Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তিন গানের ধারায়

ধ্রুপদাঙ্গ, খেয়ালাঙ্গ ও টপ্পাঙ্গ। লিখছেন বারীন মজুমদারমঞ্চের সামনে রবীন্দ্রনাথের বিশাল প্রতিকৃতি ও চরণ প্রান্তে কিছু ফুল ছড়ানো। বিড়লা সভাঘর-এ ‘চরণ দরশ আশে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক অনুষ্ঠানে রাহুল মিত্র শোনালেন ধ্রুপদাঙ্গ, খেয়ালাপ ও টপ্পাঙ্গের গান। তিনটি গানের ধারাকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনও অনুষ্ঠান এর আগে সম্ভবত হয়নি। রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান ‘ডাকিছ শুনি জাগিনু প্রভু’ এই গানটির দ্বিতীয় পঙক্তিতে আছে ‘আঁখি ফুটিল, চাহি উঠিল চরণ দরশ আশে’।

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

মঞ্চের সামনে রবীন্দ্রনাথের বিশাল প্রতিকৃতি ও চরণ প্রান্তে কিছু ফুল ছড়ানো। বিড়লা সভাঘর-এ ‘চরণ দরশ আশে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক অনুষ্ঠানে রাহুল মিত্র শোনালেন ধ্রুপদাঙ্গ, খেয়ালাপ ও টপ্পাঙ্গের গান। তিনটি গানের ধারাকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনও অনুষ্ঠান এর আগে সম্ভবত হয়নি। রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান ‘ডাকিছ শুনি জাগিনু প্রভু’ এই গানটির দ্বিতীয় পঙক্তিতে আছে ‘আঁখি ফুটিল, চাহি উঠিল চরণ দরশ আশে’। নির্জন সমুদ্রতট, এক প্রাচীন দেউল, ভক্তসমাগমের কথা (যে পরিপ্রেক্ষিতে এদিনের বিষয়বস্তু) বলতে গিয়ে শিল্পী বলেছেন ‘এই তিন নদীনালা (ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা) রবীন্দ্রগানের তিনখানি অভিন্ন বহমান ধারা। গানের বিস্তীর্ণ ভুবনে চিরসঞ্চারী সুধার ধারা। বর্তমানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের জনপ্রিয়তা কিছুমাত্র গান নিয়ে। রাহুল প্রত্যেকবার বিষয়বস্তুর ভাবনা অনুযায়ী গান নির্বাচন করেন। সেই থেকেই শ্রোতারা পেয়ে যান বহু অপ্রচলিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের সন্ধান।
প্রথম পর্বে ছিল ধ্রুপদাঙ্গ যেগুলি মূলত প্রার্থনার গান। গানগুলিতে তাঁর যে অনুভব ধরা পড়ল তা দিয়েই নিরাকার দেবতার উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান হয়ে গেল যা আসলে তাঁর হৃদয়ের কথা। এই চয়নে আছে মনন আর চিন্তার সার্বিক সংমিশ্রণ। চৌতাল, একতাল, সুরফাঁকতাল, আড়াচৌতাল, ধামারে নিবদ্ধ গানগুলির সংযুক্তিকরণ যেভাবে এসেছে তার থেকেই বিষয়বস্তুর ছবিটা সুষ্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথম পর্বে প্রথম গান ছিল ‘চিরদিবস নব মাধুরী’ ও শেষে এল ‘নিত্য নব সত্যতর’। ধ্রুপদাঙ্গ গানের গায়কিতে, বাণী উচ্চারণে, যতি বিন্যাসে, ছন্দের সৌকর্যে গানগুলি এমন সব মুহূর্ত তৈরি করে যাতে শ্রোতারাও তাঁর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় গান ‘আজি হেরি সংসার অমৃতময়’ গানটির সঞ্চারীতে আছে ‘অতি আশ্চর্য দেখো সবে – দীনহীন ক্ষুদ্র হৃদয়মাঝে – অসীম জগতস্বামী বিরাজে সুন্দর শোভনা’ প্রত্যেক শ্রোতার মনেই রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি সতত বিরাজে। শিল্পী গানের সাহিত্যমূল্য অনুধাবন করেছেন বলেই সুরে তালে সবাইকে আনন্দিত করেছেন। যে গানগুলি তিনি এই পর্বে গাইলেন তার মধ্যে পূর্ণ আনন্দ পূর্ণ মঙ্গল রূপে, শুভ্র আসনে বিরাজ, আজি রাজ আসনে, সুধাসাগর তীরে, হরষে জাগো আজি স্বরূপ তাঁর কে জানে। জগতে তুমি রাজা, পেয়েছি সন্ধান তব গানগুলি অতীব সুগীত ও তার মধ্যে থেকেই উঠে আসে ‘চরণদরশ আশে’র কামনা।

দ্বিতীয় পর্বে রাহুল শোনালেন ১৬ টি খেয়ালাঙ্গ ও ৬ টি টপ্পাঙ্গের গান। ধ্রুপদাঙ্গের সঙ্গে খেয়ালাঙ্গ গানের যে পার্থক্য তাই ধরা পড়ল তাঁর কণ্ঠের লাবণ্যে। লয় তালের বোধ এবং পরিবেশনের মাধ্যমে। এই পর্বে ছোট ছোট মিড়ের কাজ, স্বরলিপির ব্যবহার সবই এক বিশেষ ঘরানাকে মনে করায় – যে ঘরানা তাঁর শিক্ষাগুরু ঋতু গুহর। যে প্রভুর উদ্দেশ্যে তিনি ডাক দিলেন প্রথম পর্বে দ্বিতীয় পর্বে, তাই দেখতে পেলেন ‘তোমার দেখা পাব বলে এসেছি হে সখা’, যেখানে রবীন্দ্রনাথ অন্ধকার মোচনের আশা করেছেন। আর শেষ করলেন ‘আলো জ্বালো হৃদয়দ্বীপে অতি নিভৃত অন্তরমাঝে’ এই প্রত্যাশায়।

খেয়ালাঙ্গের পরে শোনালেন ৬ টি টপ্পা – এ কী করুণা করুণাময়, এ মোহ আবরণ, তোমায় নতুন করে পাব বলে, হৃদয় বাসনা পূর্ণ হল, কে বসিলে আজি এবং এ পরবাসে রবে কে – যেগুলিতে তিনি বরাবরের মতনই স্বমহিম।

অনুষ্ঠানের আয়োজক উৎসাহ-উদ্ভাস।

শুধু গান নয়

সুলগ্না বসু

সম্প্রতি রোটারি সদনে ‘সারথি’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল আবৃত্তি ও সঙ্গীত সন্ধ্যা। সূচনা সঙ্গীতে ছিলেন সুছন্দা ঘোষ। খুবই পরিশীলিত ও সুচর্চিত নিবেদন – ‘আমি তোমার মাটির কন্যা’, ‘এসো শ্যামল সুন্দর’, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’। জয়ন্ত ঘোষ শোনালেন আবৃত্তি। তিনি শুরু করলেন ‘অথর্ববেদ’-এর অনুবাদ দিয়ে। এরপর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে জীবনানন্দ-বিভিন্ন কবির কবিতার তাঁর অনায়াস চলন মনোমুগ্ধকর। তাঁর কণ্ঠগাম্ভীর্য আছে, তবে ভাবের প্রতি আরও সুবিচার বাঞ্ছিত।

শ্রীমন্তি দাশগুপ্ত নবীন আবৃত্তি শিল্পী। তাঁর নির্বাচন সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিত। ভাল লেগেছে অপরাজিতা, মেঘবালিকা, পাঞ্চালীর ক্রন্দন, মৃণালের পত্র। ইমন চক্রবর্তীর সংগীত উপস্থাপনা আকর্ষণীয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও লোকগান ছিল তাঁর নিবেদনে। ভাল লেগেছে লোকগানের কোলাজ। সময়াভাবে সারথির কর্ণধার পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান ছিল কিছুটা সংক্ষিপ্ত। তার মধ্যেও উজ্জ্বল উপস্থাপনা ‘বাউল’, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় রচিত কয়েকটি লোক-কবিতা।

রবিগানের দর্শন

রবীন্দ্রনাথের গানে নানা ভাব ও দর্শনকে ছুঁয়ে বহু আলেখ্য এ পর্যন্ত রচিত ও মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কোনও একটি অভিনব প্রসঙ্গ নিয়ে আলেখ্য বড় একটা দেখা যায় না। রবীন্দ্রনাথের আদি যুগের একটি কাব্যগ্রন্থ কথা ছবি ও গান। এই সূত্রে শর্মিষ্ঠা দত্ত পাঠকের আলেখ্য বেশ মনোরম বলা যায়। পরে যেভাবে রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখে লেখা গান আর গানের সঙ্গে আঁকা ছবির বিষয়টিকে উপস্থাপন করেছেন তিনি ও সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়- তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। অসিত কুমার হালদারের লেখা ‘অগ্নিময়ী সরস্বতী’ দেখে তৈরি ‘তুমি যে সুরের আগুন’ দিয়ে শর্মিষ্ঠার নিবেদন শুরু। পরে গাইলেন নন্দলাল বসুর দীক্ষা দেখে ‘নিভৃত প্রাণের দেবতা’, অবনীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি থেকে ‘এ দিন আজি’ প্রভৃতি গান। অন্যান্য গানের মধ্যে ছিল ‘আমার অঙ্গে’, ‘চক্ষে আমার’। তবে ‘বিপুল তরঙ্গ রে’ গানটিতে শিল্পীর কণ্ঠ আরও উদার হলে ভাল হত। পাঠে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

কালের পথিক

গানে সুছন্দা ঘোষ, পাঠে দেবশঙ্কর হালদার। ‘কালের পথিক’ শীর্ষক সংকলনে রয়েছে এমনই দশটি গান, যেখানে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের মহাকাল ও বিজ্ঞান ভাবনার সুন্দর প্রতিফলন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রথম আদি তব’, ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’, ‘আকাশ ভরা সূর্যতারা’, ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায়’ গানগুলি। রচনা ও সংকলনে সুলগ্না বসু। পিকাসো থেকে প্রকাশিত।

হেমন্ত ছায়ায়

রবীন্দ্রসদনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে রাজকন্যা বসুর নৃত্য পরিচালনায় ছিল সংস্থার নৃত্য-শিল্পীদের কোলাজ নৃত্য। এর পর গান শোনালেন হৈমন্তী শুক্ল, বনশ্রী সেনগুপ্ত, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মিত্র, লোপামুদ্রা মিত্র, মনোময় ভট্টাচার্য, শম্পা কুণ্ডু প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় দেবাশিস বসু। আয়োজক শতাব্দী ব্যালে ট্রুপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE