পুজোর পর থেকেই একটু ঠান্ডা-ঠান্ডা আমেজ। এই আমেজ বড়দের বেশ ভাল লাগলেও, ছোটদের জন্য ভোগান্তির কারণ। ঝিরঝিরে বৃষ্টির সঙ্গে অসময়ের ঠান্ডায় বাচ্চাদের সর্দি-কাশি হতে বেশি সময় লাগে না। মরসুম বদলের সময়ে বাচ্চাদের সুস্থ রাখবেন কী ভাবে, সেটা জেনে নিন।
সর্দি-কাশি হলে...
অক্টোবরের শেষ থেকে পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে বাচ্চারা চট করে মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে ঠান্ডা লেগে যায়। সাধারণত এই সর্দি-কাশি পাঁচ থেকে সাত দিন থাকে। কখনও নিজে থেকেই সেরে যায়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘সর্দি-কাশি হবে না, তা কখনও হতে পারে না। এগুলো ভাইরাল ইনফেকশন। আর তা হতে হতেই বাচ্চাদের ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়। তবে সর্দি-কাশির ধরনটা খেয়াল করতে হবে। কারণ সোয়াইন ফ্লু হলেও একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। যদি বাচ্চার খাওয়াদাওয়া শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কমে যায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শ্বাস নেওয়ার সময়ে পেট ওঠা-নামা করে, গায়ের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।’’
কী ভাবে ছড়ায়
• বাড়িতে একাধিক বাচ্চা থাকলে একদম ছোট বাচ্চা সবচেয়ে বেশি ভোগে। কারণ বড় বাচ্চা তো বাইরে খেলতে যায়, স্কুলে যায়। সে ইনফেকশন বহন করে নিয়ে আসে।
• স্কুলে বাচ্চারা একসঙ্গে একে অপরের টিফিন ভাগ করে খায়। সেখান থেকেও কিন্তু অনেকের মধ্যে সেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
• ‘‘বয়স্ক সদস্যের থেকেও ইনফেক্টেড হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বাড়ির বড়দের ফ্লু বা হুপিং কাশির ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। একে কুকুন ইমিউনাইজ়েশন বলা হয়,’’ জানালেন অপূর্ব ঘোষ।
• অবশ্য গৃহপালিত পশু থেকে ইনফেকশন হয় কি না, তা নিয়েও মতভেদ আছে। পোষ্য অসুস্থ না হলে বা খুব কাছে না গেলে সাধারণত ভয় পাওয়ার নেই। তবে পাখির থেকে দূরে থাকাই ভাল।
কী ওষুধ দেওয়া যায়
বাচ্চাদের নাক বন্ধ হয়ে গেলে শ্বাস নিতে খুব সমস্যা হয়। তাই স্যালাইন নেজ়াল ড্রপ দিতে পারেন। এতে নাক পরিষ্কার হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ড. অপূর্ব ঘোষের মতে, ‘‘সর্দি-কাশি হলে অ্যান্টি-বায়োটিক সে ভাবে খুব একটা সাহায্য করে না। কিন্তু ঠান্ডা লাগলে শরীরের ইমিউনিটি কমে যায়। ফুসফুসও দুর্বল থাকে, ফলে অন্য ব্যাকটিরিয়া সহজেই বাসা বাঁধে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টি-বায়োটিকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে অবশ্যই তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।’’
বাচ্চার যত্ন দরকার, যন্ত্রণা নয়
• একটু ঠান্ডা লাগলেই অনেক মা-বাবাই বাচ্চার মাথায় টুপি থেকে পা পর্যন্ত মোজা দিয়ে ঢেকে রাখেন। এতে বাচ্চা ঘেমে অহেতুক কষ্ট পায়। বরং এমন পোশাক পরান, যাতে সে আরাম পায়।
• অনেকে আবার দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘর গরম রাখার চেষ্টা করেন। পাখা কমিয়ে দেন, যাতে হাওয়ায় ঠান্ডা না লাগে। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। বাচ্চা ঘেমে গেলে ঘাম বসে ঠান্ডা লেগে যায়। তার চেয়ে ঘরে এমন তাপমাত্রা রাখুন, যাতে বাচ্চার ঠান্ডা না লাগে, আবার সে বেশি ঘেমেও না যায়।
• স্নান করার সময় ঈষদুষ্ণ জলে ভাল করে স্নান করতে দিন। স্নান করলে শরীর চনমনে থাকে। অনেকেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে বাচ্চাকে স্নান না করিয়ে গা মুছিয়ে দেন বা বেশি করে গরম জলে স্নান করান। এ সব করবেন না। এতে বেচারিকে যন্ত্রণা দেওয়াই সার হবে। নিজের ঠান্ডা লাগলে যাতে আরাম পান, ওকেও সেই আরামটা দেওয়ার চেষ্টা করুন।
খাদ্যতালিকায় থাকছে যারা
• সর্দি-কাশি হলে তার সঙ্গে অনেক সময়েই গলায় ব্যথা হয়। ফলে বাচ্চারা সলিড খাবার খেতে চায় না। তাই লিকুইড ডায়েট দিতে পারেন। ফলের রস, চিকেন বা ভেজ সুপ খাওয়াতে পারেন। দেখবেন যাতে বাচ্চারা ফ্লুয়িডটা পায়।
• খেয়াল রাখবেন, আপনার সন্তান যেন পরিমাণ মতো জল খায়। সর্দি হলে শরীর অনেকটাই শুকিয়ে যায়। কড়া ওষুধ খাওয়ার ফলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক পরিমাণে জল খাওয়াতে হবে।
অহেতুক দুশ্চিন্তা করে ব্যতিব্যস্ত হবেন না। বরং বাচ্চাকে নজরে রাখুন। আর প্রয়োজন মতো তাকে সময় দিন এবং যত্ন নিন। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে কিন্তু অসুখ অনেকটাই সেরে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy