দেশের বাড়িতে ১৮ কাঠা জমি (বাড়ি-সহ) আছে। ১৯৫৭ সালে বাবা আলাদা দাগ নং-সহ সেটি মা, মেজ কাকিমা এবং ছোট কাকিমার নামে রেজিস্ট্রি করেন। এখন আমার ভাইয়েরা সবাই চাকরি সূত্রে কলকাতা এবং হাওড়ায় থাকেন। বাবা-মা, দুই কাকা এবং মেজ কাকিমা মারা গিয়েছেন। ছোট কাকিমা তাঁর ছেলে-বউ নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকেন। সম্প্রতি ওই জমিতে তাঁরা নতুন একটি ঘর তুলেছেন। আমার এক বোন মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখনই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই আমাদের অংশটুকু আলাদা করে নিয়ে বিক্রি করতে চাই। কী করব?
স্বপন চক্রবর্তী, হাওড়া
আমার প্রশ্ন হল, জমিটা কার? কেনই বা ওই তিন জনের নামে সেটি রেজিস্ট্রি হল? তিনটি জমিই কি আপনার বাবার নিজ অর্থে কেনা? আপনি কিন্তু এ কথা লেখেননি যে, কী ধরনের দলিল-মূল্যে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল এবং বর্তমানে জমিগুলির রেকর্ডভুক্ত মালিক কে।
ধরে নিচ্ছি যে, আলাদা দাগ নম্বরের ওই জমি আলাদা ভাবেই রেজিস্ট্রি হয়েছিল তিন জনের নামে। অর্থাৎ মালিক হিসেবে তাঁরাই রেকর্ডেড আছেন। তা হলে দাঁড়াচ্ছে, ওই সম্পত্তিতে আপনার মায়ের ১/৩ অংশ রয়েছে। মৃত্যুর পরে ওই ১/৩ অংশ বর্তাবে মায়ের উত্তরাধিকারীর উপর। অর্থাৎ মায়ের অবিভক্ত ১/৩ অংশের মালিক আপনারা (আপনি ও আপনার ভাইবোন)। আবার আপনার মেজ কাকিমার যদি কোনও সন্তানাদি (বা উত্তরাধিকারী) না-থাকেন, তা হলে তাঁর রেখে যাওয়া ১/৩ অংশের মধ্যেও আপনাদের ভাগ রয়েছে।
উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, নিজেদের অংশ নিরূপণ করে ছোট কাকিমার সঙ্গে আপসে জমি ও বাড়ি ভাগাভাগি করতে পারেন। অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে ‘পার্টিশন ডিড’ বা ‘পার্টিশন স্যুট’ দায়েরের মাধ্যমে জমি ও বাড়ির ভাগ বাটোয়ারা করে নিতে পারেন। ‘পার্টিশন ডিড’ বা ‘বিভাগ-বণ্টন নামা’ রেজিস্ট্রি করতেই হবে। বা আদালতে ‘পার্টিশন স্যুট’ দায়ের করতে হবে। ‘পার্টিশন স্যুট’-এর ক্ষেত্রে অন্য উত্তরাধিকারীদের মামলার ‘পার্টি’ করতে হবে বা ‘পক্ষ’ হিসেবে রাখতে হবে। আপনাদের ‘পক্ষ’র অংশ নির্ধারিত করে ও আপনাদের নামাঙ্কিত অংশ বেচে অর্থ পাবেন।
‘অবিভক্ত’ অংশ বিক্রি করতে আইনত বাধা নেই। ওই জমির মধ্যে আপনার মায়ের ১/৩ অংশ লুকিয়ে আছে। সেটাই বেচতে পারবেন। যদি কোনও ক্রেতা অবিভক্ত অংশ কিনতে চান, তা হলে এগোতে পারেন। তবে আগে ছোট কাকিমাকে নোটিস দিয়ে জানাতে হবে যে, আপনি সম্পত্তিতে আপনাদের অংশ বেচতে ইচ্ছুক। তিনি চাইলে ওই অংশ কিনে নিতে পারেন। তিনি বাজার মূল্যে আপনার অংশ কিনে নিতে আগ্রহী হলে আপনি তাঁকে বিক্রি করবেন নতুবা অন্য ক্রেতাকে তা বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।
(আইনি পরামর্শ জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy