অ্যাই অ্যাম হ্যাপি,’’ জবাব তাঁর।

বলা হয়, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় করে টাকা পাওয়া যায় না। অভিনেতাদের ভরসা ইভেন্ট এবং মাচার অনুষ্ঠান। তার উপর নায়কদের চেয়ে নায়িকাদের পারিশ্রমিক আরও কম। যেটা নিয়ে বলিউড অত্যন্ত সরব। তবে নুসরত কিন্তু উল্টো কথা বললেন, ‘‘পারিশ্রমিক নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। বাকিদের কথা জানি না, আমি অন্তত ভাল পারিশ্রমিক পাই।’’

ফ্ল্যাট-গাড়ি হয়ে গিয়েছে, ইন্ডাস্ট্রির সিংহাসনটাও হাতে এল বলে, তা হলে কি এ বার সেটল করার কথা ভাবছেন? ‘‘খোলসা করে বলে দিই, আমি মনের মানুষ পেয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেটল করার কথা এখনই ভাবছি না।’’

অভিনেত্রী সত্তা কি তাঁর জীবনে বদল এনেছে? ‘‘বিন্দুমাত্র না। তা হলে সকলের আগে মা আমার মজা দেখিয়ে দেবে। আমি কি অমিতাভ বচ্চন যে ট্যানট্রাম দেখাব! আগের চেয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে গিয়েছি এটা বলতে পারেন। কাছের বন্ধুদের সঙ্গে কিন্তু মাঝেমধ্যেই দেখা করি,’’ বললেন নুসরত। তবে একটা বিষয়ে তাঁর অনীহা রয়েছে। সেটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার। হেসে বললেন, ‘‘আমার কোনও সমস্যা নেই। আমি একই রকমের আছি। কিন্তু বাকিরা এমন করে যে আমার অস্বস্তি হয়। ওই সেলফি তোলা, স্টার বলে খাতির করা ওগুলো নিতে পারি না। আমি আগের মতো থাকতে চাইলেও বাকিরা সেটা দেয় না।’’

ইন্ডাস্ট্রিতেও তাঁরা নায়িকারা বন্ধু। মিমি, শ্রাবন্তী, সায়ন্তিকা, তনুশ্রী আর তিনি। যাঁরা তাঁর প্রতিযোগীও বটে। ‘‘এখন পারসেপশনটাই বদলে গিয়েছে। নায়িকা মানেই রেষারেষি ব্যাপারটা নেই। বলিউডেও দেখবেন তাই। আমি আর সায়ন্তিকা তো দু’জনে মিলে বেরিয়ে এলাম,’’ বললেন টলিউডের সম্ভাব্য প্রথম।

বাকিদের সঙ্গে রেষারেষির কথা না হয় ছেড়ে দেওয়া গেল, কিন্তু মিমি চক্রবর্তী! তাঁদের দু’জনের সমীকরণটা ঠিক কেমন? নুসরতের কথায়, ‘‘মিমি আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। আমরা দু’জনে মিলে এ বার বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছি।’’

টলিউ়়ডে যে সব কথা ভেসে বেরায়, সেগুলো মাথায় রাখলে নুসরত আর মিমির বন্ধুত্বটা কিন্তু সত্যিই রহস্যময়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nusrat Jahan Actress Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE