• আমি বিদেশে চাকরি করি। সে জন্য দেশে মায়ের নামে ৬ কাঠা জমি কিনেছিলাম। যার পুরো টাকাই আমি দিয়েছিলাম। এখন আমার টাকার প্রয়োজন। যে কারণে মাকে জমির অর্ধেক বিক্রি করে টাকা জোগাড়ের কথা বলেছিলাম। এমনকী এটাও বলেছিলাম যে, ওই অর্ধেক অংশের দামও তাঁকে দিয়ে দেব। কিন্তু তিনি এখন তা বিক্রি করতে অস্বীকার করছেন। এই অবস্থায় কী করব?
রানা রবার্ট গোমস
জমির মালিকানা আপনার মায়ের নামে। তাই তো? তা-ই যদি হয়, তা হলে এ ক্ষেত্রে কার টাকায় জমি কেনা হয়েছে, সেটা বড় কথা নয়। বরং জমিটি কার নামে কেনা হয়েছে, সেটাই আসল। যে-কোনও কারণেই হোক, জমিটি আপনার মায়ের নামে কেনা হয়েছে এবং বর্তমানে জমিটি মায়ের। এখন যদি তিনি জমি বিক্রি করতে না-চান, তা হলে আপাতদৃষ্টিতে আপনার কিছুই করার থাকছে না।
আবার আপনি আপনার প্রশ্নের শেষে বলেছেন, “আপনি আপনার ‘অংশ (শেয়ার)’ ফেরত চান।” আমি এই প্রশ্নর অংশটুকু বুঝলাম না। প্রথমত পুরো ৬ কাঠা জমিই আপনার মায়ের নামে। তিনি জীবিত। এই মুহূর্তে আপনার মা গত হলে যদি ওই সম্পত্তির আর কোনও অংশীদার না- থাকেন, তা হলে আপনিই পাবেন। অন্য অংশীদার থাকলে অবশ্য তাঁদের মধ্যেও ভাগ হওয়ার কথা।
তবে আপনি চাইলে আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু সেখানে আপনাকে দেখাতে হবে যে, আপনার মায়ের কোনও রোজগার ছিল না। তাই তাঁর পক্ষে তাঁর নিজের রোজগারের টাকায় ৬ কাঠা জমি কেনা সম্ভব নয়। যে-কারণে আপনার টাকায় জমি কেনা হয়েছে। তবে বলতে পারি, সেখানে আপনার লড়াই খুবই কঠিন।
• বাবারা তিন ভাই ও দুই বোন। আমার পিসিরা তাঁদের প্রাপ্য সম্পত্তির অংশ অর্থাত্ তাঁদের প্রত্যেকের ১/৫ অংশ বাবার নামে ‘রেলিংকুইশমেন্ট’ করে দেন। অর্থাত্ তাঁদের অংশ ত্যাগ করেন। ওই ‘রেলিংকুইশমেন্ট’ বা সম্পত্তির ছেড়ে দেওয়া লিখিত ভাবে হলেও কোনও রেজিস্ট্রি করা হয়নি। বাবা তাঁর নিজের ও বোনেদের তাঁর অনুকূলে ছেড়ে দেওয়া সম্পত্তি মিলিয়ে মোট সম্পত্তির ৩/৫ অংশ দাবি করে অন্য ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে অর্থাত্ কাকা জ্যাঠাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মাঝপথেই মামলাটি আপসে মীমাংসা হয় এবং আদালত বাবাকে মোট সম্পত্তির ৩/৫ অংশের মালিক ‘ঘোষণা’ করেন।
৬ বছর আগে বাবা মারা যান। আর বাবার মৃত্যুর পর তাঁর দুই বোন আবার তাঁদের সম্পত্তির ‘ছেড়ে যাওয়া’ অংশের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন। তবে তাঁরা কেউ এখনও কোনও মামলা দায়ের করেননি। আমার প্রশ্ন, পিসিরা কি সম্পত্তির ‘অংশ’ পেতে পারেন?
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়
আপনার পিসিরা তাঁদের এক এক জনের ১/৫ অংশ, আপনার বাবার অনুকূলে ‘রেলিংকুইংশ’ করেছিলেন। অর্থাত্ তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য অংশ আপনার বাবার অনুকূলে ছেড়ে দিয়েছিলেন। যেহেতু ওই ভাবে স্থাবর সম্পত্তির অংশ ‘রেলিংকুইশ’ করা যায় না, বা একজন সম্পত্তির প্রাপক আর একজনকে ওই ভাবে সম্পত্তি দিতে পারেন না, তাই ওই ‘রেলিংকুইশ’ সঠিক পদ্ধতিতেও হয়নি। আপনার বাবা সঠিক ভাবেই আদালতে মামলা করে, তাঁর নিজের প্রাপ্য ১/৫ অংশ ও বোনেদের মোট ২/৫ মিলিয়ে সাকুল্যে ৩/৫ অংশ দাবি করেন। নিজেদের মধ্যে আপসে মীমাংসা হলেও আদালত আপনার বাবার ৩/৫ অংশ পাওয়ার উপরে সিলমোহর দেন। অর্থাত্ আপনার বাবার দাবি মেনেই আদালত তাঁকে ৩/৫ অংশ সম্পত্তি দেন। এবং এটা অবশ্যই যে আপনার পিসিরা আদালতে সম্মতি দিয়েছিলেন বলেই আদালত আপনার বাবাকে তাঁর নিজের ১/৫ অংশ ও দুই পিসির ২/৫ অংশ মিলিয়ে ‘৩/৫’ অংশের উপরে সিলমোহর দেন এবং ওই ৩/৫ অংশের মালিক হন আপনার বাবা। এটাও নিশ্চিত। ওই ৩/৫ অংশের মূল্যমানের উপরে আপনার বাবার স্ট্যাম্প ডিউটিও জমা হয়েছে। অবশ্য এর পরে ওই ৩/৫ অংশ আপনার বাবা নিজের নামে নথিবদ্ধ করেছেন কি না, তা আপনি বলেননি। যদি নামকরণ বা ‘মিউটেশন’ হয়ে থাকে, তা হলে তো খুবই ভাল।
এখন আপনার বাবা মারা গিয়েছেন এবং পিসিরা আবার এসে সম্পত্তি দাবি করছেন। আদালত যদি আপনার বাবার অনুকূলে ওই ৩/৫ অংশ দিয়ে থাকেন, এখন আর পিসিরা পাবেন না। মনে রাখতে হবে ওই পিসিরা আদালতে গিয়ে সেই সম্পত্তিতে তাঁদের অংশ, আপনার বাবার অনুকূলে দান করার কথা জানিয়েছিলেন। আদালত তাঁদের কথাতেই আপনার বাবার অনুকূলে পিসিদের অংশ দিয়েছেন। এখন আর ওই সম্পত্তিতে আপনার পিসিদের কোনও অধিকার নেই।
পরামর্শ: জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy