Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মৎস্যপুরাণ

বসন্ত যাই-যাই করছে আগামী গ্রীষ্মের দহন বয়ে এনে। আগুন জ্বলছে রোদ্দুরে এখন থেকেই। মুম্বই ক্রোড়পত্রে আগামী বিষয় চৈত্রপবন নিয়ে লিখতে গিয়ে, প্রসঙ্গ পালটে মাছের কথা মনে পড়ল। বাঙালি জীবনে মাছ তো আর নিছক খাদ্যমাত্র নয়। মাছ হল পূর্ণতা, শুচিতা, ব্রত, পার্বণ, স্ত্রী-আচার, সৌভাগ্য ও মঙ্গলের প্রতীক। বাঙালির ঘরে লক্ষ্মী তথা মাঙ্গলিক দ্যোতনা হল মৎস্য। এমনকী বাঙালি ঘরে বিবাহোৎসবের সঙ্গেও মাছের এক নিগূঢ় সম্পর্ক। আমাদের বিয়ের অধিবাস বা গায়ে হলুদের তত্ত্বেও পাত্রের বাড়ি থেকে আসে বড় একখানি রুইমাছ। তাতে আবার এয়োতি চিহ্ন সিঁদুর ছোঁয়ানো। অনেক ক্ষেত্রে নোলক পরানোও থাকে। অন্য দিকে নতুন বধূ সংসারে এলে প্রথমে দুধে-আলতায় পা ডুবিয়ে, নতুন বৌয়ের হাতে একখানি জ্যান্ত মাছ ধরিয়ে দেওয়ার রীতি আছে। এতে নাকি সদ্যবিবাহিতার সঙ্গে পরিবারের বাঁধন দৃঢ় হয়। বিবাহ-উৎসবে শাঁখা-সিঁদুর-মাছ চিরকল্যাণের বার্তাবহ।এই মৎস্যপুরাণ নিয়ে লেখা শুরু করতেই দেখি, আমার কালি-কলম আপাত জং-ধরা খোলস ভেঙে দিব্য তৎপর। ‘মৎস্য ধরিবে খাইবে সুখে’—সাবেকি এই প্রবচনটির অবুঝ কাতরতায় থাকে বাঙালির মন।

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

এই মৎস্যপুরাণ নিয়ে লেখা শুরু করতেই দেখি, আমার কালি-কলম আপাত জং-ধরা খোলস ভেঙে দিব্য তৎপর। ‘মৎস্য ধরিবে খাইবে সুখে’—সাবেকি এই প্রবচনটির অবুঝ কাতরতায় থাকে বাঙালির মন। সক্কালবেলা থলি হাতে মাছের বাজারে এক চক্কর ঢুঁ মারা বাঙালির সহজাত অভ্যেস। বাজারে অঢেল আনাজপাতি সত্ত্বেও বাঙালি প্রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ঢুঁ মারবে মাছের বাজারে। সেখানে থরে থরে সাজানো কাতলা, ভেটকি, রুই, পাবদা, পারশে, তেলাপিয়া, চিংড়ি, মৌরলা, চারাপোনা ইত্যাদি। ওই যে কথায় বলে না ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’! অভ্যস্ত এক টুকরো মাছের রসদ, আহারের পাতে বাঙালি রসনায় যেন অনেকখানি আয়াস। ভাতের পাতে মাছের একটু জোগান না হলে মধ্যাহ্নভোজনটাই থাকে অসম্পূর্ণ।

খাদ্যরসিক বাঙালির কব্জি ডোবানো মুখরোচক ব্যঞ্জনে তাই অনায়াসে স্থান নিয়ে নিয়েছে—তেলকই, দইমাছ, পাবদা-সরষে, চিংডির মালাইকারি, তোপসে ফ্রাই, ভাপা ইলিশ, ভেটকি পাতুড়ি, পারশে ঝাল, ডাবচিংড়ি, চিতল মুইঠ্যা, আরও কত কী! আছে জিভে জল আনা নানা পুরাতনী রান্নাও। নিরামিষ ঘরোয়া রান্নাও মাছের মধুর স্পর্শে কী অসাধারণ হয়ে ওঠে, লাউ-চিংড়ি কিংবা মোচা-চিংড়ি, মুড়িঘন্ট, ছ্যাঁচড়া, মাছের ডিমের বড়া, মাছের টক, মাছের মৌলি, কাতলা মাছের কাঁটাচচ্চড়ি...এমনতরো কত কী। উদাহরণ লম্বা হয়ে যাবে। পেটের সাধারণ সমস্যায় সিঙি মাছের বা জিওল মাছের পাতলা ঝোল। যদিও ডায়েরিয়ার পথ্য হিসেবে সিঙি বা মাগুর মাছের আলাদা গুরুত্ব নেই চিকিৎসাশাস্ত্রে। পেটের সমস্যায় তবু প্রাচীন কাল থেকে পথ্য হিসেবে এই পন্থাই চলে আসছে।

কিন্তু রোজ ভাতের পাতে একই ধরনের মাছ কি আর চলে! রকমফের চাই। নিদেন পক্ষে প্রাত্যহিক গড়পড়তা ভাতের পাতে কালো জিরে-কাঁচালংকা ফোড়ন দিয়ে ছোট মাছ কিংবা টমাটো কুচি-জিরেবাটা দিয়ে কাটাপোনার ঝোল— বাঙালি তাতেই দেদার খুশি। আর মশলায় সেজে ডুব-তেলে রান্না করে লোভনীয় মাছের পদটি যখন পাতে হাজির হয়! আহা! তখন কেবল বাঙাল বা ঘটি, ইলিশ বা চিংড়ি, ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান—এই সব বোলচাল ছেড়ে রান্নার পদটাই প্রধান উপজীব্য হয়ে ওঠে। চিংড়িই বলো বা ইলিশ, স্বাদে, মহিমায়, চেহারায়, বিভঙ্গে একে অপরকে টেক্কা দেবে। ওই যেমন চিংড়ির লালচে আভায়, বনেদিয়ানায়, রান্নার কুশলতায় কেমন এক ঠমক আছে। মহার্ঘ হলেও এর আভিজাত্য ভ্রমণরসিক মহলে ব্যাপক। আবার ইলিশ, যাকে সাহিত্যিকরা আদর করে বলেন ‘জলের রুপোলি শস্য’—তার ঝকমকে রুপোলি চমক, সুঠাম গড়ন, সাবেকিয়ানা, দেখনসই জৌলুস মন কেড়ে নেয়। অনেক বাঙালি পরিবারে এমন রীতিও আছে যে দুর্গাপুজোর পর দশমী হয়ে গেলে ইলিশমাছ খাওয়া বন্ধ। আবার সরস্বতী পুজোর পর থেকে ইলিশ খাওয়া চলতে পারে। পূর্ববঙ্গে সরস্বতীপুজোয় জোড়া ইলিশের ভূমিকা আছে। আদতে ইলিশ-চিংড়ি ভালবাসেন দু’পারের মানুষই। বাঙাল-ঘটি তর্ক নামমাত্র।

বলা হয় পুববাংলার রান্নায় নাকি অন্য এক প্রাণজুড়োনো স্বাদ। নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। নদী-খাল-বিল-পুকুরের জলে হরেক প্রকার মাছের জোগান। মাছ রান্না ও খাওয়ার রেওয়াজও তাই বেশি। দেশভেদে বা জেলাভেদে রান্নার স্বাদবৈচিত্রও নানা রকম। ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাবনা, সিলেট, বিক্রমপুরের রান্নার পদ্ধতি অনন্ত। স্বাদ, বৈচিত্র এবং উপস্থাপনার গুণে রসিক রসনায় অন্য ব্যঞ্জনা আনে। কোথাও একই মাছের কাঁচালংকার ফোড়ন ও কালোজিরে দিয়ে সোজাসাপটা রান্নায় অসাধারণ স্বাদ। কোথাও আবার সেই একই মাছে আদা-রসুন-পেঁয়াজ-শুকনো লংকাবাটা দেওয়া ঝাঁঝালো রান্না। পূর্ববঙ্গের শুঁটকি মাছ তো, যাকে বলে সিগনেচার ডিশ। পূর্ববঙ্গের লইট্যা মাছ, সিলেটি কই, রূপচাঁদ মাছের গা-মাখা ঝাল, ফলুই মাছের কোপ্তা, ইলিশমাছ ভাতে, খয়রা মাছের ভুনা—এ সবই রান্নার গুণে নাকি তাক লাগিয়ে দেয়।

পশ্চিমবাংলার বাঙালিদেরও নিত্য অভ্যেস সকালে উঠেই ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাওয়া। তবে ইদানীং যেন মাছের কিঞ্চিৎ অভাব, মৎস্যভোজী বাঙালির সেই চেনা অভ্যেসকে একটু হলেও বদলে দিচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খালবিল পুকুরেও জলে টান পড়েছে। মাছচাষও তুলনামূলক কম। ফলে মাছের উৎপাদনেও ক্রমশ ভাঁটা দেখা দিচ্ছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গ মাছের মীন ও ডিমপোনা উৎপাদনে প্রথম স্থানে। কিন্তু হলে কী হবে! এই ডিমপোনার বেশিটাই পাড়ি দেয় অন্য রাজ্যে। ভিন রাজ্যের লালনপালনে সেই মাছ যখন দৈর্ঘে-প্রস্থে পেল্লাই আকারের হয়, তখন সেই মাছই আবার কিনে নেন এ রাজ্যের মাছ-ব্যবসায়ীরা। ফলে যেটা হয়, বাংলার মাছই ডিমপোনা অবস্থায় ভিনরাজ্যে চলে গিয়ে শৈশব কাটিয়ে বড় হয়ে চড়া দামে বিক্রি হয় রাজ্যের মাছব্যবসায়ীদের কাছে। সেই মাছই আবার আমরা বাজার থেকে কিনি আরও বেশি দামে। মধ্যবিত্তের ভাতের পাতে মাছ খাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। মাছের আড়তদাররা হয়তো যুক্তি সাজাবেন, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে রুই-কাতলা ইত্যাদি মাছ নিয়ে যে পরিমাণ ট্রাকের এ রাজ্যে ঢোকার কথা, তা ক্রমশ কমছে। তবে মাছের বাজারে চাহিদা তো কমছেই না, বরং বাড়ছে। বাজারে জোগান ও চাহিদার ফারাক থেকে যাচ্ছে বিস্তর। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মধ্যে অন্ধ্র সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদনকারী রাজ্য বলে বিবেচিত হলেও গত কয়েক বছরে কর্নাটক সেই স্থান নিয়ে নিয়েছে। আর যে বাঙালি মাছঅন্তপ্রাণ তাদের রাজ্যে বার্ষিক মাছের উৎপাদন বেশ চোখে পড়ার মতোই কম। সেই সঙ্গে খালবিল-পুকুর-জলাশয়ে বংশবৃদ্ধি পাওয়া মাছ, যেমন তেলাপিয়া, খলসে, পুঁটি, মাগুর, সিঙ্গি, মৌরলা, কই, শোলমাছের আকাল বাড়ছে। এমনকী জলাশয়ের গভীরতা কমে যাওয়ায় রুই-কাতলা-মৃগেল ইত্যাদি বড় মাছেরও ফলন তেমন আশানুরূপ হচ্ছে না। তাই অন্ধ্র বা ভিন প্রদেশের মাছই বাঙালির ভরসা।

মরাঠা রাজ্যে পরবাস যাপন, তাই মরাঠিদের মৎস্যপ্রীতি বা মাছ রান্নার ধরনধারণ জানার আগ্রহ ছিল। মহারাষ্ট্রের রন্ধনরীতি আমাদের বাঙালিদের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। মহারাষ্ট্রের মানুষ সর্ষেতেল বা সর্ষেবাটা খেতে একেবারেই অভ্যস্ত নয়। কিছু রান্নায় অবশ্য ফোড়ন বা সাঁতলানো হিসেবে সর্ষেদানা বা রাই ব্যবহার করে। নিখুঁত মরাঠি স্টাইলে মাচ্ছি ফ্রাই, ভোজনা বা মালভনি মশলা সহযোগে মাচ্ছিকারি, প্রন কোলিওয়ারা, জিঙ্গা মালওয়ানি, পমফ্রেট কোলহাপুরি, খুরমাই কুন্তাপুরি তাওয়া ফ্রাই, পমফ্রেট ড্রাই মশলা তাওয়া ফ্রাই, রাওয়াস রাজমুন্দ্রি, রাওয়াস তাওয়া ফ্রাই, ক্র্যাব তাওয়া মশলা মরাঠি আমিষভক্তদের পছন্দের ব্যঞ্জন।

মরাঠি গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে মাছ-মাংসের তেমন প্রবেশাধিকার নেই। তবে এটাও ঠিক যে দিনকাল পাল্টাচ্ছে। খাওয়াদাওয়ায় বাছবিচারের তোয়াক্কা করে না আজকের প্রজন্ম। বাড়িতে হয়তো আমিষ পদ খাওয়ার রেওয়াজ নেই, তবে রেস্তোরাঁ বা বাড়ির বাইরে অন্য কোথাও মচ্ছি ফ্রাই বা মচ্ছি কোস্টালকারির স্বাদ নিয়ে থাকে হামেশাই। মরাঠা বা কোঙ্কন উপকূলের মানুষজন মূলত ভাতের ভক্ত। মাছের নানা কোঙ্কনি পদ ভাতের সঙ্গে খাওয়া তাদের পছন্দ। ‘বম্বে ডাক’ মহারাষ্ট্রের অন্যতম পরিচিত এক মাছ। মরাঠিরা এই মাছকে ‘বমবিল’ বলে থাকেন। আরবসাগরের লোনা জলে রাওস, বমবিল, সুরমাই, মান্দলি, বাংড়া, হাওয়াই, জিঙ্গা—এই সব বিবিধ সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। ‘জিঙ্গা’ মানে যে চিংড়ি এ কথা মুম্বইবাসী সব বাঙালিই জানে। মুম্বইকাররা বোনলেস বা কাঁটা ছাড়া মাছই বেশি পছন্দ করেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় টাটকা বমবিল ফ্রাই মেন কোর্সের আগে স্টার্টার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সাইজ অনুযায়ী ‘সি ফুডস প্লেটার’ স্টার্টার হিসেবে দিব্যি চলে। প্রায় প্রতিটি মরাঠা-কোঙ্কন পরিবারের পাকশালায় ‘মালভনি মশলা’ নামে নির্ধারিত কিছু মশলার মিশ্রণ মজুত থাকে। ‘কোলিওয়ারা’ নামে অন্য এক ধরনের মশলাও আমিষ পদ তথা মাছের পদে ব্যবহার করেন তারা। মরাঠি রান্নায় মাছের পদ খুবই মশলাদার ও ঝালের তীব্রতাও বেশি। কোঙ্কন উপকূলের মানুষজন বাঙালিদের মতোই মাছের ভক্ত। প্রতিদিন না হলেও রবিবার বা ছুটির দিন এরা বাড়িতে মাছের কোনও ভালমন্দ পদ রান্না করেন। অবশ্য বাঙালিদের মতো সর্ষে বা পোস্ত বাটা দিয়ে গা মাখা ঝাল নয়। মরাঠিরা হাওয়াই, মান্দালি, বাংরা, খুরমাই, বমবিন, জিঙ্গা, পমফ্রেট ইত্যাদি মাছ ধুয়ে নুন-হলুদ, আদা-রসুন বাটা মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে কান্দা, ধনিয়া, শুকনো লংকা, নারকেলের শাঁসবাটা ও নিজস্ব মালবনি মশলা মাখিয়ে বেশ তরিবত করে রান্না করে। আবার কোলিওয়ারা নামে আরও এক ধরনের মিশ্র মশলা মাখিয়ে মাছের ডিপ ফ্রাই এদের বেশ পছন্দের।

‘বম্বে ডাক’ মহারাষ্ট্রের অন্যতম পরিচিত এক মাছ। এটা অনেকটা লইট্যা মাছের মতো আকৃতির সরীসৃপজাতীয় মাছ। একমাত্র আরবসাগরের লোনা জলেই এই মাছ পাওয়া যায়। কড়া রোদে নুন মাখিয়ে জারিত করে টিনজাত হয়ে বিদেশে রফতানি হয় এই মাছ। মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন উপকূলে বেড়াতে এসে সেখানকার কোঙ্কনি স্টাইলের মাছের স্বাদ নেওয়া যেতেই পারে। মালভনি মশলায় জারিত মাখোমাখো ‘কোলম্বি’ অর্থাৎ চিংড়ি ফ্রাই কিন্তু দারুণ উপাদেয়। সামুদ্রিক টাটকা মাছ প্রধানত ডাবের শাঁসবাটা ও নারকেলের দুধ দিয়ে কোঙ্কনি কায়দায় বেশ মুখরোচক ভাবে রান্না করা হয়।

মাছের মনোহারী ব্যঞ্জনে ‘ভাজা মাছ উলটে খেতে জানি বা না জানি’, মুম্বই এসে প্রায়শই স্বাদ-গন্ধ ভরা লোনা বা মিঠে জলের টাটকা মাছের অভাব খাবার পাতে ভোগ করেছি। অভাববোধ ক্রমশ অভ্যস্ত করে দিয়েছে পনির বা মাংস বা নিরামিষ ব্যঞ্জনের প্রতি ঝোঁকে। এখানে সেই জাওলা মাছ খুব একটা পাই না। যাদের দেখে মনে হয় বঁটিতে কাটার সময় ফুড়ুৎ করে পালিয়ে যাবে! মন কেমন করে সেই মাছের জন্য। তবে ইদানীং মাছ রাখার চৌবাচ্চায় অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে গ্রাহক টানার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে নভি মুম্বইয়ের মাছের বাজারগুলোয়। তবে মিষ্টি জলের মাছের বাজার তো মুম্বইয়ে প্রায় হাতে গোনা।

তবে বাঙালি যতই মাছের ঝোল, মাছের ঝাল, মাছের টক, মাছভাজা, মাছের ভাপা, মাছের পাতুরি ইত্যাদি সাবেকি রান্না করুন না কেন, তাজা মাছ চেনা এবং খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কেনা সত্যিই আজকের দিনে দুষ্কর। মাছকে অনেক দিন পর্যন্ত তাজা দেখাতে অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা নাকি মাছকে ফর্মালিন গোলা জলে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখেন। মাছ বিক্রেতার সামনে সাজিয়ে রাখা মরা মাছগুলো কাটলে অত গলগল করে রক্ত বেরোয় কোথা থেকে, সেটাও মোক্ষম প্রশ্ন। ওটা নাকি রেড লেড। ছাড়ানো চিংড়িও ফুলে ফেঁপে বেশ বড় দেখাবে বলে নুনজলে চুবিয়ে রেখে বিক্রি হয়। বাড়িয়ে এনে ধুয়ে হলুদ-নুন মাখিয়ে কড়ায় ছাঁকা তেলে ভাজতে গেলেই সমস্ত জল বেরিয়ে একটুকুন চিমড়ে হয়ে যাবে। ওই ফুলো ফুলো চিংড়ি যেন তেলের মধ্যে বা রান্নার মধ্যে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর তখন। সংরক্ষণের নামে যা খুশি তাই হচ্ছে। আর আমরা এও দেখছি, বাংলার নদী নালা পুকুর ডোবা নয়নজুলি সবই প্রোমোটারের খপ্পরে পড়ে বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মৎস্যকুমার কিংবা মৎস্যকন্যাদের রাজত্ব এখন সংকুচিত হচ্ছে দ্রুত হারে। তবু সুদূর মুম্বইয়ে থেকেও ভাতের কোলে একটুকরো বর্ষার টাটকা ইলিশ ভাজা অথবা কালোজিরে-কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে কি সর্ষে-পোস্তবাটা দিয়ে রাঁধা ইলিশের জন্য এক প্রবল কাতরতা থাকেই। এখানে নর্মদার ইলিশই কোলাপুরের ইলিশ বলে অত্যধিক দামে বিকোয়। তবু প্রবাসী বাঙালি মন মুখিয়ে থাকে। আহারে ইলিশের ব্যঞ্জন পেলেই যে সোনামুখ করে জমিয়ে খাবে। সে বাঙালি ভাজা মাছ উলটে খেতে জানুক আর না-ই জানুক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhuchhanda Mitra Ghosh importance of fish fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE