Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছোট মুখে বড় কথা?

খুদের আধো বুলিতে বড়দের মতো কথা শুনতে মজাই লাগে। কিন্তু ওই আধো কথাই বেকায়দায় ফেলতে পারে মা-বাবাকে! সাবধান হওয়ার উপায় দেড়-দু’বছরের বাচ্চা মেয়ে যখন বাড়ির কাজের মাসিকে ঠাম্মার মতো করে ধমক লাগায় বা বাবার মতো মোবাইল ধরে কলিগদের সঙ্গে কথা বলার ভাব করে, দেখতে মজাই লাগে। বাচ্চারা তার চার পাশের পৃথিবীটাকে নকল করতে চায়। তার মধ্য দিয়েই ওরা শেখে। ফলে, আশপাশের মানুষরা কে, কেমন ভাবে, কী বলছে, সবটাই ওদের কাছে প্রবল কৌতূহলের। প্রায় সব কিছুই ওরা হাঁ করে গেলে। আর তার পর জায়গা মতো উগরে দেয়।

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বাড়ির খুদেটার শুধু বুলি ফোটার অপেক্ষা। ক’দিন পর থেকেই তার পাকা পাকা কথা আর বড়দের নকল করার ভঙ্গিতে বাবা-মা, দাদু-ঠাম্মা থেকে পোষা টিয়াপাখিটা অবধি হেসে অস্থির। কেমন সুন্দর নকল করেছে! এইটুকুনি বাচ্চার কী বুদ্ধি!

এই ছবি বড্ড চেনা। দেড়-দু’বছরের বাচ্চা মেয়ে যখন বাড়ির কাজের মাসিকে ঠাম্মার মতো করে ধমক লাগায় বা বাবার মতো মোবাইল ধরে কলিগদের সঙ্গে কথা বলার ভাব করে, দেখতে মজাই লাগে। বাচ্চারা তার চার পাশের পৃথিবীটাকে নকল করতে চায়। তার মধ্য দিয়েই ওরা শেখে। ফলে, আশপাশের মানুষরা কে, কেমন ভাবে, কী বলছে, সবটাই ওদের কাছে প্রবল কৌতূহলের। প্রায় সব কিছুই ওরা হাঁ করে গেলে। আর তার পর জায়গা মতো উগরে দেয়।

কিন্তু তাই বলে এক জন তিন বছুরে যখন কাজের মাসিকে ছাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় বা বাবার ভঙ্গি নকল করতে গিয়ে কিছু গালাগালিও রপ্ত করে ফেলে, তখন সেটা মোটেও হেসে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় থাকে না। সমস্যাটা আসলে বড়দেরই। অনেক সময়েই তাঁরা বাচ্চাকে দুধভাত ভেবে তার সামনে সব রকমের আলোচনা চালান। ভাবেন না, সব কথার মানে না বুঝলেও চট করে কথা তুলে নেওয়ার এবং মনে রাখার ক্ষমতা ওদের অনেক বেশি। কিন্তু কখন কী বলা উচিত, সে বিষয়ে জ্ঞান বিশেষ নেই। ফলে মা-বাবার অপ্রস্তুত হওয়ার ষোলো আনা সম্ভাবনা। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। পরিচিত একটি বাচ্চা এক বার তার মায়ের বন্ধুর বাড়ি গিয়েছে। বন্ধু সবে দ্বিতীয় বারের জন্য কনসিভ করেছেন। বাচ্চাটি বাড়ি ঢুকে সোজা তাঁর কাছে গিয়ে বলে, এই তো ক’দিন আগেই তোমার একটা মেয়ে হয়েছে। আর একটার জন্য এত তাড়াহুড়ো করলে কেন? সম্ভবত এই কথাটিই তার মা অন্য কোনও বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করেছে। বাচ্চাটিও সেই কথা অবিকল তুলে নিয়েছে।

সমস্যা আরও আছে। বাচ্চার সামনেই সব ধরনের আলোচনা চালালে ও একটা সময় নিজেকে ওই আলোচনার অংশ ভাবতে বসবে এবং মন্তব্য করার চেষ্টা করবে। মা যখন হঠাৎ আসা অতিথিদের জন্য কোথা থেকে খাবার আনা হবে, সেই আলোচনায় ব্যস্ত, বাচ্চা যদি ঠিক সেই সময়ই বলে বসে, অমুক জায়গা থেকে এনো না, অনেক খরচ হয়ে যাবে— সেটা কি খুব মজার মনে হয়? দু’পক্ষেরই অসন্তুষ্ট হওয়ার যথেষ্ট রসদ আছে সেখানে। তাই গোড়া থেকেই নিজের দুনিয়া থেকে বাচ্চার দুনিয়াকে আলাদা করুন। পাঁচিল তুলে আলাদা করা নয়, কিন্তু কোথাও যে একটা লক্ষ্মণরেখা আছে, সেটা ওকেও বোঝান, নিজেও বুঝুন।

স্কুল যাওয়া শুরু করলেই বাচ্চার আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করুন। পুরো ঘরটাকে ওর মনের মতো করে সাজান। খেলনা, বই, রং পেনসিল, ছবি দিয়ে মুড়ে দিন। সারা দিন ওই ঘরে পুরে রাখা নয়, বরং স্কুলের টাস্ক করা, আঁকা বা খেলার সময়টা ওকে ওই ঘরেই রাখার অভ্যেস করুন। একটু বড় হলে শোওয়ার ব্যবস্থাটাও করুন ওখানেই। বিদেশে ছোট থেকেই বাচ্চাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাচ্চারা নিজস্ব জগৎ গড়ে তোলে। বাড়িতে পার্টি থাকলে বাচ্চাদের জন্য আলাদা ঘর রাখুন। খেলা থেকে খাওয়া অবধি যেন ওরা ওখানেই থাকে।

ওর সামনে ব্যক্তিগত কথা আলোচনা না করাই ভাল। হয় কাজের জায়গা থেকে ফেরার পথে তা সেরে নিন, অথবা অন্য ঘরে কথা বলুন। দিনের যে সময়টা ওকে দেবেন বলে ঠিক করেছেন, সেই সময় খুব প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত ফোন ধরা বা অফিসের আলোচনা করবেন না। পারিবারিক অশান্তি থেকে বাচ্চাকে সব সময়ে আলাদা রাখা যায় না ঠিকই। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন কোনও ভাবে মাত্রা না ছাড়ায়।

অনেক সময় বাচ্চারা বড়দের কথার মাঝখানেই অযথা বাধা দিয়ে নিজের কথা শোনার জন্য জোরাজুরি করে। এটা বদভ্যেস। ছোট থেকেই বোঝান, কথার মাঝে কথা বলতে নেই। তা সত্ত্বেও হয়তো ওরা করবেই। কারণ ওদের ধৈর্য কম, উত্তেজনা বেশি। সে ক্ষেত্রে মুখে না বলেও বিশেষ ভঙ্গি ব্যবহার করা যায়। যেমন, বাচ্চা যদি চিৎকার করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়, তা হলে চোখের ইশারা, হাতের ভঙ্গি বা বাচ্চার হাতে আলতো চাপ দিয়েও নিজের বিরক্তি বুঝিয়ে দেওয়া যায়। এই ভঙ্গি এমনই হবে, যাতে বাচ্চা বোঝে, মা কথা শেষ না করে তার কথা শুনবে না। বাচ্চার কথা যখন মা শুনবেন, তখনও তাঁকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্য কেউ সেই মুহূর্তে তাঁকে বিরক্ত না করে।

বাচ্চা যদি কখনও বড়দের কথা বাইরের লোকের সামনে বলেও ফেলে, সেখানেই তাকে বকাবকি, চেঁচামেচি করবেন না। আলাদা ডেকে বোঝাতে হবে যে কাজটা ভাল হয়নি। আপনি খুব কষ্ট পেয়েছেন।

মনে রাখতে হবে, ওর কাজে বা কথায় অন্যদের কতটা খারাপ লাগল, এটা বোঝার ক্ষমতা শিশুবেলায় ওদের জন্মায় না। সেটা বোঝানোর ভার মা-বাবারই। কঠোর অনুশাসন দিয়ে নয়। যত্ন দিয়ে, ওর মতো করেই বোঝাতে হবে।

মডেল: প্রিয়ম, লক্ষ্য, আরিয়ানা

ছবি: শুভদীপ ধর

মেকআপ: পরিণীতা সরকার

পোশাক (প্রিয়ম): আনোখি, ফোরাম; লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা কনক্লেভ, চকগড়িয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Behaviour Children Parent
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE