Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

এ যেন নতুন প্রাপ্তি

ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন-এর অনুষ্ঠানে। লিখছেন শিখা বসু।রবীন্দ্র সৃষ্টির উপর থেকে বিশ্বভারতীর স্বত্ব চলে যাবার পর ভয় ছিল কবির যাবতীয় সম্ভারে চরমতম বিকৃতির। তেমনটি ঘটেনি একেবারে তাও নয়। তবু তারই মধ্যে কত শিল্পী, কত শিক্ষক যে নীরবে কাজ করে চলেছেন। প্রমিতা মল্লিক তাঁদেরই একজন। শিল্পীর ভূমিকা থেকে নিজেকে একেবারে সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র নিজের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটকের গানের আয়োজন করা কম সাহসের কথা নয়।

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:১১
Share: Save:

রবীন্দ্র সৃষ্টির উপর থেকে বিশ্বভারতীর স্বত্ব চলে যাবার পর ভয় ছিল কবির যাবতীয় সম্ভারে চরমতম বিকৃতির। তেমনটি ঘটেনি একেবারে তাও নয়। তবু তারই মধ্যে কত শিল্পী, কত শিক্ষক যে নীরবে কাজ করে চলেছেন। প্রমিতা মল্লিক তাঁদেরই একজন। শিল্পীর ভূমিকা থেকে নিজেকে একেবারে সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র নিজের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটকের গানের আয়োজন করা কম সাহসের কথা নয়। আইসিসিআর-এর মঞ্চে এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল তাঁরই প্রতিষ্ঠান ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন।

ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চার দিন ধরে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্র-নাটকের গান। সমবেত, দ্বৈত, একক। এই ধরনের অনুষ্ঠানের অসুবিধে যে আলাদা করে কারও নাম উল্লেখ করার সুযোগ প্রায় থাকেই না। কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায় বেশির ভাগ গান, বিশেষ করে একক গানগুলি ভারী সুগীত। মন কাড়ে সমবেত গাওয়া চিরকুমার সভার ‘না বলে যায়’। ভাল লাগে সমবেত ‘সকল কলুষ তামস হর’। চমৎকার অনুভবে লাবণ্যে একটি করে একক গান নিবেদন করলেন বল্লরী আর সোমা। নটীর পূজার ‘আর রেখো না’ আর রক্তকরবীর ‘ও চাঁদ চোখের জলে লাগল জোয়ার’ কী যে ভাল গেয়েছেন এঁরা। বিশেষ করে ‘চোখের জলে’। দ্বৈত কণ্ঠে শেষরক্ষার ‘ওরে যায় নাকি জানা’ সুগীত। ভাল লাগে একক গান চণ্ডালিকার ‘আমি তোমারই মাটির কন্যা’। মন ভরাল শেষ পর্বে শুধু ছেলেদের গলায় ‘গগনে গগনে যায় হাঁকি’ আর সমবেত গাওয়া তাসের দেশের ‘চিরেতন হরতন ইস্কাবন’। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য দ্বৈত গান ‘না চাইনে’।

প্রমিতা মল্লিকের ছাত্রছাত্রীরা ভাল গাইবেন এটা কিছু বিস্ময়কর নয়। কিন্তু অবাক হবার পালা ছিল প্রমিতার ভাষ্যপাঠে। কী অবলীলায়, সহজ সাবলীলতায় নাটকের নারী-পুরুষ উভয়ের প্রয়োজনীয় সংলাপ অংশ একাই পড়ে যান—তার কাছে পাওয়া, তাঁর গানের বাইরে এ এক নতুন প্রাপ্তি।

মরমি ভাবনা

সুলগ্না বসু

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে মানসী বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক আবৃত্তির আসরে নিবেদন করলেন কিছু ভিন্ন স্বাদের কবিতা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল সুছন্দা ঘোষের দুটি গান- ‘আমি তোমার সঙ্গে’ এবং ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায়’। তাঁর কণ্ঠের দরাজ অথচ মরমি ভাবনাটি হৃদয়স্পর্শী। মানসীর অনুষ্ঠানের আগে তাঁকে শুভেচ্ছা জানালেন জগন্নাথ বসু, উর্মিমালা বসু এবং সুবোধ সরকার। মানসীর নিবেদনে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘এই তীর্থদেবতার’, ‘একদিন সমস্ত যোদ্ধা’, ‘ভিখিরি ছেলের অভিমান’, ‘বারাঙ্গনা’, ‘শাড়ি’। তাঁর নির্বাচনে ছিল বৈচিত্র্য, চর্চা ও অনুশীলনের ছাপ ছিল তাঁর নিবেদনে। স্বরক্ষেপণ ও স্বর নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা প্রকাশিত হলেও উচ্চারণে কোথাও কোথাও আড়ষ্টতা ছিল। তবে তা সামান্যই। তরুণ বারিকের মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিল শৈল্পিক ভাবনা। পরিশেষে একটি কথা, একক অনুষ্ঠান পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত পর্যায় বিন্যাসের মধ্য দিয়ে কবিতা নির্বাচন করলে তা আরও মনোগ্রাহী হয়ে উঠতে পারে।

উপলক্ষ নারী

জয়তী রাহা

এক অন্য আবৃত্তির সন্ধ্যা। মেয়েদের কলমে ফুটিয়ে তোলা বেশ কিছু কবিতা নিয়ে এই নারীসংকলনের সাম্প্রতিক পরিবেশনা হয়ে গেল উত্তরের মোহিত মৈত্র মঞ্চে। নির্বাচিত কয়েকটি কবিতার সঙ্গে ছিল নৃত্যের উপস্থাপনাও। পাঠে ছিলেন আবৃত্তি সংস্থা ‘বোধিদ্রুম’-এর ছাত্রছাত্রীরা। সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন শর্মিষ্ঠা বাগ। যদিও কয়েকটি কবিতা শ্রোতাদের বেশ দীর্ঘ মনে হয়েছে।

ফিরে এসো আগুন

আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ ছিল বাচিক শিল্পী কাজল সুরের পরিচালনায় ‘মেঘমল্লার’ প্রযোজিত একটি কবিতা-সন্ধ্যা ‘ফিরে এসো আগুন’। স্থান সুকান্ত সদন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল এটি দু-ঘন্টার একটি আখ্যান – অস্থির সময়ের এক প্রামাণ্য চালচিত্র। পরিমিত সঙ্গীত, আলো, মঞ্চ এবং প্রায় তিরিশ জন বাচিক শিল্পীর, পঞ্চাশজন কবির কবিতার নির্মেদ উচ্চারণে মঞ্চ জুড়ে ধ্বনিত হয় – ‘দখল চাই, দখল চাই’।

তখন বুঝতে অসুবিধে হয় না যে এই দখল কখনও ভূখন্ডের দখল; কখনও অর্থনৈতিক দখল কিংবা কখনও বা খুন-ধর্ষণ-নির্যাতন সন্ত্রাসের মাধ্যমে একছত্র আধিপত্য কায়েম করার অন্ধ-অপপ্রয়াস। তাই উত্তরণের পথ হিসেবে কবিতার মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়েছে বিদ্যাসাগর, রামমোহন, বিনয়-বাদল-দীনেশ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির মতো মনীষীদের। তাই মঞ্চে বিভিন্ন পাঠে আহ্বান জানানো হল সুস্মিতা-পায়েল,-তাপসী-রূপালী-শীলা-রঞ্জিত-মীনাক্ষী-কৃষ্ণা-ইলা-দোলা-রাজদীপ-শ্রাবণীদের। স্বাভাবিকভাবেই কাজলের দরাজ কন্ঠের আবৃত্তি ও ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে’ নচিকেতার গানের সঙ্গে মেঘমালার অপূর্ব নৃত্য দর্শকদের বেশ ভাল লাগে। এ ছাড়াও মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রযোজনাটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এ ধরণের প্রযোজনা এখন খুব বেশি দেখা যায় না। এ জন্য ধন্যবাদ পাবেন কাজলবাবু।

তিনি যে কান্তকবি

সম্প্রতি কান্তকবি রজনীকান্তের সার্ধশত জন্মবর্ষ উদযাপন হল ইন্দুমতী সভাগৃহে। উদ্যোক্তা বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। প্রয়াত সুমিত্রা চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বক্তা ও শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীলা মজুমদার। রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ ও দ্বিজেন্দ্রলালের গানের প্রবীণা শিল্পী নীলা মজুমদার এদিন পরপর অনেকগুলি রজনীকান্তের গান শোনালেন। ‘তুমি নির্মল কর’, ‘তোমারি দেওয়া প্রাণে’, ‘তুমি আমার অন্তঃস্থলের খবর জান’ প্রভৃতি গানগুলি মুগ্ধ করে শ্রোতাদের। এর পর অপর দুই গীতিকার সুরকার অতুলপ্রসাদ সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সঙ্গে রজনীকান্তের গানের সমত্ব ও স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করলেন তিনি তাঁদেরই গানের সহযোগে। প্রেম পর্যায়ের গানে মিশ্র কানাড়ায় একতালে রজনীকান্তের ‘স্বপনে তাহারে কুড়ায়ে পেয়েছি’ গানটি গেয়েই চলে গেলেন পাশ্চাত্য প্রভাবিত সঙ্গীত ধারায় দ্বিজেন্দ্রলালের সৃষ্টি ‘আমরা মলয় বাতাসে ভেসে যাব’ গানটিতে। অপূর্ব পরিবেশনা। আবার অতুলপ্রসাদের প্রেমসঙ্গীত রচনায় কবির ব্যক্তিজীবনের হতাশা, বিষাদ, আক্ষেপ কীভাবে ফুটে উঠেছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করে শিল্পী নিবেদন করলেন ‘ওগো নিঠুর দরদী’ গানখানি। সব শেষে ছিল কয়েকটি রজনীকান্তের গান। নীলা তাঁর সুমিষ্ট কন্ঠে কখনও শোনালেন বেহাগ রাগে আশ্রিত ‘শুনাও তোমার অমৃতবাণী’ কখনও বাউলাঙ্গে ‘প্রেমে জল হয়ে যাও গলে’। শিল্পীর শেষ নিবেদনে ছিল ‘আমি তো তোমারে চাইনি জীবনে’। গানটি ছিল এ দিনের সেরা প্রাপ্তি। ভক্তিরসের প্লাবনে এই গানখানি আপ্লুত করে তুলল শ্রোতাদের অন্তর।

শুধু একক নয়

দিলীপ কুমার রায়ের ১১৮ তম জন্মদিন উপলক্ষ ‘সুর কাব্য ট্রাস্ট’ আইসিসিআর-এ আয়োজন করেছিল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শৌনক চট্টোপাধ্যায়। শৌনকের নিবেদনে ছিল দিলীপ কুমার রায় রচিত এবং সুরারোপিত নির্বাচিত কিছু গান। স্মরণীয় হয়ে রইল দুই-প্রবাসী শিল্পীর অংশগ্রহণেও। এদিন নৃত্য পরিবেশন করেন কেলুচরণ মহাপাত্র’র শিষ্যা মৌলি পাল। বিশেষত্ব ছিল, ধ্রুপদী নৃত্য ধারার সঙ্গে দিলীপ কুমার রায়ের সঙ্গীতের মেলবন্ধন। অভিনব সেই উপস্থাপনা। শিরোনাম ছিল ‘মধু মুরলী বাজে’। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুজাতা ভট্টাচার্য। তাঁদের যৌথ পরিবেশনায় মুগ্ধ হলেন শ্রোতারা।

মনে পড়ে

‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’, ‘সে দিনের সোনাঝরা সন্ধ্যায়’ গানগুলির গীতিকার পবিত্র মিত্রকে নিয়ে আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠান করলেন সৃষ্টি পরিষদ। নির্মলা মিশ্র, অলক চট্টোপাধ্যায়ের পরে গান শোনালেন সৈকত মিত্র, চন্দ্রাবলী রুদ্রদত্ত, শমীক পাল প্রমুখ। মাতিয়ে দিলেন দীপাবলী, মধুরিমা, মানালি, বিভবেন্দু। সব শেষে অলক রায়চৌধুরীর নিবেদনে ছিল পবিত্র-সুধীরলাল-সতীনাথ ঘরানায় সাবেকি ঐতিহ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE