একটা সময়ে বাগান তৈরির প্রাথমিক শর্তই ছিল জায়গা। এমনকী বাগান বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ গাছগাছালি ভরা অনেকটা পরিসরের কথা। কিন্তু দিনকাল বদলেছে। তাই ফ্ল্যাটের চৌখুপিতেও ঠিক জায়গা করে নিচ্ছে সবুজের ঢল। যাঁরা বলেন, এখনকার ছোট্ট ফ্ল্যাটে বাগান করার সাধ একেবারে হারিয়ে গিেয়ছে, তাঁরা ভুলই বলেন। কারণ বাগান তৈরির শর্ত বদলে গিয়েছে ইচ্ছেতে। ফলে ফ্ল্যাটের সামান্য করিডোর হোক কিংবা একচিলতে বারান্দা... শখ হলেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন নিজের বাগান।
পরিবারের আর পাঁচ জন খুদে সদস্য বা পোষ্যের উপর যেমন ভালবাসা, স্নেহ থাকে, গাছপালাও তেমনই। সামান্য আদর-যত্নে বে়ড়ে উঠে সেই সমস্ত প্রাণ ছড়িয়ে দিতে থাকে ভালবাসার ছায়া, নরম ওম, ঝলমলে দিন। বাড়িতে তেমন জায়গা না থাকলেও ঘরের লাগোয়া একফালি বারান্দাই এ বার হোক গাছেদের বাসা।
অনেকের বাড়িতেই শীতাতপ যন্ত্র থাকার কারণে বারান্দা থেকে বাড়ির মূল অংশকে আলাদা করা হয় কাচের দরজা দিয়ে। তাই চাইলেই গোটা বারান্দার মেঝের উপর ছড়িয়ে রাখতে পারেন নানা আকারের ছোটখাটো পাথর। এতে বাগানের পাথুরে অনুভূতিও বজায় থাকবে। আবার বারান্দার ভোলও বদলে যাবে এক লহমায়।
বারান্দায় গাছ রাখার ক্ষেত্রে প্রথমেই রেলিংয়ের ধার ধরে একটু মাঝারি আকারের টব লাগাতে পারেন। যে সমস্ত গাছের ওজন ভারী, তারা জায়গা করে নিতে পারে এই ধরনের টবে।
এমন কিছু হালকা গাছ থাকে, যাদের সহজেই ছোট ছোট টবে পুঁতে বারান্দার সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। ছোট ঝুলন্ত বাগান ফ্ল্যাটের ভিতর এবং বাইরে থেকেও নজর কাড়বে সকলের।
ইট-কাঠ আর কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে থাকতে ঘাসের আরামের জন্য মনের আকুলি-বিকুলি করা অস্বাভাবিক নয়। বারান্দার মেঝেয় লাগিয়ে নিতে পারেন মেক্সিকান গ্রাস। নিয়ম মেনে জল দিতে হবে। অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে ঘাস ছেঁটেও দিতে হবে। কিন্তু ফ্ল্যাটের ভিতরের কাচের দরজা খুলে বারান্দায় বেরোলেই পৌঁছে যাবেন সাধের ঘাস-বাগানে।
টবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঠের বাক্স রাখতে পারেন কিংবা স্টিলের টব। এ ছাড়াও অনলাইন কিংবা নার্সারিতে নানা ধরনের রঙিন বাহারি টব পেয়ে যাবেন সহজে। থিম বাগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাখতে পারেন অন্য ধরনের টবও।
ফ্ল্যাটের ডাইনিং, ড্রয়িং কিংবা প্রধান বেডরুম থেকে বেরোনোর পরই বারান্দার দেওয়ালে সারি সারি লাগিয়ে রাখতে পারেন ছোট ছোট টব। বারান্দা যদি রান্নাঘরের লাগোয়া হয়, তা হলে হেঁশেলের বাগান করার জায়গা হিসেবেও বেছে নিতে পারেন বারান্দাকে।
বারান্দায় যদি কড়া রোদ সরাসরি আসে, তা হলে সেই জায়গায় এমন গাছই রাখবেন, যারা সেই রোদ সহ্য করতে পারে। কখনও কড়া রোদ থেকে গাছের টব সরিয়ে ছায়াতেও রাখতে পারেন। রোদ নেমে গেলে আবার ফিরিয়ে দিতে পারেন তাদের পুরনো জায়গায়।
জল দেওয়ার কথা ভুলবেন না যেন। যে গাছের যেমন জল প্রয়োজন, সেই পরিমাণ দেওয়াই শ্রেয়। বৃষ্টির ছাটও গাছকে তরতাজা রাখে। তবে অতিরিক্ত বর্ষণ যে সব গাছ সহ্য করতে পারে না, খেয়াল রাখুন তাদের দিকেও।
আপনার হাতের আদরে লালিত বাগানে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ুক সবুজ ভালবাসা। হোক না তা আপনার একচিলতে বারান্দায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy