Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মান্নার পছন্দের নানা রান্না

ভারতীয় সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তী গায়ক মান্না দে ছিলেন খাদ্যরসিক। খেতে এবং খাওয়াতে ভীষণ ভালবাসতেন। মান্না দের স্ত্রী সুলোচনা দেও রন্ধনশিল্পে অত্যন্ত পটিয়সী ছিলেন। দক্ষিণ ভারতীয়, উত্তর ভারতীয়, মোগলাই, চিনে, কন্টিনেন্টাল থেকে বিশুদ্ধ বাঙালি সব রকমের রান্নাতেই তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। মান্না দে সুলোচনার হাতের তৈরি রকমারি রান্না খুব তৃপ্তি সহকারে খেতেন। মান্না দে নিজেও খুব ভাল রান্না করতেন।

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

ভারতীয় সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তী গায়ক মান্না দে ছিলেন খাদ্যরসিক। খেতে এবং খাওয়াতে ভীষণ ভালবাসতেন। মান্না দের স্ত্রী সুলোচনা দেও রন্ধনশিল্পে অত্যন্ত পটিয়সী ছিলেন। দক্ষিণ ভারতীয়, উত্তর ভারতীয়, মোগলাই, চিনে, কন্টিনেন্টাল থেকে বিশুদ্ধ বাঙালি সব রকমের রান্নাতেই তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। মান্না দে সুলোচনার হাতের তৈরি রকমারি রান্না খুব তৃপ্তি সহকারে খেতেন। মান্না দে নিজেও খুব ভাল রান্না করতেন। মাঝে মধ্যে দীর্ঘ ব্যস্ততার মাঝে একটু অবকাশ পেলেই বাড়িতে হাতা খুন্তি হাতে ভজহরি মান্না রূপে অবতীর্ণ হয়ে রকমারি রান্না শুরু করতেন। স্ত্রী দুই কন্যা তো বটেই, এ ছাড়া বন্ধু-বান্ধব চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগতের বহু বিখ্যাত মানুষজনকেও তিনি রান্না করে যত্ন করে খাইয়ে তৃপ্ত হতেন। একই ভাবে মান্না দে মুম্বই ও কলকাতার বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁর বিখ্যাত পদের রসাস্বাদন করতেন তারিয়ে তারিয়ে। কলকাতায় এলে বহু বিখ্যাত হোটেল রেস্তোরাঁতেই খেতে যেতেন বা খাবার আনাতেন। তবে চাঁদনি মেট্রো স্টেশনের কাছে দক্ষিণ ভারতীয় রেস্তোরাঁয় গিয়ে ধোসা, ইডলি, উত্তপম, পকোড়া, দইবড়া খেতেন। এবং কলকাতার পরিবারের লোকজনদের জন্য পার্সেল নিয়ে আসতেন। গিরিশপার্কের কাছে নিরঞ্জন আগারের ডিমের ডেভিল, মাটন কোপ্তা, ব্রেস্ট কাটলেট আনিয়ে খেতেন। আর ভজহরি মান্নার বাঙালি খাবারের প্রতি দুর্বলতা ছিল। কখনও ভজহরিতে গিয়ে বা হোম ডেলিভেরি আনিয়ে জমিয়ে ইলিশ, চিংড়ি, পাবদা থেকে শুক্তো সবই খেতেন। আনন্দ ও নিরঞ্জন আগারের গুটিকয়েক রেসিপি জানালাম। মুম্বইয়ে বসে মান্না দের ভক্তরা যাতে তাদের প্রিয় শিল্পীর প্রিয় খাবারগুলো বাড়িতে তৈরি করে খেয়ে ও খাইয়ে তৃপ্ত হতে পারেন।

পকোড়া

উপকরণ: ছোলার বেসন ২০০ গ্রাম, চালের গুঁড়ো ৩ টেবিল চামচ, জোয়ান ১ চিমটে, আদাকুচি হাফ চা-চামচ, ২টো কাঁচালঙ্কাকুচি, ১টা মাঝারি পেঁয়াজকুচি, কারিপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ, হিংয়ের গুঁড়ো ১ চিমটে, নুন আন্দাজ মতো, ভাঙা কাজু ২ টেবিল চামচ, জল আন্দাজ মতো। ভাজবার জন্য রিফাইন্ড অয়েল প্রয়োজন মতো।

প্রণালী: একটি পাত্রে ছোলার বেসন, চালের গুঁড়ো, জোয়ান, আদাকুচি, কাঁচালঙ্কা কুচি, পেয়াজ কুচি, কারিপাতা ও ধনেপাতা কুচি, নুন, হিং, ভাঙা কাজু ও জল নিয়ে হাতের সাহায্যে ভাল করে মেখে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি কের নিন। কড়া আঁচে বসিয়ে রিফাইন্ড অয়েল গরম করে নিন। এ বার ঘন মিশ্রণের গোল গোল পকোড়া তৈরি করে ধোয়া উঠবার আগে তেলে ছেড়ে হালকা বাদামি রং করে ভেজে নিন। হয়ে গেলে কড়া থেকে তুলে তেল ঝরিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন চাটনির সাহায্যে।

চাটনি: ১টা নারকোল কোরা, ১ কাপ কড়ায় শেঁকা ছোলার ডাল, ৫০ গ্রাম আদা, ৬টা কাঁচালঙ্কা, ১ কাপ জল, আন্দাজ মতো নুন, ২ চামচ কালো সর্ষে, আন্দাজে সরষের তেল।

প্রণালী: মিক্সির মধ্যে নারকোল কোরা, শেঁকা ছোলার ডাল, কাঁচা লঙ্কা, জল, নুন দিয়ে ঘন মিশ্রণ করে তার মধ্যে কালো সরষে ফোড়ন ছড়িয়ে দিন। চাটনি তৈরি। এই চাটনি সহযোগে পকোড়া পরিবেশন করুন।

দইবড়া

উপকরণ: ২০০ গ্রাম বিউলির ডাল জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে ঘণ্টা তিনেক জলে ভিজিয়ে রাখুন। তিন ঘণ্টা বাদে শিলে বা মিক্সিতে ডালটা বেটে নিন। বাটা বিউলি ডাল একটা পাত্রে রাখুন। এ বার ১ চা চামচ কাঁচালঙ্কা কুচি, ১ চা চামচ আদা কুচি, ১ চা চামচ ধনেপাতা কুচি, নুন।

প্রণালী: বিউলি ডালবাটার মধ্যে কাঁচালঙ্কা কুচি, আদা কুচি, ধনেপাতা কুচি ও নুন দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। কড়া আঁচে বসিয়ে আন্দাজ মতো রিফাইন্ড অয়েল গরম করে নিন। গরম হলে ডালের মিশ্রণের গোল গোল শেপে বড়া তৈরি করে ডুবো তেলে হালকা বাদামি রং করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে কড়া থেকে তুলে তেল ঝড়িয়ে নিন। এ বার একটা জলভর্তি পাত্রে ভাজা বড়াগুলো মিনিট পাঁচেক ভিজিয়ে রাখুন। পাঁচ মিনিট বাদে হাতের সাহায্যে বড়াগুলো তুলে চিপে নিয়ে আলাদা পাত্রে রাখুন।

অন্য উপকরণ: ২০০ টক দই, ১ টেবিল চামচ চিনি, ১ চামচ কাঁচালঙ্কা কুচি, ২ চা চামচ ধনেপাতাকুচি, হাফ চা চামচ আদাকুচি, আন্দাজ মতো নুন, ধনের গুঁড়ো হাফ চা চামচ।

প্রণালী: একটি পাত্রে টক দই, চিনি, কাঁচালঙ্কা কুচি, অর্ধেক ধনেপাতা কুচি, আদা কুচি, নুন নিয়ে হাতের সাহায্যে মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিন বা মিক্সিতে দিয়ে সব মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈর করে নিন। এ বার একটি পাত্রে ভেজা বড়াগুলো রেখে উপর থেকে দইয়ের মিশ্রণটা ছড়িয়ে দিন। উপর থেকে বাকি অর্ধেক ধনেপাতা কুচি ও ধনের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।

মাটন কোপ্তা

একটা পাত্রে ১ কেজি খুব মিহি করা মাটনের কিমা নিয়ে তার মধ্যে ৫০ গ্রাম আদা বাটা, ১০০ গ্রাম কাঁচালঙ্কা বাটা, ১টা নারকোল কোরা, ২ চা চামচ চিনি, আন্দাজ মতো নুন, ১২৫ মিলি টমেটো সস দিয়ে হাতের সাহায্যে ভাল করে মেখে মিশিয়ে নিন। এর পর ওর মধ্যে ৪টে দেশি মুরগির ডিমের গোলা, ৪ বাটি (মাঝারি সাইজের) বিস্কুটের গুঁড়ো দিয়ে হাতের সাহায্যে খুব ভাল করে মেখে একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এ বার এই মিশ্রণ থেকে সমান মাপের গোলাকার বল (রুটির লেচির মতো) তৈরি করে নিন। একটি পাত্রে ২০০ গ্রাম ময়দা, ২টো দেশি হাসের ডিমের গোলা, আন্দাজ মতো জল নিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে একটি মিশ্রণ বা গোলা তৈরি করে নিন। কিমার গোলাকার বল বা লেচিগুলো গোলায় চুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে (ক্রাম্ব করে) নিন। হাতের সাহায্যে চেপে কোপ্তাগুলো চ্যাপ্টা করে নিন। কাঁচা ক্রাম্ব করা কোপ্তাগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে ২ ঘণ্টা রেখে দিন। ২ ঘণ্টা বাদে কড়া আঁচে বসিয়ে আন্দাজ মতো রিফাইন্ড অয়েল গরম করে ডুবো তেলে কোপ্তাগুলো ছেড়ে হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে তুলে তেল ঝরিয়ে পরিবেশন করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE