Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেবগিরি

নায়ক দেব। সাংসদ দেব। দুই দেব-এর মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়।এত দিন সাউথ সিটি-র যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটাই আজকে তাঁর সুসজ্জিত অফিস। টিভিতে তাঁর এবং কোয়েলের পরের ছবি ‘হিরোগিরি’র গান চলছে। এর মধ্যে অ্যাপলের ডেস্কটপের পিছনে গিয়ে বসলেন। অতিরিক্ত চিনি দেওয়া চা খেতে খেতে শুরু হল আড্ডা...

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

এত দিন সাউথ সিটি-র যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটাই আজকে তাঁর সুসজ্জিত অফিস। টিভিতে তাঁর এবং কোয়েলের পরের ছবি ‘হিরোগিরি’র গান চলছে। এর মধ্যে অ্যাপলের ডেস্কটপের পিছনে গিয়ে বসলেন। অতিরিক্ত চিনি দেওয়া চা খেতে খেতে শুরু হল আড্ডা...

কেমন আছেন?

ভালই আছি । শো করছি, শ্যুটিং করছি। নতুন নতুন স্ক্রিপ্ট শুনছি। এমপি হিসেবে প্রচুর কাজ থাকে সারাদিন, সেগুলো করছি। সামনে ‘হিরোগিরি’ রিলিজ, সেটার প্ল্যানিং চলছে পুরোদমে। কমপ্লেন করার চান্স-ই নেই (হেসে)

আনন্দplus-এ আপনার শেষ ইন্টারভিউটা ছিল ‘বুনো হাঁস’ মুক্তির আগে। অগস্ট ২০১৪ থেকে জানুয়ারি ২০১৫-তে তো সময়টা অনেক বদলে গিয়েছে?

কোন সময় বদলের কথা বলছেন জানি না। আমার জীবনে কিন্তু সেই রকম কোনও বদল হয়নি। এটুকু বলতে পারি, তখন সদ্য সদ্য এমপি হয়েছিলাম... আজকে প্রায় দশ মাস হয়ে গেল...

দেব-এর নানা মুহূর্তের ছবি দেখতে হলে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (আইফোন/ আইপ্যাড) অথবা গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড) থেকে ABP AR APP-টি ডাউনলোড করে এই ছবিটি স্ক্যান করুন

এর মধ্যে এমপি দেব ক’দিন পার্লামেন্টে গিয়েছেন?

(একটু ভেবে) সব মিলিয়ে পাঁচ দিন হবে। কিন্তু প্রত্যেক মাসে ঘাটাল গিয়েছি তিন থেকে চার দিন।

দিল্লির জল-হাওয়া কি তা হলে সহ্য হচ্ছে না আপনার? দিল্লির থেকে ঘাটাল ভাল বলছেন?

দিল্লির ব্যাপারস্যাপার আমি বুঝি না। পার্লামেন্টও বুঝি না। এটুকু বলতে পারি প্রথমবার এমপি হিসেবে ওখানে গিয়ে আপনার কিছু করারও থাকে না। এটুকু বুঝি, পার্লামেন্টে যাঁরা আছেন তাঁরা যদি সবাই একসঙ্গে কাজ করেন তা হলে আমাদের দেশের ভাল হবে। আমার মতে পার্লামেন্ট মানুষের জীবনযাত্রা ভাল করার একটা মাধ্যম। তা সত্ত্বেও বলছি, ঘাটালেই আমি বেশি খুশি।

আচ্ছা, দিল্লি তো না হয় বোঝেন না। রাজনীতিটা বোঝেন? পলিটিক্স?

এটা বুঝি রাজনীতি ঠিক ভাবে করলে মানুষের ভাল করা যায়। আমি দিনে ৫০০ সার্টিফিকেটে সই করি। কারও মেডিকেল সার্টিফিকেট, কারও ক্যারেকটার সার্টিফিকেট। এ ভাবে কিছু মানুষের তো সেবা করছি। এটাই বা কম কীসের! শুধু বলে গেলাম পলিটিক্স জঘন্য, সব বাজে লোক এই স্টিরিওটাইপগুলো বোধ হয় ঠিক নয়। আরে আমি তো ইয়াং জেনারেশন, চেষ্টা তো করছি মানুষের ভাল করার। আপনারা মাইন্ডটা পজিটিভ রাখুন, দেখবেন ঠিক ভালটা দেখতে পাবেন। তা না করে আমরা শুধু রোজ নিউজ চ্যানেলে নেগেটিভ খবর পাচ্ছি...

নিউজ চ্যানেলকে দোষ দিচ্ছেন কেন? আপনার পার্টিও তো স্বাস্থ্যবান অবস্থায় নেই...

ওই যে বললাম আমরা সব ব্যাপারে পলিটিক্স দেখে ফেলছি। সব থেকে খারাপ লাগছে যখন দেখছি মানুষের প্রথম পরিচয় হয়ে গিয়েছে সে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য। সবাইকে পার্টি মেম্বার হিসেবে দেখছেন কেন?

কিন্তু আপনি বলুন সারদা কাণ্ড নিয়ে যা হচ্ছে... মুকুল রায়কেও তো সিবিআই ডেকে পাঠালো...

(থামিয়ে দিয়ে) দেখুন আমি সত্যি কিছু জানি না। আমি বিশ্বাস করি দিদি আমাদের রাজ্যের জন্য ভাল কিছু করবে। ব্যস...

আপনার দলের নেত্রী তো আনন্দবাজার পড়তেই বারণ করেছেন...

দেখুন, আমাকে তাঁরা কোনও দিন কিছু করতে বারণ করেননি। আমি এবিপি আনন্দ-র ‘সেরা বাঙালি’ অনুষ্ঠানেও গিয়েছি। আপনাদের সব প্রোগ্রামে আসি। আমাকে কেউ কোনও দিন প্রেশার দেয়নি। এই যে আনন্দplus-এ ইন্টারভিউ দিচ্ছি এটাতেও কেউ আমাকে বারণ করেনি। আর সত্যি কথা বলতে গেলে, আমি বাই ফ্লুক পলিটিশিয়ান হয়েছি। আমার প্রধান পরিচয় আমি অভিনেতা। আমার পার্টি সেটা রেসপেক্ট করে এবং আমি সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগোতে চাই। স্পেশালি ইন্ডাস্ট্রিকে...

ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে এগোতে চান সে তো ভাল কথা। কিন্তু এই তো রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপি-তে যোগ দিলেন। ইচ্ছে থাকলেও আপনি সবাইকে নিয়ে এগোবেন কী করে?

দেখুন, রূপাদি কোন পার্টিকে সমর্থন করবেন সেটা একেবারেই ওঁর নিজস্ব ব্যাপার। আর আমার কাছে রূপাদির প্রথম পরিচয় উনি একজন শিল্পী। বাকি সব কিছু তার পরে। এই তো রিনাদি (অপর্ণা সেন)-র ছবিতে আমি আর রূপাদি একসঙ্গে অভিনয় করেছি। এটাই তো আসল পরিচয় হওয়া উচিত। তা না হয়ে সব কিছুতে রাজনীতি ঢুকে গিয়েছে।

রাজনীতিতে আসার পর থেকে তো আপনার ছবি আর আগের মতো চলছে না...

আমি বিশ্বাস করি না। আমি প্রমাণ করে দিতে পারি এটা ভুল...

গত বছর ‘বিন্দাস’, ‘বুনো হাঁস’ চলেনি সেই রকম। ‘যোদ্ধা’ বিরাট ফ্লপ...

আমাকে একটা চান্স দিন প্রমাণ করার যে তথ্যগুলো ভুল...

শিওর। বলুন।

প্রথমেই বলি এটা মিডিয়ার প্রোজেকশন...

‘যোদ্ধা’ ফ্লপ, এটা তো মিডিয়ার প্রোজেকশন নয়। আপনি হল মালিকদের সঙ্গে কথা বললেই...

...আমাকে শেষ করতে দিন। ‘যোদ্ধা’র সঙ্গে ‘বচ্চন’ রিলিজ করেছিল। আপনারা সেই ছবিটাকে হিট করাতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, সেই ছবির প্রথম সপ্তাহের কালেকশন ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। সেখানে ‘যোদ্ধা’র কালেকশন ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। সেটা আপনারা লিখলেন না। আপনারা লিখলেন ওই ছবিটাই নাকি হিট। এর পর আর একটা হিসেব দিই...

কীসের হিসেব?

২০১৪-র ফার্স্ট ডে কালেকশনে টপ তিনটে ছবি কিন্তু আমার। আমি এখানে ‘বুনো হাঁস’য়ের কথা বলব। হ্যাঁ, ‘বুনো হাঁস’ ‘চাঁদের পাহাড়’ হয়নি। কিন্তু ‘বুনো হাঁস’ যে ‘চাঁদের পাহাড়’ হবে না, সেটা তো আমরা জানতাম।

কিন্তু আপনাদের কাগজে দেখলাম আপনারা ‘চতুষ্কোণ’য়ের ফার্স্ট উইক কালেকশন নিয়ে লেখালিখি করছেন। আরে, ‘চতুষ্কোণ’য়ের ফার্স্ট উইক কালেকশনের থেকে অনেক বেশি ছিল ‘বুনো হাঁস’য়ের কালেকশন। কিন্তু ওই যে দেব তৃণমূলের সাংসদ, আপনারা সেটা প্রোজেক্ট করলেন না।

এ বার ‘বিন্দাস’য়ের কথায় আসি। ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের পর থেকে ‘বিন্দাস’ পর্যন্ত কোনও ছবি চলেনি। তা সত্ত্বেও ‘বিন্দাস’ প্রথম দিন কামালো ৪৮ লক্ষ।

হ্যাঁ দেব, ৪৮ লক্ষ কামালো, কিন্তু আপনার ছবি তো প্রথম দিনে ৮৫ লক্ষ-ও কামিয়েছে। সেই অনুপাতে তো চলল না...

আই এগ্রি। কিন্তু তখন সময়টা অন্য ছিল। মুম্বই বলুন, সাউথ ইন্ডিয়া বলুন— সব জায়গায় মার্কেট পড়ে গিয়েছে। ওড়িশা ইন্ডাস্ট্রি প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। সব ছবি যে ‘পিকে’ বা ‘চাঁদের পাহাড়’ হবে না, এটা তো বুঝতে হবে। কিন্তু না, আপনার বলবেন, ‘যোদ্ধা’ ফ্লপ...

মিডিয়ার কাছে আপনার ছবি না চলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ জিত্‌ তো আর এমপি নন। আপনি মোর নিউজি...

আরে ‘রোমিও’ বলে একটা ছবি করেছিলাম, চলেনি। ‘অগ্নিশপথ’ বলে একটা ছবি করেছিলাম সেটাও চলেনি। তখন কি এমপি ছিলাম?

না ছিলেন না, কিন্তু পারসেপশন হচ্ছে, এমপি হয়ে আপনার ফিল্ম কেরিয়ার কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এটাতে শুধু আপনি একা নন, অমিতাভ বচ্চনেরও তো একই রকম হয়েছিল আশির দশকে।

আরে, প্রথম দিন থেকে এই এক উদাহরণ দিয়ে চলেছেন আপনারা। অমিতাভ বচ্চন... অমিতাভ বচ্চন... মানুষ অত ভাবে না। মানুষ আমাদের এন্টারটেনার হিসেবেই দেখে। আর আমি রিস্ক নিয়েছি, আমাকে একটু সাপোর্ট করুন। বাকিরা তো রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট হিসেবে পলিটিক্সটাকে দেখে। আমি তো সেটা করিনি। আমি কারও খারাপ চাইনি। আমার বিশ্বাস আমার ভালই হবে।

অমিতাভ বচ্চনও কারও খারাপ চাননি। তাও তো বফর্স কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়িয়েছিল। আপনার পার্টির নেতারা সারদা কাণ্ডে জেলে। এতে তো আপনারও বদনাম হচ্ছে। রাজনীতিক দেব তো ক্ষতি করছে অভিনেতা দেবের...

কার বদনাম হয়নি বলুন তো এ দেশে! আসলে সবাই সেফ খেলতে চায়। যে একটু সাহস দেখায়, তাকে কী ভাবে ছোট করব এই প্ল্যান চলে সর্বত্র। রাজনীতিক দেব, অভিনেতা দেবের কোনও ক্ষতি করেনি...

কিন্তু ঘাটালের মানুষ তো মাসে তিন বার দেখেন আপনাকে তাঁদের বাড়ির পাশে। তাঁরা টাকা দিয়ে আপনার ছবি দেখতে যাবেন কেন?

ঘাটালে কিন্তু আমার প্রত্যেকটা ছবি দুর্দান্ত চলছে। সুতরাং আপনার থিওরি একেবারে ভুল। আজকে বিকেলে আমার শো আছে। আপনি অফিসে না-গিয়ে চলুন আমার সঙ্গে। দেখবেন কী পরিমাণ ভিড়। যত বছর শো করছি, ম্যাক্সিমাম ভিড় এ বছর। সুতরাং ও সব থিওরি ভীষণ নেগেটিভ। আমাকে ও সব দিয়ে দমাতে পারবেন না।

আচ্ছা লোকে বলছে, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শ্রীকান্ত মোহতা আপনাকে রাজনীতিতে ঠেলে দিয়েছেন যাতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর নম্বর বাড়ে। কলকাতায় তৃণমূলের ভিতরেও সেই কথাই হচ্ছে...

আরে শ্রীকান্তদা আমাকে আগুনে ঝাঁপ দিতে বললে আমি ঝাঁপ দেব নাকি? আমারও তো একটা মত আছে। আর এই যে সাউথ সিটির ফ্ল্যাটে বসে আড্ডা মারছি এটাও শ্রীকান্তদার জন্য। তাই লোকে পিছনে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আপনারা তো মিডিয়া, কেন পোলারাইজড হয়ে যাচ্ছেন! আপনাদের তো নিউট্রাল থাকা উচিত। ভাল ছবি প্রমোট করুন। ভাল আর্টিস্টদের ব্যাপারে লিখুন। তা না করে আপনারা সব জায়গায় পলিটিক্স খুঁজছেন।

অনেকক্ষণ ধরে শুনছি, আপনি বলছেন মিডিয়া সব জায়গায় পলিটিক্স খুঁজছে। আপনাকে একটা উদাহরণ দিতে পারি...

নিশ্চয়ই....

আপনার পরের ছবি ‘হিরোগিরি’। আপনি লোকসভা সাংসদ। মিঠুন চক্রবর্তী রাজ্যসভার। আপনার হিরোইন কোয়েলের বাবা তৃণমূলের কাছের লোক। শেরিফও হয়েছিলেন। ছবির প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানে মমতা-ঘনিষ্ঠ শ্রীকান্ত মোহতার বিশেষ বন্ধু। জয়েন্ট প্রোডাকশান করেন। আপনারাই তো পুরোটা পলিটিক্স করে ফেলেছেন। মিডিয়াকে দোষ দিচ্ছেন কেন?

দোষ দিচ্ছি কারণ মিডিয়া এই নেগেটিভ ব্যাপারগুলোকে হাইলাইট করবে। সাধারণ মানুষ এ সব ভাবে না।

মিঠুনদার কি রাজনীতি থেকে কিছু পাওয়ার আছে? রঞ্জিতদার কি রাজনীতি থেকে কিছু পাওয়ার আছে? আমি তো টাকা কামাব বলে রাজনীতিতে আসিনি। আমরা সবাই একটা দলের সদস্য। কিন্তু ওই যে আগে বললাম, সেটা আমাদের দ্বিতীয় পরিচয়। কিন্তু মিডিয়া আমাদের দ্বিতীয় পরিচয়টাকেই বড় করে দেখাবে।

আপনি যদি তাই বলেন তাহলে জিজ্ঞেস করি, আপনাদের তো দর্শকের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা আছে?

আছে।

সেই লজিকে মিডিয়ারও একটা দায়বদ্ধতা আছে তার পাঠক কী দর্শকের প্রতি...

হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আছে। আজকে ধরুন একটা ঘটনা ঘটল। পরের দিন কাগজে কী টিভিতে দেখবেন চারটে আলাদা আলাদা ভারসন। মানুষ বুঝবে কী করে কোন ভারসনটা ঠিক। মিডিয়া তো পোলারাইজড বলেই এটা হচ্ছে। প্রত্যেক খবরকে সেই ভাবে রিপ্রেজেন্ট করা হচ্ছে। এবং সেটা রোজ...

মিডিয়া যদি ভুল রিপ্রেজেন্ট করত, তা হলে মদন মিত্রের জেলে যাওয়া নিয়ে কী বলবেন? মিডিয়া তো তাঁকে জেলে পাঠায়নি। মিডিয়া সেটা দেখাবে না বা লিখবে না, এটা হয় নাকি?

দেখুন ভারতে হাই-প্রোফাইল কেস আজকে এক মাসের মধ্যে শেষ করে দেওয়া হয়। এখানে হচ্ছে না কারণ ব্যাপারটা পলিটিসাইজড করা হচ্ছে। টেনে টেনে, ইলেকশন টু ইলেকশন কেসটা নিয়ে লেবু কচলানো হচ্ছে যাতে কেসটা জিইয়ে রাখা যায়।

এগুলো তো চোখের সামনে আমরা সবাই দেখছি।

আমি একটাই কথা আবারও বলব, পলিটিক্সটা সমাজে আন্ডারকারেন্ট হিসেবে থাকলেই ভাল। সব ব্যাপারটা পলিটিসাইজ না করলেই মঙ্গল। আমি দেব, আমি একজন অভিনেতা, ওটাই আমার পরিচয়। রাজনীতিটা অ্যাড অন।

রাজনীতি ছেড়ে একটু মিঠুনদা সম্পর্কে বলুন। এই প্রথম কাজ করলেন....

মিঠুনদা লেজেন্ড। অত বড় মাপের মানুষ আমি দেখিনি। আমাকে বোধহয় উনি অতটাই ভালবাসেন যতটা মিমোকে বাসেন। সে দিন অ্যাকশন সিকোয়েন্স হচ্ছে। আমাকে চারটে ঘুসি মারবেন মিঠুনদা— এটাই সিন।

শট দিয়ে আমরা পরের সিন-এর আলোচনা করছি, হঠাত্‌ মিঠুনদা ডিরেক্টর আর আমাকে বললেন, “আচ্ছা দেবকে আমি মারলাম। দেব আমাকে মারবে না?” স্ক্রিপ্টে সে রকম কিছু ছিলই না। আমরা বললাম এ রকম কোনও সিন নেই। তখন আবার আমার দিকে তাকিয়ে ঘুরে বললেন (হাসি), ‘‘ওরে ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশ, তুই কীসের হিরো বে! আমি তোকে মারব, তাতে আমার ফ্যানেরা খুশি হবে। তুই আমাকে না মারলে তোর ফ্যানেরা কি খুশি হবে? অ্যাই, দু’টো সিন লেখ যেখানে দেব আমাকে ক্যালাচ্ছে। না হলে জমবে না।”এই হচ্ছে মিঠুন চক্রবর্তী।

আচ্ছা, মিঠুনদা তো কলকাতায় শ্যুটিং করছেন। কিন্তু সব প্রচার থেকে উনি নাকি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন পাছে তাঁকে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়...

সেটা আমি বলতে পারব না। এটা মিঠুনদার নিজস্ব ব্যাপার। আমি এটুকুই বলব, মিঠুনদাকে মানুষ অসম্ভব ভালবাসে। বাকি আশেপাশে কী হল, সেটা নিয়ে মিঠুন চক্রবর্তীর ভক্তরা বদার করে না।

এই যে হায়দরাবাদে ‘হিরোগিরি’র শ্যুটিং করলেন, প্যাক আপের পর হোটেল রুমে কখনও সারদা কাণ্ড নিয়ে কথা বলেননি আপনারা?

একদিনও না। আমরা ছবির সেট কী সেটের বাইরে অভিনয়, পরের দিনের শ্যুটিং কী হবে, এ সব নিয়েই আলোচনা করি। রাজনীতি নিয়ে নয়। আর জানি না আপনি লিখবেন কি না, আমি আবার বলছি পলিটিক্সকে আমাদের ধর্ম বানাবেন না। আমরা আর্টিস্ট। আমাদের সঙ্গে সবার ভাল সম্পর্ক। অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষেরাও আমাদের ভালবাসে। আমাদের সবার সঙ্গে কথাবার্তা হয়।

‘হিরোগিরি’ তো কোয়েল মল্লিকের সঙ্গে আপনার নবম ছবি?

হ্যাঁ, ন’টা ছবি হয়ে গেল কোয়েলের সঙ্গে। এবং এটাই আমাদের দু’জনের বেস্ট পারফর্ম্যান্স। আমাদের দেশে তো অনেকেরই ধারণা বিয়ের পর হিরোইনদের কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়। আপনি সেটে থাকলে দেখতেন কোয়েল কী অসম্ভব পরিশ্রম করেছে এই মিথটা ভাঙতে। শি হ্যজ গিভেন ইট হার অল। বিয়ের আগে এত খাটত না, এখন যা খাটছে।

আচ্ছা, শহরে এখনও রমরমিয়ে চলছে তিন গোয়েন্দার গল্প। এর মধ্যে দর্শক ‘হিরোগিরি’ দেখতে যাবে কেন বলুন তো?

যে ছবিগুলো চলছে সেই ছবিগুলোর প্রতি আমার রেসপেক্ট একশো শতাংশ। কিন্তু এই ছবিগুলোর বাইরেও একটা পৃথিবী আছে। কলকাতার বাইরেও একটা বিরাট সংখ্যক দর্শক আছেন, যাঁরা এমন ছবি চান যাতে ফুল এন্টারটেনমেন্ট রয়েছে। নাচ-গান রয়েছে। সেই মানুষরাই দেবকে দেব বানিয়েছেন। সেই মানুষরা সিনেমা দেখতে দেখতে নাচতে চান। আনন্দ হলে সিটি মারতে চান, সিট ভাঙতে চান। সেই মানুষরা শুধু এন্টারটেন্ড হতেই ‘হিরোগিরি’ দেখবেন।

শেষ প্রশ্ন। ধরুন আমি, আপনার আর মিঠুনদার ‘ডাই হার্ড’ ফ্যান। আপনাদের ছবি কেটে স্ক্র্যাপবুক বানাই টাইপস। কিন্তু আমার বাবা সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন সারদায় টাকা লাগিয়ে। আমি কি আপনাকে আর মিঠুনদাকে আগের মতো ভালবাসতে পারব ...

হ্যাঁ, পারবেন। তার কারণ আপনি জানেন এই দু’টো মানুষের আসল পরিচয় ওরা অভিনেতা। রাজনীতিতে তারা এসে পড়েছে।

কিন্তু আমরা যে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করব না, এটা মানুষ জানে। এটাও জানে আমরা চাই বাংলার ভাল হোক। মিঠুনদাও তাই চায়। আমিও।

থ্যাঙ্ক ইউ।

থ্যাঙ্ক ইউ। আর আপনার সঙ্গে এটা বোধহয় আমার ফিফটিয়েথ ইন্টারভিউ। কিন্তু এই প্রথম কোনও ইন্টারভিউতে নাইন্টি পার্সেন্ট রাজনীতি নিয়ে কথা হল, টেন পার্সেন্ট আমার ছবি ‘হিরোগিরি’ নিয়ে। যত তাড়াতাড়ি এই রেশিয়োটা চেঞ্জ হয়, ততই ভাল। সেই আশাতেই রইলাম আমরা শিল্পীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dev indranil roy ananda plus interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE