Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘর জুড়ে নস্ট্যালজিয়া

বাড়ির আলমারিতে বন্দি হয়ে ঘুমিয়ে আছে না জানি কত রূপকথা! তাদের শিয়রে এ বার জিয়ন কাঠি ছোঁয়ানোর পালা। পুরনো সব জিনিসের ধুলো ঝেড়ে সাজিয়ে ফেলুন নিজের অন্দরমহলঠিক এ রকমই অনেক পুরনো জিনিস সকলেরই বাড়িতে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকে। বাক্স খুলে ফেলুন আর সেই জিনিসগুলো দিয়ে ঘর সাজিয়ে তুলুন। অন্দরের চেহারাও সুন্দর হবে, থাকবে অতীতের ছোঁয়াও...

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৬
Share: Save:

ঠাকুমার একটা পানের ডিব্বা ছিল। রুপোর কাজ করা, ভারী সুন্দর। গোল মাথায় ময়ূরের আংটা। তার মধ্যে চুন, সুপুরি, খয়ের রাখার ছোট ছোট কৌটো। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পরে ওটা তোলাই থাকত। এক দিন হঠাৎ মনে হল, জিনিসটা যদি কোনও টি-টেবল বা কর্নার টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা যায়! ভিতরে না হয় থাকুক রকমারি মুখশুদ্ধি। অতিথি এলে তাঁদেরও নজরে পড়তে লাগল সেই রুপোয় মোড়া পানের বাক্স আর তার সঙ্গেই বেরিয়ে পড়ল ঠাকুমার ডিব্বা থেকে একগুচ্ছ রূপকথা।

ঠিক এ রকমই অনেক পুরনো জিনিস সকলেরই বাড়িতে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকে। বাক্স খুলে ফেলুন আর সেই জিনিসগুলো দিয়ে ঘর সাজিয়ে তুলুন। অন্দরের চেহারাও সুন্দর হবে, থাকবে অতীতের ছোঁয়াও...

কাঁথা ও কাহিনি: শীতের শুরুতেই বাক্সপ্যাঁটরা খুলে রোদ পোহাতে বেরিয়ে পড়ে কাঁথা। ফুল-পাতার নকশি কাঁথায় যেমন থাকে হালকা ওম, তেমনই পুরনো কিছু সম্পর্কের উষ্ণতা। কিন্তু সারা বছর তারা সেই বাক্সবন্দি। এ বার বাক্স থেকে বার করে কাঁথা দিয়েই ঢেকে ফেলুন বসার ঘরের সোফার সিট। বা কাঁথা দিয়ে বানিয়ে নিন কুশন কভার। খুব সুন্দর রঙিন নকশা করা হলে ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেওয়ালে ঝুলিয়েও দিতে পারেন। ঘর তো সুন্দর দেখাবেই, তার সঙ্গেই প্রিয়জনের কাজ থাকবে চোখের সামনে।

এসো বসো আসনে: পুজোআচ্চা বা কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া আসনের কোনও কাজ নেই। কিন্তু এই আসনই যদি বিছিয়ে দেওয়া যায় ঘরের কর্নার টেবলের উপর। বেশ খোলতাই হবে ঘরের চেহারা। সিঙ্গল চেয়ারের বসার জায়গাতেও পেতে রাখতে পারেন লালপেড়ে আসন।

বাহারি শাড়ি: সে তো কবে থেকেই আলমারি বন্দি। লিনেনের আধুনিক সাজে জরি দেওয়া মোটা পাড়ের তাঁতের শাড়িতে ভাঁজ পড়তে বসেছে। ক’দিন বাদে বার করলে হয়তো দেখবেন ভাঁজে ভাঁজে কেটেও গিয়েছে। তার চেয়ে বরং শাড়িটা বার করুন। তিন-চার ভাঁজে লম্বায় ভাঁজ করে সেলাই করে টাঙিয়ে দিন জানালায় বা দরজায়। পুরো শা়ড়ি না টাঙিয়ে চার-পাঁচটা তাঁতের শাড়ির পাড় কেটে নিয়ে সেগুলো পাশাপাশি জুড়ে নিয়েও বানিয়ে ফেলতে পারেন পর্দা। শাড়ি দিয়ে ভাল দরজাও বানাতে পারেন। কাঁথা স্টিচ বা সুতোর কাজ করা বা সাধারণ ছাপা শাড়ি ফ্রেম করে বানিয়ে ফেলুন স্লাইডিং দরজা। তবে খেয়াল রাখবেন দরজার উলটো দিকে যেন নরম আলো থাকে। ঘরের মধ্যে বেশ মায়াবী পরিবেশ তৈরি করবে।

আঁধাররাতের সঙ্গী: লোডশেডিংয়ের দিনগুলোর নিত্য সঙ্গী ছিল এই জুটি। কিন্তু ইনভার্টারের যুগে হাতপাখা ও লণ্ঠনে ধুলোর পুরু পরত পড়তে বেশি সময় লাগেনি। ওদের বরং আলমারির মাথা থেকে নামিয়ে নিন। ধুলো ঝেড়ে দেওয়াল সাজান হাতপাখা দিয়ে। আর লণ্ঠনের মতো ডেকরেটিভ আইটেম তো এখন অনেক টাকা খরচ করে কিনতে হয়। তাই বাড়িতে থাকলে তাদের ঝেড়েপুছে সাজিয়ে রাখুন টেবিলে বা আয়নার সামনে। দীপাবলিতে লণ্ঠন জ্বালিয়ে সাজাতেও পারেন বৈঠকখানা। ইলেকট্রিকও সাশ্রয় হবে, ঘরও সুন্দর দেখাবে।

ঠিক যেন সোনা: পঞ্চব্যঞ্জনে সাজিয়ে খাবার পরিবেশনের জন্য বেশ ভালই লাগে কাঁসা-পিতলের বাসন। কিন্তু প্রত্যেক দিন তো আর এই বাসনে খাওয়াদাওয়া হয় না। বাসনগুলো ভাল করে পালিশ করে সাজিয়ে রাখুন শোকেসে। সম্ভব হলে একটা স্পটলাইট ফিট করে দিন তার উপরে। দেখবেন, ওদের জেল্লায় চোখ ফেরানোই দায়। পিতলের পিলসুজ বা ফুলের সাজি থাকলে তাদেরও ঘষেমেজে টেবিলের মাঝে রেখে দিতে পারেন। পিতলের পিলসুজের উপর টেবল ল্যাম্প রেখে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। বেশ অন্য রকম দেখাবে সে সাজ।

শালের সাজে: ঘন কাজ করা কাশ্মীরি শাল হোক বা হাল্কা কাজের চাদর— সে সবও এখন বেশির ভাগ সময়েই আলমারির বাসিন্দা। তাদেরও ব্যবহার করতে পারেন কাঁথার মতোই সোফার উপরে বা কুশন কভারে। ভাল কাজ করা শাল হলে তা বিছিয়ে দিতে পারেন সেন্টার টেবলের নীচে। সুন্দর কার্পেটের কাজ করবে।

বোঝাই করা ট্রাঙ্ক: বারান্দার কোণে বা খাটের তলায় হয়তো মুখ লুকিয়ে বসে আছে সে। টেনে বার করুন এই অদ্যিকালের ট্রাঙ্ক। তবে ফেলে রাখবেন না। কপার, সিলভার বা পছন্দসই মেটাল রঙে রাঙিয়ে নিন। বসার ঘরে সেন্টার টেবলের পিছনে খরচ না করে ট্রাঙ্ককেই বানিয়ে নিন সেন্টার টেবিল। তার উপরে মাপ মতো কাচ বসিয়ে নিন। ট্রাঙ্কের পেটে জায়গাও অনেক। স্টোরেজ হিসেবেও কাজে লাগাতে পারেন।

পুরনো দিনের জিনিস— সে তো সম্পদ। বাক্সবন্দি করে না রেখে ঘর সাজান মন ভরে। দেখবেন কত সম্পর্ক, কত গল্প, হাসি-কথারা মুখর করে তুলবে আপনার অন্দরমহল।

নবনীতা দত্ত

ছবি: দেবর্ষি রায়, নীলোৎপল দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Decoration home Nostalgia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE