স্লেট নয় ট্যাব। খেলনা গাড়ি নয়, ভিডিয়ো গেম। হাই-টেক যুগের হাই-টেক খেলনা। তবে ট্যাব, ভিডিয়ো গেমে হাতেখড়ির আগেই আর এক ধরনের খেলনায় বুঁদ এই প্রজন্ম। ফিজেট স্পিনার। চলতি মাসের পরিসংখ্যান বলছে, একটি অনলাইন শপিং সংস্থার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া দশটি খেলনার মধ্যে এটি অন্যতম। শুধু বাড়ি নয়, ক্লাসরুমেও প্রাথমিক স্তরের শিশুর সব সময়ের সাথী হয়ে উঠেছে এই খেলনা। তবে ফিজেট স্পিনারের ব্যবহার কিন্তু শুধু খেলনা হিসেবে নয়। এর অন্য উপকারিতাও আছে। এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার), অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের একাগ্রতা নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। মূলত তাদের মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্যই এই স্পিনারের ব্যবহার বেড়েছে। পাশাপাশি বড়দের জন্য এটা একটা স্ট্রেস বাস্টার। অফিস-বাড়ির চরকি দৌড়ে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে জেন ওয়াই। তাঁদের জন্য কিছুটা রিলিফের পথ খুঁজে দিচ্ছে এই স্পিনার।
ফিজেট স্পিনার কী
ফিজেট স্পিনারের অনেক ধরনের ভ্যারাইটি আছে। সাধারণত মাঝখানে একটা ডিজাইন করা থাকে। স্টেইনলেস স্টিল, টাইটানিয়াম, কপার, প্লাস্টিক দিয়ে খেলনাটি তৈরি হয়। মূলত হাতে ধরে এটা স্পিন করা যায়।
এ ছাড়া অনেক রকম ট্রিকও এটা দিয়ে করা যায়। ইউটিউবে ফিজেট স্পিনার নিয়ে খেলার বিভিন্ন রকম ট্রিক চাইলে দেখতে পারেন।
অন্য রূপে ফিজেট
কলেজের বেঞ্চে হোক বা অফিসের কিউবিকলে, কথা বলতে বলতে এক আঙুলে বলপেন ঘোরানো কিন্তু অনেকেরই অভ্যেস। কেউ বা পেনের বদলে মজা পান পেপার ক্লিপ, ইউএসবি থাম্ব ড্রাইভ নিয়ে। মানে এমন একটা কিছু যেটা একটা দীর্ঘ মিটিং বা এক ভাবে অনেকক্ষণ বসে কাজ করার একাগ্রতা জোগাবে। অনেকের আবার ফেটিশ থাকে এক বিশেষ ধরনের পাথর ঘোরানোর। বা পাথরের উপরে হাত বোলানোর। এতে যে আরামটা পাওয়া যায়, সেটা কিন্তু থেরাপিউটিক। তাঁদের মতে, কাজের চাপ সামলে মনকে স্থিতধী রাখার শক্তি এর থেকে পাওয়া যায়। ফিজেট স্পিনারকে অনেকটা এদের নিউ ভার্সান বলা যায়।
ফাইন টিউনিং
আজকের দিনে বেশির ভাগ কাজই হল মাথা-মুখ গুঁজে কম্পিউটার স্ক্রিনে আর কি-বোর্ডে। তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা, বিপিওগুলিতে কাজের এতটাই চাপ যে, সিট থেকে উঠে একপ্রস্ত টহল দেওয়া, কি অনেক সময় খাওয়াদাওয়ার হুঁশও থাকে না। তাদের মনঃসংযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে ফিজেট টয় কিন্তু কাজ দিচ্ছে। কারণ এই টয় খেলার জন্য হাত আর চোখের তালমিল খুব বেশি।
এডিএইচডি, অটিজম আক্তান্ত শিশুদের জন্য
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের কমিউনিকেশন নিয়ে বেশ সমস্যা হয়। যখন কোনও মনোবিদ প্রথমবার সেই শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা সাড়া দিচ্ছে না। তাই প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়ার জন্য এই ধরনের টয় ব্যবহার করা হয়। যে সব শিশু আচমকা রেগে যায়, তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণের একটা উপায় হিসেবে ফিজেট টয় ব্যবহার করা হয়। আবার যাদের সেন্সর-ওরিয়েন্টেড সমস্যা থাকে, যেমন ধরুন চোখে পাওয়ারের সমস্যা নেই, কিন্তু ফোকাসের সমস্যা আছে, তাদের একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য ফিজেট টয় ব্যবহারের পরিসর বেড়েছে। ক্লিনিক্যালি ফিজেট টয় ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনোবিদদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। তবে অটিজম হোক বা এডিএইচডি, প্রতিটি শিশুর সমস্যা কিন্তু ভিন্ন ধরনের। তাই সমস্যা বুঝেই এই খেলনা ব্যবহারের পরামর্শ দেন মনোবিদরা।
ভারতে জনপ্রিয়তা
আইটি সেক্টরের কর্মীদের মধ্যে এটা বিশেষ জনপ্রিয়। এ ছাড়া নখ খাওয়া, পা নাচানো আরও নানা বদঅভ্যেস ছাড়ানোর জন্য ফিজেট টয়ের ব্যবহার বেড়েছে।
রিলিফ না বিঘ্নকারী
ক্লাসরুমে ফিজেট টয় ব্যবহারের ফলে শিশুদের মনঃসংযোগ বাড়ার চেয়েও বিঘ্ন হচ্ছে বেশি। এমনটাই মত কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তাই অনেক স্কুলে এই খেলনা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আবার অনেক মনোবিদের মতে, এর ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মত দিক দিয়ে কতটা উপযোগী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কোথায় কিনবেন
একটি অনলাইন সাইটে ফিজেট টয়ের বিশাল কালেকশন পাবেন। সাধারণ দোকানের চেয়ে অনলাইনেই এর চাহিদা বেশি। কেনার আগে দু’টো জিনিস মাথায় রাখবেন। ওই টয়ের রেটিং যদি ৩.৫- এর বেশি হয় আর ব্যবহারকারীর রিভিউ গ্রেড বি হয়, তবে নির্দ্বিধায় কিনতে পারেন।
যে যা-ই বলুক, হুজুগের ঠেলায় গা ভাসিয়েছে এই প্রজন্ম। উপকার পাচ্ছেন কি না একবার নিজেই পরখ করে দেখুন না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy