Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Presents

আপনাদের প্রশ্ন

গত তিন বছর ধরে আমি তিনটি মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপি চালাচ্ছি। এইচডিএফসি টপ ২০০, এইচডিএফসি মিড-ক্যাপ অপরচুনিটিজ এবং আইসিআইসিআই প্রু ফোকাসড ব্লুচিপ।

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

• গত তিন বছর ধরে আমি তিনটি মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপি চালাচ্ছি। এইচডিএফসি টপ ২০০, এইচডিএফসি মিড-ক্যাপ অপরচুনিটিজ এবং আইসিআইসিআই প্রু ফোকাসড ব্লুচিপ। জানতে চাই—

১) আমার পোর্টফোলিও ঠিক আছে? যদি না-থাকে, তা হলে তাতে কী পরিবর্তন করা জরুরি?

২) আরও নতুন ফান্ড কেনার দরকার আছে কি?

আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

আপনার পোর্টফোলিও ঠিক আছে কি না, সেই জবাব আমি শুরুতেই হ্যাঁ বা না-এ দেব না। বরং আগে ফান্ডগুলির গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরব।

প্রথমত, যে ৩টি ফান্ডে এসআইপি করছেন, তার সবগুলিই শেয়ারে লগ্নি করে, অর্থাৎ ইকুইটি ফান্ড।

দ্বিতীয়ত, ফান্ডগুলি যথেষ্ট ডাইভার্সিফায়েড। মানে, বিভিন্ন শিল্পের নানা সংস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তারা তহবিল খাটায়। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নতির সম্ভাবনা আছে যে-সব শিল্প ক্ষেত্রে, সেগুলিকেই লগ্নির জন্য বেছে নেয়।

তৃতীয়ত, সবগুলিই বড় এবং মাঝারি মাপের সংস্থার শেয়ার কেনে।

সব মিলিয়ে আমি বলব— ইকুইটি ফান্ড বলে এগুলিতে ঝুঁকি আছে ঠিকই। তবে ঝুঁকি কমিয়ে রিটার্ন বেশি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তহবিলের এ ভাবে ভাগ-বাটোয়ারা বা বড়-মাঝারি মাপের সংস্থার শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত তারই ইঙ্গিত। এমনকী খরচের অনুপাতও খুব একটা চড়া নয়।

তবে পোর্টফোলিও বদলানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখার পর। যেমন—

১) লগ্নির লক্ষ্য, অর্থাৎ যে সময়ের মধ্যে যতটা রিটার্ন পাওয়ার আশা নিয়ে লগ্নি করেছেন, তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কতটা দেখতে পাচ্ছেন?

২) যতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন মনে করেছিলেন, তার থেকে বেশি চাপ পড়ছে কি না। ঝুঁকি যদি বেড়ে গিয়েও থাকে, তবে তা আদৌ বহনযোগ্য তো?

৩) যে আর্থিক পরিস্থিতিতে প্রথমে লগ্নির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা কোনও ভাবে ধাক্কা খেয়েছে কি না। অর্থাৎ আরও বেশ কিছু দিন লগ্নি চালিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না তো? কারণ, শেয়ার ভিত্তিক লগ্নিতে চোখে পড়ার মতো রিটার্নের মুখ দেখতে হলে দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখা জরুরি। এতে সূচকের উত্থান ও পতন, দুইয়েরই সুযোগ নিয়ে তহবিল বাড়ে ফান্ডের। তবে এর ফলে টাকাটা বেশ কিছু দিনের জন্য আটকে যাবে। তাই সেই ঝুঁকি নেওয়ার পরিস্থিতি ও ধৈর্য কম থাকলে এই লগ্নি চালিয়ে যাওয়া মুশকিল। আর নতুন ফান্ড কেনা প্রসঙ্গে বলব, ইচ্ছে হলে এবং সাধ্য থাকলে কিনতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে একলপ্তে টাকা ঢেলে কোনও ভাল ফান্ডের ইউনিট কিনতে পারেন। কিংবা এসআইপি, মানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটু একটু করে টাকা ঢেলে লগ্নি করার রাস্তা নিতে পারেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত হচ্ছে কি না, তা বিচার করতে বুঝে নিন—

১) লগ্নির কতটা লক্ষ্য পূরণ হয়েছে এবং আরও কতটা বাকি?

২) আরও কত টাকার আর্থিক ঝুঁকি নিতে পারবেন?

৩) জীবনে অন্যান্য ক্ষেত্রে আর্থিক দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা কতটা?

• আমার বয়স প্রায় ৬৮। অবসর নিয়েছি। পেনশন পাই। গিল্ট ফান্ড নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে।

১) গিল্ট ফান্ডে কি কোনও লক-ইন পিরিয়ড রয়েছে?

২) যদি ধরে নিই আগামী দিনে সুদের হার আরও কমবে, তা হলে ফান্ডের তহবিলের সম্ভাব্য বৃদ্ধি কত হতে পারে? যে-রিটার্ন পাওয়া যাবে তার সঙ্গে কি শেয়ার থেকে পাওয়া রিটার্নের তুলনা করা চলতে পারে?

এ কে লাহিড়ী

না, গিল্ট ফান্ডে সাধারণত কোনও লক-ইন পিরিয়ড (যে-মেয়াদ পেরোনোর আগে ফান্ড ভাঙানো যায় না) থাকে না। তবে ইউনিট কেনার আগে লগ্নিকারীদের জেনে নেওয়া উচিত, নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে ফান্ড ভাঙালে লোড হিসেবে কোনও খরচ দিতে হবে কি না। কারণ, কিছু গিল্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে লোড দিতে হয়। এ বার দিচ্ছি আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর। এ বছর মোট তিন বার সুদ কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই সুদ কমার সুবিধা গিল্ট (সরকারি ঋণপত্র) ফান্ডের পাওয়ারই কথা। কারণ, বাজারে সুদ বাড়লে বা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে ঋণপত্রের দাম কমে। আবার সুদ কমলে বা কমার ইঙ্গিত পেলে ওই ঋণপত্রের দাম বেড়ে যায়। এটাই সাধারণ নিয়ম। আর গিল্ট ফান্ডের বাড়তি গুণ এটাই যে, তার তহবিল খাটে মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদের সরকারি ঋণপত্র বা সিকিউরিটিতে। এই সব সিকিউরিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট সুদে বাজার থেকে ধার নেয়। যেহেতু সরকারই এখানে ঋণগ্রহীতা, তাই সুদ দিতে না-পারা কিংবা মেয়াদ শেষে ঋণের মূল টাকা না-ফেরানোর সম্ভাবনা এখানে নেই বললেই চলে। যে-কারণে ঝুঁকির মাপকাঠি হিসেবে এই ঋণপত্রগুলির সাধারণত ‘সভরেন’-এর মতো সর্বোচ্চ রেটিং হয়।

তবে শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডের (ইকুইটি ফান্ড) তহবিল যে- হারে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে কিংবা তার থেকে যতটা রিটার্ন পাওয়ার আশা করা যায়, গিল্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে তা হয় না। আসলে রিটার্নের ব্যাপারে দু’টির মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না। শেয়ার ভিত্তিকে লগ্নিতে ঝুঁকি প্রবল, রিটার্নের সম্ভাবনাও বেশি। আবার গিল্ট ফান্ডে ঝুঁকি যেমন কম, তেমনই রিটার্নও ইকুইটির ফান্ডের তুলনায় অনেকটাই নীচে থাকার সম্ভাবনা।

আরও একটি বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চাই। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে গিল্ট ফান্ড থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা না করাই ভাল। টাকা মার যাওয়ার সম্ভাবনা না-থাকলেও, এখানে অনেক সময়ে ন্যাভ খুব দ্রুত ওঠা-নামা করে। অর্থাৎ ডেট ফান্ডের মধ্যে এতে ঝুঁকি একটু বেশি। ফলে আপনার মতো প্রবীণ নাগরিকের পক্ষে সর্বস্ব নিয়ে গিল্ট ফান্ড কিনতে ঝাঁপিয়ে না-পড়াই ভাল। বরং আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রেখে কতটা টাকা এখানে ঢালতে পারবেন, তা দেখুন।

(পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে)

• আমি ৫০,০০০ টাকা শেয়ারে লগ্নি করতে চাই ১০ বছরের জন্য। এ জন্য কী ভাবে এগোব?

বিক্রম সেনগুপ্ত, বেলঘরিয়া

প্রথমে একটি ডি-ম্যাট ও ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কোনও শেয়ার ব্রোকিং সংস্থা বা ডিপি-তে এই অ্যাকাউন্টগুলি খুলতে পারেন। এ জন্য লাগবে ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টের তথ্য ও প্যান কার্ড। আধার কার্ড থাকলে কাজটা আরও অনেকটাই সরল হতে পারে। কেওয়াইসির কাজ মিটলে সংশ্লিষ্ট শেয়ার ব্রোকিং সংস্থায় তাদের নিয়ম অনুযায়ী শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারবেন আপনি।

শেয়ারে লগ্নি করতে হলে দীর্ঘ মেয়াদে করাই ভাল। এতে ঝুঁকি কমে। ৫০ হাজার টাকা ১০ বছরের জন্য লগ্নি করতে হলে অন্তত ৮-১০ রকমের শেয়ার বাছবেন, অল্প অল্প করে এবং পছন্দ মতো বেশ কয়েকটি শিল্প ক্ষেত্র থেকে। আগে দেখুন সংস্থাগুলির ব্যালান্স শিট। বিশেষত, শেয়ার প্রতি আয়, পুরনো ডিভিডেন্ডের রেকর্ড, নিট সম্পদ ইত্যাদি। বাজারে দাম ঠিকঠাক পাচ্ছেন কি না জানতে, দেখে নেবেন শেয়ারের দাম ও আয়ের অনুপাত।

(পরামর্শদাতা: অদিতি নন্দী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE