Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাঁটলে কমতে পারে এই রোগগুলি!

নিয়মিত হাঁটা আসলে সুস্থতার চাবিকাঠি। হাঁটার নানা রকম ধরন আর সুফলের হদিশ দিল পত্রিকানিয়মিত হাঁটা আসলে সুস্থতার চাবিকাঠি। হাঁটার নানা রকম ধরন আর সুফলের হদিশ দিল পত্রিকা

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব...

পৌঁছে তো যেতে হবেই। তবে চাঁদের পাহাড়ে নয়, বরং রোজকার নিয়মে সুস্বাস্থ্য ও রোগমুক্ত শরীরের দিকে আরও এক ধাপ এগোতে হলে হাঁটা জরুরি। তাই কোমর বেঁধে হাঁটার ময়দানে নেমে পড়ার আগে এক ঝলক দেখে নিতে পারেন হাঁটার টুকিটাকি।

নিশ্চয়ই ভাবছেন, হাঁটার আবার পদ্ধতি আছে নাকি? আছে, নিশ্চয়ই আছে। বিশদে না হলেও, সেগুলো সম্পর্কে সাধারণ পরিচয় করে নেওয়াটাও কিন্তু প্রয়োজন।

ব্রিস্ক ওয়াকিং: সাধারণ ভাবে যে গতিতে হাঁটেন, তার চেয়ে একটু বেশি জোর দিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটাকেই বলে ব্রিস্ক ওয়াকিং। এতে মোটামুটি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়।

পাওয়ার ওয়াকিং: যাঁদের হাঁটার ক্ষমতা ব্রিস্ক ওয়াকারের চেয়েও বেশি, তাঁরা পাওয়ার ওয়াকিং করেন। সাধারণত ঘণ্টায় ন’ কিলোমিটার পথ চলতে হয়। জগিংয়ের পরিবর্তে পাওয়ার ওয়াকিংয়ে ক্যালরি বেশি বার্ন হয়।

রেস ওয়াকিং: রেস ওয়াকিং বেশ শক্ত। ভীষণ তাড়াতাড়ি অর্থাৎ এতে ঘণ্টায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। এটি সম্পূর্ণ ভাবে অ্যাথলিটদের জন্য।

এ ছাড়াও ম্যারাথন ওয়াকিং, চি ওয়াকিং, পোল বা নর্ডিক ওয়াকিং, স্ট্রলার ওয়াকিং, পিডোমিটার ওয়াকিং, কার্ডিও ওয়াকিং ইত্যাদি নানা ধরনের পথ চলার পদ্ধতি রয়েছে।

এখনকার দিনে বেশির ভাগ শারীরিক অসুস্থতাতেই ডাক্তারেরা নিয়ম করে হাঁটার উপদেশ দেন। অর্থাৎ এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, হাঁটার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সুস্থতার চাবিকাঠি। রোজ ঠিক মতো হাঁটা যেমন শরীরে নানা রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়, তেমনই দ্রুত রোগমুক্তিরও উপায় বাতলায়। জেনে নিন নিয়মিত হাঁটার সহজ কিছু সুফল।

হৃৎপিণ্ডের সমস্যায়

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতি সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘণ্টা হাঁটলেই নাকি হার্টের অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। অর্থাৎ আপনি যদি দিনে মাত্র ২১ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন, তা হলে আপনার হার্ট তো ভাল থাকবেই, সেই সঙ্গে হৃদ্‌যন্ত্রগত অসুস্থতা প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এমনকী, নিত্যকার হাঁটাহাঁটিতে খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয়ে রক্তে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। এক কথায়, রোজ হাঁটাহাঁটি করলে কার্ডিও-ভাস্কুলার সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।

ওবেসিটি রুখতে

অনেকে বলেন, হাঁটা নাকি সহজতম এক্সারসাইজ। কিন্তু কাজটা অতটাও সহজ নয়। রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে দ্রুত পায়ে একই গতিতে হাঁটা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্রিস্ক ওয়াকিং ওবেসিটির হার কমাতে পারে। হাঁটার ফলে কাভ্‌স, স্কোয়াড্‌স আর হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে। ফলে পা, হিপের টোনিংয়েও সাহায্য করে।

রক্তচাপের সুরক্ষায়

আপনি যত হাঁটবেন, আপনার রক্তচাপও ততটাই কন্ট্রোলে থাকবে। অর্থাৎ উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যার কারণে যাঁরা রোজ ওষুধ খেতে বাধ্য হন, তাঁরা এই সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন হাঁটাহাঁটির মাধ্যমে।

ডায়াবেটিসের সমস্যায়

ডায়াবেটিস যে বহু রোগের উৎস, সে কথা এখন সকলেরই জানা। আপনার সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রেহাই পাবেন অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে প্রথমে ধীর গতিতে শুরু করতে হবে। তিন থেকে পাঁচ মিনিট ধীরপায়ে হাঁটার পর গতি বাড়াতে হবে। মাঝারি গতিতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত হাঁটতে হবে। এই সময়টায় নিজের মেরুদণ্ড সোজা আর চিবুক যেন উঁচু থাকে। এ ভাবে অল্পক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে ধীরে-ধীরে হাঁটার সময় বাড়াতে হবে। টাইপ টু-র ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভাবে হাঁটাহাঁটি স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভাল। তিরিশ মিনিট হাঁটা বা ২৪০০ স্টেপ পথ চলা থেকে শুরু করে দৈনিক লক্ষ্য বাড়াতে হবে সাতাত্তর মিনিট হাঁটা বা ৬৪০০ স্টেপ চলাফেরা পর্যন্ত।

ক্যানসারের প্রবণতায়

সপ্তাহে তিন ঘণ্টা হাঁটলে ইউটেরাইন আর ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা প্রায় ১৭% পর্যন্ত কমতে পারে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি উইমেন হেল্‌থ স্টাডি বলছে, হাঁটার সময়টা আরও বাড়ালে ক্যানসারের আশঙ্কা নাকি প্রায় ৫৪% অবধিও কমার সম্ভাবনা থাকে।

ভিটামিনের ঘাটতিতে

দিনের বেলায় হাঁটাচলা করলে সূর্যরশ্মি শরীরে প্রবেশ করে। ফলে শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি কমে। শক্ত, মজবুত হাড় পেতে ও আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমের খেয়াল রাখার জন্য এটি জরুরি। এ ছাড়া ভোরবেলা বাতাসে দূষণও তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। ফলে
নির্মল বাতাসে শ্বাস নিয়ে শরীরকে আরও সতেজ করে তুলতে পারেন।

স্মৃতিরক্ষায়

হাঁটাহাঁটি করলে স্মৃতিশক্তিও রীতিমতো উর্বর থাকে। জানা গিয়েছে, সপ্তাহে তিন বার একই স্ট্রেচে প্রায় চল্লিশ মিনিট হাঁটলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। তার জন্য দরকার পড়ে না কোনও স্মৃতিশক্তি বর্ধনকারী শাক কিংবা টনিক। আবার রোজকার ব্রিস্ক ওয়াকিং মস্তিষ্কের সঙ্কোচন কমিয়ে দেয়। ফলে প্রৌ়ঢ় ও বৃদ্ধ বয়সে নিত্যকার হাঁটাহাঁটি পুরনো দিনের ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয় সহজে। হাঁটাহাঁটির ফলে ডিমেনশিয়াও আসে দেরিতে।

বার্ধক্য প্রতিরোধে

বয়স বাড়া মানেই বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া নয়। তাই এই সময়ে ঘরকুনো হয়ে না থেকে হাঁটাহাঁটি করুন। এতে অথর্ব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। তাই সত্তর থেকে ঊনআশি বয়সের মানুষেরা যদি রোজ নিয়ম মেনে অল্প হাঁটাচলা করেন, তা হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল থাকে বেশি।

স্ট্রেস কমাতে, মন ভাল রাখতে জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে স্ট্রেস ও হতাশা মানুষকে কুরে কুরে খায়। ফলে আপনি যদি স্ট্রেসের কারণ খুঁজেও না পান, তোয়াক্কা করবেন না। কানে হেডফোন লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। গান শুনতে শুনতে অথবা রাস্তার চারপাশের নানা দৃশ্য দেখতে দেখতে হাঁটতে থাকুন। এই উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে চলা যেমন আপনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে, তেমনই রাস্তাঘাট বা পার্কের এমন অনেক জিনিস যা আপনি আগে কখনও খেয়ালই করেননি, তা আবিষ্কারেও সাহায্য করবে। তার পর দেখবেন, কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে মনখারাপ!

তা হলে আর দেরি কেন? সুস্থ থাকতে এগিয়ে চলুন আরও এক ধাপ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Care Walk Morning Walk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE