Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তফাত গড়ে দেয়

ইন্টার্নশিপ। কলেজ শেষে ও কর্মজীবন শুরুর আগে বায়োডেটায় যে জিনিসটা শিক্ষার্থীকে আলাদা গুরুত্ব দেবে। আলোচনা করলেন ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়যদি আমরা সার্বিক ভাবে দেখি, দেশের অর্থনীতির অবস্থা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গোলমেলে, শিল্পের প্রায় সবক’টি ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার তলানিতে

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:২৪
Share: Save:

সদ্য হয়ে গেল এ রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা। এক দিকে অভিভাবক চাইছেন সন্তান কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঢুকে পড়ুক, তা হলেই কেল্লা ফতে। অন্য দিকে, প্রতি বছর নানা সমীক্ষা জানাচ্ছে, কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় কলেজ বাদ দিলে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ২০ শতাংশও ঠিক জীবিকার উপযুক্ত নয়। বছর বছর ধরে ছবিটা একই রকম, বরং উত্তরোত্তর খারাপ।

যদি আমরা সার্বিক ভাবে দেখি, দেশের অর্থনীতির অবস্থা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গোলমেলে, শিল্পের প্রায় সবক’টি ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার তলানিতে। অন্য দিকে তথ্যপ্রযুক্তিতে, যা এখন ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরি পাওয়ার মূল ক্ষেত্র— কাজের চরিত্র এবং সেই সংক্রান্ত দক্ষতার চাহিদা বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। এ দেশের ক্লাসরুম-এর পড়াশোনা আর সিলেবাস সব সময়েই কাজের চাহিদার থেকে পিছিয়ে থেকেছে— এখন সেই ফারাকটা আরও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আজ যারা জয়েন্ট পরীক্ষা দিচ্ছে, ২০২৪ সালে ডিগ্রি নিয়ে তারা কাজের বাজারে আসবে। তাদের বুঝে নিতে হবে যে, চাকরি পেতে হলে আর সেই চাকরি বজায় রাখতে হলে, কোন কোন ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে, আর কলেজের পড়াশোনার বাইরেও কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

যে বিষয়টা আজ আলোচনা করব, সেটা হল ইন্টার্নশিপ। অর্থাৎ, পড়াশোনার সঙ্গে কোনও বাণিজ্যিক সংস্থায় হাতে-কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা। সাধারণ ভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠক্রমে একটি ইন্টার্নশিপ নির্ধারিত থাকে, যদিও ছাত্রছাত্রীরা সেটাকে কতটা গুরুত্ব দেয় তাতে সন্দেহ আছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় যাঁরা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন তাঁদের মতে ইন্টার্নশিপ-এর গুরুত্ব অসীম। যে হেতু আমাদের দেশের ক্লাসরুম-শিক্ষা কাজের জগতের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না, এই ব্যবধানটা কিছুটা হলেও মেটাতে পারে একাধিক ইন্টার্নশিপ-এর সুযোগ।

বিশেষ করে যদি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে বলা যায়, আজকের শিক্ষার্থীকে জানতে হবে কী ভাবে নতুন ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে, কোন কোন প্রোগ্রামিং কাঠামো বা পরিভাষার আজ চাহিদা বেশি, আগামী দিনগুলোতে তা কী রূপ নেবে। সফটওয়্যার-এর কোড লেখা ছাড়াও বোঝা দরকার, ইন্টারনেট, ক্লাউড পরিকাঠামো, অনলাইন বাজার এবং তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া কী ভাবে বদলে দিচ্ছে ব্যবসার ব্যাকরণ, এবং কী ভাবে ব্যবসায়িক সংস্থা তার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে। এগুলো বুঝে নেওয়ার সহজ উপায় হল একটা প্রকৃত কাজের পরিবেশে সময় কাটানো, সেই সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে মিশে এই সব বিষয়ে একটা সম্যক ধারণা গড়ে তোলা। ইন্টার্নশিপ-এর মেয়াদ সাধারণ ভাবে হয় দেড় থেকে দু’মাস— কিন্তু ওই সময়েই অনেক কিছু শিখে নেওয়া সম্ভব যা চাকরি পেতে সাহায্য করবে। ব্যবসায়িক ভাবে কাজে লাগতে পারে, এ রকম কোনও ছোট কাজ বা কোড লেখাও যদি এই সময়ে করার সুযোগ থাকে, তা হলেও যে আস্থা তৈরি হয় নিজের ওপর— তার গুরুত্ব চাকরির সময় অপরিসীম।

প্রযুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন ছাড়াও আরও উপকার হতে পারে। যেমনল, ব্যবহারিক বিষয়গুলো নিয়ে একটা স্পষ্ট চিত্রের আভাস পাওয়া। কর্মক্ষেত্রে একের সঙ্গে অন্যের কথাবার্তার ধরন ও ভাষা, দলগত ভাবে কাজ করতে পারার গুরুত্ব, প্রথাগত ভাবে চিঠি বা ই-মেল লেখা, সময়মতো অফিসে আসা বা যে কোনও ব্যাপারে সময় মানার বাধ্যতা— এই সব কিছুরই একটা মহড়া হয়ে যায় ইন্টার্নশিপ-এ। কলেজ আর তার ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে ব্যবহার আর যোগাযোগের চলন কাজের পরিবেশের থেকে কয়েক যোজন দূরে— আর ব্যবহারিক শিক্ষার ক্লাস করিয়েও সেই ব্যবধান পুরো বোঝানো যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভাল ভাবে একটা ইন্টার্নশিপ করার পর অজান্তে অনেকেই মনে মনে ছাত্রের খোলস ছেড়ে কর্মী হয়ে উঠেছে।

সাধারণ ভাবে কলেজ থেকে ইন্টার্নশিপ পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করা হয় শেষ বর্ষের আগে। কিন্তু তা ছাড়াও যখনই ক্লাসের ফাঁকে কয়েক সপ্তাহ সময় থাকে, শিক্ষার্থীর নিজের উদ্যোগে ইন্টার্নশিপ খোঁজার চেষ্টা করা উচিত চেনা পরিচিত জনের মাধ্যমে। খুব নামকরা সংস্থায় না হলেও, ছোট বা মাঝারি সংস্থায় এই সুযোগ পাওয়া কঠিন নয়— কাজের জগতের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলাটাই মূল প্রয়োজন। কলেজের পাঠ শেষে চাকরিজীবন শুরু করার সময় এক পড়ুয়ার সঙ্গে অন্যের বায়োডেটায় যে জিনিসটা চোখে পড়ার মতো তফাত গড়ে দিতে পারে— সেটাই কিন্তু ইন্টার্নশিপ।

লেখক ইনকিউব-এর অধিকর্তা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biodata Internship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE