Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অতসী, নন্দিনীরাই চোখ টেনে নেয় দ্রুত

প্রদীপ প্রধানের কাজের মধ্যে পেন্টিং কোয়ালিটি ছাড়াও আরও অতিরিক্ত কিছু অনুভূত হয়, যা তিনি জল রং ও অ্যাক্রিলিকে একই ভাবে করে দেখিয়েছেন।

নজরকাড়া: ‘সেন্সিং আর্ট’ প্রদর্শনীর কয়েকটি কাজ। সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে

নজরকাড়া: ‘সেন্সিং আর্ট’ প্রদর্শনীর কয়েকটি কাজ। সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে

অতনু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

কিছু শিল্পী সংঘবদ্ধ হয়ে কোনও প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। বর্তমানে ‘সেন্সিং আর্ট’ নাম দিয়ে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে যে প্রদর্শনীটি শেষ হল, সেখানকার ছ’জন শিল্পীই বয়সে যথেষ্ট পরিণত। প্রদর্শনীর ক্যাটালগটি আয়তন ও পারিপাট্যে নজর দিলেও শিল্পীদের পরিচিতির ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়নি! এ ছাড়া এমন কিছু কাজ ছিল, যা না থাকলেও প্রদর্শনীর মান ক্ষুণ্ণ হত না। অধিকাংশ প্রদর্শনীই যে এই দোষে দুষ্ট, বললে অত্যুক্তি হবে না।

প্রদীপ প্রধানের কাজের মধ্যে পেন্টিং কোয়ালিটি ছাড়াও আরও অতিরিক্ত কিছু অনুভূত হয়, যা তিনি জল রং ও অ্যাক্রিলিকে একই ভাবে করে দেখিয়েছেন। অ্যাক্রিলিকে হুবহু জলরঙের স্বচ্ছতাকে হার মানানো তাঁর ছবি দেখলে বোঝা যায় বোধের পরিণতি কতখানি! বিশেষ করে ড্রয়িং ও স্পেসকে ঠিক ভাবে ব্যবহার করার কৌশল, রূপবন্ধ ও পরিবেশ তৈরিতে রং যেখানে অন্যতম মাধ্যম— তাকে তিনি হেলায় কথা বলিয়েছেন। তাঁর পটের নারীরা তাদের যৌবনের চাপা উচ্ছ্বাসকে স্তিমিত রেখে, কোথাও যেন নীরব এক আকুতি জানাচ্ছে। প্রদীপ যখন টেম্পারা করেছেন, সেখানেও মাধ্যমটিকে চরিত্রের সঙ্গে মিশিয়েছেন অদ্ভুত রোম্যান্টিকতায়। এ রিয়্যালিজ়ম তাঁর ‘অতসী’কে দাঁড় করিয়ে দেয় এমন এক উচ্চতায়, যার টেকনিক ও স্টাইলাইজ়েশন যেন উনিশ শতকের কিছু চরম রিয়্যালিস্টিক ওয়াটার কালারের কথা মনে করিয়ে দেয়। ব্রাশিং, ঘষামাজা, ধরে ধরে ড্রয়িংয়ের অন্তর্গত আলো-অন্ধকারের সূক্ষ্ম প্রকোষ্ঠ থেকে বার করে আনা সমুজ্জ্বল সব অক্ষর, বর্ণমালা, ফুল, কুঁড়ি ইত্যাদি! এমনকি শরীরের সব অলঙ্কারের উজ্জ্বল দ্যুতিও অবিকল ‘দীপাবলি’র নিদর্শন! যেমন তাঁর ‘নন্দিনী’ ও ‘কাঞ্চনমালা’।

আর এক শিল্পী শুধু মাত্র কলম ও কালিতেই কোথাও কিছুটা হালকা রং মিশিয়ে, বড় বাস্তব গ্রাম্য জীবনের কিছু নিসর্গের মুহূর্তকে তুলে এনেছেন পটে, তিনি শ্যামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়। যে জায়গায় তিনি একটু আশাহত করেছেন তা হল, নিসর্গ-নৈঃশব্দ্যের মাঝে হঠাৎ কেন যে অমন দুর্বল ড্রয়িংয়ে মানুষ কিংবা ইজ়েল আঁকতে গেলেন? ছবির মজা ওখানে শুধু নষ্টই হয়নি, হঠাৎ সচিত্রকরণের দিকে বাঁক নিয়েছে। বিন্দু বিন্দু দিয়ে সাদা লাইন বার করার বিভ্রম, কোথাও প্রয়োজনে গাঢ় কালো বা ঘনত্বের ব্যবহার, সাদা ছেড়ে দূরত্ব বোঝানোর আশ্চর্য কায়দা... সূক্ষ্মতর পেন-ইংকের এই মোহময় বাস্তবতায় তিনি আকাশ, ছোট্ট ব্রিজ, লাঙল চাষ, গাছপালা-বাঁশঝাড়ের অপূর্ব সমাহার, বিস্তীর্ণ জল, নৌকো, ঢাল বেয়ে নামা আলো-আঁধারির রহস্য নিয়ে প্রকৃতির নির্জনতাকে বাঙ্ময় করেছেন। যদিও কোথাও একটু ভারসাম্যের অভাব হয়েছে।

প্রদীপ মাইতি চেষ্টা করলেও ওয়াশ টেকনিক বা জলরংকে সে ভাবে আয়ত্তে আনতে পারেননি। টেকনিক সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল থেকেও উতরে যাওয়ার পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে তাঁর কাজ। ‘নিউ টাইম’ তবু ভাল।

রুনু মিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় ওয়াশ টেকনিকে সিদ্ধহস্ত। এই প্রদর্শনীর কোনও কোনও কাজে তা উপলব্ধি করা গেলেও আবারও বলতে হচ্ছে— এ সব কাজে পরিমিতি বোধ খুবই জরুরি। প্যাটার্ন ও ডিজ়াইনধর্মী কাজ একটু মার খেয়েছে। তাঁর ‘সখ্য’, ‘ভোরাই’, ‘ঘরে ফেরা’ কিছু পাখি এবং পাতাবাহারের সমাহারে ‘কলতান’ বা হৃষ্টপুষ্ট ‘বিনায়ক’ ভাল লাগে।

তপন করের ছবি নানা রকম। কোনও নিজস্বতা ছবিগুলির ক্ষেত্রে চোখে পড়েনি। হাতের কাজ ভাল হলেও এখানে এক জলরঙের নিসর্গে অতি স্বচ্ছতোয়া পরিবেশে হঠাৎ দু’টি ঘন কালো ব্রাশিংয়ে সামনে স্ট্রোক দিতে গেলেন কেন, বোঝা গেল না। রং নিয়ে খেলেছেন। ভিন্ন ভাবনা ও স্টাইলে কাজ করেছেন। প্রোফাইলে তিনটি নারীমুখ একই দিকে— সব টেম্পারা। দুর্বল না হলেও তেমন ভাবে দাগ কাটল না।

মোম, জেল ওয়াক্স, অ্যারোমা, ফুড কালারস, সোয়ালো ওয়াক্স, বি ওয়াক্স এ সব নানা কিছু ব্যবহার করে কাচের পাত্রে মোমদানি করেছেন। আইস ক্যান্ডল, সিলভার স্ট্যান্ড ক্যান্ডল... বোতলের বাইরে ছবি এঁকে অনেক রকম শিল্পদ্রব্য তৈরি করেছেন সুপ্রিয়া চক্রবর্তী। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করার মতো এই কাজগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন। বিশেষ করে উপহারের সামগ্রী হিসেবেও চমৎকার। সবচেয়ে বড় বিষয়, শিল্পগুণ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন শিল্পী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Art Exhibition Birla Academy Of Art And Culture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE