Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

প্রদর্শনীর উপস্থাপনায় অন্য ধারার ফ্রেস্কো

দেশজ উদ্ভূত মাধ্যম জয়পুর ফ্রেস্কো পদ্ধতিতে অনেকেই কাজ করেছেন। এ বিষয়ে অনেকে বলেন— ইতালীয় ‘ফ্রেস্কো বুয়োনো’ ও ‘ফ্রেস্কো সেক্কো’র তুলনায় জয়পুর ফ্রেস্কো বেশি শৌখিন ও স্থায়ী। প্রদর্শনীতে তিন রকম ফ্রেস্কোই দেখানো হয়েছে।

অতনু বসু
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

গত ১৮ বছরে ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর আর্ট অ্যান্ড এস্থেটিক্স তাদের দ্বিতীয় ফ্রেস্কো পেন্টিংয়ের প্রদর্শনী করল অ্যাকাডেমিতে। মাধ্যমটি নিয়ে ভারতে বেশি চর্চা হয় না। তবে কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান ফ্রেস্কো পেন্টিংয়ের ওয়র্কশপ করে থাকে। ড. সুবিমলেন্দু বিকাশ সিংহের অধীনে ফ্রেস্কো পেন্টিং শেখা ৬ জনের কাজ ছিল প্রদর্শনীতে।

দেশজ উদ্ভূত মাধ্যম জয়পুর ফ্রেস্কো পদ্ধতিতে অনেকেই কাজ করেছেন। এ বিষয়ে অনেকে বলেন— ইতালীয় ‘ফ্রেস্কো বুয়োনো’ ও ‘ফ্রেস্কো সেক্কো’র তুলনায় জয়পুর ফ্রেস্কো বেশি শৌখিন ও স্থায়ী। প্রদর্শনীতে তিন রকম ফ্রেস্কোই দেখানো হয়েছে।

প্রধান উপকরণ চুন। বুয়োনো ও জয়পুর ফ্রেস্কোতে ভেজা জমির উপরে কাজটি করতে হয় জমি শুকোনোর আগেই। সেক্কো পদ্ধতিতে শুকনো জমিতে কাজ করতে হয় রঙের সঙ্গে বাইন্ডার তথা বাঁধন-সহ, যা ‘টেম্পারা ফ্রেস্কো’ নামেও পরিচিত। ফ্রেস্কো পেন্টিংয়ের জমি প্রস্তুতির বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। উপকরণগুলির মিশ্রণ ও মাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই মাধ্যমের প্রদর্শনী ভারতে এ জন্যই খুব বেশি প্রচলিত নয়। সে দিক থেকে প্রদর্শনীটি তাই গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষক হিসেবে সুবিমলেন্দুর চারটি কাজ ছিল এখানে জয়পুর ও বুয়োনো পদ্ধতির। নরম রং, খুবই যত্ন-সহ বাস্তববোধকে গভীর ভাবে কাজে লাগিয়েছেন নিজস্ব আঙ্গিকে। অতি আধুনিক হয়েও ফ্রেস্কোর নিজস্বতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে তাঁর স্টাইল হয়ে উঠেছে নিঃশব্দ ও মুখরিত আলাপের মধ্যে এক বিশ্বস্ত মাধুর্যের সার্চলাইট!

আসলে এটি এমন এক মাধ্যম, যার শুরু থেকেই গভীর মগ্নতায় কাজটি সম্পন্ন করতে হয় এবং সেই শুরুরও একটি শুরু থাকে। আর পাঁচটি মাধ্যমের মতো ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ গোছের নয়। সে কারণেই কেউ কেউ হঠাৎ মাধ্যমটি থেকে হারিয়ে গেলেন। শিক্ষানবিশি পর্বেই নড়ে গিয়েছিল অনুভূতি ও সচেতনতা। তবুও চেষ্টা করেছেন কাজটিকে এক জায়গায় দাঁড় করানোর। শিল্পী সিন্টু মজুমদার রূপকথার গল্পের মতো অন্য রকম করতে গিয়ে, বড্ড দুর্বল করে ফেলেছেন পটকে— ফ্রেস্কোর মেজাজের সঙ্গে যায় না।

প্রসেনজিৎ দেবনাথের ব্রাশিং স্ট্রোক ও সূক্ষ্মতাকে ধরার চেষ্টা, টেক্সচারের রুক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া মন্দ নয়। জন্তু-জানোয়ার প্রজাপতি পাখি নিয়ে কাজে সিংহের ড্রয়িংয়ে গোলমাল। স্টাইল বদলাতে গিয়ে কাঁচা হাতের কাজ হয়ে গিয়েছে। সে কারণেই কিছু দুর্বল মনে হল। জো়ড়া পাখি নিয়ে করা কাজটিকে অবশ্য ‘অসাধারণ’ বলতেই হবে!

সুব্রত মান্নার অর্ধনগ্নিকায় ছায়াতপ নিয়ে বৈচিত্র আছে, রঙের প্রাচুর্য কম। তবে ফোটোগ্রাফির রেফারেন্স নিয়েছেন বোঝা যায়। হাঁসের ছানা ও বাঘের রচনাগুলি চমৎকার। রুক্ষ টেক্সচার ও স্প্রে এফেক্টও ফ্রেস্কো পেন্টিংয়ের চরিত্র ক্ষুণ্ণ করেনি। স্টাইলটিও প্রশংসনীয়।

তন্ময় মণ্ডলের ছড়ানো ফুলপাতার কাজটি মন্দ নয়। টেম্পারা ফ্রেস্কোতে কাজটি দাঁড়িয়ে গেলেও অন্যান্য কাজে ফ্রেস্কোর নিজস্ব চরিত্রটি ধরতে না পারার ফলে দুর্বল হয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন, বোঝা যায়। ড্রয়িংয়েও কিছু কিছু অসম্পূর্ণতা এড়ানো যায়নি।

একমাত্র মহিলা শিল্পী নিবেদিতা ঘোষ বেজ বুদ্ধ, ময়ূর, হাঁস, মাছরাঙা এবং একাকিনী নারীর কথোপকথন নিয়ে যে কাজগুলি করেছেন, তা বেশ ভাল। তবে আর একটু ধৈর্য ও সময় নিয়ে কাজ করলে প্রাণবন্ত হয়ে উঠত ফ্রেস্কো পেন্টিংগুলি। এ মাধ্যমে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। পুরো পটের আশি ভাগ জুড়ে থাকা বুদ্ধের মুখটিতে অধর ও কপালের টিপটি শুধু একটু চোখে লাগে, নইলে কাজটি চমৎকার! ফ্রেস্কোর প্রধান মাধুর্যকে ধরতে গেলে গভীরতা কম হলে চলবে না। বরং বিষয় নির্বাচন, বর্ণ ব্যবহার ও আঁকায় আরও বেশি সচেতন হতে হবে নিবেদিতাকে।

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ দেখে দায়সারা মনে হল। অনুশীলন, ড্রয়িং, নির্মাণ পদ্ধতিতে চটজলদি কাজ সারার ভাব। ফ্রেস্কো কিন্তু এক ধরনের ভিত্তিচিত্র! তাই আরও বেশি গুরুত্ব দিলে ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Academy Fresco Exhibition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE