Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দিতিপ্রিয়ার ‘রানি রাসমণি’ হওয়ার হিস্ট্রি জানেন?

নাম তার দিতিপ্রিয়া রায়। ছোট পরদায় দর্শক যাকে চেনে ‘রানি রাসমণি’ নামেনাম তার দিতিপ্রিয়া রায়। ছোট পরদায় দর্শক যাকে চেনে ‘রানি রাসমণি’ নামে

দিতিপ্রিয়া রায়।

দিতিপ্রিয়া রায়।

পারমিতা সাহা    
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৩
Share: Save:

‘ছোট ডন। সেটে সব্বাই আমাকে ওই নামেই ডাকে। আর আমার মাকে ডাকে বড় ডন,’’ বলতে বলতে খিলখিল হাসির দমক দিতিপ্রিয়ার গলায়। অবশ্য দর্শকের কাছে সে ‘রানি রাসমণি’। যার লাবণ্যে, অভিনয় দক্ষতায় মজেছে বাংলা। সেটে ‘রাসমণি’ এ রকমই। অ্যাকশন আর কাট-এর মাঝের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় সে ‘স্বমূর্তিতে’। ‘‘সেটে সবাইকে খুব জ্বালাই। তুমি যদি এখানে কাউকে আমার কথা জিজ্ঞেস করো, বলবে, ‘ওরে বাবা রানি!’ কিন্তু ওরাই আবার বলে, ‘রানি না এলে আমাদের ভাল লাগে না’।’’ মিষ্টি দিতিপ্রিয়ার দুষ্টুমি সেটের কেজো পরিবেশটাকেই বদলে দেয়।

ধারাবাহিকে এহেন ঐতিহাসিক চরিত্রের ওজন বওয়া সহজ কথা নয়। রানি রাসমণির কিশোর বয়স, যেখানে বয়সোচিত ছেলেমানুষির সঙ্গে মিশেছে ব্যক্তিত্বের দ্যুতি, স্বভাব দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছে দিতিপ্রিয়া। কী ভাবে এল এমন সুযোগ? ‘‘সে লম্বা গল্প, জানো... আমি যে দিন অডিশন দিতে গেলাম, আমাকে বলা হল, এ রকম একটা সিরিয়াল শুরু হচ্ছে, তোকে ছোটবেলায় রানির চরিত্রে ভাবা হয়েছে। অবাক হয়ে বললাম, আমি তো সিরিয়াল করব না। চ্যানেল থেকে বলল, তিন মাসেই কাজ শেষ। সেটা শুনে রাজি হলাম। তার পর লুক সেট হবে। আমি জানি, সে সব হয়ে, সিরিয়াল শুরু হতে প্রায় মাসখানেক লেগে যাবে। কিন্তু লুক সেট করতে গিয়ে শুনলাম, পরশু দিন নাকি প্রোমো! আমার কিছু বোঝার আগেই চ্যানেল অ্যাপ্রুভাল পাঠিয়ে দিয়েছে। তার পর প্রোমো শ্যুটে গিয়েছি, সেখানে আবার অনেকে বলছে, এই চরিত্রটা তুই করছিস, ঠিক তো? আমি তো জানি আমি করছি, দু’দিনের মধ্যে আবার অন্য কোনও মেয়ে ঠিক হল নাকি? তার পর জানলাম, না আমিই করছি। এর পর প্রোমো অন এয়ার হল, সিরিয়াল শুরু হল... এটাই হল দিতিপ্রিয়ার ‘রানি রাসমণি’ হওয়ার হিস্ট্রি!’’

বাঁদিকে রানির বেশে দিতিপ্রিয়া। ডানদিকে স্বমূর্তিতে ।

তবে দিতিপ্রিয়ার অভিনেত্রী হওয়ার ‘ইতিহাস’ আরও পুরনো। টিভির পরদায় নিজেকে দেখার ইচ্ছে তার একদম ছোট্ট থেকে। বাবা অলোকশঙ্কর রায় যেহেতু ইন্ডাস্ট্রির লোক, তাই বাড়িতে সব সময় ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের আসা-যাওয়া লেগে ছিল। ‘‘তখন শুধু ভাবতাম, কী ভাবে ওই টিভির ভিতরে ঢোকা যায়।’’ তাই বোধ হয় মাত্র তিন বছর বয়সেই তার অভিনয়ে হাতেখড়ি। দূরদর্শনে এক ডকুমেন্টারিতে। ‘‘সেটাও কো ইনসিডেন্টালি। আসলে আমার জীবনে সব কিছু কাকতালীয় ভাবে ঘটেছে। ওখানে ওদের একটা পোষা কুকুরের প্রয়োজন ছিল। আমার বাবা যেহেতু অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত, তাই ওরা আমার বাবাকে বলে, তোর বাড়িতে তো কুকুর আছে, সেটা পাঠিয়ে দে। তখন আমি ডগিকে নিয়ে আসি। আমাকে দেখে ওদের পছন্দ হয়ে যায়। এ ভাবেই ছোট ছোট কাজ করতে করতে একদিন ‘মা’ ধারাবাহিকে সুযোগ পেলাম। তার পর ‘দুর্গা’, ‘অপরাজিত’। ‘রাজকাহিনী’ ছবিতে অভিনয় করলাম। অনুরাগ বসুর ‘স্টোরিজ বাই রবীন্দ্রনাথ টেগোর’-এর ‘অতিথি’ গল্পের লিড আমি করেছিলাম।’’

পনেরো বছরের দিতিপ্রিয়া গঙ্গাপুরী শিক্ষাসদন ফর গার্লস স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্রী। একে ধারাবাহিকে লং ওয়র্কিং আওয়ার্স, তায় পড়াশোনার চাপ। সামলাচ্ছ কী ভাবে? ‘‘তার মধ্যেই সময় বের করে নিতে হয়। আমার বলাই আছে, হয় ফার্স্ট হাফে, নয়তো সেকেন্ড হাফে আমাকে ছেড়ে দিতে হবে,’’ একদম সোজাসাপটা জবাব তার। এই কিশোরী মেয়েটাই রোজ রোজ শাড়ি, ভারী ভারী গয়না পরে সাবলীল ভাবে রাসমণির চরিত্রে অভিনয় করে চলেছে। পরদার রানিকে দেখে বোঝার উপায় নেই ছোট চুলের টমবয় দিতিপ্রিয়ার পক্ষে শাড়ি-গয়না সামলানো কতটা কঠিন হতে পারে! ‘‘প্রথম দিন লুক টেস্টের সময় যখন গয়নাগাঁটি পরেছিলাম, খুব ভাল লেগেছিল। কত গয়না! আমি কখনও বউটউ সাজিনি। তাই শাড়ি-গয়না পরে নিজেকে শুধু দেখছিলাম। কিন্তু সেটা শুধু ওই এক দিনই। তার পর থেকেই বুঝে গিয়েছি গয়না আর শাড়িতে কী চাপ! এও বুঝতে পারছিলাম কপালে দুঃখ আছে!’’ আহা রে! গয়নাগুলো পরতে আর ভাল লাগছে না বুঝি? ‘‘ওগুলো বীভৎস ভারী, নড়তে-চড়তে কষ্ট হয়। আর আমার যেহেতু চুল এক্কেবারে ছোট্ট, তাই উইগ, প্রচুর গয়না, ভারী শাড়ি পরে ঘোমটা দিয়ে... উফ নাজেহাল হয়ে যাই। হ্যাঁ, তবে এটা ঠিক, যখন সিন শুরু হয়ে যায় তখন ওই ভারী শাড়ি, গয়নাগাঁটি... সব ভুলে যাই। যেই কাট হয়ে যায়, তখন আবার মনে পড়ে, কী ভারী শাড়ি রে বাবা!’’

তার মানে পরদার রানি আর পরদার এ পারের দিতিপ্রিয়া সব দিক থেকে আলাদা? ‘‘না, একটা ব্যাপারে মিল আছে। মেয়ে বলে কাউকে ভয় করি না। এখানে সবার সিগারেট খাওয়া বারণ। আমার সামনে কেউ সিগারেট ধরালে, কুচি কুচি করে ফেলে দিই!’’ দিতিপ্রিয়ার অকুতোভয় মনের খোঁজ পাওয়া যায় তার কথার সূত্রে। আর তার ডানপিটেপনা সেটে রোজকার ব্যাপার। একবার মেকআপ ম্যানকে দিয়ে হাতে এমন ট্যাটু আঁকিয়েছিল যে, সবাই ভেবেছে সত্যিকারের ট্যাটু! সেটে রীতিমতো হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। তার বন্ধুরাও পরদায় ‘রানি’কে দেখে অবাক হয়ে নাকি বলেছে, ‘তুই এত শান্ত ভদ্র হলি কী ভাবে?’ বাপ রে, কী ডানপিটে মেয়ে!

তা সত্ত্বেও সেটে কিন্তু দিতিপ্রিয়ার সঙ্গী তার মা সুমিত্রা রায়। সেটা কি তোমার সুরক্ষার জন্য? ‘‘না গো, না। মা থাকে আমার হয়ে সব্বাইকে তাড়া দেওয়ার জন্য, যাতে তাড়াতাড়ি প্যাকআপ হয়, আমি বাড়ি গিয়ে পড়তে পারি। তাই তো মাকে নাম দিয়েছে বড় ডন,’’ বলেই দিতিপ্রিয়ার একপ্রস্ত হাসি। হাসি থামলে আবার চলল কথার ফুলঝুরি, ‘‘আমরা ঢুকলেই সবাই ওখানে আওয়াজ দেয়, এই যে ছোট ডন, বড় ডন আসছে। তবে এই ব্যাপারটা আছে বলে আমি অভিনয় আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালাতে পারছি।’’

ছোট বয়স, স্বপ্নমাখা দু’চোখে ভাল অভিনয়ের ইচ্ছে, বড় পরদার টান। এগিয়ে চলো দিতিপ্রিয়া...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE