Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এলেম মেঘের দেশে

সে রাজ্যে রাস্তা আটকায় মেঘ। কোথাও বৃষ্টি বছরভর। ঝরনার নীল জলের পাশে চাইলেই পিকনিক। লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তীসে রাজ্যে রাস্তা আটকায় মেঘ। কোথাও বৃষ্টি বছরভর। ঝরনার নীল জলের পাশে চাইলেই পিকনিক। লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তী

উমিয়ম লেক

উমিয়ম লেক

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ১২:৪০
Share: Save:

ছোট্ট প্রোপেলার প্লেন কলকাতার আকাশসীমা ছাড়ালেই টের পাবেন, আর পাঁচটা বিমানযাত্রার সঙ্গে এটা মিলবে না। মেঘ কেটে সামনে এগোতেই যে রীতিমতো বেগ পাচ্ছে এটিআর ফোর্টি-টু। সুবিধা একটাই, কোনও জিপিএস-এর দরকার পড়বে না, সহজেই বুঝতে পারবেন এসে পড়েছেন মেঘের দেশে। অসম আর বাংলাদেশের মধ্যে স্যান্ডউইচড হয়ে থাকা মেঘালয়ে।

পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত মেঘালয়ের তিনটে অংশ তিনটে পাহাড়ের নামে। জয়ন্তিয়া, খাসি ও গারো। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় একটা বিমান যাতায়াত করে কলকাতা-শিলং। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা পাড়ি মেঘালয়ের দক্ষিণ প্রান্তে পূর্ব খাসি পাহাড়ের কোলে পনেরোশো মিটার উচ্চতার শহর চেরাপুঞ্জি। স্থানীয় ভাষায় সোহরা। রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামের সম্ভাবনা নেই। মাঝে মাঝে শুধু পথ আটকে দাঁড়াবে আচমকা চলে আসা মেঘ। পথে ডেমপেপ ভিউ পয়েন্ট। স্পষ্ট হতে থাকে, মেঘালয়কে কেন ‘পূর্বের স্কটল্যান্ড’ বলা হয়। চেরাপুঞ্জিতে হোটেলের কোনও অভাব নেই। রেস্ত বুঝে বেছে নিলেই হল।

ক্রাং সুরি

পাহাড়ে দিন শুরু হয় আগে। মেঘালয় পুবে বলে মনে মনে ঘড়ির কাঁটাকে এগিয়ে নেওয়া ভাল। প্রাতঃরাশ সেরে বেরিয়ে পড়া টায়ার্না গ্রামের দিকে। চেরাপুঞ্জি থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে এই গ্রামে আছে বিখ্যাত ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ। রবার গাছের শিকড় জড়িয়ে জড়িয়ে খাসি উপজাতিরা তৈরি করেছে নদী পার হওয়ার সেতু। নিয়মিত যাতায়াত তার উপর দিয়ে। তবে সমতলের মানুষকে সেখানে পৌঁছতে ঘণ্টা আটেকের ট্রেক! কোথাও পাথরের সিঁড়ি, কোথাও লোহার সরু লজঝড়ে ব্রিজ পেরিয়ে সবুজে ঘেরা প্রকৃতির কাছাকাছি। তবে শরীরের সামর্থ্য বুঝে তবেই ট্রেক। না হলে, গায়ের ব্যথায় বেড়ানোটাই মাটি হবে।

হাউজবোট

পরের দিন গন্তব্য পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড়ের শহর জোয়াই। যাত্রাপথেও অনেক চমক। টানেল ভরা রেলপথে যেমন টানেল গুনতে গুনতে যাওয়া, মেঘালয়ে তেমন জলপ্রপাত গুনতে পারেন। সেভেন সিস্টার্স ফলস, নকালিকাই ফলস রাস্তা থেকেই দেখতে পাবেন। চমকে দেবে কম পরিচিত অনেক জলপ্রপাতও। এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মওলিলংও এই পথে। এই গ্রামের পাশেই আর একটা রুট ব্রিজ। আরও খানিকটা এগিয়ে ডাউকি নদী। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বয়ে চলা নদীটা নিজেই একটা বিস্ময়। এত স্বচ্ছ জল যে, মনে হবে হাওয়ায় ভাসছে নৌকা। তখনও ধারণা ছিল না, চমকটা শেষ পাতে। পাথরের সিঁড়ি বেয়ে আধ ঘণ্টা নেমে ক্রাং সুরি জলপ্রপাত। হিমশীতল জলে স্নান করতে পারেন। পিকনিক বাস্কেট নিয়ে গেলে তো কথাই নেই। নীল ঝরনার জলের পাশে পিকনিক।

নকালিকাই জলপ্রপাত

ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলাম পৃথিবীতে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয় মওসিনরামে। চেরাপুঞ্জি থেকে আশি কিলোমিটার। উল্টো পথে ঘণ্টা তিনেক লাগলেও ঠিক করলাম, জায়গাটা দেখে যাওয়ার। হা হতোস্মি! সারা বছর বৃষ্টি হওয়া মওসিনরামে এই হতভাগ্যকে ফাঁকি দিল মৌসুমি বায়ু। বৃষ্টির দেখাই পেলাম না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে দোষারোপ করে পাড়ি দিলাম শিলং। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে এলিফ্যান্ট ফলস। তবে এলিফ্যান্ট ফল্‌স কেন, তা শিলংয়ে গিয়েই জানুন। বোর্ডে লেখা আছে। এখানে বলে দেওয়াটা থ্রিলার ছবির শেষটুকু বলে দেওয়ার মতোই হবে।

রুট ব্রিজ

শিলংয়ের ব্যস্ততম অ়ঞ্চল পুলিশ বাজার। খাবার থেকে বাড়ি, শহর জুড়ে কলোনিয়াল গন্ধ। সূর্য ডুব দিলেই এ গন্ধ আরও ভুরভুর করে ওঠে। পাবে পাবে স্থানীয় ব্যান্ড। স্থানীয় ভাষার গান নয়, ‘ইউ টু’-‘এরোস্মিথ’-এর তালে তাল মেলাচ্ছে সবাই। শহর জুড়ে ট্যুরিস্ট স্পটের কমতি নেই। ডন বসকো মিউজিয়াম, ওয়ার্ডস লেক, পোলো ক্লাব। তবে আসল আকর্ষণকে সে সরিয়ে রেখেছে পনেরো কিলোমিটার দূরে। দু’শো কুড়ি বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা উমিয়ম লেক স্থানীয় লোকের ভাষায় বড়াপানি। লেকের নীল জলে বোট রাইড নেওয়াই যায়। তবে ‘পাসান মামা’র দাঁড়টানা নৌকার জুড়ি মেলা ভার। চলে যান লেকের মধ্যে এক দ্বীপে। দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়ে যাবে ‘মামা’র বাড়ি। রাত কাটাতে হাউজবোট।

চেরাপুঞ্জির পথে

শিলং এয়ারপোর্ট লেকের পাশেই। ফেরার সময় অবশ্য প্রোপেলারের ঘড়ঘড়ে আওয়াজ কানে আসবে না। হলফ করে বলা যায়, পাসান মামার অদ্ভুত উচ্চারণে মিঠুন চক্রবর্তীর ডায়লগ আর হিন্দি গান কানে আটকে থাকবে।

ছবি: লেখক

কীভাবে যাবেন

কখন যাবেন

সব সময় যাওয়া যেতে পারে। সেরা সময় বর্ষার পর।

কী ভাবে যাবেন

মেঘালয়ে কোনও রেলপথ নেই। ট্রেনে বা প্লেনে গুয়াহাটি পৌঁছে, সেখান থেকে গাড়ি বা বাসে শিলং। শুক্রবার ছাড়া বাকি দিন কলকাতা-শিলং একটা বিমান চলাচল করে। অ্যাডভেঞ্চার চাইলে গুয়াহাটি থেকে ক্রুজার বাইক ভাড়া করতে পারেন। তবে পাহাড়ি পথে সাবধান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE