Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভুলে যাওয়া ভুলে যান

প্রতিদিনের সাধারণ কাজগুলো কি মনের ভুলে বাদ পড়ে যাচ্ছে? স্মৃতিনাশ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূরে রাখার কয়েকটি সহজ উপায়প্রতিদিনের সাধারণ কাজগুলো কি মনের ভুলে বাদ পড়ে যাচ্ছে? স্মৃতিনাশ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূরে রাখার কয়েকটি সহজ উপায়

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ছেলের স্কুলের ফি জমা দেওয়ার তারিখ, অফিসের প্রজেক্টের ডেডলাইন, বান্ধবীর বিয়ের তারিখ, ক্রেডিট কার্ডের পিন, পরিচারিকার মাইনে... সব কিছু মনে রাখতে গিয়ে কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গেল? না কি প্রায়শই আপনি মিস করছেন জরুরি ডেটগুলো? মনে রাখার সব রকম চেষ্টা করলেও স্মৃতি কি কিছুতেই সঙ্গ দিচ্ছে না? মনে রাখতে পারছেন না বলে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই। কারণ দুশ্চিন্তায় ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে বই কমে না।

ভুলে যাওয়ার কারণ

বিভিন্ন বয়সে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কিন্তু বিভিন্ন রকমের।

১৮-র নীচে: যে সব শিশু খুব অস্থিরচিত্ত, দুরন্ত, তাদের ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার একটা সমস্যা দেখা যায়। তবে সেটা কিন্তু স্মৃতির সমস্যা না-ও হতে পারে। বিশেষজ্ঞের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরা ভুলে যায়, কারণ এদের মনঃসংযোগের সমস্যা থাকে। একাগ্রতার অভাবেই তারা কে কী বলছে, তা ঠিকমতো শোনে না। ফলে মনে রাখতেও পারে না।

১৮-৬৫ বছর: এই বয়সে ভুলে যাওয়ার সমস্যার জন্য অনেকটাই দায়ী লাইফস্টাইল। রোজকার দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক, অত্যধিক ভাবনা-চিন্তা থেকেই ‘ভুলে যাচ্ছি’ সিনড্রোম তৈরি হয়।

৬৫ উত্তর: এই বয়সের ভুলে যাওয়া বার্ধক্যজনিত কারণে হতে পারে। ভুলে যাওয়া যদি দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে, তবে সে ক্ষেত্রে তা কিন্তু ডিমেনশিয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।

সাময়িক স্মৃতিভ্রংশ

মাথায় গুরুতর চোট, দীর্ঘদিন ধরে মদ খাওয়ার ফলে সাময়িক স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে। এর লক্ষণ হল, দু’-তিন দিন আগের কথা হয়তো রোগী সম্পূর্ণ ভুলে গেলেন।

নিয়ম না মেনে মুঠো মুঠো ঘুমের ওষুধ খাওয়া ভুলে যাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ ক্ষেত্রে হয়তো আপনি নতুন কিছু শিখছেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই তা ভুলে যাচ্ছেন।

শারীরিক কারণে ভুলে যাওয়া

• থাইরয়েডের সমস্যার কারণে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

• আবার শরীরে ভিটামিনের অভাবেও ভুলে যাওয়া রোগ হতে পারে।

ভুলে যাওয়া কখন রোগ?

• বর্তমান প্রজন্মে ভুলে যাওয়ার পরিসরটা সব বয়সের মধ্যেই বেড়েছে। এর একটা কারণ ‘ইনফরমেশন ওভারলোড’। বিশেষজ্ঞের মতে, আমাদের এখন এত কিছু মনে রাখতে হয় যে, অনেক সময়ই খেই হারিয়ে ফেলি। সেখান থেকেই ‘ভুলে যাচ্ছি’ এই আতঙ্ক তৈরি হয়। তার সঙ্গে জুড়ে বসে মানসিক অবসাদ, স্ট্রেস ও আধুনিক জীবনযাত্রার আরও নানা ব্যাধি। তবে শিশু হোক বা বয়স্ক, সব সময়ে নজরে রাখতে হবে, ভুলে যাওয়া আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করছে কি না। যদি দেখা যায়, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বারবার ভুলে যাচ্ছি, তবে নিশ্চয়ই সে ব্যাপারে অতিরিক্ত নজর দেওয়া প্রয়োজন। শারীরিক দিক দিয়ে কোনও অসুস্থতা ধরা না পড়লে, তবেই মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, রাস্তায় বেরিয়ে তাঁরা পথ হারিয়ে ফেলেছেন বা বাজারে গিয়ে মনে পড়ছে না কেন বাজারে এসেছেন, এই লক্ষণগুলো ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ বলে ধরা যেতে পারে।

অ্যালঝাইমার আর ভুলে যাওয়া

ডিমেনশিয়ার বিভিন্ন রকমের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো টাইপটি হল অ্যালঝাইমার। আর এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল ভুলে যাওয়া। রোগী সদ্য-শেখা কোনও কিছু ভুলে যেতে পারেন। আবার গুরুত্বপূর্ণ দিন-তারিখও ভুলে যেতে পারেন। একই কথা বারবার জিজ্ঞেস করা, মনে রাখার জন্য ফোনে রিমাইন্ডার বা নোট লিখে রাখার প্রবণতা বাড়াও রোগের অশনি সঙ্কেত। যে জিনিসগুলো ব্যক্তির নিজের মনে রাখার কথা, তার জন্য পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়াও এই রোগের একটি বিশেষ লক্ষণ।

প্রচলিত ধারণা

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এখনও বড়রা উপদেশ দেন, চিনাবাদাম আর ব্রাহ্মীশাক খাওয়ার। একটা চলতি ধারণা আছে, এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড আছে এমন খাবার, যেমন পাম অয়েল, ইলিশ মাছ এই সব খেলে ছোটদের স্মৃতিশক্তি বাড়ে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের মতে, এই ধারণার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
মনে রাখার সহজ উপায়

• শরীরচর্চা, যোগাসন, ধ্যান করলে মনঃসংযোগ বাড়ে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।

• গল্পের বই পড়লে, গান শুনলেও একাগ্রতা বাড়ে। আসলে যে-কোনও বিষয়ে চর্চা করলেই তাতে মনঃসংযোগ বাড়ে। ফলস্বরূপ স্মৃতিশক্তিও বাড়ে।

• সম্প্রতি এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, নতুন কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখলে মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে। আসলে নতুন কোনও বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করলে স্মৃতির পক্ষে তা সব সময়ে ভাল।

• ভুলে যাওয়া একটি নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। তবে দুশ্চিন্তা আর স্ট্রেসের বোঝাকে সামলানো গেলে মনে রাখার প্রক্রিয়াটাও অনেক সহজ হয়ে যায়। আর সব সময় চেষ্টা করুন, নতুন কিছু শেখার।

তথ্য সহায়তা: মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম

মডেল: পাপিয়া

মেকআপ: অভিজিৎ পাল

ছবি: শুভজিৎ শীল

শুটিং কো-অর্ডিনেটর: ঈপ্সিতা বসু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE