আপনার কি প্রথম থেকে ক্রিকেটার হওয়ার দিকেই ঝোঁকটা ছিল?
যত দূর মনে পড়ে, প্রথম থেকেই আমার খেলাধুলোয় ভীষণ আগ্রহ ছিল। ফ্যামিলি ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। বাবা ডাক্তার, মা প্রফেসর। এমনকী আমার বোনও ডাক্তার। তাই অ্যাকাডেমিকসে যাওয়াই আমার পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। আর তাই জানতাম অ্যাকাডেমিকসের বাইরে কিছু করতে হলে, আমাকে তাতে সাঙ্ঘাতিক ভাল হতেই হবে।
তার মানে, পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে খেলাধুলোয় সময় দেওয়া নিয়ে আপনি বেশ ভয়ে ভয়েই থাকতেন?
আসলে আমাকে দু’বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। হয় আমি খেলাধুলোয় নিজেকে প্রমাণ করব। নয়তো আবার পড়াশোনায় ফেরত আসতে হবে। কিন্তু এটা আমি বাবা-মায়ের কথা ভেবে বলছি। যদিও ওঁরা আমায় ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া নিয়ে কখনও বাধা দেননি।
আচ্ছা, সব সময় আপনাকে বাবা-মায়ের কথা বলতে শোনা যায়: কী ভাবে তাঁরা আপনার চিন্তাভাবনাকে বিস্তৃত করেছেন। ওঁদের থেকে সবথেকে বড় শিক্ষাটা কী পেয়েছেন?
এই রে, এক কথায় সেটা বলা তো একটু মুশকিল। (একটু ভেবে) তবে বলব কখনও ভয় না পাওয়া আর মন খুলে কথা বলার শিক্ষা। ওঁরাই শিখিয়েছিলেন কখনও সিদ্ধান্তহীনতায় না ভুগতে।
আপনি কি ছোট থেকেই এমন ফ্ল্যামবয়েন্ট আর আউটগোয়িং?
কখনওই আমি মুখচোরা ছিলাম না। আমি লোকের সঙ্গে মিশতে ভালবাসি। কারণ, তাতে তাদের সম্বন্ধে জানা যায়। বিশ্ব সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। এমনকী নিজেকেও ভাল করে চিনতে পারা যায়।
আপনার ক্রিকেটীয় সত্তা কিন্তু একেবারে ক্যাসানোভার মতো...
দেখুন আমি অনেক ছোট বয়সে ক্রিকেটে ঢুকেছি। আর বললামই তো আমার লোকজনের সঙ্গে মিশতে ভাল লাগে। সব জায়গা ঘুরে দেখতে ভাল লাগে। দেখতাম, অনেক প্লেয়ার ট্যুরে এসে অবসর সময়টা হোটেলে বসে কাটিয়ে দেয়। আমি সেটা পারতাম না। যেখানেই যেতাম সেই জায়গাগুলো এক্সপ্লোর করতে চাইতাম। এগুলো যে শুধু আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল তা-ই নয়, বাইরের জগত্ সম্বন্ধে একটা ধারণাও তৈরি করে দিয়েছিল।
আপনার নিন্দুকরা বলেন আপনার অনেক কিছুই নাকি লোক দেখানো বাহাদুরি। কখনও কখনও আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, আপনি কখনও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় নামলেন না। নিজেকে এ সবের মধ্যে কোথায় রাখবেন?
আমি একটা কথাই বলব, কাজের ক্ষেত্রে আমি প্রো-ক্রিকেট। আমি ক্রিকেটমুখী। হ্যাঁ, প্রো-ইন্ডিয়ান ক্রিকেটও বলতে পারেন। কিন্তু জেনে রাখুন, যদি কোনও অন্যায় দেখি, আমি আমার মত জানাতে দু’মিনিটও ভাবব না। নিজের মনোভাব উজাড় করে দেব সেখানে।
আপনার বিরুদ্ধে কিন্তু এই অভিযোগও আছে যে, আপনি কমেন্টেটর হয়েও বিসিসিআই-এর আদেশ পালন করতেন...
একদম বাজে কথা। কক্ষনও না। যারা আমাকে চেনে না তারাই আমার বিরুদ্ধে ওই রকম কথা বলে।
তার মানে আপনি বলতে চান, বিসিসিআই কখনও কমেন্টেটরদের (তার মধ্যে অনেক সময় সুনীল গাওস্কর, এল শিবরামকৃষ্ণন আর অন্য বিদেশি প্লেয়ারও আছেন) বলে দেয় না কোথায় কী বলতে হবে?
বললাম তো, কক্ষনও না। আমাকে কখনও বলে দেওয়া হয়নি! আর আমার মনে হয় অন্যরাও একই কথা বলবে।
অনেকেই মনে করেন অধিনায়ক হিসেবে আপনাকে খুব ভাল মানাতো। সম্প্রতি সচিনও ওঁর বইতে আপনাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সেই আপনিই কি না ১৯৮৭তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শুধু একটা মাত্র টেস্টে অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ পেলেন। এ নিয়ে অনুশোচনা হয় না?
দেখুন, আমি অনুশোচনা নিয়ে বাঁচি না। অতীতেও ঘুরে বেড়াই না। যা হয়েছে তাতে তো আমার কোনও হাত নেই। তাই ও প্রশ্ন মাথায় আসবে কেন? একটা সময়ে আমাকে একটা কাজ দেওয়া হয়েছিল (তত্কালীন অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকারের অনুপস্থিতিতে)। আর আমি সেটা আমার পুরোটা দিয়ে করার চেষ্টা করেছিলাম। যদি টানা ২-৩ বছর অধিনায়কত্ব পেতাম, তবে হয়তো অন্য রকম হত। কিন্তু কী হতে পারত, সে আর কে বলতে পারে!
সেই টেস্টেই তো আপনার সঙ্গে ভিভ রিচার্ডসের বেশ খটাখটি লেগেছিল...
ব্যাপারটাকে ঠিক খটাখটি বলা যায় না। তবে কথা কাটাকাটি একটা হয়েছিল। ভিভ তখন আমাদের মেন স্ট্রাইক বোলার নরেন্দ্র হিরওয়ানিকে উত্ত্যক্ত করছিল। আমি ভিভকে কড়া ভাষায় বলি কোথায় ওর থামা উচিত। জানেন তো, খেলার মাঠে ভয় পেতে নেই। নার্ভকে সব সময় নিজের অধীনে রাখতে হয়। আমার সঙ্গে ভিভের কোনও তুলনা হয় না, কিন্তু মাঠে নামলে মনে করি আমি ওর সমানে-সমানে। এটা না ভাবলে তুমি বাঁচতে পারবে না।
আপনার দেখা সেরা ব্যাটসম্যান কে?
আমি রিচার্ডসের কথাই বলব। শুধু ট্যালেন্ট নয়, ওর আত্মবিশ্বাসও ছিল তুঙ্গে। বিপক্ষের আত্মবিশ্বাসকে কী করে দুমড়ে মুচড়ে দিতে হয়, সেটা দারুণ জানত রিচার্ডস।
আর বোলার? যে আপনাকে সবথেকে বেশি ভুগিয়েছে...
উফ্, অনেকে... ইমরান, হেডলি, উইলিস, রবার্টস, গার্নার, হোল্ডিং। আমার স্পিনের বিরুদ্ধে খেলতে কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু আমি দশ নম্বর থেকে ওপেনিংয়ে উঠে এসেছিলাম। ওপেনিংয়ে কিন্তু সামলাতে হয় ফাস্ট বোলারদের। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে আমি নিজেই নিজের মতো করে ফাস্ট বল খেলার টেকনিক বানিয়ে নিয়েছিলাম। আর দেখুন, গাওস্কর আর সহবাগের পর ওপেনার হিসেবে সবথেকে বেশি সেঞ্চুরি কিন্তু আমার। টেল এন্ডার হিসেবে খারাপ নয়, কী বলেন (হাসি)!
তবে খারাপ সময়ও আপনাকে দেখতে হয়েছে। তরুণীদের হার্টথ্রব থেকে সবথেকে সমালোচিত ক্রিকেটার। মানিয়ে নিলেন কী ভাবে?
আসলে, ওই সময়টাই আমাকে সবথেকে বেশি শিখিয়েছে। মানসিক ভাবে আরও বেশি স্ট্রং হয়েছি। আরও বেশি ধীরস্থির হতে শিখেছি। জেনেছি খ্যাতিও কী ভাবে হাতের মুঠো থেকে পালিয়ে যেতে পারে। যেটা থেকে যায়, তা হল পারফর্ম্যান্স।
এখন তা হলে আপনাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোনটা?
আমি আসলে এই খেলাটার মধ্যে থাকতেই ভালবাসি। বারো বছর ক্রিকেট খেলেছি। তবুও ক্রিকেটের থেকে আর ভাল কিছু ভাবতে পারি না। আমি খেলা ছেড়েছি ৩২ বছর বয়সে। তারপর থেকে কমেন্ট্রি করছি। প্রথম দিন কমেন্ট্রি বক্সে বসেই টের পেয়েছিলাম, এটাই আমায় এত দিন ডাকছিল। সেটাও তো হয়ে গেল কুড়ি বছর। যখন এই ডিরেক্টরশিপের অফারটা এল, আমি অনেক মন দিয়ে ভাবলাম। ভাবতে ভাবতেই টের পাচ্ছিলাম অ্যাড্রিনালিন বয়ে যাচ্ছে। কমেন্টেটরের থেকেও ডিরেক্টর হিসেবেই তো আমি আরও বেশি ওয়ার্ল্ড কাপের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব। আর তাই অফারটায় হ্যাঁ বলে দিলাম।
আর ক্রিকেটের বাইরে... আমার মেয়ে আছে, পোষা কুকুর আছে আর আছে কিছু ভাল বন্ধু। আলিবাগের ফার্ম হাউজে ওদের সঙ্গে সময় কাটানোটাই আমার ফেভারিট পাস টাইম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy