Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ট্রোলিং এগোচ্ছে অপরাধের দিকে

নিখাদ মজা করার ছলেই যে ঠাট্টার শুরু, তার মোড় ঘুরছে কাউকে অপমান, অশ্রদ্ধার দিকেইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে নিজের পরিবারের ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। পঞ্জাবি পরিবারের মেয়ে প্রিয়ঙ্কার কি আদৌ ইন্দিরার মৃত্যুদিন এ ভাবে গ্লোরিফাই করা উচিত, উঠে এসেছে এ রকম প্রশ্নবাণও!

প্রিয়ঙ্কা

প্রিয়ঙ্কা

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

ট্রোলিংয়ের তালিকায় রোজই যোগ হচ্ছে নতুন সেলিব্রিটির নাম। সম্প্রতি অমিশা প্যাটেল ক্লিভেজ দেখানো ছবি পোস্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁর পোশাকআশাক, ক্লিভেজ নিয়ে উড়ে এসেছে মন্তব্য।

ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে নিজের পরিবারের ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। পঞ্জাবি পরিবারের মেয়ে প্রিয়ঙ্কার কি আদৌ ইন্দিরার মৃত্যুদিন এ ভাবে গ্লোরিফাই করা উচিত, উঠে এসেছে এ রকম প্রশ্নবাণও!

অমিশা

ট্রোলিং আর সাইবার ক্রাইম— দু’টি ভিন্ন বিষয়। এই দুটো বিষয়ের বিভাজনরেখাটা অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন। কোনও সামান্য বিষয় নিয়ে মজা করতে করতে সীমা লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার প্রবণতা বাড়ছে। ট্রোলিং হয়ে দাঁড়াচ্ছে সাইবার ক্রাইম, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধও বটে। দুর্গাপুজোয় এ ভাবেই আক্রান্ত হয়েছিলেন নুসরত জাহান, জয়া আহসান। একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বী হয়ে কী ভাবে অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁরা মেতে উঠতে পারেন অথবা একটি ধর্মের ‘কলঙ্ক’ তাঁরা...ইত্যাদি প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন নুসরত-জয়া। অনেক ক্ষেত্রেই সেলেবরা বিষয়টি এড়িয়ে যান। নুসরত যেমন বললেন, ‘‘সোশ্যাল সাইটে নিজেরাই নিজেদের খবর পৌঁছে দিই। এটাও জানি যে, দশ জন দশ রকম কথা বলবেন। দর্শকদের কাছে নিজেরা কতটা অ্যাকসিসেবল হব, সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। দুর্গাপুজোর ঘটনাটার উত্তর দিয়েছিলাম। নিজের ভাবনাচিন্তার কথা জানিয়েছিলাম। বেশির ভাগ সময় আমি ইগনোর করি। তবে বিষয়টা যদি মারাত্মক পর্যায়ে অসুবিধে বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে, তা হলে স্টেপ নেওয়া উচিত।’’ মানুষ হিসেবে খারাপ লাগে না? ‘‘আমাদের প্রতি দর্শকদের যেমন চাহিদা থাকে, তেমনই আমরাও দর্শকদের কাছে কিছু আশা করি। তাঁদের ভালবাসাটাই তো সম্পদ। তবে খেয়াল করেছি, যাঁরা আমাদের সত্যিই ভালবাসেন, তাঁরা কেউ গায়ে পড়ে এ সব করেন না। বরং হয়তো যে আমার কোনও ছবিই দেখেনি, একটা ভিডিয়ো দেখে কমেন্ট করে দিল। সে সব গায়ে মাখি না,’’ স্পষ্ট জবাব নুসরতের।

বাড়ির বৈঠকখানায় হোক কিংবা সোশ্যাল সাইটে—এই ট্রোলিং নিয়ে মানুষের মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন দেখছেন না মনোবিদ অনিরুদ্ধ দেব। বলছেন, ‘‘সেলেব্রিটিদের নিয়ে রসালো গল্প করতে ভালবাসেন অনেকেই। বাড়িতে সেই আলোচনা করলে তা কয়েক জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ একটা হ্যাশট্যাগের ব্যবহারে সেটা বহু লোকের কাছে পৌঁছচ্ছে। বিস্তৃতি বেড়েছে, মানসিকতাটা পাল্টায়নি। আমরা কেন কাউকে সামনে বসিয়ে ট্রোল করব না? কারণ সেটা অসভ্যতা। আমাদের এই নলেজটা তৈরি করতে হবে যে, এই অসভ্যতাটা তাঁর কাছেও পৌঁছচ্ছে। ভদ্রতার খাতিরে হোক বা ভয় পেয়ে, সেটা করা উচিত নয়। আর যাঁরা ট্রোলড হচ্ছেন, তাঁদেরও রুখে দাঁড়াতে হবে। ইগনোর করা অবশ্যই পন্থা। কিন্তু প্রতিবাদও প্রয়োজন। আর সোশ্যাল মিডিয়ার অথরিটিকেও এটা কন্ট্রোল করতে হবে। ঠিক তেমন ভাবেই, যেমন বাড়িতে কারও সম্পর্কে খারাপ কথা বললে, অন্যরা বারণ করেন।’’

সোশ্যাল মিডিয়ার কর্তৃপক্ষ কতটা হস্তক্ষেপ করছে, সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু ট্রোলের চক্করে আপনি অপরাধ করবেন কি না, সেটা একান্তই আপনার হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE