Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

একশো এগারো পেরিয়ে আজও বহমান

সমীরণ পাখিরার জলরঙে স্বচ্ছতা থাকলেও আহামরি নয়। পদ্মপাতা, জল... সব কেমন একাকার। জলরঙে রাজমহলের বহির্দৃশ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত রূপ ও সাদা হাইলাইট বেশ ভাল ধরেছেন সায়নদীপ কংসবণিক।

তুলিটান: অঙ্কন কর্মকারের কাজ। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্টের প্রদর্শনীতে

তুলিটান: অঙ্কন কর্মকারের কাজ। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্টের প্রদর্শনীতে

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ইংরেজ আমলে স্বাধীনতার ৪০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বহু ইতিহাসের সাক্ষী ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট আজও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত শিল্পকলার সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক সময় এই বাংলার প্রবাদোপম চিত্রকরেরা অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত ছিলেন। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে সম্প্রতি আয়োজিত হল তাঁদের বার্ষিক প্রদর্শনী।

২৬ জন ছাত্রছাত্রী, ৭ জন শিক্ষক (যাঁদের মধ্যে এক জন প্রয়াত) ও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৪০ জন শিল্পীর ৭০টিরও অধিক শিল্পকর্ম কিছু ক্ষেত্রে অন্তত ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তিন জন নির্বাচক ছিলেন, যাঁরা নামী চিত্রকর। ভাস্কর্য বা প্রিন্ট মেকিংয়ের জন্য কোনও নির্বাচক ছিলেন না। এ সব মিলিয়ে কিছু কাজ ছিল অতি দুর্বল— যা প্রদর্শনীর জন্য মানানসই নয়। তবু এক কথায়, বেশ কিছু ভাল কাজ নিয়ে এটি উপভোগ্য প্রদর্শনী।

সমীরণ পাখিরার জলরঙে স্বচ্ছতা থাকলেও আহামরি নয়। পদ্মপাতা, জল... সব কেমন একাকার। জলরঙে রাজমহলের বহির্দৃশ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত রূপ ও সাদা হাইলাইট বেশ ভাল ধরেছেন সায়নদীপ কংসবণিক। অঙ্কন কর্মকারের জলরঙে ঝুলে থাকা নধর কদলীগুচ্ছ ও তিন-চারটি কলাপাতার গাঢ় সবুজ চোখ টানে। কুচি কুচি কাগজ সেঁটে নতনয়ন বুদ্ধসদৃশ একটি মুখ নিয়ে খুব খেটেছেন মৌমিতা বেরা। বর্তুল রচনায় কাগজ কুচোনো এক যত্নের ছবি। অনুরাধা গায়েনের পাগড়ি বাঁধা কিশোরের ছাগল চরানো নিয়ে ওয়াশ পেন্টিংটি বেশ। তবে ছাগলের ড্রয়িং ও ফিনিশিংয়ে কিছু দুর্বলতা চোখে পড়ে। দক্ষতার সঙ্গে জলরঙে কয়েকটি মাছের পড়ে থাকাকে ধরেছেন রমেশ দাস। যেন সদ্য জল থেকে তোলা হয়েছে, এতটাই জীবন্ত!

টেরাকোটার কাজ ‘মাছওয়ালি’ ও ‘বিশ্রাম’—দু’টিতেই বাস্তবতার দুর্দান্ত নিদর্শন রেখেছেন কৌশিক দত্ত। এরই পাশাপাশি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ঝুলন্ত হাতল ও হ্যাঙারের মিশেলে কাঠের ভাস্কর্যে এক আশ্চর্য কম্পোজ়িশন করেছেন রাজকুমার দাস। পেনে করা প্রতিমা গড়ার স্টুডিয়ো বড্ড সাদামাঠা করে ফেলেছেন মানিক সরকার। সহদেব বর্মণের জুতোর স্টাডিধর্মী কাজটিতে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল। মৃন্ময় সরকারের আকাশ ছাওয়া কালো মেঘের বিস্তার, নীচে কয়েকটি নৌকো ও সমান্তরাল ভাবে আকাশের বুক চেরা সাদা আলো এক মন কেমন করা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে হ্যান্ডমেড পেপারে কালো জল রং ছাড়ার কৌশলে। মলয়কুমার দাসের টিস্যু কাগজের উপর মৃদু অ্যাক্রিলিক ড্রয়িংয়ে করা চেয়ার-সহ অন্যান্য অনুষঙ্গের নির্মিতি বুদ্ধিদীপ্ত রচনা।

ভীষ্মায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল বাঁধানো ছবির মাঝখানে অত ছোট এচিং ও চারকোল দিয়ে ডিজ়াইনধর্মী ছোট চৌকো চৌকো ফর্মে অযথা কিছু কঙ্কালের খুলির খুব প্রয়োজন ছিল কি? বরং শিল্পীর টেম্পারায় করা ‘শকুন্তলা’ তবুও অনেক ভাল। এচিং মাধ্যমেও কিছু যোগ্য কাজ
চোখে পড়েছে।

অতিথি শিল্পী সঞ্জয় কর্মকারের অ্যাক্রিলিক এবং সিলভার ফয়েলের বিমূর্ত রচনাটি একই সঙ্গে ভাবনা ও স্টাইলাইজ়েশনের দিক থেকে অপূর্ব। অন্য অতিথি শিল্পী খোকন রাউতের কাজটিও অনবদ্য রচনা। নেপালি কাগজে রূপারোপের বিমূর্ত আবহে ‘ডিসোলেশন’ কালো চারকোলের রৈখিক জ্যামিতিতে এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করেছে। ডান দিকের মুখাবয়বটি যেন গোটা ছবির রোমাঞ্চ উদ্ভাসিত করে তুলেছে। অ্যাক্রিলিক- চারকোলের মিশ্র মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট ও টেকনিকের এক সুন্দর যুগলবন্দি! সার্থক বিমূর্ততার উজ্জ্বল উদাহরণ।

এ ছাড়াও সৌরদীপ সাহার ছবি ‘পরশুরাম’ ওয়াশ পেন্টিংয়ের এক চমকপ্রদ নমুনা। সূক্ষ্মতা ও পরিশ্রমের বিকল্প কী? ছাত্রছাত্রীরা শিখলে ভাল। চাঁদনি রাতে মহিলা ও শিশুর মাছ ধরার দৃশ্য ওয়াশে সুন্দর ধরেছেন আশিস মণ্ডল। বিশেষত অন্ধকারের ছড়ানো পরিবেশ যদি জ্যোৎস্নালোকে ভেসে যায়! রং ও তুলির এ এক অতি বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়োগ।

এই প্রদর্শনীতে সুমিতা মজুমদার কর্মকার, সত্যপ্রসাদ মণ্ডল, জ্যোতির্ময় দলপতি, কুমারশঙ্কর মণ্ডল, অর্ঘ্যদীপ্ত কর, শৈবাল কর্মকার প্রমুখ শিল্পীও বেশ ভাল কাজ করার চেষ্টা করেছেন।

বলা ভাল, ওরিয়েন্টাল প্রকাশনীর কিছু নামী জার্নাল ও গ্রন্থ শিল্পীমহলে আজও অতি সমাদৃত।

অতনু বসু

সুরে নিখাদ আন্তরিকতা

রাহুল মিত্র

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সারেগামা নিবেদিত উৎসাহ-উদ্ভাস সংস্থার শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘চিরজনমের রাজা’ শিরোনামে একগুচ্ছ রবীন্দ্র-সঙ্গীত। একক নিবেদনে রাহুল মিত্র। প্রাককথনে জানা গেল, শিল্পীর এটি ১২৫তম অনুষ্ঠান। এর পর প্রারম্ভিক কথনে শিল্পী ‘রাজা’র কথা শোনান, যা থেকে ‘চিরজনমের রাজা’ সম্পর্কে তাঁর ভাবনা প্রকাশ পায়।

মোট ৩০টি গানের সূত্রে গ্রথিত অনুষ্ঠানটি ছিল দু’টি পর্বে বিভক্ত। মূলত চৌতাল, আড়া চৌতাল, ধামার ও ঝাঁপতালে নিবদ্ধ প্রথম পর্বের ১৫টি গানের প্রায় সব ক’টিই ছিল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আধারে ধ্রুপদাঙ্গের ভাঙা গান। প্রধানত মাঘোৎসব উপলক্ষে গীত ও স্বল্পশ্রুত ‘তোমায় যতনে রাখিব’, ‘প্রভু আমার প্রিয় আমার’, ‘শুভ্র আসনে বিরাজ’, ‘জগতে তুমি রাজা’ প্রভৃতি গানগুলির মধ্য দিয়ে শিল্পী তাঁর ‘রাজা’র অস্তিত্বকে নানা ভাবে অনুভব করিয়েছেন।

দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই ‘হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল’ গানটির মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর ‘রাজা’ তথা ‘জীবনদেবতা’র চেতনায় একাত্ম হতে চান। এর পর তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘সংশয় তিমির মাঝে’, ‘নাই বা ডাকো’, ‘অসীম ধন তো আছে’, ‘তোমার পতাকা যারে দাও’, ‘তাই তোমার আনন্দ’, ‘তব সিংহাসনের আসন হতে’, ‘আমার প্রাণের মানুষ’, ‘সে যে মনের মানুষ’, ‘বারে বারে পেয়েছি’, ‘এই শুনি যেন’, ‘তোরা শুনিসনি কি’, ‘রাখো রাখো রে’, ‘তোমায় নতুন করে’ এবং শেষ গান ‘ওহে জীবনবল্লভ’। এই অনুষ্ঠানের শিরোনামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই গানগুলির ক্রমবিন্যাস বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সুগীত প্রতিটি গানেই সুরের প্রতি তাঁর নিখাদ আন্তরিকতা লক্ষণীয়। যদিও গানের সংখ্যা কিছু কম হলে অনুষ্ঠানটি আরও উপভোগ্য হত বলেই মনে হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানে শিল্পীকে সহযোগিতা করেছেন গৌতম দত্ত (পাখোয়াজ-শ্রীখোল-তবলা), অম্লান হালদার (বেহালা),
শঙ্খশুভ্র তলাপাত্র (এস্রাজ) এবং সৌরভ চট্টোপাধ্যায় (হারমোনিয়ম)।

কাশীনাথ রায়

অনুষ্ঠান

সম্প্রতি রবীন্দ্র সদনে দর্পণী আয়োজন করেছিল বার্ষিক অনুষ্ঠানের। প্রথমে উপস্থাপিত হয় ‘অনন্ত’। পরিকল্পনা এবং কোরিয়োগ্রাফি অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরে আয়োজিত হয় ‘বৃষ্টি হাওয়ায়’। অংশগ্রহণ করেছিলেন লোপামু্দ্রা মিত্র, অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিলী ঘোষ বিশ্বাস, শ্রবণা শীল প্রমুখ।

আইসিসিআর-এর অবনীন্দ্র গ্যালারিতে সম্প্রতি আয়োজিত হল ‘গানের তিরিশ’। আয়োজন করেছিল সুরর্ষি এবং আইসিসিআর। দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায় গান পরিবেশন করেন। কথনে ছিলেন মধুমিতা বসু, দেবাশিস বসু প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত,
অনুশীলা বসু, শ্রাবণী সেন, রেশমী মিত্র প্রমুখ।

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ আয়োজিত হল পঞ্চকবির গান। কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন, গৌতম ঘোষ, শুভাপ্রসন্ন এবং দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Painting Drama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE