Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নস্টালজিক অনুভূতি

হ‌‌ৈমন্তী শুক্লর জন্মদিন উপলক্ষে আইসিসিআর এ অনুষ্ঠিত হল ‘কথায়, গল্পে ও গানে হৈমন্তী’। শুরুতেই শিল্পীর ছাত্রছাত্রীরা সরস্বতী বন্দনা পরিবেশন করলেন। অনুষ্ঠানে সমীর ব্রক্ষ্মচারী মহারাজ শিল্পীর হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে বললেন ‘সরস্বতীর মানসকন্যা’।

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

কথায়, গল্পে ও গানে হৈমন্তী

হ‌‌ৈমন্তী শুক্লর জন্মদিন উপলক্ষে আইসিসিআর এ অনুষ্ঠিত হল ‘কথায়, গল্পে ও গানে হৈমন্তী’। শুরুতেই শিল্পীর ছাত্রছাত্রীরা সরস্বতী বন্দনা পরিবেশন করলেন। অনুষ্ঠানে সমীর ব্রক্ষ্মচারী মহারাজ শিল্পীর হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে বললেন ‘সরস্বতীর মানসকন্যা’। গানের শুরুতেই ‘সেদিন আর কত দূরে’ পরিবেশন করলেন সুকন্যা কর্মকার, ইন্দ্রাণী পাল প্রমুখ। এ ছাড়াও বিবেক দত্তের ‘তোমার কাছে এ বর মাগি’ এবং সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এমন স্বপ্ন কখনো দেখিনি আমি’ মন্দ নয়। রাজকন্যা বসুর নৃত্য উপস্থাপনা ‘সূর্যোদয়ের দেশে’ তালিমের ছাপ স্পষ্ট। এ দিন হৈমন্তীর কথায় ফুটে উঠল নস্টালজিক অনুভূতি। ১৯৭৪ সালে ‘আমি সে ও সখা’ ছবিতে প্রথম প্লে ব্যাক করতে গিয়ে সেই প্রথম উত্তমকুমারকে দেখার দুর্লভ অভিজ্ঞতার কথা। দ্বিতীয় পর্বে হৈমন্তী গাইলেন ‘কেন এত মনে পড়ে তোমারে’, ‘প্রথমে সকাল, শেষে সন্ধ্যা’। তবে শিল্পীর কণ্ঠে ‘ঠিকানা না রেখে’ এবং ‘ও বাঁশি কেন এত মায়া’ এ দিনের সেরা প্রাপ্তি। তবলায় সঙ্গত করেন প্রদীপ ঘোষ, কী বোর্ডে ছিলেন উত্তম মুখোপাধ্যায়। আয়োজক রাগা।
পিনাকী চৌধুরী

প্রথম করেছ সৃষ্ট
লিখছেন বারীন মজুমদার

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ ‘রবিপরম্পরা’র অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বে ছিল সংস্থার ছাত্রছাত্রীদের সম্মেলক গান। শিরোনাম ‘প্রথম করেছ সৃষ্টি।’ বারো মাত্রার তালের নিবদ্ধ বারোটি গান নিয়ে এই চয়ন, যেখানে ছিল চৌতাল, একতাল, চতুর্মাত্রিক একতাল, ত্রিমাত্রিক খেমটা, আড়খেমটা প্রভৃতি। সম্মেলক গানগুলির পরিবেশন আরও উন্নত মানের হওয়া প্রত্যাশিত ছিল। ছোটখাট সুরের ভুল সব মিলিয়ে খুব অগোছালো। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন অনিতা পাল।

দ্বিতীয় পর্বে ছিল ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্য। চণ্ডালিকার জল দানের কৃতার্থতা, মানবকন্যা রূপে স্বীকৃতির গৌরব, মুক্তি এমন কী প্রেমের উন্মেষ-অনুভূতির বিচিত্র রূপ প্রকাশ পায় একসঙ্গে। সেই বিচিত্র অনুভূতির বিভিন্ন অংশ নিয়ে এক সময় গানগুলির সঙ্গে ভাষ্য রচনা করেছিলেন সুচিত্রা মিত্র। বর্তমান প্রযোজনাটি সেইটিরই পুনরাবৃত্তি। প্রযোজনাটি স্বয়ং সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে শোনার সুযোগ ঘটেছিল প্রতিবেদকের। সে দিন তাঁর গান ও পাঠের সহযোগী শিল্পী ছিলেন সুবীর মিত্র। যিনি এ দিনও ছিলেন পাঠে আর গানে ছিলেন সুচিত্রা মিত্রের দীর্ঘ দিনের ছাত্রী অনিতা পাল। নাচে অনিতা মল্লিকা। দুই অনিতাই মা মেয়ের দ্বৈত চরিত্রে রূপদান করেছেন এবং বলতে দ্বিধা নেই উভয়েই সমান সার্থক। গানের অনিতা যে সুচিত্রা মিত্রের ছাত্রী তা বুঝতে পারা যায় অতি সহজেই। বিশেষ করে স্বরক্ষেপণ উচ্চারণ আর যতি বিন্যাসে। অনিতা মল্লিক দুই চরিত্রেই অনবদ্য। তিনি শাস্ত্রীয় নৃত্যের শিল্পী হলেও সৃজনশীলতা ছিল উপস্থাপনার প্রধান উপাদান। সুবীর মিত্র কখনও বাচিক শিল্পীদের মতো উচ্চকিত হন না। তাঁর পাঠে সব সময়েই থাকে সুচিন্তিত এক সৌন্দর্য।

গ্রিক নাটকের মেজাজ
‘ইলেকট্রা’ নাটকটি দেখলেন পিয়ালী দাস

হত্যার বিরুদ্ধে হত্যা? প্রতিশোধের পাল্টা প্রতিশোধ! এর শেষ কোথায়? হয়তো নেই। সেই প্রাসঙ্গিকতার জায়গা থেকেই বোধ হয় পুনরাবৃত্তি ঘটে দু’হাজার বছরের প্রাচীণ গ্রিক নাটকেরও। বাংলা থিয়েটার কোলকাতা-র প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল সফোক্লিস ও ইউরিপিডিস্ অনুপ্রাণিত নাটক ‘ইলেকট্রা’। পরিচালনায় অভিজিৎ দাশগুপ্ত। এ নাটকে আরোপিত সমসাময়িকতা প্রত্যক্ষ করা না গেলেও, সময়ের দ্বন্দ্বগুলো মূল কাহিনিকে অক্ষুণ্ণ রেখেই উঠে আসে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা। গল্পটা জানা। তবুও সংক্ষেপে বলা যাক। দৈব নির্দেশে আরগসের রাজা আগামেমনন ট্রয় অভিযানের আগে হত্যা করেন কন্যা ইফিজিনিয়াকে। প্রতিশোধে ট্রয় জয়ী আগামেননকে ফেরা মাত্র হত্যা করেন পত্নী ক্লাইটেমনেস্ট্রা। এরপর তিনি বিবাহ করেন প্রেমিক ইজিস্থাসকে। ইলেকট্রা সেই অন্যায় হত্যার প্রতিশোধ নেয় মা ক্লাইটেমনেস্ট্রাকে হত্যা করে। অন্য দিকে পুত্র ওরেস্টিসের হাতে নিহত হয় মায়ের প্রেমিক ইজিস্থাস। ভালবাসা এবং ঘৃণা যেন একই মুদ্রার দুপিঠ। তাই হয়তো ঘটে চলে নির্বোধ হত্যালীলা। অহেতুক ঘৃণায় মৃত্যু হয় সম্পর্কের। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবার।

নাটকের আবহ থেকে মঞ্চসজ্জা, আলোর প্রয়োগ, পোশাক সব কিছুর সংমিশ্রণে ফুটে ওঠে গ্রিক নাটকের মেজাজ এবং সমকাল। ইলেকট্রা-র চরিত্রে রূপদান করেছেন দেবযানী চট্টোপাধ্যায়। এ চরিত্রের প্রতিশোধ স্পৃহা, যন্ত্রণায় দ্বগ্ধ হওয়া, দ্বন্দ্ব— সাবলীল ভাবেই উঠে আসে দেবযানীর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ে। স্বরক্ষেপণও প্রশংসার দাবি রাখে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন ওরেস্টিস-এর ভূমিকায় প্রতীক দত্ত। ইজিস্থাস-এর মৃত্যু দৃশ্যে বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ভাল লাগে কোরাস গান ও নৃত্যে কথকদের ঘটনা বর্ণনার দৃশ্য কিংবা জীর্ণতা, মলিনতা সরিয়ে নবীনের বার্তা বয়ে আনার দৃশ্য। ইলেকট্রার মাকে হত্যা করার পূর্বে তার মুখোমুখি হওয়া এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার টানটান দৃশ্য রচিত হয়। অভিনয়ে উল্লেখের দাবি রাখেন ক্লাইটেমনেস্ট্রার চরিত্রে নিবেদিতা চক্রবর্তী, পেডাগগাস তপন গঙ্গোপাধ্যায়, ক্রিসোথেমিস শাঁওলী চট্টোপাধ্যায়, ইজিস্থাস অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়, পাইলেডস সৈকত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

দর্পণীর দু’দিন

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় দর্পণীর শিল্পীরা আয়োজন করেছিল দু’ দিনের নৃত্যানুষ্ঠান। ওড়িশি, ভরতনাট্যমের মতো শাস্ত্রীয় নৃত্যের পাশাপাশি বর্ষাকে কেন্দ্র করে রবিঠাকুরের গান ও আবৃত্তি সহযোগে অর্ণব ও সৌমিলির দ্বৈত নৃত্যে আবেগ ও অনুভূতির প্রকাশ ঘটে ‘ভরা ভাদর’ উপস্থাপনাটিতে। দৈনন্দিন জীবনের কর্মব্যস্ততা গ্রাস করে বর্তমানের স্বপ্ন। অর্ণব এই বাস্তবটিকে উপলব্ধি করেছেন মহাভারতের অভিমন্যু আখ্যানটিতে। যার ফলশ্রুতি ‘যুগান্ত’ প্রযোজনাটি। অভিমন্যুর জীবনের আক্ষেপ, টানা-পড়েন ও বলিদান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে অর্ণবের সুচারু নৃত্যবিন্যাসের মাধ্যমে। শাস্ত্রীয় নৃত্যের সঙ্গে ছৌ, কলারিপায়টু, লোকনৃত্য ও থিয়েটারের সমন্বয়ে অভিমন্যুর জন্ম, পাশাখেলা, চক্রব্যূহ , বৃহন্নলার নিকট উত্তরার নৃত্যশিক্ষা, কৌরব ও অর্জুনের যুদ্ধের দৃশ্যগুলি ছবির মতো দর্শকের সামনে উপস্থাপিত হয়। অর্ণবের এই প্রয়াস প্রশংসনীয়। রবিঠাকুরের ‘মায়ার খেলা’র মায়া ছিল অর্ণবের অনবদ্য প্রযোজনা। মায়ার ভূমিকায় অর্ণব, অমর হয়েছিলেন মনোজিৎ সাহা। শান্তা অলোকপর্ণা গুহ ও প্রমোদা অলকানন্দা রায়।
চৈতি ঘোষ

কথা বলে কবিতা

জঞানমঞ্চে উদীচীর গান ও পাঠের অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেদোচ্চারণ। প্রথমেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন মাধবী দত্ত। পরিশীলিত কণ্ঠে প্রতিটি গানই মন কাড়ে শ্রোতাদের। বাচিক শিল্পী অর্ণব চক্রবর্তী উদাত্ত কণ্ঠে শোনালেন রবীন্দ্রনাথের ‘সীমায় প্রকাশ’ কবিতাটি। শিল্পীর নির্বাচনে ছিল ১৮টি কবিতা। সব শেষে ছিলেন বিজয়লক্ষ্মী বর্মন। তাঁর নির্বাচনে ছিল বিমলচন্দ্র ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজাত, জয় গোস্বামী প্রমুখ। শিল্পীর কণ্ঠে প্রতিটি কবিতাই এক অন্য মাত্রা পায়।

লোকগান, রবির গান

সম্প্রতি রামমোহন মঞ্চে সুনন্দা ঘোষ শোনালেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ও লোকগান। প্রথমেই গাইলেন ‘দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ’। যা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’ বাউলাঙ্গের এই গানটি। পরের গান ‘ভাল কইরা বাজান রে দোতারা’ পরবর্ত়ী নিবেদনে ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’ দাদরা তালে। ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির’ গানটিও অন্য মাত্রা পায় শিল্পীর কণ্ঠে। ‘মন মাঝি’ গানটির প্রেরণায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন‘এবার তোর মরা গাঙে’। সবশেষে শিল্পী গাইলেন ‘হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতালে’ এবং রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’। দুটি গানেই শিল্পীর প্রশংসা প্রাপ্য।

নব আনন্দে

সম্প্রতি ‘নব আনন্দে জাগো ২০১৬’ শীর্ষক তিনদিনের উৎসবে পরিবেশিত হল রবীন্দ্রনৃত্য, সংগীত ও ওড়িশি নৃত্য। দ্বিতীয় দিনে ছিল শিশুশিল্পী সৌমিলী মান্নার একক রবীন্দ্রনৃত্য। পরে ছিল অনুষ্কা রায়চৌধুরী, শতাক্ষী সেন, শুভমিতা মজুমদার, পায়েল মান্না প্রমুখের সমবেত ভরতনাট্যম। শব্দমে ছিলেন শাওনি মুখোপাধ্যায়। এই দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় লোকশিল্পী সহজ মায়ের সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। তৃতীয় দিনে কচিকাঁচাদের ‘মাছি নৃত্য’ সবাইকে আনন্দ দেয়। এ দিন রবীন্দ্রনৃত্য ছাড়াও মঞ্চে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে অনুষ্ঠিত হয় কত্থক নৃত্য। নৃত্য পরিবেশনায় প্রধান আকর্ষণ ছিল ধামার তাল, ঝাপতাল, ত্রিতাল তারানা ও ‘কালীয়দমন’। কালীয় সর্পের ভূমিকায় শ্রীজা সরকার ও কৃষ্ণের ভূমিকায় ঐশী ভট্টাচার্যের নৃত্য প্রশংসা কুড়োয়। ত্রিতাল তারানায় হিয়া দত্ত কত্থকের নান্দনিক দিকটি পরিস্ফুট করেছেন। পরিচালনায় ছিলেন রীতা মান্না। শেষে ছিল ‘সুরজিৎ ও বন্ধুরা’। আয়োজক আনন্দপুর আনন্দম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE