বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট চিন্তক প্রয়াত অশ্রুকুমার সিকদার সম্পর্কে, তাঁর চিন্তাভাবনার প্রকাশ হিসেবে সমালোচনার কাজ নিয়ে লিখেছেন দেবেশ রায় ‘‘তাঁর পড়াশুনোর ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্য কোনো-কোনো বিষয়ের পক্ষে এতটাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে আর তিনি এত দ্রুত এত প্রসঙ্গান্তর ব্যবহার করেছেন প্রায় যেন খেই রাখা যায় না।’’ অশ্রুকুমারকে নিয়ে এ বারের ‘এবং মুশায়েরা’-য় (সম্পা: সুবল সামন্ত) প্রকাশিত প্রথম ক্রোড়পত্রটিতে বিশিষ্ট জনদের পাশাপাশি লিখেছেন তাঁর আত্মজনেরাও। এতে তাঁর নিজের কয়েকটি লেখাও অন্তর্ভুক্ত, আছে তাঁর জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি-ও। দ্বিতীয় ক্রোড়পত্রটি প্রয়াত পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে, সেখানেও লেখক-তালিকায় বিশিষ্ট জনের সঙ্গে আত্মজনেরা। তাঁর সিনেমা-ভাবনা নিয়ে ধীমান দাশগুপ্ত লিখেছেন, সিনেমা ‘‘তিনি বিচার করতেন ইতিহাস রাজনীতি সমাজ দর্শনের ব্যাপক প্রেক্ষাপটে।’’ আছে তাঁর জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি, সঙ্গে নিজের লেখাও— ‘নাটকের সন্ধানে’। তাতে অশ্রুবাবুর মতো তাঁরও সিদ্ধান্ত, বাংলা ভাষায় ‘‘যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ কবি, তিনিই শ্রেষ্ঠ নাট্যকার— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’’
‘‘যেমন রবীন্দ্রনাথ, তেমনি গান্ধী এক ধ্রুবপদ হয়ে রইলেন ওকাম্পোর জীবনে। তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছিলেন... ‘মহাত্মা ছিলেন বিশেষভাবে ভারতের ও সাধারণভাবে বিশ্বের দুঃখে আর্ত; রবীন্দ্রনাথও কাতর ও দুঃখমোচনে উৎসুক, কিন্তু তিনি সৌন্দর্যপ্রেমীও যিনি জানেন তাঁর কাজ সুন্দরের গান গাওয়া ও সর্বত্র সুন্দরের সাধনা; একজন সন্ত, অন্যজন কবি। কাকে বাছব জানতাম না, যদিও তখন মহত্তর মনে হয়েছিল গান্ধীকে। তাঁরা দুজনে এসে একযোগে আমার জীবনে আবির্ভূত হলেন যেন জানতে চান: শিল্প না সন্তত্ব?’...’’ অমিয় দেবের ‘ওকাম্পোর চোখে গান্ধী’ নতুন করে ভাবাবে পাঠককে। ‘অনুষ্টুপ’-এর (সম্পা: অনিল আচার্য) সাম্প্রতিক সংখ্যাটি এমনই ভাবনা উসকে-দেওয়া নানাবিধ নিবন্ধে ঠাসা। রমাপদ চৌধুরী অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় পিনাকী ঠাকুর ও আফসার আমেদ-কে নিয়ে প্রয়াণলেখ। শেষোক্ত লেখককে নিয়ে অমর মিত্র তাঁর রচনাটিতে জরুরি একটি কথা খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন: ‘‘আমাদের দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র একজন গুণী কথাশিল্পীকে রক্ষা করতে পারে না। তাঁর পাশে দাঁড়ায় না।’’ অশ্রুকুমার সিকদার-কে নিয়ে ক্রোড়পত্রটি (সম্পা: মধুময় পাল) একাধিক ক্রোড়পত্রের অন্যতম, তাতে তাঁর নির্বাচিত গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত রচনাদি এবং গ্রন্থপঞ্জি ও জীবনপঞ্জি। শঙ্খ ঘোষ সৌরীন ভট্টাচার্য অভ্র ঘোষ সুনন্দা সিকদার প্রমুখের যে স্মৃতিকথন তাঁকে নিয়ে, তাতে শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন ‘‘প্রথম দেখাতেই অশ্রুর সঙ্গে আমার এমন একটা বন্ধুত্ব তৈরি হল যা নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়েছে... ’’।
‘‘সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে নজরুলের অগ্নি-মন্ত্র বাঙালি জাতির চিত্তে জাগিয়েছিল মরণজয়ী প্রেরণা— আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুকঠিন সংকল্প।’’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ-মন্তব্য করেন ১৯৭২-এ বাংলাদেশে কবির জন্মদিন উদ্যাপন উপলক্ষে। নজরুল একাদেমি আয়োজিত নজরুল-উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে এসে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি। এই দুর্লভ ভাষণটি সঙ্কলিত হয়েছে এ বারের ‘কবিতীর্থ’-এর (সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য) ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ সংখ্যায়। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কবির নানান মুহূর্তের বেশ কিছু বিরল স্থিরচিত্র যেমন আছে, তেমনই আছে তাঁর নির্বাচিত রচনাদিও। আছে তাঁর জীবনপঞ্জি-গ্রন্থপঞ্জি। তাঁকে নিবেদিত কবিতা, যেমন অন্নদাশঙ্কর রায়ের: ‘‘ভুল হয়ে গেছে/ বিলকুল/ আর সব কিছু/ ভাগ হয়ে গেছে/ ভাগ হয়নিকো/ নজরুল।’’ তাঁর সৃষ্টি ও মননের বহুবিধ দিক নিয়ে আলোচনায় রীতিমতো ঋদ্ধ সংখ্যাটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy