Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Presents

ভারতের শেয়ার বাজারের সম্ভাবনা প্রচুর

বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও আশিস কুমার চহ্বাণের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী।বর্তমানে শেয়ার বাজার বেশ ভাল জায়গায় রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পর সম্প্রতি আমরা সেনসেক্সকে ৩০,০০০-এর গণ্ডি পার হতেও দেখেছি। এই অবস্থায় বাজারের হাল-হকিকৎ সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?

ছবি:  ফাইল চিত্র।

ছবি: ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

• বর্তমানে শেয়ার বাজার বেশ ভাল জায়গায় রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পর সম্প্রতি আমরা সেনসেক্সকে ৩০,০০০-এর গণ্ডি পার হতেও দেখেছি। এই অবস্থায় বাজারের হাল-হকিকৎ সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?

দেখুন, বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই)-এর মত স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক হিসাবে শেয়ার বাজারের হাল নিয়ে মন্তব্য করা আমার পক্ষে ঠিক হবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, ভারতের শেয়ার বাজারের সম্ভাবনা প্রচুর। সাধারণত ভাবে দেশের আর্থিক অগ্রগতির উপরই শেয়ার বাজারের উন্নতি নির্ভর করে। যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা বাস্তবায়িত করতে হলে বেশ কিছু পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে করা প্রযোজন বলে আমি মনে করি।

• কোন পদক্ষেপ এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বলে আপনার মনে হয়?

লাল ফিতে আমাদের দেশের একটা অভিশাপ। এক সময়ে লাইসেন্স রাজ ছিল। সেটা থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে। তার পর থেকে দেশের আর্থিক উন্নয়নে গতি এসেছিল। এ বার লাল ফিতের ফাঁস থেকে মুক্ত হলে উন্নয়নের গতি কয়েক গুণ বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস। চিন শিল্পের দিক থেকে দ্রুত উন্নতি করেছে। ভারত কিন্তু এ ব্যাপারে অনেকটাই পিছিয়ে। যদিও পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নতি ভারতে দ্রুত হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হলে শেয়ার বাজারেও তার প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আমার ধারণা।

• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদের হার কমিয়েছে, এর ফলে শিল্পোত্‌পাদনে গতি আসবে বলে আপনার মনে হয়?

শিল্পের উন্নয়ন কেবল সুদের হারের উপর নির্ভর করে না। সুদের হার কমা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সন্দেহ নেই। কিন্তু তার থেকেও জরুরি পরিকাঠামো উন্নয়ন। অর্থাত্‌ বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন বৃদ্ধি, যথেষ্ট পরিমাণ গুদাম নির্মাণ, বন্দরগুলিতে মাল খালাসের ব্যবস্থা দ্রুত করা বা কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সময় কমানো ইত্যাদি। বহু ক্ষেত্রে সরকারি নীতি নির্ধারণ এখনও বাকি। ওই সব ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সেরে ফেললে তা শিল্পের অগ্রগতির পক্ষে সহায়ক হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মকানুনগুলি আরও সরল করা অবশ্যই প্রয়োজন। সেগুলি যাতে সঠিক ভাবে সকলে মেনে চলে, জরুরি তা নিশ্চিত করাও।

• উচুঁতে থাকা শেয়ার বাজারে এখন সাধারণ খুচরো লগ্নিকীদের ভূমিকা ঠিক কী?

আগে বাজার যখন উঁচুতে ছিল, তখন সাধারণ খুচরো লগ্নিকারী, যাদের আমরা শেয়ার বাজারের ভাষায় রিটেলার বলি, তাঁরা দল বেঁধে শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন। এখন কিন্তু তাঁদের শেয়ার কিনতে বড় একটা দেখা যাচ্ছে না। বরং তাঁরা এখন শেয়ার বিক্রি করে চলেছেন। গত কয়েক বছরে রিয়েল এস্টেট, সোনা ইত্যাদিতে লগ্নি করে ভাল রিটার্ন পেয়েছেন তাঁরা। ফলে সেই সব ক্ষেত্রে লগ্নির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

তবে এর সঙ্গেই মনে রাখতে হবে, রিয়েল এস্টেট বা সোনার মতো ক্ষেত্রগুলি কিন্তু গত এক-দেড় বছর ধরে কিন্তু ভাল ফল দিচ্ছে না। গত ১০ বছরে শেয়ার বাজার গড়ে ২৩% করে রিটার্ন দিয়েছে। সেই কারণে বরং যাঁদের শেয়ার কেনা রয়েছে, বা যাঁরা শেয়ার বাজারে পা রাখতে চান, তাঁদের জন্য কিন্তু এটা ভাল মুনাফা করার সুযোগ। সাধারণ ছোট লগ্নিকারীরা অবশ্য ফের ধীরে ধীরে শেয়ার বাজারমুখী হচ্ছেন। এটা ভাল খবর।

• সাধারণ লগ্নিকারীদের স্বার্থে শেয়ার বাজারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাবলিক ইস্যুতে লগ্নি করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যাকে হলা হয় ‘অফার ফর সেল’। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্ষেত্রে। এই ব্যবস্থায় ছোট লগ্নিকারীদের শেয়ারের দামে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেল ও কোল ইন্ডিয়ার শেয়ার এই ব্যবস্থায় বিক্রি করা হয়েছে। যেখানে শেয়ারের দামের উপর রিটেলারদের ৫% ছাড় দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নিকরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের যে কর্মসূচি রয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে বিলগ্নিকরণের জন্য ওই সব সংস্থার শেয়ারের পাবলিক ইস্যু স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমেই হবে। এতে সাধারণ খুচরো লগ্নিকারীরা উপকৃত হবেন বলে আমার ধারণা।

• ‘অফার ফর সেল’ ব্যবস্থায় কী ভাবে লগ্নি করতে হয়?

অন্য শেয়ারের মতো এই ক্ষেত্রেও ব্রোকারদের মাধমে লগ্নি করতে হবে। তারাই বলে দেবে লগ্নি করার প্রক্রিয়াটি কী।

• এ তো গেল পাবলিক ইস্যুর কথা। এ ছাড়া, এমনিতে লগ্নিকারীদের স্বার্থে বিএসই-তে আর ঠিক কী কী করা হচ্ছে?

সেবির নির্দেশে সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জে সেটেলমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ডের আকার বাড়ানো হয়েছে। এটিকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলাই সেবি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের লক্ষ্য। এই তহবিলটির পোষাকি নাম ‘কোর সেটেলমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ড’।

নতুন ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্য শুধু যে তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি, তা কিন্তু নয়। এই ফান্ডের অন্যতম লক্ষ্যই হল লগ্নিকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা। কোনও কারণে শেয়ার কেনা-বেচার সময় যদি ব্রোকার বা লগ্নিকারী টাকা মেটাতে না-পারেন, সে ক্ষেত্রে অপর পক্ষের বিনিয়োগকারীর যাতে টাকা পেতে সমস্যা না-হয়, তার জন্যই এই ফান্ড তৈরি করা হয়েছে।

শেয়ারের দাম মেটানোর ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে যে ঝুঁকি রয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় তা প্রতি দিন যাচাই করে দেখা হবে। শেয়ার বাজারের ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘স্ট্রেস টেস্ট’। লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা অন্য কারণে যদি মনে হয়, বাজারে ঝুঁকি বেড়েছে, তা হলে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোর সেটেলমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ডের পরিমাণও বাড়ানো হবে। যাতে লগ্নিকারীরা সুরক্ষিত থাকেন।

• শেয়ার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কোনও পরিকল্পনা কি আপনাদের আছে?

সরকারি ভাবে নানা রকম চেষ্টা চলছে। পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের তহবিলের টাকা যাতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা হয়, তার জন্য বিভিন্ন পেনশন তহবিলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মজার কথা হল, ব্রিটেন, আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশের পেনশন ফান্ডগুলি ভারতীয় সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। অথচ আমাদের দেশের পেনশন ফান্ডগুলি শেয়ার বাজার থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। ওই সব তহবিলের টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করা হলে এক দিকে যেমন শেয়ার বাজার চাঙ্গা হবে। তেমনি অন্য দিকে ওই সব তহবিলের আয়ও বাড়বে, যার ফলে লাভবান হবেন পেনশনভোগীরা। তবে পেনশন তহবিলের টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে অবশ্যই ঝুঁকির নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

এ ছাড়া, সরকারি ঋণপত্র সহ বন্ডের বাজার চাঙ্গা করার ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গেও কথাবার্তা চালাচ্ছি আমরা।

• ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ার লেনদেনের বাজার চাঙ্গা করতে কী ধরনের পদক্ষেপ করছে বিএসই?

নয়ের দশকে বেশ কিছু সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হয়ে পরে বেমালুম উবে গিয়েছিল। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ছোট ও মাঝারি সংস্থা অথবা এসএমই। তাই ওই ধরণের সংস্থাকে আমাদের এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত করার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করি। এসএমইতে যাতে শেয়ার কেনাবেচা বাড়ে তার জন্য বিএসইতে একটি পৃথক লেনদেন ব্যবস্থা বা প্ল্যাটফর্ম চালু করেছি। বর্তমানে বিএসইতে ৭৯টি এসএমই সংস্থা নথিভুক্ত রয়েছে। শীঘ্রই নতুন আরও ২১টি সংস্থাকে নথিভুক্ত করা হবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ডিসেম্বর মাসের গোড়ার হিসাব অনুযায়ী নথিভুক্ত ওই সব এসএমই-র বাজারে ছাড়া মোট শেয়ার মূল্য (মার্কেট ক্যাপিটাল) ৯৭০০ কোটি টাকা ছড়িয়ে গিয়েছে। অর্থাত্‌ সংস্থা পিছু শেয়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি টাকা।

• বিএসই অনেক পুরনো। কিন্তু তা সত্ত্বেও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ বা এনএসই-র থেকে তাদের লেনদেনের পরিমাণ কম। কেন?

এক সময়ে এনএসই-র তুলনায় বিএসইতে প্রতিটি লেনদেনে সময় বেশি লাগত। তবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন বিএসই-তে লেনদেন করতে এনএসই-র থেকে ১০গুণ কম সময় লাগছে। যার ফলে দ্রুত বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। আমরা ইতিমধ্যেই কারেন্সি ডেরিভেটিভ লেনদেনে ৩৫ শতাংশ বাজার দখল করেছি। আগামী দিনে তা আরও বাড়বে বলেই আমার আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE