Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

নতুন বাস্তবের সঙ্গে পা মিলিয়ে

ক্লাস, পড়াশোনা সবই হচ্ছে। কিন্তু ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। করোনা সঙ্কটের কারণে এই নয়া স্বাভাবিকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যদিও চেষ্টা করলে এই কৃত্রিম ক্লাসরুমটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। অনলাইন ক্লাসরুমে ঢোকার আগে যেমন শরীর আর মনকে তৈরি করতে হবে, একই সঙ্গে প্রযুক্তির বিষয়গুলোও জেনে নিতে হবে।

সোনালী দত্ত
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

অনলাইন ক্লাস কেমন লাগছে?”— এই প্রশ্নের উত্তর তোমরা অনেকেই এড়িয়ে যাও। অনেকে আবার বলেই ফেলো, “ভাল লাগছে না।” কেউ কেউ তো শুনলাম পছন্দের ক্লাস না হলে হাজিরা দিয়ে ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়। তার পর চলে ভিডিয়ো গেম, টিভি দেখা কিংবা নির্ভেজাল ঘুম। বাবা-মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ। নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে তোমাদের মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছে, এটাও সত্যি। কিন্তু এমন করলে তো চলবে না। অনলাইন ক্লাস এখনকার ‘নয়া স্বাভাবিক’ বা ‘নতুন বাস্তব’। কাজেই এই ক্লাস করতে হবে ধরে নিয়েই আমাদের এগোনো দরকার। না, স্কুলের ক্লাসরুমের বিকল্প হিসেবে এই নতুন ক্লাসঘর নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। বরং এই পদ্ধতিই যখন আমাদের লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার মূল উপায়, তখন ক্লাসগুলো উপভোগ করার চেষ্টা করি।

স্কুলের মাস্টারমশাই, দিদিমণিরা নিশ্চয়ই এত দিনে তোমাদের লেখাপড়ার সময়টাকে একটা রোজকার রুটিনে সাজিয়ে দিয়েছেন। অনেকটা সময় বসে থাকতে হয় স্ক্রিনে চোখ রেখে। মাথা ধরে। বোরিং লাগে মাঝেমধ্যে। এ সবই তোমাদের মুখে শোনা। কিন্তু দেখো, শিক্ষকদের যেমন আস্তে আস্তে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তোমরাও তো তেমনই ধীরে ধীরে ব্যাপারটার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছ। সেই অভিজ্ঞতা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এটাকে আনন্দদায়ক করে ফেলাই যায়। দেখবে না কি চেষ্টা করে কয়েকটা উপায়?

মনটা তৈরি করে নাও

অনলাইন ক্লাসকে ‘সত্যিকারের ক্লাস’ ভেবেই তৈরি হতে হবে। এখানে শুধু স্কুলের ক্লাসরুমটাই নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, বইপত্র সবই আছে। হ্যাঁ, চেনা বন্ধুদের কাছে পাচ্ছ না। ক্লাসে যেমন শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়, এখানে সে উপায় নেই। এর জন্য হতাশ না হয়ে ভাবতে হবে, বিকল্প পথ কী? আর সেখানেই নিজস্ব কেরামতি।

ভাল দিকটা ভাবো

শিক্ষক, সহপাঠী সকলেই ভার্চুয়াল। এটা যেমন সত্যি, তেমনই এ-ও কিন্তু সত্যি যে তোমরা নিজেদের

বাড়িতে, নিজেদের প্রিয় পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারছ। হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে লিঙ্ক ফেলিয়োর বা অন্য ধরনের প্রযুক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধৈর্য এবং সদিচ্ছা সেই অসুবিধাটুকু ঠিক জয় করে ফেলবে। কারণ, তোমরা বসে আছ তোমাদের পরিচিত জায়গায়।

চ্যালেঞ্জ নেওয়ার শক্তি

নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে, একটা চ্যালেঞ্জ তো বটেই। শরীরটাকেও দেখতে হবে। পুষ্টিকর খাবারদাবার খাও, যথেষ্ট পরিমাণে জল খাও। করোনা পরিস্থিতিতে দৌড়ঝাঁপ করার সুযোগ কম, কাজেই হাল্কা খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। খাবারের সঙ্গে ফল আর টক দই খেতে পারো। শরীর ফিট না থাকলে মনোযোগ দেওয়া মুশকিল।

না, তোমরা মোটেই তেমন ফাঁকিবাজ নও যে প্রহরীর মতো বাবা-মাকে পাশে বসে থাকতে হবে। কিন্তু তাঁদের একেবারে এড়িয়ে যাওয়াও ঠিক নয়। বাড়িতে একই জায়গায় অনেকটা সময় বসে ক্লাস করছ। মনটা মাঝেমধ্যে এ দিক-ও দিক চলে যেতেই পারে। একটু অন্য স্বাদের কথাবার্তাও বলতে ইচ্ছে হতে পারে। মা, বাবারা কাছে থাকলে তোমাদের উপকারই হবে। তা ছাড়া তাঁদেরও তো ইচ্ছে করে, সন্তানের ক্লাসরুমটা দেখেন। কাদের কাছে তোমরা পড়ো, তোমাদের বন্ধুবান্ধব কারা— মা, বাবাও না হয় একটু জানলেন। কাজেই মাঝেমধ্যে তাঁদের কাছে ডেকে নিলে মন্দ লাগবে না।

ক্লাসরুমে ঢোকার আগে

অনলাইন ক্লাসরুমে ঢোকার আগে যেমন শরীর আর মনকে তৈরি করতে হবে, একই সঙ্গে প্রযুক্তির বিষয়গুলোও জেনে নিতে হবে। এখন তোমরা মোবাইল বা কম্পিউটারের ব্যাপারে অনেক সময় বড়দের থেকেও এগিয়ে থাকো। কাজেই নতুন কিছু শিখে নিতে তোমাদের বেশি সময় লাগবে না। কী ভাবে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করবে বা লিঙ্ক খুলবে— এই সব ছোটখাটো ব্যাপারে সড়গড় হয়ে গেলে অযথা বিরক্তি এড়ানো যায়। বাড়ির যে জায়গায় নেট সবচেয়ে ভাল কাজ করে, সেটাকেই ক্লাস করার জন্য বেছে নেওয়া উচিত।

নিজের সময় নিজের হিসেবে

স্কুলে তোমাদের একটা রুটিন করেই দেয়। তোমরাও চেষ্টা করো সেই রুটিন অনুযায়ী নিজেদের একটা সময় সূচি তৈরি করার। দিনে কতটুকু পড়বে, শিক্ষকের দেওয়া হোমটাস্ক কখন কতটা করবে— এ সব তোমাদেরই ঠিক করতে হবে। ক্লাসের ফাঁকে তোমরা ব্রেক পাও, মাঝখানে বেশ অনেকটা সময় তোমাদের নিজেদের কাজ করার জন্য দেওয়া হয়। সেই সময়টাকে প্রয়োজন এবং রুচি অনুযায়ী ব্যবহার করো। ছাত্রছাত্রীদের যাতে মন ভাল থাকে, সে জন্য আজকাল অনলাইন ক্লাসেও নানা ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ছবি আঁকা, সেলাই, বই পড়া ইত্যাদি তোমাদের যার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে, দিনের একটা সময় তার জন্যও রেখো। আর ক্লাস করতে করতে চোখ ফিরিয়ে মাঝেমধ্যে যদি একটু আকাশ দেখে নাও, জল খেয়ে আসো, তাতে ক্ষতি কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, সব কিছুই করবে লেখাপড়া করার জন্য, ফাঁকি দেওয়ার জন্য নয়!

পছন্দের ক্লাসরুম

ভাবছ, এ কেমন কথা? ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, সিলেবাস ঠিক করে দিয়েছে বোর্ড, তা হলে তোমরা কী ভাবে তোমাদের ক্লাসরুম তৈরি করবে? সেটাই তো আসল চ্যালেঞ্জ! আর এই চ্যালেঞ্জ যদি জিততে পারো, কিছুতেই বোর লাগবে না। মাথাও ধরবে না। যদি ক্লাসে ছাত্র-শিক্ষকের কথাবার্তা হয়, অথবা ছাত্রছাত্রীদের আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে উৎসাহের সঙ্গে যোগ দাও। যদি পরিবেশটা অতখানি সহজ-সরল না হয়, তোমরা নিজেরাই তাকে নিজেদের পছন্দসই তোলার চেষ্টা করো। প্রয়োজনমতো হাত তুলে প্রশ্ন করো। চেষ্টা করো, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে গ্রুপ ডিসকাশনের পরিবেশ তৈরি করতে। এই কাজে শিক্ষক নিশ্চয়ই তোমাদের পাশে থাকবেন।

নিজেরাও চেষ্টা করো

অনলাইন ক্লাসে পড়ানোর সময় শিক্ষক পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশন, ভিডিয়ো, অডিয়ো দিয়ে কোনও বিষয়কে আরও আকর্ষণীয় ভাবে তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। অনেক সময় হয়তো স্কুলের ক্লাসরুমে এতটা করা যায় না। তোমরা শিক্ষকদের মতোই বিষয়ভিত্তিক ছবি, মডেল, ভিডিয়ো ইত্যাদি বানিয়ে শিক্ষক বা গোটা ক্লাসকে দেখাও, সকলের ভাল লাগবে। প্রশংসা পেলে তোমরাও উৎসাহিত হবে। বেশি দামি কিছু আবার বানাতে যেয়ো না যেন।

করোনা-কাল আমাদের জীবনধারার অনেকটাই বদলে দিয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় তার ছাপ তো পড়বেই। অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজন হয়তো তখনও থেকে যাবে। কাজেই এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই ভাল। কী বলো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Virtual Classes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE