Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রেমিক হইতে সাবধান

যাকে-তাকে প্রেমিক ভাবা! পিরিতি কিন্তু কাঁঠালের আঠা! লিখছেন গৌতম চক্রবর্তী যাকে-তাকে প্রেমিক ভাবা! পিরিতি কিন্তু কাঁঠালের আঠা! লিখছেন গৌতম চক্রবর্তী

অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ফ্রিডা ভন রিখথোভেনের মতো অভিজাত জার্মান নারীও প্রেমিক থেকে সাবধান হতে পারেননি, ভারতীয়রা তো দূর অস্ত!

ফ্রিডার বাবা উচ্চবর্গের ব্যারন। মেয়ের বিয়ে হল ভাষাতত্ত্বের ব্রিটিশ অধ্যাপক আর্নেস্ট উইকলির সঙ্গে। কিন্তু উইকলির তরুণ ছাত্রটিকে প্রতিরোধ করতে পারলেন না ফ্রিডা। স্বামী ও সন্তানদের ফেলে একদিন প্রেমিকের হাত ধরে পাড়ি জমালেন ইতালিতে।

ভালবাসাবাসির পাশাপাশি আছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। প্যাশনাতুর স্বামী কখনও ফ্রিডাকে ভরিয়ে দেন চুম্বনে, আশ্লেষে। কখনও বা নির্যাতনে। স্বামী যে-সে লোক নন, ডাকসাইটে লেখক ডি এইচ লরেন্স। প্রেমিক সাধারণ হোক বা অসাধারণ, নিস্তার পাওয়া মেয়েদের পক্ষে মাঝে মাঝেই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ শতকের ইংল্যান্ড তবু স্বর্ণযুগ। ব্যর্থ প্রেমিকদের অ্যাসিড ছোড়া ছিল না। চার বছর আগের রিপোর্ট, এ দেশে অ্যাসিড ছোড়ায় যারা আক্রান্ত হন, তাঁদের ৮৫ শতাংশই মহিলা। এদের মধ্যে ৪১ শতাংশ অ্যাসিড-ছোড়া বীরপুঙ্গব আবার মহিলার পরিচিত প্রেমিক।

তথ্যটা নতুন নয়। বাবরি মসজিদ ভাঙার পরের বছরই, ১৯৯৩ সালে এক জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘প্রেমিক হইতে সাবধান’ আপ্তবাক্যটি শুনিয়েছিল। শাহরুখ-জুহি অভিনীত যশ চোপড়ার ‘ডর’। সানি দেওল জুহিকে ভালবাসে, কিন্তু শাহরুখ নাছোড়। যত্রতত্র সে ‘ক্-ক্-কিরণ’ বলে জুহিকে ফলো করে যায়।

কিন্তু নয়ের দশকে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ছিল না। ফেসবুকে অপরিচিত মহিলার ওপর নজর রাখছেন, তিনি কোনও কিছু আপলোড করলেই ‘লাইক’ বা ‘স্মাইলি’ মেরে দিচ্ছেন, এই পুরুষটিও আসলে ‘ডর’ ছবির শাহরুখের মতো এক জন স্টকার। ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্টদের মতে, এ ধরনের কেউ সামনে এসে আলাপ জমানোর চেষ্টা করলে তাকে ইগনোর করবেন না, ভয় পেয়ে পালিয়েও যাবেন না। বরং ঠান্ডা মাথায় কয়েক জন লোককে জড়ো করে লোকটির সঙ্গে কঠোর ভাবে কথা বলুন।

কিন্তু স্টকার তো আর প্রেমিক নয়। প্রেমিকের বেশে আধিপত্যবাদী এক পুরুষ। যে হার মানবে না, যেন-তেন-প্রকারেণ এই মেয়েটিকেই তার সম্ভোগের জন্য চাই। এই সব প্রেমাস্পদ থেকে সাবধান।

তাই প্রেমিক ‘পজেসিভ’ হতে পারে, ‘লাল পালাজো পরে এসো’, বলে হোয়াট্স অ্যাপে ৫৫ বার বার্তা পাঠাতে পারে, কিন্তু প্রতিনিয়ত ‘ওর সঙ্গে কাল এত রাতে ডিস্কে গিয়েছিলে কেন’, ‘কফি খেতে আর কেউ জোটে না’ গোছের কৈফিয়ত চাইলে সতর্কতা বিধেয়। প্রেমিকের হাত থেকে বাঁচার আর একটি উপায় আছে। জীবন আপনার, ফলে ঝাঁপি খুলে সব কথা বলার দরকার নেই। ‘এর আগে ক’জন ছিল, তারা কি আমার মতোই তোমাকে ভালবাসত’, তুঙ্গ মুহূর্তে ছেলেরা এ সব জিজ্ঞেস করবেই। এ সব ক্ষেত্রে যতটুকু বলার দরকার, তার বেশি নয়। যাজকের সামনে কনফেশন বক্সে দাঁড়ানো যায়, কিন্তু প্রেমিকের সামনে নৈব নৈব চ।

সমস্যা একটিই। প্রেমিকাকে বিনষ্ট করার পরামর্শটি দিয়েছে খোদ মনুসংহিতা। মনুর বিধান, মেয়েপক্ষের অঙ্গচ্ছেদ করে, ক্রন্দনরতা মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ‘রাক্ষস-বিবাহ’ চলবে। নিদ্রাভিভূতা, মদ্যপানে বিহ্বলা মেয়েকে সম্ভোগের ‘পৈশাচ বিবাহ’ও চলতে পারে।

এই যদি ইতিহাস হয়, প্রেমিক হইতে অবশ্যই সাবধান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Boyfriend Love Relationship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE