Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অঞ্জন ফিরে এল

পরপর ফ্লপ। বিক্রি করতে হয়েছিল গাড়ি। শেষমেশ ব্যোমকেশ বক্সী-র হাত ধরে প্রত্যাবর্তন করলেন অঞ্জন দত্ত। সামনে ইন্দ্রনীল রায়আই অ্যাম হ্যাপি। লাস্ট এক বছর আমার জীবনের ভীষণ একটা ডার্ক পিরিয়ড। একটার পর একটা ভুল করেছিলাম। যখন দেখছি দর্শক এত ভালবাসছে ‘ব্যোমকেশ ফিরে এল’, খুব আনন্দ হচ্ছে।

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর থেকে গতকাল ৪ জানুয়ারি — প্রায় সব শো হাউসফুল। ব্যোমকেশ তো শুধু ফিরল না, ‘বাপি বাড়ি যা’ করে দিল...

আই অ্যাম হ্যাপি। লাস্ট এক বছর আমার জীবনের ভীষণ একটা ডার্ক পিরিয়ড। একটার পর একটা ভুল করেছিলাম। যখন দেখছি দর্শক এত ভালবাসছে ‘ব্যোমকেশ ফিরে এল’, খুব আনন্দ হচ্ছে।

ব্যোমকেশ প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে একটা অন্য বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই।

শিওর, বলুন না...

গত চার মাস ধরে নাকি আপনি প্রত্যেক শনিবার সৃজিত মুখোপাধ্যায়, মৈনাক ভৌমিকদের আপনার বাড়িতে ডাকছেন। আর তাঁরা নাকি আপনাকে বলছেন আপনি কী কী ভুল করেছেন আপনার শেষ তিনটে ছবিতে।

(হাসি) আপনাকে কে বলল?

বলুন না, খবরটা ঠিক কি না?

হ্যাঁ ঠিক। আমার ছবি আর চলছিল না। সেই ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ থেকে শুরু। তার পর ‘গণেশ টকিজ’ আর গত বছর ‘শেষ বলে কিছু নেই’। এর আগে ‘চলো লেটস গো’ মোটামুটি চলেছিল কিন্তু খুব সুনাম হয়েছিল। সেম উইথ ‘ম্যাডলি বাঙালি’। কিন্তু লাস্ট তিনটে ছবি শুধু চলেনি তা নয়, প্রচুর বদনাম হল।

ছবি না চলার পেছনে কিছু এক্সটার্নাল কারণ নিশ্চয়ই ছিল। প্রোডিউসরের পেশিশক্তি, ভাল চেন না পাওয়া। কিন্তু সেগুলো ছাড়াও কিছু ইন্টার্নাল কারণও ছিল। যেগুলো আমার একান্তই নিজের। আমি তো আর রাস্তায় গিয়ে লোককে জিজ্ঞেস করতে পারি না হোয়্যার আই ওয়েন্ট রং। তাই ভাবলাম, আমার সমসাময়িক ডিরেক্টরদের কাছেই জানতে চাই...

এতে আপনার ইগো হার্ট হয়নি? সৃজিত, মৈনাকরা তো অনেক জুনিয়র।

না, আমার সে রকম কিছু হয়নি কারণ আমি এমন পরিবেশে বড় হয়েছি যেখানে মৃণাল সেন আমাকে স্পেস দিয়েছেন ওঁর ছবি ক্রিটিসাইজ করার। রিনাদির ছবি যখন ভাল লাগেনি, রিনাদিকে মুখের ওপর বলেছি। বুদ্ধদাকেও। ওই সময়টা দেখেছি বলেই এটা করতে প্রবলেম হয়নি। আর সৃজিত, মৈনাক, কৌশিক খুব আধুনিক ছেলে। ওদের সঙ্গে কথা বলা যায়।

হ্যাঁ, ওদের ছবিও আমি ক্রিটিসাইজ করেছি। কিন্তু আই নিডেড দেম টু হেল্প মি। ওদের কাছে জানতে চেয়ে আমি ছোট হইনি।

তাঁরা কী বললেন?

ওরা বলল অঞ্জন দত্তর তুলনায় অঞ্জন দত্ত ডেটেড হয়ে যাচ্ছে। পুরনো লাগছে আমার নতুন ছবিগুলো।

মানে?

বলছি। ধরুন ‘গণেশ টকিজ’য়ের সেই পুরনো বাড়ি বিক্রির গল্প। ওরা বলল ‘বং কানেকশন’য়ে পুরনো বাড়ি বিক্রিটা এত ভাল দেখিয়েছিলাম যে, এ বার মনে হল আমি রিপিট করেছি নিজেকে।

‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’-তে আমার আর রণদীপের ঝগড়ার সিনগুলো তো সেই রঞ্জনার সিনগুলোর মতোই হয়ে যাচ্ছিল। ‘শেষ বলে কিছু নেই’-তে যিশুর গিটার বাজানো দর্শকের পুরনো লেগেছে কারণ ‘জাতিস্মর’য়ে যিশুকে দেখা গিয়েছে গিটার হাতে।

তা ছাড়াও ওদের মত ছিল আমার কাস্টিংয়ে আর কোনও চমক থাকছিল না। প্রেডিক্টেবল কাস্টিং হয়ে যাচ্ছিল।

ব্যোমকেশ তো এ সব শোনার আগেই বানিয়ে ফেলেছিলেন। এই সাজেশন শোনার পর কী বানাবেন এখন?

দেখুন, আমি আমার জীবনের লাস্ট লেগ-এ। নিজেকে আর রিপিট না-করে আমি ভাবছিলাম, কেন আমি সাহিত্য নিয়ে কাজ করছি না! আমিও তো বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ বানাতে পারি। প্রেডিক্টেবল মানে তো এটা নয় আমাকে একেবারে নতুন কিছু করতে হবে। ক্ল্যাসিকস রিভিজিট করাটাও তো একটা পথ।

অনেকেই বলছে আপনি ব্যোমকেশ নিয়ে নার্ভাস ছিলেন। আপনি তো জানতেন আপনি ভাল ছবি বানিয়েছেন। রিলিজের আগে এত লো প্রোফাইল? আগের ছবিগুলো ফ্লপ হওয়ার জন্য...

হ্যাঁ, একেবারেই তাই। ভীষণ নার্ভাস লাগছিল। আমি জানতাম আমি ভাল ছবি বানিয়েছি। কিন্তু কনফিডেন্স পাচ্ছিলাম না। এই ছবিটা করতে গিয়ে কিন্তু অনেক কষ্ট পেয়েছি। ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস ছিল। একটা স্টেজে আমার প্রোডিউসর কৌস্তভ বলল, আপনি ছবিটা শেষ করতে পারেন, আবার বন্ধও রাখতে পারেন। তবে ও আমাকে বলেছিল. অঞ্জনদা ভয় পাবেন না, আমি ফিরব ঠিক। তখন ভাবলাম প্রোডিউসরের একটা তাৎক্ষণিক সমস্যার জন্য ব্যোমকেশ ফ্র্যাঞ্চাইজিটার ক্ষতি করা ঠিক হবে না। নিজের ঘরের পয়সা ঢুকিয়ে দিলাম ছবিতে...

তাই?

হ্যাঁ, গাড়ি বিক্রি করে দিলাম। আজও তো আমার আর ছন্দার গাড়ি নেই। নীলের গাড়ি ব্যবহার করছি। খুব তাড়াতাড়ি একটা গাড়ি কিনব যদিও।

যেটা বলছিলাম, এত প্রতিকূলতা ফেস করেছি যে আমরা ঠিক করেছিলাম লাস্ট দু’টো ব্যোমকেশের থেকে আমাদের অনেক বেটার করতে হবে এই ছবিটা।

লোকে বলছে আপনি অঞ্জন দত্ত-সুলভ ফাঁকিবাজিও করেননি শ্যুটিংয়ে?

কোনও ফাঁকিবাজি করিনি। কোনও এক্সট্রা ডায়লগ রাখিনি ছবিতে। টানটান মেদহীন স্ক্রিপ্ট রাখতে চেয়েছি। টাকা নয়, অভিনেতাদের সততা আর গল্প বলার মধ্যে একটা বেসিক সিম্পলিসিটিই ছিল আমাদের প্রধান অস্ত্র।

আবিরও নিজের সেরাটা দিয়েছে এই ছবিতে। সেটে দেখছিলাম ও নিজেই ইনপুটস দিচ্ছে। সেই ইনপুটগুলো পর্দায় দারুণ লেগেছে। আবির বুঝতে পেরেছিল এর পরে আর ও ব্যোমকেশ করতে পারবে না। তাই নিজের সর্বস্বটুকু দিয়ে দিয়েছিল। আর আমার ক্ষেত্রে বলতে পারেন ব্যোমকেশ ওয়াজ মাই লাস্ট চান্স...

আপনি বললেন ব্যোমকেশ শেষ করতে গিয়ে নিজের ঘর থেকে টাকা ঢেলেছিলেন। তা হলে কি টাকার জন্যই ‘গণেশ টকিজ’ বা ‘শেষ বলে কিছু নেই’ বানালেন?

‘গণেশ টকিজ’ তো একেবারেই টাকার জন্য। আই নিডেড দ্যাট মানি। আমার সত্যি টাকার প্রয়োজন ছিল। তার পরও দেখলাম ‘ব্যোমকেশ’য়ের মুক্তির কোনও চান্স নেই। তখন ভাবলাম বাড়িতে বসে কী করব। তাই ‘শেষ বলে কিছু নেই’ বানালাম। সেটাও চলল না। ইট ওয়াজ আ ভেরি টাফ টাইম।

সেই সময়ই তো শনিবারের ‘পত্রিকা’র সাক্ষাৎকারে বললেন আপনি রাজ চক্রবর্তী হতে চান?

ইংরেজিতে একটা কথা আছে না— টকিং থ্রু দ্য হ্যাট। আমি রিগ্রেট করি ওই স্টেটমেন্ট-টা। আমার ভুল হয়েছিল।

ওই একই সাক্ষাৎকারে পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে গালাগালিও দিয়েছিলেন?

হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি সবার কাছে। অন্যদের গালাগালি দেওয়ার জন্য আমাকে সবচেয়ে বেশি কথা শুনতে হয়েছে আমার বৌ আর ছেলে নীলের কাছে। দে ওয়্যার ফিউরিয়াস। আমি ফ্রাস্ট্রেশন থেকে কথাগুলো বলেছিলাম। ইট ওয়াজ আ ভেরি ডিফিকাল্ট টাইম। আর একটা জিনিস করছিলাম...

কী সেটা?

কারণে অকারণে নিজেকে কাস্ট করে বসছিলাম। দরকার নেই কিন্তু কালো চশমা পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম। বুঝছিলাম না এটা করতে গিয়ে আমার সামনের অ্যাক্টরকে চাপে ফেলে দিচ্ছি। ভুল করছিলাম।

সবচেয়ে বড় রিগ্রেট কী?

সেই সময় মেন্টালি এত ডিস্টার্বড ছিলাম, আমার পরিচালনা করা উচিত হয়নি। টাকারই যখন দরকার ছিল, সেটা অভিনয় করেই পেয়ে যেতাম।

আর সবচেয়ে বড় রিগ্রেট ‘চতুষ্কোণ’ না করা। কী যে হয়েছিল তখন আমার। সৃজিতের সঙ্গে ঝগড়া করলাম। পরে তো হইহই করে ওর পরের ছবিতে অভিনয় করলাম। সব ঝগড়াও মিটে গেল। রানা সরকারের সঙ্গে ঝগড়া হল। কিন্তু তার পর ভাবও হয়ে গেল।

আজ ফিরে তাকালে মনে হয় একটা দারুণ রোল চলে গেল হাত থেকে স্রেফ আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারলাম না বলে...

স্ক্রিনে চিরঞ্জিতকে দেখে হিংসে হয়েছিল?

হিংসে হয়নি, আফসোস হয়েছিল। এই রোলটা কিন্তু সৃজিত একেবারেই আমার জন্য লিখেছিল। ইট ওয়াজ রিটন ফর মি। কিন্তু গিয়ে দেখলাম চিরঞ্জিত ওয়াজ স্টুপেন্ডাস। একটা রোল যেটা আমার এবং শুধু মাত্র আমার জন্য লেখা হয়েছিল, সেই রোলে ও যা অভিনয় করেছে বস, ইটস এক্সট্রাঅর্ডিনারি। আমি সৃজিতকে ফোন করে সেটা জানিয়েছিলাম। আজ ফিরে তাকালে মনে হয়, চিরঞ্জিতকে নতুন ভাবে তো দর্শকের মতো আমরা পরিচালকেরাও আবার আবিষ্কার করলাম। কাল যদি কোনও রোল হয়, ওকে তো চশমা পরিয়ে আমি সেই চরিত্রে কাস্ট করতে পারব। সেটাই বা কম কীসের...

আচ্ছা, আজ ব্যোমকেশ এত বড় হিট। কখনও ভেবেছিলেন এত ভাল লাগবে দর্শকের?

না, আমি ভাবিনি। আমি জানতাম ভাল লাগবে কিন্তু এত বড় হিট হবে ভাবিনি। আর সব জায়গায় চলছে ছবিটা। শেওড়াফুলি থেকে, বারাসাত থেকে আমার কাছে ক্রমাগত ফোন আসছে। সবাই দেখতে চাইছে, টিকিট চাইছে। শুধু মাত্র সাউথ সিটির টোনি দেখছে ছবিটা— তা কিন্তু নয়।

আর একটা কথা। ব্যোমকেশের এই সাফল্যের পেছনে প্রোডিউসর কৌস্তভেরও বিরাট হাত রয়েছে। যে ভাবে ও পাবলিসিটি করেছে ছবিটার, সেটা এক্সট্রাঅর্ডিনারি। লোকেরা ব্যোমকেশকে ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু পাবলিসিটির এত জোর ছিল যে সবাই জানত ব্যোমকেশ আসছে।

শুনলাম ‘ঝিন্দের বন্দি’ও করবেন এই বছর...

দেখুন রানা সরকার আমাকে বলছে ‘ঝিন্দের বন্দি’ করতে। এই মুহূর্তে স্ক্রিপ্ট লেখা চলছে। ‘ঝিন্দের বন্দি’ ইজ আ ভেরি বিগ প্রজেক্ট। আমি আর একটু হোমওয়ার্ক করতে চাই।

ব্যোমকেশ এত বড় হিট হল। চার দিকে প্রশংসা, কামব্যাক। পার্টি কবে দিচ্ছেন অঞ্জন দত্ত...

ব্যোমকেশ হিট হওয়াতে আমি নতুন একটা জীবন পেলাম। পার্টি তো করতেই হবে... খুব শিগ্গিরই ইনভিটেশন পাঠাব।

আপনি তো হিট হলে মিডিয়াকে ভুলে যান... ইনভিটেশন আসবে তো...

হা হা হা হা হা... অবশ্যই আসবে... আনন্দplus-এর আনাচ কানাচ-এ ছবিও ছাপাতে পারবেন...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE