Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কেমন সাজসজ্জা ঘরের? দরজা খুললেন ঋতাভরী

সেখানে ‘গালিভার’ ঋতাভরী চক্রবর্তী। যদিও এটি  তাঁর আবাস। দরজা খুলল পত্রিকার জন্য সেখানে ‘গালিভার’ ঋতাভরী চক্রবর্তী। যদিও এটি  তাঁর আবাস। দরজা খুলল পত্রিকার জন্য

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

প্রত্যেক বাড়িরই একটা গল্প থাকে। ঠিক যে ভাবে আপনি তা লিখতে চান। তা আর্টিস্টিক হতে পারে। কিংবা আপনার রুচি মতো আটপৌরে। না কি বেলজিয়ান কাচে মোড়া এক অভিজাত স্বপ্ন?

অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীর পেশা অভিনয়, নেশা বেড়ানো। বহুমূল্য শো-পিস ও ফ্লাওয়ার ভাসের শৌখিনতা নয়, তাঁর পছন্দ এমন বাড়ি, ‘‘যেখানে বাড়ির লোকজনের ছবি থাকবে, তাঁদের স্মৃতি.... সব মিলিয়ে বেশ বাড়ি-বাড়ি ফিলিং থাকবে।’’ তাই বাড়িতে অনবদ্য সব মিনিয়েচারের ছড়াছড়ি... বুকশেল্্ফ, বিছানা, বালিশ, ডাইনিং টেবল, স্যান্ডউইচ, বার্গার... কী নেই খুদে ভার্সানে! সব মিলিয়ে সে যেন লিলিপুটের এক দুনিয়া। মোরেনো কাচের ভেনেশিয়ান পুতুল, জেনিভা থেকে কেনা ছোট ছোট সৈন্য, শিকাগোর ডল হাউস... যে দিকে তাকান প্রাণ চাইবে, চক্ষুও চাইবে। তাঁদের সল্টলেকের বাড়ি আয়তনে বিশেষ বড় নয়। তাই ঘরের এবং আসবাবের আয়তনে সামঞ্জস্য রেখে ঋতাভরী ছোট ছোট জিনিস দিয়েই বাড়ি সাজিয়েছেন।

এ বাড়ির দোতলার বসার ঘরে পৌঁছে প্রথমেই চোখ যায় কাঠের রংবাহারি সোফার কুশন কভারগুলিতে। তাতে সুতো দিয়ে বোনা পিকাসো, ভ্যান গঘের পেন্টিং যেমন রয়েছে, তেমনই একটিতে সতর্কবাণী ‘অতিথি তুম কব যাওগে’! একচোট হেসে নিয়ে নায়িকা বললেন, ‘‘এটা প্রথমে বড় সোফাটায় রেখেছিলাম, কিন্তু পরে কোণে সরিয়ে দিই। তাও আপনার নজরে পড়ে গেল! এটা তো বটেই, আমার বেশির ভাগ কুশন কভারই দিল্লি থেকে কেনা। ভীষণ কালারফুল!’’ ঋতাভরীদের বসার ঘরে অজস্র জিনিস। কাঠের শেল্‌ফ, সোফা, টি টেব্‌ল, ম্যাগাজ়িন হোল্ডার, ল্যাম্পশেড, বাহারি টব, কোট র‌্যাক হ্যাঙার, সত্যজিৎ রায়ের ছবির পোস্টার, বই এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি। তা সত্ত্বেও আপনার সাজে ভারাক্রান্ত মনে হবে না, শুধু রাখার কৌশলে। অন্দরসজ্জার সঙ্গে মানিয়ে মেঝেতে পাতা দড়ি এবং মাদুর। পরদায় রয়েছে শাড়ির আঁচল এবং ওড়নার আদল। এ সবের মাঝে শো-পিস বা মূর্তি চোখে পড়ল না... ‘‘এমন নয় যে, শো পিস ভালবাসি না। কিন্তু এমন জিনিস ভালবাসি, যার একটা ইতিহাস আছে। যেমন জেনিভা থেকে আনা ছোট ওই সৈন্য পুতুলগুলো। একটা সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে বাচ্চাদের সৈন্য হতে অনুপ্রাণিত করার জন্য ওই রকম পুতুল বানানো হত।’’ তাই বিদেশে তাঁর বেশির ভাগ জিনিসই কেনা ফ্লি মার্কেট থেকে। ‘‘এঁরা আসলে কেউই দোকানদার নন। বেশির ভাগ জিনিসই সেকেন্ড হ্যান্ড। ষাট বা একশো বছরের পুরনো পুতুলও আমার আছে।’’

তবে ঋতাভরীর অন্দরসজ্জায় যেমন বিদেশি আস্বাদ আছে, তেমনই দেশি সুগন্ধও দিব্যি অনুভূত হয়। শান্তিনিকেতন, হায়দরাবাদ, দিল্লি, সিকিম থেকে আনা হরেক জিনিসে প্রাণবন্ত তাঁর আবাস। আসলে বাড়ি সাজানো বিষয়ে ঋতাভরীর নিজস্ব কিছু ধারণা আছে। ‘‘যাঁরা বাড়িতে অনেক কিছু রাখতে পছন্দ করেন না, তাঁরা কয়েকটা জিনিস কিন্তু অবশ্যই রাখতে পারেন। প্রথমত, বড় আয়না। তাতে আলো রিফ্লেক্ট করে, ঘরটা বড় লাগে। সুন্দর ওয়ালপেপার, আয়না, কার্পেট... এতেই ঘর অপূর্ব লাগে। পেন্টিংয়ের প্রতি ফ্যাসিনেশন না থাকলে অনায়াসে ঘরে লাগাতে পারেন আয়না। আর হল গাছ। এখানে যত্নের প্রয়োজন। তাই আসল গাছ রাখা না গেলে, নকল গাছ রাখুন। টেবিলে একটা ছোট টব বা ওয়াইনের গ্লাসে মানিপ্ল্যান্ট রাখলেও ভারী ভাল লাগে। তৃতীয় আর একটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ, তা হল লাইটিং। আমাদের প্রবণতা হচ্ছে, একটা বড় লাইট সর্বক্ষণের জন্য আর একটা ছোট লাইট ঘুমের জন্য। ফুলস্টপ। শুধু আলোর রকমফের কিন্তু একটা ঘরের ভোল বদলে দিতে পারে।’’

ঋতাভরীদের নানা ঘরে হলুদ আলোর খেলা যেমন রয়েছে, তেমনই ইন্ডোর প্ল্যান্টের কোনওটি রয়েছে কফিমাগে। কোনও গাছের টব হস্তশিল্প মেলা থেকে কেনা, ডাল পরিবেশনের পাত্র। অন্দরসজ্জার পুরোটাই হল সৃজনশীলতা।

ড্রয়িংরুমের পাশেই রয়েছে ছোট্ট একটা ঘর। না কি বলব কুঠুরি? ভিতরে গেলে বোঝা যায়, জমিয়ে আড্ডা মারার জন্য ঘরটা দুর্দান্ত। এ বাড়ির ড্রয়িং রুমের দু’পাশের দু’টি বারান্দায় লুকিয়ে আছে তার প্রাণবায়ু। সেখানে ছোট বড় নানা গাছের মেলা।

এক দিকের বারান্দায় আবার গাছের সঙ্গে রয়েছে মিনিয়েচার। এর পাশে মেঝেতে রাখা ডলহাউস। ব্যালকনিতে রয়েছে পুরনো দিনের মতো ফার্নিচার। ‘‘মা বাইরের বারান্দাটার নাম দিয়েছে আলোঘর। ঘুম থেকে উঠে মা ওখানে চলে যায়, সকালটা দেখার জন্য। এত গাছ। আলো হাওয়া,’’ বললেন ঋতাভরী।

শুধু বারান্দা নয়, এ বাড়ির সবটা জুড়েই গাছ, আলো, হাওয়া আর মিনিয়েচারের সহাবস্থান। তাতেই এ বাড়ি সাধারণের মধ্যেও হয়ে উঠেছে বড় মনোরম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE