Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

কাছে থেকেও দূরত্বের ইতিহাস

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০০:১২
Share: Save:

কাছে থেকেও দূরত্বের ইতিহাস

আড়াল থেকে শুনছে বাবা-মায়ের নিভৃত আলাপ, শুনছে তাঁদের অস্ফুট অপূর্ণ অব্যক্ত প্রেমের সম্পর্ক-কথা, কাছে থেকেও দূরত্বের ইতিহাস— আর অনুভব করছে নিজেদেরও গোচর ও অগোচর ব্যবধান, প্রায় সকলেরই চোখ ভরে উঠছে জলে। আত্মশোচনায়। সেই মুহূর্তগুলিই আমার কাছে এ-ছবির সবচেয়ে স্পর্শকাতর মূহূর্ত... সবচেয়ে উদ্‌বোধক।’ মনে হয়েছে শঙ্খ ঘোষের। ‘শঙ্খদা ছবিটা দেখেছেন? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্বরে বিস্ময়। শঙ্খবাবু শুধু দেখেননি, লিখেছেনও, ‘বেলাশেষে’-র জন্যে একটি স্বল্পলেখ। এটি সহ প্রকাশিত হচ্ছে নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এ-ছবির চিত্রনাট্য (মিত্র ও ঘোষ)। এমনটি ঘটে না সচরাচর। ‘এমনটা ঘটতে কখনও দেখিনি, একটা বাংলা ছবি ভিড় করে দেখতে আসছেন অবাঙালি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ!’ সুমন মুখোপাধ্যায়ের অবাক হওয়াকে মিলিয়ে নিতে পারেন মাল্টিপ্লেক্সে ‘বেলাশেষে’ দেখতে বসলেই, এমনকী অবাঙালি পুরুষকণ্ঠকে বলে উঠতেও শুনবেন— ‘ওহ্... সৌমিত্র চ্যাটার্জি... সাচ আ গ্রেট অ্যাক্টর!’ সৌমিত্র অবশ্য মনে করেন, এ চরিত্রে অভিনয় যেন খুরের ওপর দিয়ে হাঁটা। ‘বিশ্বনাথ, অত বয়স অবধি কতকগুলি ভুল প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে থাকে, তার স্ত্রী কতটা ঠিক, বা তাদের দাম্পত্যের কাছে তার চাওয়াটা কতখানি বেঠিক, সেটা বুঝতে বুঝতেই ছবি শেষ হয়ে আসে। এই গোটা পরিক্রমায় মানুষটা অর্ধবুদ্ধি থেকে সম্পূর্ণবুদ্ধিতে পৌঁছয়, তার প্রতি দর্শকের সিমপ্যাথি ধরে রাখা, তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা... কাজটা সহজ নয়।’ কঠিন বলেই সৌমিত্র ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারেননি শিবপ্রসাদ, ‘‘সংলাপ লিখতে গিয়ে কখনও সৌমিত্রদার কোনও স্বগতোক্তি তুলে এনে বিশ্বনাথের মুখে বসিয়ে দিয়েছি। যেমন ‘এই বয়সে একাকীত্বটা না বড় ভয়ঙ্কর, আমার সমসাময়িক বন্ধুরা, তারাও তো এক এক করে চলে যাচ্ছে...’। চিত্রনাট্যের বাইরে সৌমিত্রদা ওঁর অভিনয়ে এমন কিছু সূক্ষ্ম মাত্রা যোগ করতেন, যেগুলি পুরোপুরি ওঁর কন্ট্রিবিউশন।’’ সৌমিত্র মনে করেন, সেটা মোক্ষম স্ত্রীর কাছে ফিরে ক্ষমা চাওয়ার মুহূর্তে, ‘ওই যে বিশ্বনাথ বলে— তুমি স্বাবলম্বী হতে পেরেছ, আমিই পারিনি, আমাকে ক্ষমা করতে পারবে?’ মুক্তির পর একশো দিন সদ্য পেরল ‘বেলাশেষে’। স্থিরচিত্রে ছবিটির একটি দৃশ্য

অবন-অর্ঘ্য

‘তাঁর ঐসব খামখেয়ালি লেখার মধ্যে যে গভীর অর্থ লুকিয়ে আছে এতদিনে সাধারণের চোখে সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে এ ধরণের লেখার সবখানি উপভোগ করতে হলে যে সূক্ষ্ম মন চাই, তাই বা কজনার আছে?’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে লিখেছেন লীলা মজুমদার তাঁর ‘যে দেখতে জানে’ রচনাটিতে। এটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করছে সূত্রধর ৭ অগস্ট, তাতে ‘গোড়ার কথা’-য় প্রসাদরঞ্জন রায় জানিয়েছেন ‘এ প্রবন্ধটি পড়ে আমরা... যা পাই, তা হ’ল অবনীন্দ্রনাথকে নতুন করে জানার ইচ্ছে—।’ অবনীন্দ্রনাথের ১৪৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সূত্রধর-এর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে পুস্তিকার সঙ্গে থাকছে ‘অবন-অর্ঘ্য’— একটি ফোল্ডারে অবনীন্দ্রনাথের বক্তৃতাংশ: ‘শিল্পসুধায় শ্রীরামকৃষ্ণ’, অন্যটিতে তাঁর আত্মপ্রতিকৃতির সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও মুকুলচন্দ্র দে-র (সঙ্গের ছবি) আঁকা প্রতিকৃতি, এবং পরিমল গোস্বামীর তোলা আলোকচিত্র। অবনীন্দ্র রচনাবলিও দে’জ থেকে সুধাংশুশেখর মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় খুবই সুদৃশ্য আকারে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে, প্রথমেই হাতে এসেছে প্রথম খণ্ড (স্মৃৃতিকথা)। ‘ঘরোয়া’, ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’, ‘আপন কথা’ তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে অনেক টুকরো টুকরো রচনা আর চিঠিপত্রে বিধৃত স্মৃতি-কণিকা।

কবিপত্নী

প্রমথ বিশী লিখেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের বিরাট ব্যক্তিত্বের জ্যোতির প্রভাবে এই মহিয়সী মহিলার প্রভা একেবারে আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে। কিন্তু শান্তিনিকেতন স্থাপনে তিনি যেমন সর্বতোভাবে নিজের সাহচর্য, শক্তি, এমনকি অনটনের দিনে অলঙ্কারগুলি পর্যন্ত দিয়া সহায়তা করিয়াছিলেন, সংসারে তাহা একান্ত বিরল।’ জোড়াসাঁকোর জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারী বেণী রায়চৌধুরীর দশ বছরের কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে ২২ বছরের রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় ১৮৮৩-তে। বিয়ের পর নাম হয় মৃণালিনী। মারা যান মাত্র আঠাশ বছরে। কবিপত্নী সম্পর্কে অজানা তথ্য, রবীন্দ্রনাথের লেখা বিয়ের আমন্ত্রণপত্র, বিয়ের খরচ সংক্রান্ত নথি, কবি ও মৃণালিনীর চিঠিপত্র ও ছবি নিয়ে বাণীপুর আর্ট সোসাইটি অ্যান্ড ইনস্টিটিউট অব কালচার গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় শুরু করেছে প্রদর্শনী ‘কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী ও শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়’। চলবে ১৩ অগস্ট পর্যন্ত। সঙ্গে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ।

গানে গানে

রবীন্দ্রসঙ্গীতকে আরও গভীর ভাবে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে ও গানকে প্রাণের সম্পদ করে তুলতেই শ্রাবণী সেন গত বছর গড়ে তুলেছিলেন ‘শ্রাবণী সেন মিউজিক অ্যাকাডেমি’। ১৩ অগস্ট শহরে ছ’টি শাখায় ছড়ানো এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম বার্ষিক অনুষ্ঠানে শিল্পীর একক সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বাকিদের সঙ্গীত। উদ্বোধনে সুমিত্রা সেন, অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে ইন্দ্রাণী সেনের সংবর্ধনাও থাকছে। পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় শ্রাবণী সেন। অন্য দিকে রবীন্দ্রনাথের ৭৪ তম মৃত্যুদিনটি স্মরণের আয়োজন করেছিল প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। কবির জীবন আর কাজ দিয়েই সাজানো হয়েছিল ‘স্মরণে মননে রবীন্দ্রনাথ’। পুরীপ্রিয়া কুন্ডুর রচনা আর উপস্থাপনায় প্রথমেই ছিল মৃত্যু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধি। অনুষ্ঠান-বিবরণ পুস্তিকাকারে প্রকাশ করেছে সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার।

বিস্মৃত

আশীষ বর্মন (১৯২৭-২০০২) নামটি শুনলে সংস্কৃতিমনস্করা বলবেন, ইনিই কি সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী-র সহকারী নির্দেশক? বা শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মৃণাল সেনের ‘পদাতিক’-এর অন্যতম চিত্রনাট্যকার? মৃণাল সেনের আরও দু’টি চলচ্চিত্রের মূল কাহিনিও তাঁরই— আকাশকুসুম, ইন্টারভিউ। ছোটগল্পের কলমটি বড় মনোজ্ঞ ছিল তাঁর। প্রথম সংকলন অনুপমা বেরিয়েছিল ১৯৯৩ সালে। তাঁর মৃত্যুর পরে ২০০৭-এ বেরয় দৈনন্দিন গল্প। তাঁর যে ন’টি উপন্যাস আছে, তা কম পাঠকেরই জানা। জীবনকালে গ্রন্থিত মাত্র দু’টি, রাজেশ্বরী আর গোধূলির আলোছায়া, প্রথমটির প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন যামিনী রায়। বইওয়ালা প্রকাশ করছে আশীষ বর্মনের উপন্যাসসমগ্র রাজেশ্বরী এবং অন্যান্য (পরি: দে’জ)। ১৪ অগস্ট, সন্ধ্যা ৬টায় সিগাল বুক স্টোর-এ এটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

পুরোভাগে

‘সত্য কঠোর, কিন্তু নিষ্ঠুর নয়। কারণ যেখানে সত্য সেখানেই কল্যাণ।... কোনও মহৎ কাজ নয়, শুধুমাত্র কর্তব্যটুকু করেছি। এবং করবও। প্রলোভন, ভ্রূকুটি, আজীবন কারাবাস অথবা শিরশ্ছেদ— কিছুই আমাকে নিবৃত্ত করতে পারবে না।’ ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে স্ত্রী শীলা-কে লেখা চিঠি গৌরকিশোর ঘোষের। সে বছর জুনে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর অক্টোবরে মিসা-য় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। জেলে বসেই তিনি লেখেন ‘প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি’ এবং ‘দাসত্ব নয়, দাসত্ব নয়, স্বাধীনতা!’। পাশাপাশি লিখতে থাকেন চিঠিপত্র, কবিতা, টুকরো চিন্তা— যা সবই সেই অগ্নিগর্ভ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ সব নিয়ে বেরল তাঁর দাসত্ব নয়, স্বাধীনতা (সম্পা: সোহিনী ঘোষ, আনন্দ)। ‘জরুরি অবস্থার সেই ভয়ংকর দিনগুলিতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠন করতে যাঁরা অমিত সাহস দেখিয়েছিলেন গৌরকিশোর অবশ্যই তার পুরোভাগে, এই গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট প্রবন্ধগুলি তার প্রগাঢ় পরিচয় দেবে।’— ভূমিকা-য় লিখেছেন অশোক মিত্র।

সানির জন্য

২০০১ সাল। সপরিবার বিপ্লব ঘোষ গিয়েছিলেন বকখালি বেড়াতে। অকস্মাৎ ওই বালুতট-ভরা মানুষের সামনে উনিশ বছরের ছেলে সানি তলিেয় গেল। সে সময় বিপ্লব ও স্ত্রী তাপসীর অবলম্বন ছিল শুধু ‘গীতবিতান’, আর ভেতরে ভেতরে এক প্রতিজ্ঞা— সানিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নিজেদের ওষুধের ব্যবসা বন্ধ করে দিলেন। সানি-র নামে একটা শিশু বিদ্যালয় তৈরি হল। এক জন ছাত্র নিয়ে শুরু হল স্কুলের কাজ। দশ বছর পেরোল সেই স্মৃতি— ‘সানি পার্ল স্কুল’। নেদারল্যান্ড থেকে পেয়েছেন পুরস্কার ও অর্থ সাহায্য, যদিও এতেই থেমে থাকেননি। প্রবর্তন করেছেন ‘সানি অ্যাওয়ার্ড’। সম্মানিত করেছেন নানা বিশিষ্টজনকে।

দমদমের মেয়ে

কখনও বইপাড়া তন্ন তন্ন করে হাতড়ে খুঁজলেন নানা কাব্যগ্রন্থ, কখনও পৌরাণিক কারুকাজের শাড়ির সন্ধান করলেন, আবার কখনও গঙ্গার ঘাটে মাঝিমাল্লাদের কাছে শুনলেন ভাটিয়ালি। ঘটনাক্রম তোলা রইল লন্ডনের তথ্যচিত্রী রুহুল আমিনের ক্যামেরায়। চন্দ্রা চক্রবর্তী লন্ডন থেকে এসেছিলেন শিকড়ের সন্ধানে। ধ্রুপদী সংগীতের পাশাপাশি বাংলা-সহ নানা ভাষার কবিতা যে সহাবস্থান করতে পারে, সেটাই তাঁর গবেষণা। ‘মেলডি অব লাভ অ্যান্ড শ্যাডো’ নামে একটি আলেখ্যও তৈরি করেছেন। খুঁজে বেড়াচ্ছেন বাইজিদের হারিয়ে যাওয়া ‘ভাঁও’ বা প্রকাশভঙ্গিমার যথার্থ মুদ্রাগুলি। ’৯৬-তে জোহানেসবার্গে কৃষ্ণাঙ্গ কচি-কাঁচাদের রাগসংগীতে তালিম দিয়ে ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা পালন করেছিলেন চন্দ্রা। লন্ডনে আসার পর শুরু হয় তাঁর সংগীত সফর। প্রতিবন্ধী শিশুদের সংগীত চিকিৎসার কাজ করছেন। গান শেখাচ্ছেন লন্ডনের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে। এত কিছুর পর রয়েছে উইম্বলডন মেন লাইব্রেরিতে ৩৫ হাজার গ্রাহক ও পাঠকের ম্যানেজারি (সঙ্গের ছবি)। যথার্থই তথ্যচিত্রের নায়িকা। হবে না কেন? দমদমের মেয়ে যে!

দেশভাগ

কাঁটাতার কিংবা সীমান্তরেখা কেবল অন্ধ আর উগ্র জাতীয়তাবাদেরই জন্ম দেয়, তাতে দেশাত্মবোধ থাকে না, দেশের মাটি আর মানুষের ছোঁয়াটুকুও থাকে না। বরং তা এমন এক হিংস্রতার জন্ম দেয় যা রাষ্ট্রেরই হাত শক্ত করে, আর রাষ্ট্র সে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দ্বেষ বজায় রাখে দু’দেশের প্রতিবেশী অধিবাসীর ভিতরে। এমন সব ভাবনা নিয়েই দীর্ঘকাল ছবি করে চলেছেন সুপ্রিয় সেন। তাঁর ‘পার্টিশান ট্রিলজি’ দেখানো শুরু হয়েছে ম্যাক্সমুলার ভবনে, ‘ওয়ে ব্যাক হোম’-এর পর এ বার দেখানো হবে ‘হোপ ডাইস লাস্ট ইন ওয়ার’ আর ‘ওয়াঘা’ (সঙ্গের ছবি), ১২ ও ১৯ অগস্ট, সন্ধে সাড়ে ৬টায়। ১২-য় ছবির পাশাপাশি সুপ্রিয়র সঙ্গে কথোপকথনে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার শেখর দাশ। উদ্যোগে গ্যেটে ইনস্টিটিউট-এর ডকু ফোরাম। ঢাকার জার্মান কালচারাল সেন্টার-এও দেখানো হবে এই ‘পার্টিশান ট্রিলজি’, ১৬ ও ২৩ অগস্ট। অন্য দিকে কোরিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, নন্দনে, ১০-১২ অগস্ট। উদ্যোগে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস।

শতবর্ষে

যেখানে সংবাদের সম্ভাবনা, সেখানেই হাজির তিনি। দলাই লামার অপেক্ষায় কখনও ভারত সীমান্তে, তো কখনও চিন-ভারত যুদ্ধ উপলক্ষে রণাঙ্গনের অদূরে উপস্থিত অজিতকুমার দাস। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে এমন তৎপর বিদেশ সংবাদদাতা কমই ছিলেন কলকাতায়। ১৯১৫-র ৯ অগস্ট জন্ম চট্টগ্রামে। সেইখানেই পড়াশুনো। পরে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে প্রথম শ্রেিণতে বি এ ও এম এ। শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু। পাশাপাশি নেপাল, তিব্বত, সিকিম ও ভুটান বিশেষজ্ঞ হিসেবে সংবাদ জগতে পরিচিতি। সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ইউনাইটেড প্রেস অব আমেরিকায়, পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের দায়িত্বে। একাধিক বিদেশি সংবাদ সংস্থা ও কাগজের প্রতিনিধিত্ব করায় বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী তিনি। ১৯৭১-এ ডিসেম্বরে ঢাকার রেসকোর্সে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরের জন্য ঢাকা গিয়েছিলেন। ভুটানের রাজা জিগমে দোরজি ওয়াংচুক বন্ধু অজিতকে টিভোলি কোর্টে ফ্ল্যাট উপহার দেন। সেখানে সাংবাদিক বন্ধুদের নিয়ে শুরু করেন ক্যালকাটা কলেজ অব জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওপার বাংলার অনেকের সাময়িক ঠিকানা ছিল এটি। বাংলাদেশের প্রয়াত প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমেদের দায়িত্বের প্রথম তিন দিন গোপনে কেটেছিল এখানে। তেনজিং নোরগেকে ইংরেজিতে আত্মজীবনী লিখতে সাহায্য করেন। ১৯৯৭-এ মারা যান ৮১ বছর বয়সে। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মান দিয়েছেন। এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ। তাঁর জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে ছেলে অসিতকুমার দাস লিখেছেন দেখিলাম ফিরে।

সংকটের চিহ্ন

শেষের কবিতা নিয়ে ছবি করা অসম্ভব চ্যালেঞ্জিং ছিল আমার কাছে।’ বলছিলেন সুমন মুখোপাধ্যায়, সদ্য মুক্তি পেল তাঁর ছবি। ‘একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ অন্য দিকে তেমনই জনপ্রিয় উপন্যাস এটি রবীন্দ্রনাথের। একটা লিরিসিজম আদ্যন্ত বুনে দেওয়া আছে এতে। এমন একটা আখ্যানকে সিনেমার ভিস্যুয়াল আর্কিটেকচার-এ নিয়ে আসাটাই পরিচালক হিসেবে আমাকে ভীষণ ভাবে টানত। উপন্যাসের শিলঙ, লোকেশন হিসেবে দারুণ। ওই রকম কুয়াশা-ঘেরা পাহাড়, কখনও মেঘ, কখনও বৃষ্টি... এসব দিয়েই ফিল্মের নানা রকম মুড তৈরি করেছি। চরিত্রগুলির মনের রহস্যময় আনাচকানাচ আরও যেন বাঙ্ময় হয়ে ফোটে এমন ব্যাকড্রপে।’ পরিচালক-জীবনের দশ বছর পূর্ণ হল সুমনের। ২০০৫-এ প্রথম ছবি ‘হারবার্ট’, তারপর একে একে চতুরঙ্গ, মহানগর@ কলকাতা, কাঙাল মালসাট। ছবিগুলির সুবাদে ইতিমধ্যেই তাঁর প্রাপ্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার সম্মানের স্বীকৃতি। ছবির পাশাপাশি সকলেই তাঁকে এই সময় অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যনির্দেশক হিসেবে চেনে, তাঁর ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ আজও স্মরণীয় হয়ে আছে দর্শকের মনে। শেষের কবিতা-র অভিনয়ে রাহুল বোস, কঙ্কণা সেনশর্মা, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, দেবদূত ঘোষ, তুলিকা বসু প্রমুখ। রোমান্সের আইকন হয়ে ওঠা এ উপন্যাসে নরনারীর সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে যা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ, ‘তার মধ্যে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির সমস্যার কথা তুলে এনেছেন কবি। রোমান্টিক বাতাবরণের মধ্যে এই সামাজিক সংকটের চিহ্নও ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে। সেই চিহ্নটাকে ছবি করার সময় চিনিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি দর্শককে।’ জানালেন সুমন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE