ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
উচ্চশিক্ষার পরে কেরিয়ারে স্বপ্নের উড়ান কে না চান? কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারির রাস্তা বাছতে চান। আবার কারও স্বপ্ন কর্পোরেট-মইয়ে উপরে ওঠা। তার জন্য খোঁজ পড়ে ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রির। কিন্তু অনেক সময়েই সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থের অভাব। বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্টের মতো পাঠ্যক্রমে যা বেশ ভাল পরিমাণে জরুরি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাঋণের সুবিধা আছে। কিন্তু চাকরি শুরুর পরে তার কিস্তি চোকানোও একেবারে মুখের কথা নয়। তাই অন্তত আর্থিক ভাবে কিছুটা পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাতে সে ক্ষেত্রে সুবিধা পান, সেই লক্ষ্যেই ওই শিক্ষাঋণের সুদে ভর্তুকির বন্দোবস্ত।
প্রকল্পটি কী?
পোশাকি নাম সেন্ট্রাল সেক্টর ইন্টারেস্ট সাবসিডি স্কিম (সিএসআইএস)। এটি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প। যে সব পড়ুয়ার বাবা-মায়ের বার্ষিক আয় ৪.৫ লক্ষ টাকার কম, তাঁরা এর আওতায় শিক্ষাঋণ নিতে পারেন। ঋণের অঙ্ক যা-ই হোক না কেন, প্রকল্পে ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের সুদে ভর্তুকি মেলে। ব্যাঙ্ক ও নির্দিষ্ট কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যায়। ভর্তুকির টাকা ঋণদাতাদের দেয় কেন্দ্রই। এই প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে (নোডাল ব্যাঙ্ক) কানাড়া ব্যাঙ্ক।
এমনিতে কী হয়?
সাধারণ শিক্ষাঋণের ক্ষেত্রে পড়া শেষ করার এক বছর পর থেকে ধার শোধ করতে হয়। ধরুন, কেউ দু’বছরের কোর্স করছেন। তাঁকে ওই দু’বছর ও তার পর এক বছর, অর্থাৎ মোট তিন বছর পর থেকে ঋণ শোধ করতে হবে। একে বলা হয় মোরেটোরিয়াম পিরিয়ড। তবে ওই তিন বছর ধরে ঋণের উপর সুদ কিন্তু জমতে থাকবে।
এই প্রকল্পে যিনি ঋণ নিচ্ছেন, তাঁর কাছে দু’টি বিকল্প রয়েছে—
•চাইলে প্রতি মাসেই সুদের টাকা মিটিয়ে দিতে পারেন।
• না হলে তিন বছর পর আসল এবং সুদ মিলে যা হবে, তা মাসিক কিস্তিতে শোধ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যে টাকা ধার নেবেন, তার উপর জমা সুদ হিসেব হবে। তার পরে সেই টাকাকেই আসল হিসেবে ধরা হবে এবং মাসিক কিস্তি হিসেব হবে।
প্রকল্পে অন্য কী?
কেন্দ্রের প্রকল্পটির আওতায় ঋণ নিলে ওই তিন বছর ধরে যত সুদ জমেছে, তার পুরোটাই ভর্তুকি মিলবে। অর্থাৎ তিন বছর পর থেকে শুধু মূল ঋণের উপর সুদ যোগ করে তা মাসিক কিস্তিতে শোধ করতে হবে।
কারা পাবেন?
এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়—
• যে সব পড়ুয়ার বাবা ও মায়ের মোট আয় বছরে ৪.৫০ লক্ষ টাকা বা তার কম, তাঁরাই এই প্রকল্পে ঋণ পাবেন।
• জীবনে একবারই ওই ভর্তুকিপ্রাপ্ত ঋণের সুবিধা নেওয়া যাবে। সেটা হয় স্নাতকস্তরে অথবা স্নাতকোত্তরে।
• এক সঙ্গে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর (ইন্টিগ্রেটেড) পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
• তবে শুধুমাত্র দেশের মধ্যে পড়ার ক্ষেত্রেই মিলবে এই ভর্তুকি।
• একই পরিবারের একাধিক পড়ুয়া এই সুবিধা নিতে পারবেন।
ভর্তুকির সীমা
• ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের উপরেই পাওয়া যাবে ভর্তুকি। চাইলে তার বেশি টাকাও ঋণ নেওয়া যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ওই ৭.৫ লক্ষ পর্যন্ত ভর্তুকি মিলবে। তার বেশিটাতে নয়।
• ওই ৭.৫০ লক্ষ পর্যন্ত ঋণে বন্ধক রাখতে হয় না। লাগে না গ্যারান্টরও।
• তবে ঋণের অঙ্ক ৭.৫০ লক্ষের বেশি হলে অতিরিক্ত টাকার জন্য বন্ধক বা গ্যারান্টর চাইতে পারে ব্যাঙ্ক।
সুদের হার
• সুদের হার স্থির হবে তহবিল সংগ্রহের খরচের ভিত্তিতে। যাকে এমসিএলআর বলে।
• ৭.৫০ লক্ষ টকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে বার্ষিক এমসিএলআরের সঙ্গে ২.২০% যোগ করে সুদ ঠিক হবে।
• তার বেশি অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে ২.১৫% যোগ হবে।
সব পড়াতেই মেলে?
সব ধরনের পাঠ্যক্রমে ওই ভর্তুকি পাওয়া যায় না। ইঞ্জিনিয়ারিং বা কারিগরি, ম্যানেজমেন্ট বা এমবিএ এবং ডাক্তারির মতো পেশাদারি (প্রফেশনাল) পাঠ্যক্রমে পড়ার জন্যই ভর্তুকির আবেদন করা যায়। সম্প্রতি এই প্রকল্পের নিয়মে কিছু বদল আনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে—
• এত দিন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শুধু এআইসিটিই অথবা ইউজিসি-র মতো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকলেই এই ভর্তুকি মিলত।
• এ বার পাঠ্যক্রমটি ওই সব কর্তৃপক্ষ ছাড়াও, ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডাইটেশন কাউন্সিল (ন্যাক) বা ন্যাশনাল বোর্ড অব অ্যাক্রিডাইটেশনের (এনবিএ) মধ্যে যে কোনও একটির সায় থাকতে হবে।
• এ ছাড়া কেন্দ্র দ্বারা অনুদানপ্রাপ্ত সেন্ট্রাল ফান্ডেড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউশন্স (সিএফটিআই) বা জাতীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পড়লেও মিলবে ভর্তুকি।
• উপরের তালিকায় নেই এমন প্রতিষ্ঠান অথবা পাঠ্যক্রমে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রকের সায় থাকতে হবে। যেমন, ডাক্তারিতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া, আইনে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা নার্সিংয়ের ক্ষেত্রে নার্সিং কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সায় লাগবে।
আবেদন কোথায়?
• এমনিতে ভর্তুকি প্রকল্পের ঋণ পেতে ব্যাঙ্ক বা নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা যায়।
• এ ছাড়া ন্যাশনাল মাইনরিটিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফিনান্স কর্পোরেশনের একটি শিক্ষাঋণ প্রকল্প রয়েছে। ওই প্রকল্প কিছু বিশেষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়।
• ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য নির্দিষ্ট। ওই সব শ্রেণিভুক্ত পড়ুয়ারা নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভর্তুকিপ্রাপ্ত শিক্ষাঋণের আবেদন করতে পারেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি হল
• ন্যাশনাল সাফাই কর্মচারিজ ফিনান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
• ন্যাশনাল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ফিনান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
• ন্যাশনাল শিডিউলড কাস্টস ফিনান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
• ন্যাশনাল হ্যান্ডিক্যাপ্ড ফিনান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হদিস
• কেন্দ্রের অনুদানপ্রাপ্ত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের সাইট থেকে পাওয়া যাবে। সেগুলি হল—
• www.mhrd.gov.in/technical-education-1
• www.mhrd.gov.in/institutions-national-importance
• ন্যাক এবং এনবিএ অনুমোদিত কোর্সের হদিশ পাওয়া যাবে ওই দুই কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট থেকে—
• www.naac.gov.in
• www.nbaind.org/accreditation-status.aspx
আয়ের সার্টিফিকেট
• কোথায় সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে, নিয়ম অনুসারে তা ব্যাঙ্কেরই বলে দেওয়ার কথা। তাই আর্জি জানানোর সময়েই ব্যাঙ্কে কথা বলুন।
• পশ্চিমবঙ্গে এ জন্য আর্জি জানানো যায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, এসডিও, বিডিও, কালেক্টরদের কাছে।
• মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে পারিবারিক আয়ের সার্টিফিকেট মঞ্জুরের জন্য কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করতে বলেছে। সেই অনুসারে, কারা ওই সার্টিফিকেট দিতে পারবে, তার তালিকা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় রাজ্য। অনেক সময়ে তা সংশোধনও করা হয়। ফলে ঋণের আবেদনের আগে খেয়াল রাখুন।
ভর্তুকি বাতিল কখন?
• মাঝ পথে পড়া ছেড়ে দিলে ওই ভর্তুকির সুবিধা মিলবে না।
• যাঁদের শিক্ষাগত কারণে পড়া শেষ করার যোগ্যতা না থাকায় বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কার করা হবে, তাঁরাও ওই ভর্তুকি পাবেন না।
• কঠিন অসুখের কারণে পড়া শেষ করতে না পারলে অবশ্য ভর্তুকির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না পড়ুয়া। অসুস্থতা প্রমাণের জন্য তাঁকে উপযুক্ত নথি পেশ করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy