Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Expert answer

দাদার ভুল ধারণা ভাঙার চেষ্টা করো

পৌরুষের ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হল, ক্ষমতা ও শাসনের অধিকার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

তোমার সমস্যাটিকে আমি তোমার দাদার ব্যক্তিগত আবেগের পরিবর্তন হিসেবে দেখার চেয়ে আমাদের সমাজে পুরুষের আত্মপরিচয়ের সমস্যা হিসেবে দেখছি বেশি। পৃথিবীর সব সমাজেই পৌরুষ ও নারীত্বের ধারণাটি কিছুটা গুলিয়ে থাকে। অথচ এই ধারণার প্রভাব বিপুল, কখনও কখনও বিকটও। পৌরুষ ও নারীত্ব, দুইয়ের সঙ্গে সমাজ জড়িয়ে দিয়েছে কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আর অধিকারের ধারণা। এ কথা ঠিক, যে ছেলেদের আর মেয়েদের শারীরিক তফাতের সঙ্গে সঙ্গে সামান্য দু’-একটি দৈহিক-সামাজিক ভূমিকা ও মানসিক বৈশিষ্ট্য জড়িয়ে থাকে। দৈহিক-সামাজিক ভূমিকা— যেমন মেয়েদের সন্তানের জন্ম দেওয়া বা ছেলেদের পেশির জোরের জন্য ভারী জিনিস বহন করা। মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলি সচরাচর হরমোনের সঙ্গে জড়িত— যেমন সন্তান হওয়ার আগে পরে মায়ের মস্তিষ্কের কতকগুলি স্থানে কিছু বিশেষ হরমোন ক্ষারিত হয়। মস্তিষ্কের এই স্থানগুলি, যেমন অ্যামিগডালা, সচরাচর আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে। পুরুষের বিশেষ হরমোনের সঙ্গে জড়িত থাকে আগ্রাসী আচরণ। মানুষের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে পাল্টে ফেলা যায় অভ্যেস, যুক্তি এবং সামাজিক বোধ দিয়ে। এগুলি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কিন্তু এই দু’-একটি বৈশিষ্ট্যে খুশি না থেকে সমাজ চাপিয়ে দেয় আরও অজস্র ধারণা, যার অনেকগুলি একদম ভুল।

পৌরুষের ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হল, ক্ষমতা ও শাসনের অধিকার। এর বিস্তৃত ইতিহাস আছে, সে আলোচনার জায়গা এখানে নেই। তার যে প্রকাশটুকু ঘটেছে তোমার ছোট্ট পরিবারে, তা নিয়ে কথা বলব আমরা। আয় করাকে আমাদের সমাজে অনেক সময় ক্ষমতা হিসেবেই দেখা হয়, শুধু দায়িত্ব হিসেবে নয়। যেন, যে আয় করছে সে একটা উচ্চতায় বসে আছে, যারা সে আয়ের ফল ভোগ করছে, তাদের থেকে। এই মনোভাব প্রায়শই দেখা যায় বটে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটিই ঠিক। বরং এর মধ্যে অন্য অনেক সূক্ষ্ম মানসিক ও ব্যক্তিগত গুণের তুলনায় আয়কেই ব্যক্তির গুণের প্রধান মাপকাঠি হিসেবে দেখার ভ্রম আছে। আয়ের অর্থ তখন দম্ভকে পোষণ করে— যে অহঙ্কার আবার অন্যকে নিচু করে— হয়তো বা অত্যাচার করার অধিকার কল্পনা করে। পুরুষ আয়ের জায়গায় থাকলে মেয়েদের ওপর এই অন্যায় অধিকার বেশি প্রয়োগ করে, কিন্তু অন্য নির্ভরশীল পুরুষের ওপরও এর প্রকাশ ঘটতে পারে। আবার উপার্জনশীল মেয়েরা একই অত্যাচার করছে নির্ভরশীল নারী বা পুরুষের ওপরে, তার দৃষ্টান্তও কম নয়। আসলে, এখানে দেহের দিক দিয়ে এক জন পুরুষ না নারী সেটি প্রধান নয়, সব মানুষের মনেই পৌরুষ ও নারীত্ব দুই-ই থাকে। দায়িত্ব, ক্ষমতা আর অধিকার, যেগুলিকে সমাজ পৌরুষের অংশ ভাবে, সেগুলিকে ভুল বোঝাই এখানে মুখ্য।

দাদার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক এক সময় ভাল ছিল। হয়তো আয়ের ক্ষমতার আনন্দ আর পরিবারের বাকিদের চোখে হঠাৎ উঁচুতে উঠে গিয়ে তিনি শাসন-অধিকারের অপপ্রয়োগ করে চলেছেন। দোষ শুধু দাদার নয়, সবারই।

পুরনো বোঝাপড়ার ভিত্তিতে তুমি দাদার সঙ্গে আলোচনা করে দেখো। কর্তৃত্বের নেশা কি কোথাও বোনের মনটাকে বোঝার এবং তার ইচ্ছেকে সম্মান করার অভ্যেসের চেয়ে বড় হয়ে উঠছে? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলে হয়তো দাদা বুঝতে পারবেন। ভালবাসার চেয়ে বড় চিকিৎসা হয় না। সে ভালবাসা ছিল তোমাদের ভাই-বোনের মধ্যে। সেটিকে জাগিয়ে তোলো, অনেক সামাজিক, মানসিক ভ্রান্তির সমাধান হয়ে যাবে।

মন কেমন

উত্তর দিচ্ছেন মনোবিদ জয়ন্তী বসু

প্রশ্ন: দাদা কিছু দিন আগে একটা ভাল চাকরি পেয়েছে। তার পর থেকেই দেখছি ও কেমন যেন পাল্টে গিয়েছে। বরাবরই দাদার সঙ্গে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক। কিন্তু ইদানীং ওকে অন্য মানুষ মনে হচ্ছে। আমি কী করছি, আগে সেই বিষয়ে তেমন নজর করত না। এখন প্রত্যেকটা বিষয়ে ওর বক্তব্য রয়েছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। কিছু বলতে গেলেই বলছে, বোনকে শাসন করা দাদার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু মাঝে মাঝে ও এমন আচরণ করছে, যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাড়িতে বলতে পারছি না, কারণ দাদা চাকরি পাওয়ার পর থেকে সবার চোখের মণি হয়ে গিয়েছে। কী করি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Expert answer Problems
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE