Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কৌশিকের বাস্তু

বাস্তু মানে শুধু সংসারের সুখ-শান্তি নয়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ছবির বিষয়ও। খবর দিচ্ছেন ইন্দ্রনীল রায়বাড়ির মাস্টার বেডরুম হওয়া উচিত দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। ঈশান কোণ (উত্তর-পূর্ব দিক) যত খালি থাকবে, বাস্তুর দিক থেকে ততটাই শান্তি থাকবে বাড়িতে। ঠাকুরঘরও ঈশান কোণে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। দক্ষিণ এবং পশ্চিমের দেওয়ালে আয়না রাখা নৈব নৈব চ। বাড়িতে সমৃদ্ধি বজায় রাখতে বাড়ির দরজা ক্লকওয়াইজ খোলাটা আবশ্যক। কোনও মতেই উত্তর দিকে মাথা দিয়ে ঘুমনো উচিত নয়। এতে দুঃস্বপ্ন দেখা এবং মানসিক অবসাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। বাস্তু মানে শুধু সংসারের সুখ-শান্তি নয়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ছবির বিষয়ও। খবর দিচ্ছেন ইন্দ্রনীল রায়

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

• বাড়ির মাস্টার বেডরুম হওয়া উচিত দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে।

• ঈশান কোণ (উত্তর-পূর্ব দিক) যত খালি থাকবে, বাস্তুর দিক থেকে ততটাই শান্তি থাকবে বাড়িতে। ঠাকুরঘরও ঈশান কোণে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

• দক্ষিণ এবং পশ্চিমের দেওয়ালে আয়না রাখা নৈব নৈব চ।

• বাড়িতে সমৃদ্ধি বজায় রাখতে বাড়ির দরজা ক্লকওয়াইজ খোলাটা আবশ্যক।

• কোনও মতেই উত্তর দিকে মাথা দিয়ে ঘুমনো উচিত নয়। এতে দুঃস্বপ্ন দেখা এবং মানসিক অবসাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

ওপরের প্রত্যেকটাই হাজার বছর পুরনো বাস্তুশাস্ত্রের বিভিন্ন টোটকা যা বহু মানুষ বিশ্বাস করে এবং অনেকেই যা হেসে উড়িয়ে দেয়। এবং এই বাস্তুশাস্ত্রকে কেন্দ্র করেই তাঁর পরের ছবি বানাতে চলেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

তাঁর প্রত্যেকটা ছবিতেই তিনি বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করেন, এ বারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সেই ধারা বজায় রেখেই তাঁর পরের ছবির নাম ‘বাস্তু-শাপ’। অভিনয়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় ও রাইমা সেন।

শ্যুটিং শুরু মে মাসের মাঝামাঝি। তা হঠাৎ বাস্তুশাস্ত্র নিয়ে ছবি বানানোর আইডিয়া কোথা থেকে এল?

‘‘প্রথমেই একটা জিনিস বলি। বাস্তুশাস্ত্র অনেকে বিশ্বাস করে, অনেকে ভাবে এটা কুসংস্কার। কিন্তু আমার ছবির বিষয়বস্তু একেবারেই সেই দ্বন্দ্ব নিয়ে নয়। এখানে বাস্তু একটা উপলক্ষ। রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত লাইনটা আছে না, ‘আজ নিখিলের আনন্দধারায় ধুইয়ে দাও, মনের কোণের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও’। আমার কাছে বাস্তু হল, প্রকৃতি এবং বাসস্থান — এই দুয়ের মধ্যে এক ভারসাম্য। মানুষে মানুষে পরিচ্ছন্ন সম্পর্কটাই বাস্তু। বলতে পারেন ‘বাস্তু-শাপ’ এক আবর্জনামুক্ত জীবন ও সম্পর্কের ছবি,’’ ছবির চিত্রনাট্যের ফাইনাল ড্রাফ্ট লিখতে লিখতে বলছিলেন কৌশিক।

তাঁর শেষ ছবি, ‘ছোটদের ছবি’ বক্স অফিসে সে রকম সাফল্য পায়নি। সেটার পর কি কোনও ভাবে নিজের স্টান্স বদলেছেন কৌশিক?

‘‘ওই একটা জিনিস আমি কোনও দিন বদলাইনি, স্টান্স। কোনও দিন বদলাব না। আর দেখুন, প্রত্যেকটা ছবির একটা দায়িত্ব থাকে। আর ‘ছোটদের ছবি’-র সিলভার পিকক পাওয়া থেকে নামী ফেস্টিভ্যালে ডাক, এটা অন্তত প্রমাণ করে ছবির গুণগত মান কী ছিল। তবে হ্যাঁ, বক্স অফিসে ‘ছোটদের ছবি’ না চলা আমাকে একটু অবাক অবশ্যই করেছিল,’’ বলেন পরিচালক।

‘ছোটদের ছবি’তে একেবারেই অনামী এবং অ্যামেচার অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করলেও ‘বাস্তু-শাপ’‌য়ের কাস্টিং কিন্তু যথেষ্ট হাই-প্রোফাইল।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল ও কৌশিক সরকার।

‘২২শে শ্রাবণ’-এর পর আবার একসঙ্গে পরম, রাইমা আর আবীর। সঙ্গে আছেন কৌশিকের স্ত্রী, পরিচালক ও অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়।

কী বলছেন পরিচালক ছবির কাস্টিং নিয়ে?

‘‘হাই প্রোফাইলের থেকেও বড় ব্যাপার সবাই আমার খুব পছন্দের অভিনেতা। পরমের সঙ্গে এটা আমার চতুর্থ ছবি। রাইমা তো আমার ওল্ড ফেভারিট। আবীরের সঙ্গে অনেক দিনের কাজ করার ইচ্ছে ছিল। ফাইনালি হল। আর চূর্ণী তো আমার ওল্ডেস্ট ফেভারিট। তবে
দুঃখের ব্যাপার আমার ইউনিটে চূর্ণী একটু নেগলেক্টেড। ও সব কিছু জানে, এটা ভেবে মাঝেমধ্যে ওকে কলটাইম দিতেও ভুলে যায় আমার অ্যাসিস্টেন্টরা,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন কৌশিক।

কৌশিকের সঙ্গে তাঁর চতুর্থ ছবি নিয়ে যথেষ্ট এক্সাইটেড পরমও। ‘‘দেখুন কৌশিকদার সঙ্গে কাজ করা একটা প্লেজ্যান্ট হ্যাবিট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই ছবির কাস্টিংটাও ইন্টারেস্টিং। আবার আবীরের সঙ্গে কাজ করতে পারব। সব মিলিয়ে আমি খুব এক্সাইটেড,’’ বাংলাদেশে শ্যুটিং-এ চলে যাওয়ার আগে বলছিলেন পরমব্রত।

পরমব্রতর সঙ্গে আবীরের একসঙ্গে কাজ করাটা অবশ্যই এই ছবির হাইলাইট। শাশ্বতকে বাদ দিলে শহুরে দর্শকদের কাছে এই দুই অভিনেতার বিরাট চাহিদা। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই দু’জন একই ছবিতে অভিনয় করার ফলে ছবিটির প্রোফাইলও এক ধাপে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

অন্য দিকে অনেক দিন পর শুধু অভিনয়ে ফিরতে পেরে খুশি চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ও।

‘‘অনেক দিন পর একটা ছবিতে শুধু অ্যাক্টিং করতে হবে, এটা ভেবে ভাল লাগছে। ‘নির্বাসিত’ নিয়ে আমি এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে নিজের অভিনয়ের দিকে মন দেওয়াই হয়নি। থ্যাঙ্কফুলি এই ছবিতে আমি শুধু অভিনয়ের দিকে কনসেনট্রেট করতে পারব। তবে একটা ব্যাপার এ বার হবেই। কৌশিক কোনও শট নিলে আমার এটা অন্তত মনে হবে, আমি পরিচালক হলে এটা কী ভাবে নিতাম। অভিনেতা থেকে পরিচালক হলে বোধহয় এই সত্তাটা থেকেই যায়,’’ বলছিলেন ‘নির্বাসিত’র পরিচালক চূর্ণী।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাপারে একটা সমালোচনা অবশ্য আজকাল প্রায়ই ফিল্মি আড্ডায় শোনা যায়। তা হল, তিনি ছবি বানান শুধু পুরস্কার পাওয়ার জন্য। কৌশিকের কানে কি পৌঁছেছে এ রকম কথাবার্তা?

‘‘ব্যাটিং যখন করছি, ক্লোজ ইন ফিল্ডার স্লেজ করলে কানে তো আসবেই। তবে পুরস্কার বা প্রাইজ নয়, আমি কিছু ছবি বানাবার চেষ্টা করি ইন্টারন্যাশনাল অডিয়েন্সের কথা ভেবে সেটা অস্বীকার করছি না। আর আগেও তো বলেছি, আমার কিছু ছবি হয় টেস্ট ক্রিকেট, কিছু ওয়ান ডে। ‘শব্দ’, ‘অপুর পাঁচালি’, ‘ছোটদের ছবি’ হল সাদা জার্সি পরা টেস্ট ম্যাচ। ‘খাদ’, ‘C/O স্যার’— এগুলো ওয়ান ডে।’’

‘বাস্তু-শাপ’ কী? টেস্ট না ওয়ান ডে?

‘‘সেটা সারপ্রাইজ থাক,’’ এক নিশ্বাসে বললেন কৌশিক।

যা খবর পাওয়া গেল, এই ছবির অনেকটা শ্যুটিং হবে পাহাড়ে। ‘‘লোকেশন ঠিক করব খুব শিগগিরই। শুধু এটা ভেবেই ভাল লাগছে মে মাসের গরমে কলকাতায় থাকতে হবে না,’’ বলেন কৌশিক।

অন্য দিকে, এই মুহূর্তে মুম্বইতে শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত রাইমাও ‘বাস্তু-শাপ’ শুরু হওয়ার অপেক্ষায়। ‘‘কিছু কিছু পরিচালককে অভিনেতা হিসেবে আপনি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারেন। কৌশিক আমার কাছে সে রকম একজন পরিচালক। আমি জানি ও আমার সেরাটা বের করে আনবেই। আর তার থেকেও বড় কথা আমাকে যে ডিরেক্টর সবচেয়ে বেশি প্যাম্পার করে, সে কৌশিক। তাই ওর ছবি সব সময়ই ভীষণ স্পেশ্যাল,’’ মুম্বই থেকে বলছেন রাইমা।

অন্য দিকে, আবীর জানাচ্ছেন সেই ২০০৬ থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করার কথা কৌশিকের। আজ ন’বছর পরে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

‘‘সেই ২০০৬ থেকে কথা হচ্ছে, অবশেষে মনে হচ্ছে ব্যাটে বলে হল। তবে প্রথম শটটা না দেওয়ার আগে অবধি নিশ্চিন্ত হতে পারছি না,’’ বলেন আবীর। কানাঘুষোয় এটাও শোনা যাচ্ছে ছবিতে এই চারজন ছাড়াও এক অতি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন পরিচালক নিজেও।

‘বাস্তু-শাপ’ ছবিটি প্রযোজনা করছেন গ্রীন টাচ এন্টারটেনমেন্টের শ্যামসুন্দর দে। তা দেখে অবশ্য অনেকে এই ছবিকে কৌশিকের ‘বাস্তু’বদলও বলছেন।

বেশ কয়েকটা ছবি একটি প্রযোজক সংস্থার সঙ্গে করার পর তিনি এ বার অন্য প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করছেন।

কী বলবেন কৌশিক সেটা নিয়ে?

‘‘একেবারেই বাস্তু বদলের মতো ব্যাপার নয়। প্রযোজক হিসেবে আমি এক বন্ধুর ছবি পরপর করছিলাম, এ বার অন্য এক বন্ধুর ছবি করছি। এটুকু বলতে পারি, প্রযোজক বন্ধু না হলে আমি কাজ করি না,’’ সাফ জবাব কৌশিকের।

‘বাস্তু-শাপ’‌য়ের প্রযোজক শ্যাম সুন্দরও এই নিয়ে ভাবছেন না। ‘‘অ্যাপ্রিসিয়েশন আগেও পেয়েছি, এ বার বক্স অফিস সাফল্য পেতে চাই। আর সেটা দেওয়ার সেরা মানুষ কৌশিকদা,’’ বলছেন শ্যামসুন্দর।

যা পরিস্থিতি, ইট-বালি-সুড়কি সব নিয়ে তৈরি পরিচালক। কে কে বাড়িতে থাকবেন, কোন দিকে ঘর হবে, কোন দিকে জানলা, সেটাও ঠিক করে ফেলেছেন। এখন পাহাড়ে গিয়ে শুধু ‘বাস্তু’ বানানোটাই বাকি।

তবে কৌশিকের এই ‘বাস্তু’ শাস্ত্র যে ইন্ডাস্ট্রির অনেক সমীকরণ পাল্টে দেবে সেটা জলের মতো পরিষ্কার। সেই ‘শাপ’-এ বর হয় কি না, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE