Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

সৃষ্টির কোলাহলেই দীপ্তিহীন

অন্যগুলির তুলনায় সম্পূর্ণা পালের ছোট্ট কাগজ কুচির কোলাজটি জমাট কম্পোজ়িশন। কিন্তু পরিবেশ তৈরি করেও গাছের ডাল এবং দু’দিকে দু’টি ডিজাইন-সদৃশ রূপবন্ধ কেন এল হঠাৎ? এতেই যে কাজটি দুর্বল হয়ে গিয়েছে কিছুটা।

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০১:১০
Share: Save:

সাঁইত্রিশ জনের কাজ নিয়ে প্রদর্শনী। নিউ ইয়র্কের এক জন, বাংলাদেশের চার জন, বত্রিশ জন পশ্চিমবঙ্গের। অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি শেষ হল ‘প্রভাস্বিত’ নামে এই প্রদর্শনী। সকলেই দলের সদস্য নন। আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবেও অনেকের কাজ ছিল। কাজের পরিমাণ অনেক। প্রদর্শনীতে না থাকা কাজও যেমন ক্যাটালগে মুদ্রিত, একই শিল্পীর নাম অন্য শিল্পীর কাজের সঙ্গেও মুদ্রিত। ঝকঝকে মুদ্রণ। সামান্য যত্নবান হলেই এই ত্রুটি এড়ানো যেত।

এ সব সত্ত্বেও বেশ কিছু ভাল কাজই এই প্রদর্শনীটিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং তা আলোকচিত্রকে সঙ্গী করেই, সন্দেহ নেই। আমন্ত্রিত শিল্পী নন্দদুলাল মুখোপাধ্যায়ের দু’টি অনবদ্য কাজ ছিল— কলাই করা চৌকো এবং সমতল পরিতলের উপর ভারট্রিয়াস এনামেল মাধ্যমের কাজ। শুধু সীমিত রেখা ও যৎসামান্য রঙের কৌশলে একটি মুখ এবং অন্যটি দু’টি দস্তানার ড্রয়িং। রাজেশ বৌরি অ্যাক্রিলিকে যে ‘ভিলেজ গার্ল’ এঁকেছেন, তাতে সামনে থেকে যে আলো পড়েছে মুখ ও অবয়বে, তার ব্যবহার বেশ। তবে পিছনেও কেন অত আলোর মতো? আরও যত্নবান হওয়া যেত।

অন্যগুলির তুলনায় সম্পূর্ণা পালের ছোট্ট কাগজ কুচির কোলাজটি জমাট কম্পোজ়িশন। কিন্তু পরিবেশ তৈরি করেও গাছের ডাল এবং দু’দিকে দু’টি ডিজাইন-সদৃশ রূপবন্ধ কেন এল হঠাৎ? এতেই যে কাজটি দুর্বল হয়ে গিয়েছে কিছুটা।

আশিস রুইদাস মধুবনী পেন্টিং বা ড্রয়িংকে যেন হুবহু তুলে এনেছেন তাঁর কাজে। তবে এত খাটলেও নিজস্ব প্রকরণের লেশ চোখে পড়ে না! জল ছেড়ে দেওয়া ভেজা কাগজে কিছু ইম্প্রেশন, ধাতব নিবের সূক্ষ্ম আঁচড় টেনে ডিজ়াইন-নির্ভর সাদা কাগজ বার করে আনার কৌশল— এও এক কম্পোজ়িশনের ধরন। আর মাঝখানে ইয়েলো অকার কাগজের টুকরো সাঁটা সরল কালো রূপবন্ধের জ্যামিতিক অবস্থান। সব মিলিয়ে এই বিমূর্ততা কিন্তু ছবিটিকে নাটকীয় মুহূর্তের মধ্যে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু রঙের ভারসাম্যে কোথাও যে অতিরিক্ত শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেখানে শিল্পী এত নিশ্চুপ কেন? এরই পাশে সাম্য সেনগুপ্তের ‘প্রি-হিস্টোরিক ডন’ যে প্রদর্শনীর অন্যতম ভাল কাজ, তা মানতেই হবে।

রক্তাক্ত কমোড ও সিস্টার্ন ‘কোয়েস্ট অব হিউম্যানিটি’র কোন উদাহরণ? দুর্বল ড্রয়িং, ছবির মাঝের অংশের সঙ্গে পটভূমির সম্পর্ক কী? অন্য কাজেও একই রকম ভাবনা। লাল্টু বসুর এই রচনা দাগ কাটল না। চন্দন কর্মকার কয়লাখনির শ্রমিকের পেন্টিংয়ের তুলনায় ‘সেফটি ল্যাম্প’ নামে ওঁর পিতলের ভাস্কর্যের বৃহৎ সংস্করণে একটা পরিণত ছাপ রেখেছেন।

‘দ্য ইটার্স’ নামের ক্যাপসুল-সদৃশ রূপায়ণে, খাদকের দাঁত বার করা হাঁ-মুখ সহ অ্যাক্রিলিকের কাজটিকে বেশ ফুটিয়ে তুলেছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অভিজিৎ কর্মকার কাঠ ও ব্রোঞ্জে বৃহৎ কর্ণবিশিষ্ট বৌদ্ধ শিশুর ভাস্কর্যটি বেশ ভালই গড়েছেন। শুধু একটিই প্রশ্ন— বুকের ধাতব অংশটি কিসের প্রতীক?

বিধানচন্দ্র জানার অনামা ভাস্কর্যটি ঠিক কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে, বোঝা গেল না তাও। বিদ্যুৎতরঙ্গ, না কি অন্য কিছু? ভাস্কর্যে প্রতীক ব্যবহার করতে হলে সম্পর্ককে বুঝতে হবে। তুলনায় কালো গ্রানাইটের পরিতল কাটা টেক্সচার অন্য আবহ তৈরি করে। কিন্তু রূপের সামগ্রিকতা কোনও বার্তা দিতে পারে না।

দিব্যেন্দু প্রধান সাদা পাথরের ঘনত্ব এবং পরিধির ভারটিকে এক আশ্চর্য ছন্দের বিমূর্ততায় ধরেছেন চমৎকার ভাবে। ওঁর অন্য কাজটিতে মার্বেল টেক্সচারের তীব্র মসৃণতায় কোথাও কোথাও পরিবর্তিত উচ্চাবচ রূপে নারীশরীরের দেহকাণ্ডটি বুঝিয়েছেন ভারী সচেতনতার সঙ্গে ও লাবণ্যকে রক্ষা করেই। বেশ দৃষ্টিনন্দন কাজ।

আলোকচিত্রের নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগানো লেন্সের নানা কৌশলগত ব্যবহার ছবিকে সমৃদ্ধ করলেও এ সবের বাইরে গিয়ে প্রকৃত বহির্দৃশ্যের ছবি কখনও কখনও অনন্যসাধারণ হয়ে ওঠে। আলি পি রেহানের ‘দ্য লং ওয়েট’ সেই ধারারই চমৎকার কাজ! ভাল ছবি তুলেছেন সমীরণ নন্দী ও চিন্ময় দত্তও।

এ ছাড়াও জয়িতা ভট্টাচার্য, প্রভাত বাগদী, সুজয় সাধুখাঁ সুমনা দত্ত প্রমুখ শিল্পীরাও অংশ নিয়েছিলেন প্রদর্শনীতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exhibition Art Academy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE