দেব (২৮) • স্ত্রী (২৮) • বাবা (৫১) • মা (৪৫)
ব্যাঙ্কে কর্মরত • স্ত্রী শিক্ষিকা • থাকেন বাবা-মায়ের সঙ্গে
• সঞ্চয় নিয়ে জানতে আগ্রহী • চান ২ কোটি টাকার অবসরের তহবিল গড়তে
তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি দেব এবং তাঁর স্ত্রী সবেমাত্র নিজেদের পারিবারিক জীবন শুরু করেছেন। অন্য অনেকের মতোই তাঁদেরও বেশ কিছু স্বপ্ন রয়েছে। দেখে ভাল লাগল যে, তিনি নিজের চাকরি জীবনের মতোই অবসর জীবনকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং সে জন্য তহবিল গড়ে তোলার কথা ভাবছেন। আপাতত ২ কোটি টাকা জমাতে চান দেব। দেখা যাক, শুধুমাত্র তাঁর বেতন থেকে সেই লক্ষ্যপূরণ হয় কি না। চলতি মাসেই বেতন সংশোধনের কথা রয়েছে দেবের। তখন তা দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। যে কারণে এই বেতন ধরেই পুরো হিসাবটা করব আমি। এখানে তাঁর স্ত্রীর বেতনকে আমি ধরছি না। বরং বলব বিপদ-আপদের জন্য সেই টাকা তোলা থাক। অথবা অল্প অল্প করে মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপি-র মাধ্যমে তিনিও তহবিল গড়ার কথা ভাবতে পারেন।
খরচ কমানো
সাধারণ ভাবে আমি সবাইকেই বলি মাসের খরচ নিট আয়ের ৫০ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে। দেবের একার বেতন ধরলে বলতে হবে তাঁর খরচের পরিমাণ সঞ্চয়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাঁর মাসিক খরচ আরও হাজার তিনেক টাকা কমানো উচিত। তাঁর স্ত্রীর বেতন ধরলে বলব আপাতত তা ঠিকই রয়েছে। আগামী দিনে সন্তান হলে অবশ্য খরচ আরও বাড়বে। ফলে সে জন্যও তৈরি থাকতে হবে।
জীবনবিমা
বুদ্ধিমানের মতো দেব ৫০ লক্ষ টাকার একটি টার্ম পলিসি করেছেন। এর সঙ্গেই রয়েছে ৫ লক্ষের একটি এনডাওমেন্ট পলিসিও। অর্থাৎ তাঁর কিছু হলে পরিবারের হাতে আসবে ৫৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু দেখতে হবে আগামী দিনে এই টাকায় আদৌ কাজ হবে কি না। প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে রেখে পেতে হলে তাঁর তহবিল হতে হবে—৩০,০০০ x ১২ x ১০০) / ৭= ৫১,৪২,৮৫৭ টাকা। এখানে ধরে নিচ্ছি রিটার্ন ৭%।
দেখা যাচ্ছে, দেব ইতিমধ্যেই ওই টাকার পলিসি করে ফেলেছেন। কিন্তু এর পর বেতন বাড়লে ওই অর্থে কাজ হবে না। পাশাপাশি, মূল্যবৃদ্ধির কথাও মাথায় রাখতে হবে তাঁকে। যে- কারণে আরও বেশি টাকার পলিসির প্রয়োজন হবে।
আমার মতে, ধীরে ধীরে টার্ম পলিসির অঙ্ক বাড়াতে পারেন দেব। অথবা চাইলে আলাদা একটি স্টেপ ডাউন টার্ম পলিসি কিনতে পারেন। এতে যত দিন যাবে, প্রিমিয়াম ততই কমবে। পাশাপাশি, অন্যান্য লগ্নিতে নিশ্চিত তহবিল তৈরি হলে পলিসির প্রয়োজনও কমবে।
পিপিএফ এবং পিএফ
দেব ও তাঁর স্ত্রীর পিএফে বেশ ভাল টাকা কাটে। পাশাপাশি, পিপিএফেও নিয়মিত লগ্নি শুরু করেছেন তাঁরা। এই দুই প্রকল্পই করছাড় পেতে এবং অবসরের তহবিল গ়ড়ে তুলতে তাঁদের সাহায্য করবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখলে ভাল, শুধুমাত্র করছাড়ের জন্য খুব বেশি এই প্রকল্পগুলিতে লগ্নি করে ফেললে কিন্তু পরবর্ত়ী কালে পোর্টফোলিও নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। পিপিএফের সুবিধা হল বছরে যে- কোনও সময়ে যে-কোনও অঙ্কের টাকা এতে জমা রাখা যায় (বছরে সর্বোচ্চ ১.৫০ লক্ষ টাকা)। ফলে অন্যান্য লগ্নি খতিয়ে দেখে সুযোগ মতো এখানে টাকা ঢালুন।
এসআইপি
দেব ইতিমধ্যেই একটি লার্জ ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি শুরু করেছেন। আগামী দিনে আরও একটি মিড ক্যাপ ফান্ডে এসআইপি-র কথা ভাবছেন। তাঁর বয়স কম, ফলে এখনই ঝুঁকি নেওয়ার সময়। আমার মতে, দীর্ঘ মেয়াদের কথা মাথায় রেখে তাঁর উচিত মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি চালিয়ে যাওয়া। যদি ধরি ৬০ বছরে তিনি অবসর নেবেন, সে ক্ষেত্রে ৩২ বছর সময় রয়েছে তাঁর হাতে। প্রতি মাসে যদি ৫,০০০ টাকা এসআইপি করেন, তা হলে ১৫% রিটার্ন ধরলে অবসরের সময়ে তাঁর হাতে আসবে প্রায় ২.২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২ কোটি টাকা জমানোর যে-পরিকল্পনা তিনি করছেন, তা একটি মাত্র প্রকল্পে লগ্নি করেই হাতে আসবে দেবের। বাকি অর্থ তিনি অন্যান্য প্রকল্পে রাখতে পারবেন। প্রতি মাসে নিজের বেতন থেকে যদি তিনি ৫ হাজার টাকা দিতে না-পারেন, তখন স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর বেতন থেকেও সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করতে হবে দেবকে।
স্থায়ী আমানত
দেব ব্যাঙ্কে কাজ করেন। ফলে অন্য লগ্নিকারীদের তুলনায় তিনি স্থায়ী আমানতে ১ শতাংশ বেশি সুদ পাবেন। যে-কারণে আমি বলব প্রতি মাসে কিছু টাকা রেকারিং করুন। বছরে শেষে সেই টাকা স্থায়ী আমানতে রাখুন। এ ভাবে
অনেকটা তহবিলই গড়ে তোলা সম্ভব হবে তাঁর পক্ষে।
ওভারড্রাফট
ব্যাঙ্কে ওভারড্রাফট ব্যবস্থায় দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাওয়ার কথা চিঠিতে জানিয়েছেন দেব। যে-কারণে তিনি সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখেন না। এটা কোনও কাজের কথা নয়। কারণ ওভারড্রাফট নিলে প্রয়োজনের সময়ে হাতে টাকা আসে ঠিকই, কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ ভাবে নেওয়া টাকার উপর সুদ দিতে হয়। ফলে ওভারড্রাফট ব্যবস্থাকেও যে-কোনও ঋণের মতোই দেখতে হবে। তাই আমার মতে, সেভিংস অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা রাখার ব্যবস্থা করুন।
স্বাস্থ্যবিমা
আমাদের অনেকেরই অভ্যাস রয়েছে অফিস থেকে স্বাস্থ্যবিমা পেলে নতুন করে বিমা না-করানোর। দেবও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি ব্যাঙ্ক থেকে বাবা, মা এবং নিজের জন্য ৪ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা পান। এ জন্য তাঁকে কোনও প্রিমিয়ামও দিতে হয় না। কিন্তু তিনি এর অসুবিধাগুলি ভেবে দেখেননি। সেগুলি একবার আলোচনা করি—
• এমন কোনও গ্যারান্টি নেই যে, আগামী দিনে আরও ভাল চাকরি পেলে তিনি ব্যাঙ্কের চাকরি ছাড়বেন না। তখন তাঁর বিমার কী হবে?
• নতুন চাকরিতেও এই সুবিধা আদৌ থাকবে কি না, নিশ্চয়তা নেই তারও।
• ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরেও কি বিমার সুবিধা পাবেন দেব? ওই সময়েই কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যবিমার বেশি প্রয়োজন হবে।
• তাঁর স্ত্রী এই বিমার আওতায় নেই।
• দেবের বাবা-মায়েরও তো বয়স হচ্ছে। এই ৪ লক্ষ টাকার বিমাতে কী আদৌ কোনও কাজ হবে?
এই সবক’টি প্রশ্নের উত্তরই নেতিবাচক। তাই সমস্ত দিক মাথায় রেখেই তাঁকে বলব আলাদা করে নিজের ও স্ত্রীয়ের একটি স্বাস্থ্যবিমা নিতে। কমপক্ষে ৫ লক্ষের একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমার ব্যবস্থা তাঁকে করতে হবে। যা আগামী দিনে আরও বাড়াতে হবে। এখন দেবের বয়স কম। ফলে প্রিমিয়ামও কিন্তু অনেকটাই কম দিতে হবে।
শেষে বলব, দেবের প্রোফাইলের বেশিরভাগ পরিকল্পনাই সঠিক পথে এগোচ্ছে। এ বার তাঁকে শুধু নজর রাখতে হবে লগ্নিগুলির উপর। প্রয়োজন মেনে অল্প হলেও লগ্নির ধরন বদলাতে হতে পারে।
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy