Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নতুন ভাবনা, পরিকল্পনা অনেকটাই দূরে

ইনোভেশনস-এর সদস্যদের কাজ নিয়ে অ্যাকাডেমির প্রদর্শনী দেখতে দেখতে এমনই মনে হল। মাত্র দু’জন তকমাপ্রাপ্ত, বাকি চার জন প্রায় স্বশিক্ষিত।

রঙিন: ‘ইনোভেশনস’ প্রদর্শনীর কাজ। অ্যাকাডেমিতে

রঙিন: ‘ইনোভেশনস’ প্রদর্শনীর কাজ। অ্যাকাডেমিতে

অতনু বসু
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৯
Share: Save:

দলীয় প্রদর্শনীগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই কিছুটা একঘেয়েমি থাকে। শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাপ মারা বিদ্যা আয়ত্ত করেও চর্চার অভাবে মার খেয়ে যায় অনেকের কাজ। বিপরীত ভাবে স্বশিক্ষিত কেউ কেউ দিব্যি বুঝিয়ে দেন, সিরিয়াস অধ্যবসায় অনেকটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করে— যদি অনুকূল পরিস্থিতি সঙ্গে থাকে, সেই সঙ্গে গভীর ইচ্ছে এবং মানসিকতা।

ইনোভেশনস-এর সদস্যদের কাজ নিয়ে অ্যাকাডেমির প্রদর্শনী দেখতে দেখতে এমনই মনে হল। মাত্র দু’জন তকমাপ্রাপ্ত, বাকি চার জন প্রায় স্বশিক্ষিত।

পিনাকী মুখোপাধ্যায় বড় উজ্জ্বল নিসর্গ এঁকেছেন। বড্ড খেটেছেন এবং ফিনিশিংয়েও মন দিয়েছেন। তবু তাঁর ছবি ক্যালেন্ডার ল্যান্ডস্কেপের অত্যন্ত কাছাকাছি। এখানেই কম্পোজ়িশন ও ট্রিটমেন্টকে বুঝতে হবে। সেই সঙ্গেই রঙের অস্তিত্ব ও প্রয়োগ। ধরে ধরে সূক্ষ্মতার দিকে যেতে গিয়ে ছবির চরিত্র কী ভাবে চিত্রগুণ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারেননি। আলো কি পরিপ্রেক্ষিতের সামনে ও দূরে একই রকম হয়? আর ওই প্রকট উজ্জ্বলতা কী করে হয়? রচনার বহু জায়গাতেই গাঢ় উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার ভীষণ এক কাঠিন্য এনেছে ছবিতে। অথচ বৃহৎ নিসর্গের পরিমিত আলো-আঁধারির নৈঃশব্দ্যে শাখাপ্রশাখা, পত্রগুচ্ছ ও জল যেন একে অন্যকে সুখদুঃখের কাহিনি শোনাচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে তাঁর কাজ কিন্তু চোখের আরাম! অন্য ক্ষেত্রে অনেক ভাবতে হবে।

কিছু কিছু দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও পঞ্চানন দাস চেষ্টা করে গিয়েছেন জলরঙের অতি স্বচ্ছতাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে, শহুরে জনপদের বর্ষাস্নাত রূপটিকে প্রকাশ করার। এ ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান সমস্যা তৈরি হলেও উতরে গিয়েছে সামগ্রিক রূপারোপে। প্রথমত ড্রয়িং, স্পেস, অ্যারেঞ্জমেন্ট। এ সবের ভারসাম্য নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। দ্রুত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া রচনা শেষ পর্যন্ত মার খেয়ে যায়। যেমন ট্রাম নিয়ে করা কাজটিতে কতটা জায়গায় কাজ হবে আর কতটা ছাড়তে হবে, এই বোধ কাজ করেনি। ভেজা আবহে রঙের কমবেশি অংশ ছেড়ে দেওয়ার মুনশিয়ানা থাকতে হয়। নইলে জলরঙের পূর্ণাঙ্গ মজাটা খুবই আটকে যায়। তিনি কি মিলিন্দ মালিককে অনুসরণ করেছেন? না কি অনুকরণ? হেলান দিয়ে দাঁড় করানো সাইকেল, একটা অটো, বাড়িঘর— এই কাজ তো অন্যগুলোর সঙ্গে একেবারেই যায় না। না ট্রিটমেন্টে, না টেকনিেক কি ড্রয়িংয়ে। কারণটা কী? স্টাইলেও আকাশ-পাতাল তফাত!

প্যাস্টেলে করা প্রায় অন্ধ সবুজ সাধুর রচনায় বিস্তর সুযোগ ছিল বিভিন্ন রূপবন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবহার আনার। পার্থ দাস তা করার চেষ্টাই করেননি। অযথা পটভূমিতে চাঁদ ও আলো-অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রবাহের মতো ড্রয়িংয়ে অসম্পূর্ণ ছবি করলেন। তার উপরে অন্য সাধুটির ঠোঁট এত রক্তাক্ত লাল কেন?

মিশরীয় ছবির আংশিক স্টাইলে চোখমুখ-উষ্ণীষ। আবার গোলাপ-সহ লতাপাতার সবটাই প্রতিচ্ছায়াবাদের ব্যানারের মতো। ধরে বুঝে কাজ করেননি মোটেই। ছবি তৈরির চেষ্টাটা পাওয়াই গেল না। আসলে অস্থিরতা কখনও ছবির প্রতীকসম রূপকল্পের মূল্যায়ন করে না। অলৌকিকত্বের প্রখর ঔজ্জ্বল্যে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তা চৌধুরী নন্দীর কাজ।

এক মাত্র সমীরণ সরকারই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়— নৌকার শ্রেণি, ঘাট, বিস্তীর্ণ জলরাশি, আকাশ, দীর্ঘ সিঁড়ি, মন্দির, আলোকোজ্জ্বল পথঘাট কিংবা রোদ্দুর আটকে যাওয়া আলোআঁধারি রাস্তা, নৈঃশব্দ্য ও যানবাহনের তীব্র কোলাহল...সব কিছুই অ্যাক্রিলিকের ছোট বড় ছবিতে চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন। যদিও কোথাও ছায়াতপের গাঢ়ত্ব মার খেয়েছে, তবে আলো ও অন্ধকার ভরা নৈসর্গিক সকাল-সন্ধে দেখিয়ে দেয়, ওঁর পেন্টিং কোয়ালিটির বোধ রীতিমতো পরিষ্কার। একটু বেশি পরিচ্ছন্ন ছবি করতে গিয়ে কোথাও কাঠিন্য এসেছে সন্দেহ নেই— কিন্তু সিঁড়ির দু’পাশে মানুষ, মুরগি এবং রৌদ্রস্নাত সিঁড়ির আলোছায়া ও তার পরিপ্রেক্ষিত সমগ্র ছবিকে জলরঙের মুনশিয়ানাতেও যেন আলোকচিত্রের মায়ায় ভরিয়ে দেয়। আলোছায়ার কাব্যিক সুষমা কংক্রিট স্থাপত্যকেও আশ্চর্য রোমাঞ্চকর করে তোলে!

প্রদর্শনীতে সুনীতা পালের কাজ আপাতদুর্বল ঠেকে। আর একটু প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Painting Exhibition Academy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE