নাটকের একটি দৃশ্য
সদ্য গড়ে ওঠা নাট্যদল থ্যাটার কলকেতা-র প্রথম প্রযোজনা ‘ছুকরি: এক নিরন্তর খোঁজ’ অভিনীত হল তপন থিয়েটারে। দল নবীন হলেও কুশীলবেরা বেশির ভাগই ছোট পর্দার পরিচিত মুখ। ফলে প্রথম অভিনয়ের দর্শক সমাগমই বলে দেয়, তাঁদের ঘিরে নাট্যজগতের প্রত্যাশা কতখানি। বনফুলের ক্ষুদ্রকায় একটি ছোটগল্প অবলম্বনে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যরূপ প্রায় একটি নতুন সৃষ্টিই বলা যায়। জন্মের আগেই পিতা কর্তৃক পরিত্যক্ত অবৈধ সন্তান ছুকরির সারা জীবন পিতাকে অন্বেষণ আর পিতা মলয়েন্দুর মনের গভীরে ফেলে আসা সেই সন্তানের জন্য হাহাকার— এই কাহিনিসূত্রকেই আজকের সময়ের বিস্তীর্ণ পটে ধরেছেন উজ্জ্বল। মলয়েন্দুর তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক কেরিয়ার, বামপন্থী লড়াকু সৈনিক থেকে দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে ওঠা, রাজনীতির খেলায় কোণঠাসা হয়ে পড়া এবং চরম সংকটের মুখে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার চেষ্টা—এ সবই আজকের ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতাদের মুখ হয়ে ওঠে। গল্পের এই রাজনীতি-কেন্দ্রিক অভিমুখটির উল্টো দিকে থাকা কেন্দ্রীয় চরিত্র অপ্সরী ওরফে ছুকরি, যে নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে, নানা হাত ঘুরে, জলসায় নাচনির খেপ খেলে, অবশেষে পৌঁছয় ঝা়ড়খণ্ডের বড়াজামদা স্টেশনে। আর এখানেই ছুকরির জীবনসূত্রে আসে এক নারীলোলুপ ব্যবসায়ী রতনলাল (সুদীপ মুখোপাধ্যায়) ও কদম্বকিশোর (লাল্টু সিংহ) এবং তব্বুর (নার্গিস পারভিন)মতো ছিন্নমূল কিছু মানুষের কথা। পিতা ও কন্যার সংকট ও অন্তর্দ্বন্দ্বে ভরা নাট্যসংঘাত ক্রমেই তীব্র হয়ে ওঠে, যখন নাটকের শেষে মলয়েন্দু বড়াজামদায় আসে তার রাজনৈতিক জীবনের নতুন অধ্যায়ের আশায়। কিন্তু অন্তরঙ্গ সন্তান-বুভুক্ষু পিতৃহৃদয় কি ফিরে পেল মেয়েকে?
চমৎকার এই কাহিনিবিন্যাসকে খুব পরিমিত আয়োজনে, টানটান ভাবেই ধরে রেখেছেন নির্দেশক দেবরঞ্জন নাগ। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছে নীল কৌশিকের মঞ্চভাবনা এবং ভূমি-খ্যাত সুরজিৎ ও তাঁর বন্ধুদের আবহসঙ্গীত। মলয়েন্দু চরিত্রে প্রেমাঞ্জন দাশগুপ্ত প্রথমাবধি ভাল, কিন্তু শেষ দৃশ্যে মেয়েকে রাতের অন্ধকারে টর্চ জ্বেলে খোঁজা ও আত্মযন্ত্রণা ব্যক্ত করা বড় অতিনাটকীয় লেগেছে। ছুকরি চরিত্রে ইন্দ্রাণী প্রচুর পরিশ্রম করেছেন ঠিকই, কিন্তু তার পোশাক এবং বয়স চরিত্রটির অতীত জীবনের রূপদানে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে হয়েছে। রতনলাল চরিত্রে সুদীপ একটু বেশি মাত্রায় নিজেকে ফোকাস্ড দেখাতে চেয়েছেন— যার প্রয়োজন ছিল না। যদিও পটেল চরিত্রে দেবরঞ্জনের বাস্তবানুগ ও পরিমিত উপস্থাপন, রেশমী সিংহর চরিত্রে জয়িত্রী চৌধুরীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং তব্বু চরিত্রে নার্গিসের নিজেকে মেলে ধরা দর্শকের কাছে বেশ বড় এক পাওনা বলে মনে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy