Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

কলকাতার কড়চা

যাত্রার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিছক গবেষণাগত নয়, একেবারেই আত্মিক। জীবিকার প্রয়োজনে আরও অনেক যাত্রাশিল্পীর মতো সৌম্যশঙ্কর বসুর কাকাও যাত্রাজগৎ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৫
Share: Save:

হারানো দিনের কুশীলব

যাত্রার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিছক গবেষণাগত নয়, একেবারেই আত্মিক। জীবিকার প্রয়োজনে আরও অনেক যাত্রাশিল্পীর মতো সৌম্যশঙ্কর বসুর কাকাও যাত্রাজগৎ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। চাকরি নিয়েছিলেন রেলের কারখানায়। বাংলার এই সুপ্রাচীন স্থানিক নাট্যধারা বহু উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে আজ হারিয়ে যেতে যেতেও গ্রামেগঞ্জে এক রকম জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। মূলত চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে টিকিয়ে রাখা সেই জনপ্রিয়তার আড়ালে মুছে গিয়েছেন ওঁর কাকার মতো বহু অভিনেতা, যাঁরা একদা বিস্ময়কর অভিনয়ে আসর কাঁপিয়েছেন।

সৌম্যশঙ্কর তরুণ আলোকচিত্রী, মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র, ঢাকার পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে তাঁর শিক্ষা। তিনি খুঁজছেন সেই শিল্পীদের। ছবি তুলতে চাইছেন তাঁদের। কিন্তু নিছক আজকের অসহায় পরিবেশে নয়। বছরের পর বছর তাঁরা যে সব চরিত্রে অভিনয় করে মাতিয়েছেন, সেই সাজসজ্জায়। যাতে তাঁরা সহজ বোধ করেন, ফিরে যেতে পারেন সেই দিনগুলোয়। সৌম্যশঙ্কর তাঁদের বাড়ি যাচ্ছেন, থাকছেন সেখানে। কথা বলছেন তাঁদের সঙ্গে। এর মধ্যে দিয়ে যে ছবি তোলা হচ্ছে তা এক দিকে বাস্তব, অন্য দিকে তৈরি করা। নিছক বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে আরও ব্যাপক কিছু।

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক শিল্পীর ছবি করেছেন তিনি। তারই মধ্যে গ্যেটে ইনস্টিটিউট/ ম্যাক্সমুলার ভবনে ১২ এপ্রিল থেকে ১০ মে তাঁর ১৫টি ছবি দেখা যাবে ‘জেমস অব যাত্রা’ প্রদর্শনীতে (ছুটির দিন বাদে রোজ ১০-৬টা)। সঙ্গে তাঁর তোলা দুটি ছবি।

কবিতার টানে

কবিতাই তাঁকে বার বার ফিরিয়ে আনে এই শহরে। আজও গুলজার কলকাতায়, তাঁর ভাষান্তরে রবীন্দ্রনাথের কবিতার দু’টি বই বাগওয়ান (দ্য গার্ডেনার) আর নিন্দিয়া চোর (দ্য ক্রিসেন্ট মুন)-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। তখন স্কুলে পড়েন গুলজার, দেশভাগের পর চলে এসেছেন পাকিস্তান থেকে, যেখানে থাকেন, কাছেই একটা লাইব্রেরি থেকে থ্রিলার আর গোয়েন্দা গল্প এনে পড়েন। একদিন হাতে এল রবীন্দ্রনাথের কবিতার উর্দু অনুবাদ, ব্যস তাঁর পড়ার অভ্যেস পালটে গেল, সে-বই তো বটেই, রবীন্দ্রনাথেরও প্রেমে পড়ে গেলেন। স্কুলে থাকতেই বাংলা ভাষার প্রতি প্রবল টান। ‘আমার বম্বের বাড়িতে হেমন্তদা (মুখোপাধ্যায়) তনুদা (তরুণ মজুমদার) আড্ডা দিতে এসেই রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে শুরু করতেন। সঞ্চয়িতা থাকত আমার হাতের কাছে সব সময়। আর মাঝে মাঝেই অভিনেতা অভী ভট্টাচার্যের বাড়ি যেতাম, অফুরান বাংলা বই সেখানে।’ তরুণ মজুমদার যখন ‘পলাতক’-এর হিন্দি ‘রাহাগির’ করছেন, কলকাতায় এলেন গুলজার, গভীর সখ্য হল দু’জনার। ‘তনুদা আমায় জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়তে শেখালেন। আর শেখালেন মাছ খাওয়া।’ লাবণ্যময় উচ্চারণে বাংলায় স্মৃতিচারণ গুলজারের। কত স্মৃতি কলকাতা জড়িয়ে, কবিতা আর গান নিয়ে দেওয়া-নেওয়া সুভাষ মুখোপাধ্যায় আর সলিল চৌধুরীর সঙ্গে, বাংলা-হিন্দি-উর্দুর নিরন্তর বিনিময়। হার্পার পেরেনিয়াল প্রকাশিত রবীন্দ্রকবিতার উল্লেখিত বই দু’টির প্রকাশ-অনুষ্ঠান আজ তাজ বেঙ্গল-এ সন্ধে ৭টায়। প্রধান অতিথি পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। উদ্যোক্তা হার্পার কলিন্স।

অণুগল্প

‘রানওয়ে জুড়ে পড়ে আছে শুধু কেউ-নেই শূন্যতা’, লিখেছিলেন রঞ্জন ঘোষাল, ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র অন্যতম গীতিকার। সঙ্গীত, সাহিত্য, বিজ্ঞানে রসগ্রহণের শুরু বাড়ির আবহেই, শিখেছেন ছবি আঁকাও, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯৭৮ থেকে বেঙ্গালুরুবাসী, বিজ্ঞাপন জগতে যুক্ত তিন দশক। অভিনয়, নাটক নির্দেশনা, ইংরেজি ভাষায় ভারতীয় নাটকের মঞ্চায়ন বিদেশেও। এখন লিখছেন নতুন ধারার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাহিনি, তেমনই একশোটি অণু-পরমাণু গল্প নিয়ে দে’জ থেকে বেরচ্ছে কড়াপাক নরমপাক। ১৫ এপ্রিল সন্ধে ৬টায় রাজারহাটের নজরুল তীর্থে এ-বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। গানবাজনা-গল্পপাঠে অনুপম রায়, রূপম ইসলাম, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, জগন্নাথ ও ঊর্মিমালা বসু, মীর, অমিত চৌধুরী প্রমুখ।

নববর্ষ

ইনি রাতদুপুরে ঘণ্টা বাজিয়ে বা পাড়ায় পাড়ায় পটকা ফাটিয়ে আসেন না, ইনি খুব ভোরে গঙ্গাস্নান করে, মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে, কাউকে বিরক্ত না করে বাড়িতে, এমনকী মননেও ঢোকেন। বাংলা নববর্ষ আজও বাঙালির একান্ত আপন। আর নববর্ষকে বরণ করতে পুরাতনী গান কাঁচা আমের শরবত সঙ্গে ভূরিভোজ তো মাস্ট। এ বার সেটাই হতে চলেছে ১৪ এপ্রিল (সকাল ১০টা থেকে) বি ডি অডিটোরিয়ামে (লবণহ্রদ মঞ্চ) ‘১৬আনা বাঙালীয়ানা’ অনুষ্ঠানে। গান শোনাবেন হৈমন্তী শুক্লা, রূপঙ্কর, রাঘব, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দ্য বসু, দেবজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। মঞ্চস্থ হবে জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায়ের রচনা ও পরিচালনায় নাটক ‘প্রেম কুঞ্জ’। আর থাকবে পাত পেড়ে খাওয়া। আয়োজনে উইজার্ড ইভেন্টস ইন্ক, পরিবেশনায় কল্পায়ু, সহযোগিতায় ঋদ্ধি আ স্টেপ ফর মিউজিক।

রসিক সভায়

জহর দাশগুপ্ত ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সদস্য ছিলেন, পরে উৎপল দত্তের লিটল থিয়েটার গ্রুপে যোগ দেন। তাঁর লেখা বহু বেতার নাটক প্রচারিত হয় আকাশবাণী কলকাতা ও অন্যান্য কেন্দ্র থেকে। ওঁর ১৯৭৪ সালের নাটক ‘গোপাল অতি সুবোধ বালক’ খুব পছন্দ হয়েছিল অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের, ১৯৮১-তে আকাশবাণী কলকাতার ‘বেতার নাট্য উৎসব’-এ অজিতেশবাবুর একক অভিনয়ে সেটি প্রথম প্রচারিত হয়। কথা হয়েছিল মঞ্চায়নের ব্যাপারেও, অজিতেশবাবুর অকালপ্রয়াণে আর হয়নি। বহু দিনের চেষ্টায় সে অনুমতি পেয়েছে উত্তরপাড়া ব্রাত্যজন। ব্রাত্য বসুর প্রেরণায়, পরিচালনা করেছেন কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজী, গোপালের চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী। এ নাটক মঞ্চে হলে ‘রসিক সভায় সম্বর্ধিত হবে’, আশা ছিল অজিতেশবাবুর। পয়লা বৈশাখ সন্ধেয় মিনার্ভা-য় ‘গোপাল অতি সুবোধ বালক’-এর প্রথম অভিনয়।

ভোটের বই

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন মোট ৩৬৮ জন। তাঁদের মধ্যে ২৮১ জনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল! তবে, সবচেয়ে বেশি জন জামানত খুইয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে— ৩১৩ জন। স্বাধীনতার পর থেকে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের যাবতীয় পরিসংখ্যান দুই মলাটে ধরলেন রাতুল দত্ত। বেঙ্গল ভোট ইন লোকসভা ইলেকশন (দে’জ) কাজের বই, নিঃসন্দেহে। কিন্তু, ২০১৬ সালে প্রকাশিত বইয়ের তথ্য কেন ২০০৯ সালেই থেমে গেল, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরিসংখ্যান এই বইয়ে এল না?

সর্বজ্ঞতার বিরুদ্ধে

বিমলকৃষ্ণ মতিলাল আমাদের শিখিয়েছিলেন, এক জন সংশয়বাদী অতীন্দ্রিয়বাদী হতে পারেন, এক জন নাস্তিক হতে পারেন গভীর ভাবে ধার্মিক।— বলছেন অরিন্দম চক্রবর্তী। দর্শনচর্চায়, বিশেষত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের যোগসূত্র উন্মোচনের তাত্ত্বিক গবেষণায় বিশিষ্ট পূর্বসূরি বিমলকৃষ্ণ সম্পর্কে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিন্দমবাবুর প্রগাঢ় শ্রদ্ধা। এ বার এশিয়াটিক সোসাইটি এবং অনুষ্টুপ পত্রিকা আয়োজিত বিমলকৃষ্ণ মতিলাল স্মারক বক্তৃতা দিচ্ছেন তিনি। বিষয়— সর্বজ্ঞতার বিরুদ্ধে: হিন্দু ও বৌদ্ধ নিরীশ্বরবাদের একটি সমকালীন বিশ্লেষণ। সমকালীন কথাটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ভারতীয় রাষ্ট্রের লাগাম এই মুহূর্তে যাঁদের হাতে, তাঁরা অরিন্দমবাবুর ভাষায়, ‘ঈশ্বরকে-ভয়-পাওয়া, যোগ-রফতানি-করা একটা হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ এ দেশের শিক্ষাদীক্ষার ওপর আরোপ করতে অতিমাত্রায় তৎপর। তাঁদের চিত্তশুদ্ধির আশা সুদূরপরাহত, কিন্তু দেশের মানুষকে মনে করানো দরকার, আমাদের হিন্দু ও বৌদ্ধ দর্শনে বিভিন্ন নিরীশ্বরবাদী ধারা ছিল, যে ধারা যুক্তির পথ অনুসরণ করত, প্রশ্ন তুলত। যে প্রশ্ন তুলবে তাকেই পাকিস্তানে চলে যেতে হবে— এই হুকুমনামার বিরুদ্ধে অরিন্দমবাবুর প্রাজ্ঞ কণ্ঠস্বর শুনতে পাবে কলকাতা শহর, এশিয়াটিক সোসাইটির বিদ্যাসাগর হল-এ, ১৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটেয়। প্রধান অতিথি প্রবাল সেন। প্রকাশ পাবে বিমলকৃষ্ণের লেখা আমি ও আমার মন বইটি ও অনুষ্টুপ সুবর্ণজয়ন্তী সংখ্যা বাঙালির ইউরোপ চর্চা।

ফিরে পাওয়া

সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় তার নামলিপি নজরে পড়েনি এমন বোধহয় কেউ নেই। আবার জবাকুসুম কি বোরোলীনের বিজ্ঞাপনে, বিখ্যাত সাহিত্যিকদের লেখার অলংকরণে সুধীর মৈত্রের আশ্চর্য রেখার টান অনেকেরই মনে গেঁথে আছে। রেবতীভূষণ, শৈল চক্রবর্তী, দেবব্রত ঘোষ স্বনামখ্যাত। কিন্তু এ নিয়ে আলোচনা কোথায়? কমিক্স ও গ্রাফিক্স (সম্পা: বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়) পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যা এঁদের ফিরিয়ে দিল সযত্নে। সঙ্গে দেশিবিদেশি তিরিশটি কমিক্‌স ও অনুবাদ কমিক্‌স। অ্যাসটেরিক্স, রেমন্ড শেপার্ড, বাহাদুর, অমর চিত্র কথা, চাঁদমামা, কার্টুনিস্ট ফাডনিসকে নিয়ে যেমন আলোচনা আছে, তেমনই রয়েছে তরুণ প্রতিভাদের কথা ও কাজ। ১৬ এপ্রিল ৫টায় জীবনানন্দ সভাঘরে এটি প্রকাশ করবেন অনুপম রায়, বিশেষ অতিথি সন্দীপ রায়। অহর্নিশ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রকাশ পাবে বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত বিষয় কার্টুন পত্রিকার ‘বিনয় বসু স্মরণ সংখ্যা’ও।

ঐতিহ্য বাঁচাতে

l ঐতিহ্য বাঁচাতে আমরা এখন খুবই সরব। কিন্তু এর মধ্যে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কী ভাবে বাঁচানো হবে, আর বাঁচানোর পরেই বা কী করা হবে সেই সব প্রসঙ্গ। সমাজ ও অর্থনীতির দায় মেনে ঐতিহ্য রক্ষার পথ নিয়ে ১৫-১৬ এপ্রিল আলোচনা আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে, আয়োজনে ভারতীয় সংগ্রহশালা ও আইকমস ইন্ডিয়ার সঙ্গে ইনটাক। ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারীরা যাতে বুঝতে পারেন তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, ঐতিহ্যও অটুট থাকবে, এমনকী স্থানীয় মানুষ খুঁজে পাবেন জীবিকার উপায়, আগ্রহী হবেন ঐতিহ্য রক্ষায়, এমনটাই চাইছেন উদ্যোক্তারা। অন্য দিকে ১৫ এপ্রিল ৩টেয় একই প্রেক্ষাগৃহের এক তলায় বাংলার এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্যে আলো ফেলবেন নমন আহুজা। তাঁর মতে, চন্দ্রকেতুগড়ের টেরাকোটা ভাস্কর্য আসলে বৌদ্ধধর্মের অন্য এক রূপের প্রকাশ। সভাপতি গৌতম সেনগুপ্ত।

চা-সংস্কৃতি

পর্তুগিজ বণিকরা চিনে চায়ের স্বাদ পায়, তবে ডাচরা শুরু করে তার রফতানি। সতেরো শতকের মাঝামাঝি লন্ডনে চা খাওয়া হচ্ছে, আঠেরো শতকে তা জন্ম দিচ্ছে রীতিমতো চা-সংস্কৃতির। এক দিকে তার উদ্ভিদ হিসাবে বৈশিষ্ট্য, অন্য দিকে চা-পানের ফ্যাশন, পোর্সিলেনের টি পট, কাপ-প্লেট থেকে শুরু করে বিবিধ সরঞ্জামের শৈল্পিক বিবর্তন, চায়ের কাপে তুফান, কত কী। চিনা চা হয়ে উঠল ব্রিটিশ পানীয়। চায়ের বাজারে চিনের একচেটিয়া আধিপত্য কমাতে ভারতে চা উৎপাদনের চেষ্টা শুরু হল আঠেরো শতকেই। উপনিবেশের মাটিতে শেকড় নামালো চা-সংস্কৃতি। এই সব নিয়েই আজ সাড়ে ৫টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল-এ বলবেন শিল্প-ইতিহাসবিদ রমিতা রায়। সঙ্গের ছবি জে সি লেটসম-এর দ্য ন্যাচারাল হিস্টরি অব দ্য টি-ট্রি (১৭৭১)।

চলচ্চিত্রে

মীনা, ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী মেয়েটি মারা যাওয়ার সময় বয়স ছিল মাত্র পনেরো, পুলিশ তাকে নকশাল সন্দেহে মেরে ফেলে। এ নিয়ে যেমন একটি ছবি; তেমন আর-একটি ছত্তীসগঢ় ওড়িশা ঝাড়খণ্ড মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ অন্ধ্রপ্রদেশ তেলঙ্গনা মুম্বইয়ের বস্তিবাসী মানুষজনের উপর নেমে-আসা পুলিশি অত্যাচার-উচ্ছেদ নিয়ে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নিয়ে এ রকমই তিনটি ছবি সন্ধে ৬টা থেকে দেখানো হবে মুক্তাঙ্গনে (রাসবিহারী মোড়) ১৬ এপ্রিল। বিষয়টি নিয়ে বলবেনও সমাজকর্মী বেলা ভাটিয়া ও সাংবাদিক শুভজিৎ বাগচি, যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে চলেছেন অঞ্চলগুলিতে। আয়োজক পিপলস ফিল্ম কালেকটিভ। অন্য দিকে ক্যালকাটা সিনে ইনস্টিটিউটের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল। ১৯৬৫-র ডিসেম্বরে বারীন সাহার ‘তেরো নদীর পারে’ দেখিয়ে পথ-চলা শুরু। বার্গম্যান থেকে সত্যজিৎ কেউই বাদ যাননি প্রদর্শনে। প্রকাশিত হত প্রলয় শূরের সম্পাদনায় ‘মুভি মনতাজ’ আর নির্মাল্য বসুর সম্পাদনায় ‘চলচ্চিন্তা’। ১২-১৭ এপ্রিল আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হলে ছবির উৎসব: মাস্টার্স টু মডার্ন সিনেমা।

বহুমুখী

রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, চণ্ডী লাহিড়ী, সুধীর মৈত্রের কাছে তিনি অনুপ্রাণিত। ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্পশিক্ষা ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে। ষাট দশকের শেষ দিকে তিনি গোর্কির ‘মা’ অবলম্বনে নাটক মঞ্চস্থ করে সাড়া ফেলেন। জন্ম ১৯৪২ সালে যশোরে। শৈশব কেটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণ গোবিন্দপুরে। বাবা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি অফিসার, মা প্রতিভাদেবী গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সক্রিয় কর্মী। বাল্যকালে মাতৃহারা হয়ে দাদা-বৌদির যত্নে বড় হওয়া ইন্দ্রনাথ টানা চল্লিশ বছর পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক-শিল্পী সঙ্ঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বিচক্ষণ ভদ্র ব্যবহারে সর্বস্তরের লেখক শিল্পীরা জেলায় জেলায় এই সংগঠনে যুক্ত হতে উন্মুখ থাকতেন। যুব উৎসব বিশ্ব সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি দু’বার রাশিয়া যান। বিভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। উৎসাহী ছিলেন ভিন্ন ভাষার সাহিত্য অনুবাদে। লোক ও আধুনিক শিল্পের মিশ্রণে রঙের ঝোড়ো ব্যবহারে তিনি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তাঁর আঁকা ছবির নানা একক প্রদর্শনী হয়েছে। প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। গ্রাফিক আর্টস-এও পারদর্শী ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ, পরশুরামের গল্প অবলম্বনে বৈরাগ্য, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপনিবেশ উপন্যাসের নাট্যরূপের পাশাপাশি মৌলিক নাটক লিখেছেন। গণনাট্য ও গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনে থাকতেন প্রথম সারিতে। তিয়াত্তর বছরের বহুমুখী সৃষ্টিশীল মানুষটি হঠাৎই চলে গেলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE