Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উজ্জয়িনী উজ্জয়িনী

মহাকুম্ভ নয়। ধ্রুপদী সংস্কৃত ও পালি সাহিত্যে উজ্জয়িনীর খ্যাতি একেবারেই অন্য কারণে। এখানকার প্রাসাদগুলি সুন্দর, মেয়েরা আরও বেশি। প্রেমের শহর, নষ্টামির শহর….

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০০:০৪
Share: Save:

মহাকুম্ভ নয়। ধ্রুপদী সংস্কৃত ও পালি সাহিত্যে উজ্জয়িনীর খ্যাতি একেবারেই অন্য কারণে। এখানকার প্রাসাদগুলি সুন্দর, মেয়েরা আরও বেশি। প্রেমের শহর, নষ্টামির শহর….

প্রথমে মহাকবি কালিদাস। ‘মেঘদূত’-এ যক্ষ কেন মেঘকে উজ্জয়িনী ঘুরে যেতে বলছে?

বিজন রাজপথে আঁধার ঠেলে মেয়েরা চলেছে প্রণয়ীর ভবনে। স্নিগ্ধ বিদ্যুতের আলোয় মেঘ যেন সেই সুন্দরীদের পথ দেখায়, অযথা বর্ষণ বা গর্জন না করে। তা হলে সেই সুন্দরীরা ভয়ার্ত হয়ে উঠবে।

যে সুন্দরী নগরনটীরা মেখলায় নিক্কন তুলছে, তারাও আকাশে প্রথম মেঘ দেখে ‘মধুকর-পঙ‌্ক্তি’ চাউনি হানবে। কারণটা শরীর সম্ভোগের, আঁচড়-কামড়ের উদ্দন্ড প্রেম। ‘নখক্ষতে পরশে আনে সুখ প্রথম বৃষ্টির বিন্দু।’

শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিকম্’ নাটকের পটভূমি এই উজ্জয়িনী শহর। সেখানে নগরনটী বসন্তসেনা দরিদ্র ব্রাহ্মণ চারুদত্তের প্রেমে মুগ্ধ। রাজার শ্যালককেও সে ফিরিয়ে দেয়।

চারুদত্তের স্ত্রী আছেন, আছে একটি বালক পুত্রও। সে মাটির খেলনা গাড়ি নেবে বলে কান্নাকাটি করে। কিন্তু চারুদত্ত ও তাঁর স্ত্রীর সেই পয়সা নেই। তখন সোনার গয়নায় ভর্তি করে একটা মাটির গাড়ি সেখানে পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে বসন্তসেনা।

এ দিকে চারুদত্তের ভৃত্য আবার বসন্তসেনার সঙ্গিনী মদনিকার প্রেমে আতুর। সব মিলিয়ে জমজমাট এক নাটক।

কয়েকটি পুরাণ বলে, ঊর্বশী ও পুরুরবার প্রেম মহাকাল মন্দিরের পাশে মহাকালবনে।

স্বর্গের অপ্সরা ঊর্বশী পুরুবংশের রাজা পুরুরবার প্রেমে পড়েছিলেন। মানুষ ও অপ্সরার সেই বিয়েতে সন্তানাদিও হয়। তবু ঊর্বশী স্বর্গে ফিরে যান। তাঁকে যে ইন্দ্রের রাজসভায় ফিরতে হবেই।

এই প্রেম নিয়ে পরবর্তী কালে অনেক রোম্যান্টিক গল্পগাথা। গল্পটি প্রথম অবশ্য ঋগ্বেদে পাওয়া যায়। সেখানে মহাকালের উল্লেখ নেই, ঊর্বশীর স্বর্গে যাওয়ার কারণটিও অন্য।

দিনে তিন বার করে রাজার সম্ভোগেচ্ছায় বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সে ক্ষেত্রে প্রথম ‘ম্যারিটাল রেপ’-এর গল্প এই ঊর্বশী-পুরুরবা।

এটি বাস্তব দুনিয়ার গল্প। ঋগ্বেদ, কালিদাস কারও সঙ্গে সম্পর্ক নেই। মগধের সম্রাট বিন্দুসার তাঁর ছেলে অশোককে বিদিশার শাসনভার দিয়ে পাঠান। অশোক এসে প্রথমে উজ্জয়িনীতে দেব নামে এক ধনী বণিকের আতিথেয়তা নেন। তাঁর মেয়ে দেবীর সঙ্গে অশোকের এতটাই প্রেম হয় যে, তাকে বিয়ে করে বিদিশায় নিয়ে যান তিনি।

দু’জনের মহেন্দ্র নামে একটি পুত্র ও সংঘমিত্রা নামে একটি মেয়ে হয়। এর পর স্ত্রীকে বিদিশায় রেখে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অশোক মগধে ফিরে যান।

পরে বৌদ্ধ হয়ে এই মহেন্দ্র আর সংঘমিত্রাকেই সিংহলে ধর্মপ্রচারে পাঠান তিনি।

সবচেয়ে চরম বেতাল পঞ্চবিংশতির শেষ গল্পটি। শ্মশানের তান্ত্রিক ছদ্মবেশী রাজা বিক্রমাদিত্যকে গাছে বাঁধা একটি শব আনতে পাঠিয়েছেন। বিক্রমাদিত্যের পিঠে চড়ে আসতে আসতে সেই শব তাঁকে নানা গল্প বলে। শর্ত একটাই। প্রতিটি গল্পের শেষে সে প্রশ্ন করবে, রাজা উত্তর দেবেন।

উত্তর জানা সত্ত্বেও নিরুত্তর থাকলে রাজার মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।

শেষ গল্প এ রকম: এক রাজা যুদ্ধে নিহত, তাঁর স্ত্রী ও রাজকন্যা জঙ্গলে চলে গিয়েছেন। এ বার ভিনদেশি এক রাজা ও রাজপুত্র সেই জঙ্গলে এসে হাজির। এর পর রাজা বিয়ে করলেন রাজকন্যাকে, রাজপুত্র রানিকে।

বেতালের প্রশ্ন: মহারাজ, এই দু জনের সন্তান হলে তাদের কী সম্পর্ক দাঁড়াবে?

বিক্রমাদিত্য উত্তর না দিয়ে হেসেছিলেন। সংস্কৃত ঐতিহ্যের নীতিশিক্ষা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সব সম্পর্ককে সে নাম দেওয়ার চেষ্টা করেনি, একটি ধূসর জায়গা ছেড়ে রেখেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ujjain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE